পোস্টস

বিশ্ব সাহিত্য

ব্র্যান্ডন স্যান্ডার্সনের কজমেয়ার

১০ জুন ২০২৪

অয়ন ইসলাম

১. 

ব্র্যান্ডন স্যান্ডার্সনের কসমেয়ার জগত নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখি অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই খন্ড খন্ড আকারে দেয়ার চেষ্টা করছি। এখানে প্রথম পর্বটি দিলাম। গ্রুপের সদস্যদের ভালো লাগলে পরেরগুলো দেবো একে একে।

ব্র্যান্ডন স্যান্ডার্সনের লেখা নিয়ে যতই বলি না কেন, মনে হয় কিছুই বলা হলো না! বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি লেখক তিনি। লিখেছেন মিস্টবর্ণ সিরিজ এব্ং স্টর্মলাইট আর্কাইভের মত আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পাওয়া বই, জিতেছেন হুগো এওয়ার্ড, হুইটনি এওয়ার্ড, গুডরীডস চয়েস এওয়ার্ড সহ আরো অনেকগুলি স্বনামধন্য সম্মাননা। তবে তাঁর ভাষ্যমতে সবচেয়ে সম্মানজনক হলো রবার্ট জর্ডানের এপিক ফ্যান্টাসি সিরিজ দ্য হুইল অব টাইমের শেষ উপন্যাসটি লেখার আমন্ত্রণ পাওয়া। পরে এই সিরিজের প্রকাশক এব্ং স্যান্ডার্সন মিলে সিদ্ধান্ত নেন সিরিজটি শেষ করার জন্য তিনটি বই লেখা হবে। এই তিনটির প্রথম বই ‘দ্য গ্যাদারিং স্টর্ম’ প্রকাশের পরপরই নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার তালিকার প্রথম স্থানে চলে আসে।

ব্র্যান্ডন স্যান্ডার্সন বিশাল ক্যানভাসে, দারুন জটিল সিস্টেমকে অত্যন্ত আকর্ষনীয়ভাবে ফুটিয়ে তুলতে ভালোবাসেন। কতখানি বিশাল তাঁর ক্যানভাস? একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে - তাঁর স্টর্মলাইট আর্কাইভের এখন পর্যন্ত তিনটি বই এব্ং একটা নভেলা প্রকাশ হয়েছে। এই সোয়া তিনটা লেখাকে একসাথে করলে প্রায় ৩,৬০০ পাতা হয়! ডজন খানেকেরও বেশী মূল চরিত্র, হাজার বছর ধরে কাহিনির ব্যপ্তি আর কয়েকটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ম্যাজিক সিস্টেম, যারা প্রত্যেকেই একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সব মিলিয়ে এক কথায় মাইন্ড ব্লোওইং!

২০০৫ সালে স্যান্ডার্সনের ‘এলানট্রিস’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। একদা জাদুবিদ্যার শিখরে থাকা, বর্তমানে পরিত্যক্ত একটি শহরকে কেন্দ্র করে বইটি লেখা। এলানট্রিসে স্যান্ডার্সন সম্পূর্ণ নতুন একটা জাদু ব্যবস্থা উপস্থাপন করেন পাঠকদের সামনে। পাবলিশার্স উইকলির মন্তব্য অনুযায়ী বইটা "নিজেই স্বয়্ং সম্পূর্ণ, এই জনরার প্রচলিত ক্লিশেগুলো থেকে পুরোপুরি মুক্ত। পাশাপাশি পাঠককে নিবিড়ভাবে ধরে রাখার সব ধরনের উপাদান এতে বিদ্যমান - রহস্য, জাদুবিদ্যা, রোমান্স, রাজনীতির দুর্ধর্ষ টানাপোড়েন, অধিকার আদায়ের যুদ্ধ, চরিত্রগুলোর ব্যপ্তি আর তার সাথে সুতীক্ষ্ন লেখনী।"

স্যান্ডার্সনের পরবর্তী উপন্যাস মিস্টবর্ণ ত্রয়ীর (ট্রিলজি) প্রথম বই - মিস্টবর্ণঃ দ্য ফাইনাল এম্পায়ার। এই কাহিনি আবার আপাতঃদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জগতে, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা দুর্দান্ত ম্যাজিক সিস্টেমের প্রেক্ষিতে লেখা। কিন্তু আসলে স্যান্ডার্সন ভিন্ন ভিন্ন ফ্যান্টাসি সিরিজ লিখছেন না। প্রাথমিকভাবে একটার সাথে আরেকটার কোন সম্পর্ক নেই বলে মনে হলেও তাঁর লেখা প্রায় সবগুলো কাহিনি একটা বিশাল ইউনিভার্সের মধ্যে দিয়ে আবর্তিত হচ্ছে। হ্যাঁ, এলানট্রিস, মিস্টবর্ণ বা স্টর্মলাইট আর্কাইভ- এগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ গ্রহে সংঘটিত হচ্ছে, প্রত্যেকের নিজস্ব আলাদা ম্যাজিক সিস্টেম, ইতিহাস, সংস্কৃতি আছে। কিন্তু এরা সবাই একটা ফ্যান্টাসি ইউনিভার্সের অন্তর্গত, যে ইউনিভার্সের নাম- "কসমেয়ার"।

 

২. 

কিন্তু কজমেয়ারের যাদুকরী জগত নিয়ে বলার আগে স্যান্ডার্সনের লেখার ধারাবাহিকতাটা শেষ করে নিই। এখানে শুধু কসমেয়ার ইউনিভার্সের বইগুলোর কথাই বলছি। কজমেয়ারের বাইরেও স্যান্ডার্সনের আরো ক’টি সিরিজ এবং একক বই আছে সেগুলো আলোচনায় আনা হয়নি। ২০০৬ সালে স্যান্ডার্সনের মিস্টবর্ণ ত্রয়ীর প্রথম বই প্রকাশ হয়। মিস্টবর্ণঃ দ্য ফাইনাল এম্পায়ার বইটি দিয়ে স্যান্ডার্সন বেশ বড়সড় একদল পাঠকের কাছে পৌঁছে যান। পরের বছর প্রকাশ পায় এই সিরিজের দ্বিতীয় বই “দি ওয়েল অব এসেনশন”। এই ২০০৭ সালই আরো বড় একটা চমক নিয়ে অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্য। আপামর ফ্যান্টাসি পাঠকদের বিশাল একটা অংশের খুব প্রিয় ফ্যান্টাসি সিরিজ “দ্য হুইল অব টাইম”। সিরিজটি অসমাপ্ত থাকতে থাকতেই এই সিরিজের লেখক রবার্ট জর্ডান আকস্মিকভাবে চির না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। জর্ডানের বিধবা স্ত্রী হ্যারিয়েট ম্যাকডোগাল স্যান্ডার্সনকে আমন্ত্রণ জানান এই সিরিজটি শেষ করার জন্য। স্যান্ডার্সনের জন্য এটি ছিল অনেকটা স্বপ্নের মত। রবার্ট জর্ডান ছিলেন তাঁর স্বপ্নের লেখক, হিরো! স্যান্ডার্সনের নিজেই বলেছেন জর্ডানের লেখা থেকে তাঁর লেখা অনেকাংশে অণুপ্রাণিত। এখন তাঁর হিরোর এপিক সিরিজ সফলভাবে সমাপ্ত করার গুরুদায়িত্ব এসে পড়লো তাঁর কাঁধে। 

পরবর্তী কয়েক বছর স্যান্ডার্সন দ্য হুইল অব টাইম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পাশাপাশি নিজের সিরিজ নিয়েও লেখা চালিয়ে যান। হুইল অব টাইমের শেষ তিনটি বই – দ্য গ্যাদারিং স্টর্ম, টাওয়ার্স অব মিডনাইট আর আ মেমারি অব লাইট প্রকাশের সাথে সাথে বেস্ট সেলারের তালিকার প্রথমে চলে আসে। শুধু তাই নয় – পাঠকরা একবাক্যে স্বীকার করে নেন যে এই তিনটি বই হুইল অব টাইমের বিশাল সিরিজে অন্যতম সেরা তিনটি বইয়ের মধ্যে পড়ে। লক্ষ লক্ষ পাঠকের কাছে জনপ্রিয় একটা ফ্যান্টাসি সিরিজের অত্যন্ত সফলভাবে পরিসমাপ্তি টেনে দেয়ার দুরূহ কাজটা স্যান্ডার্সন সুচারুরূপে পালন করেন। বলা যায়, তাঁর এই কাজের মাধ্যম দিয়ে তিনি ফ্যান্টাসি জগতের অন্যতম মহীরূহে পরিণত হন। 

একই সময়ে তিনি তাঁর মিস্টবর্ণ ত্রয়ীর শেষ বই “দ্য হিরো অব এজেস”  শেষ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি এ সময়ে আলকাট্রাজ সিরিজ (ইয়াং এডাল্ট ) এবং একক ফ্যান্টাসি উপন্যাস “ওঅর ব্রেকার” লিখে শেষ করেন। 

কিন্তু স্যান্ডার্সনের সবচেয়ে নজরকাড়া, উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট হচ্ছে স্টর্মলাইট আর্কাইভ। এই সিরিজের প্রথম বই “দি ওয়ে অব কিংজ” প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে, দ্বিতীয় বই “ওঅর্ডস অব র‍্যাডিয়েন্স” ২০১৪ সালে তৃতীয় বই “ওথব্রিঙ্গার”২০১৭ সালে আর চতুর্থ বই “রিদম অব ওঅর” ২০২০ সালে। স্যান্ডার্সনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সিরিজে মোট ১০টি বই থাকবে। স্টর্মলাইটের পাশাপাশি এই সময়ে মিস্টবর্ণ সিরিজের পরবর্তী ত্রয়ীর (ওয়্যাক্স এন্ড ওয়েইন ট্রিলজি) তিনটি বই “দি এলয় অব ল”, “শ্যাডোজ অব সেলফ” এবং “দ্য ব্যান্ডস অব মোর্নিং” প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালে প্রথম গ্রাফিক নভেল হোয়াইট স্যান্ড-১ প্রকাশিত হয়।  এছাড়াও স্যান্ডার্সন বেশ কয়েকটি নভেলা, গ্রাফিক নভেল হোয়াইট স্যান্ডের পরের দুটো খন্ড এবং বেশ কিছু ছোটগল্প লিখেছেন। এগুলোর অনেকগুলো একসাথে পাওয়া যাবে “আরকানাম আনবাউন্ডেড” নামের সংকলনে। স্টর্মলাইট আর্কাইভের দুটি নভেলা এজড্যান্সার এবং ডনশার্ড এককভাবে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। 

২০২২ সালে স্যান্ডার্সন আচমকা ঘোষণা দেন করোনা মহামারী চলার সময়ে তিনি গোপনে গোপনে পাঁচটি বই লিখে ফেলেছেন, যেগুলোর কথা এর আগে কোথাও ঘোষনা দেয়া হয়নি। “এ ইয়ার অব স্যান্ডার্সন” নামের একটা কিকস্টার্টার প্রজেক্টের মাধ্যমে তিনি এই বইগুলো প্রকাশ করবেন বলে জানান। পাঠকদেরকে তাঁর এই প্রজেক্টে সাবস্ক্রাইব (প্রি-অর্ডার) করতে আহবান জানানোর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলারের সাবস্ক্রিপশন হয়ে যায়। পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে টাকার অংক ছাড়িয়ে যায় ২০ মিলিয়ন ডলারকেও! ক্যাম্পেইন শেষে দেখা যায় ১৮৪,৩৪১ পাঠক প্রি-অর্ডার করেছেন, টাকার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৮১.৭৫ মিলিয়ন ডলারে । এই ক্যাম্পেইনে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, পুরো ২০২৩ সাল জুড়ে প্রতি তিনমাস পরপর একটা করে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির নতুন বই পাবেন। প্রথম কোয়ার্টারের বই ট্রেস অব দ্য এমারেল্ড সী ইতিমধ্যে বেশীরভাগ সাবস্ক্রাইবারের কাছে পৌঁছে গেছে। 

এই তো গেলো সংক্ষেপে স্যান্ডার্সনের প্রকাশিত বইগুলোর কথা। এবার কসমেয়ার নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

 

৩. 

কোনরকম স্পয়লার না দিয়ে ব্যপক আলোচনা করা দুরূহ। তাই কিছুটা স্পয়লার রয়েই গেলো (খুব বেশী না অবশ্য)! আমি স্পয়লার শুরু হওয়ার আগে জানিয়ে দেবো। 

কসমেয়ার নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই জানাতে হয় কসমেয়ার আসলে কী। আগেই বলেছি স্যান্ডার্সনের বেশীরভাগ ফ্যান্টাসি সিরিজগুলো যে ইউনিভার্সে ঘটছে সেটারই নাম কসমেয়ার। কসমেয়ার পৃথিবী থেকে অনেক, অ-নে-ক দূরে অবস্থিত এবং পৃথিবীর সাথে তার কোনই সম্পর্ক নেই (সুতরাং স্যান্ডার্সনের যে লেখাগুলো পৃথিবী কেন্দ্রিক, সেগুলো কজমেয়ারের অংশ নয়)। অন্যভাবে বলা যায় কসমেয়ার হচ্ছে স্যান্ডার্সনের ফ্যান্টাসি সিরিজগুলোর ভেতরে একটা লুকোনো স্তর, যেটার এখনো প্রবল উপস্থিতি নেই, কিন্তু সূক্ষভাবে পর্দার অন্তরালে কাহিনির জাল বুনে চলেছে! 

স্যান্ডার্সনের ফ্যান্টাসি সিরিজগুলো যে সব গ্রহে ঘটছে, তারা একটা বামন গ্যালাক্সিতে (ডোয়ার্ফ গ্যালাক্সি) অবস্থিত। গ্রহগুলো একই সৌরজগতের অংশ না হলেও তারা মোটামুটি কাছাকাছি আছে। আর এদের প্রত্যেকের সাথে শেডস্মার নামের একটা অতিপ্রাকৃত জগতের যোগাযোগ আছে। এখন পর্যন্ত এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে জাদুর মাধ্যমে যাওয়া – শেডস্মার দিয়ে। স্যান্ডার্সন জানিয়েছেন ভবিষ্যতে কোন একটা সিরিজে স্পেসশিপে করে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাওয়া দেখা যেতে পারে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জাদুবিদ্যাই ভরসা! আর সেটাও এপর্যন্ত মাত্র গুটি কয়েক চরিত্রকে করতে দেখা গেছে। 

সে যাই হোক, ওটা ভবিষ্যতের ভাবনা, ভবিষ্যতে দেখা যাবে। আপাততঃ আমরা বর্তমানেই থাকি। এখন পর্যন্ত স্যান্ডার্সনের প্রতিটি ফ্যান্টাসি সিরিজ স্বয়ংস্বম্পূর্ণ, একটির উপরে আরেকটি নির্ভরশীল না। সুতরাং একটা না পড়লে আরেকটা বুঝতে কোন অসুবিধে হবে না। আলাদা আলাদা ভাবে এদের রস আস্বাদনেও সমস্যা হবে না।  কিন্তু ...... হ্যাঁ, এখনই আসছে মাস্টার স্যান্ডার্সনের অভিনব চাতুরী...... প্রতিটা আলাদা আলাদা সিরিজে খুব সূক্ষভাবে পুরো কজমেয়ারের কাহিনির একটু একটু অংশ ঢুকানো হচ্ছে! হয়তো একটা গল্প বলার সময়ে একটা ঘটনার বর্ণনা দেয়া হলো। ঘটনাটা ঘটেছে অনেক আগে, বর্তমান কাহিনীর সাথে সেভাবে কোন যোগও নেই। কে মনে রাখবে এর কথা? কিন্তু পরে যখন আমরা কজমেয়ারের কথা জানতে পারি, তখন ফিরে তাকালে ঐ ছোট্ট ঘটনাটার আলাদা মানে খুঁজে পাওয়া যায়। (হ্যারি পটার এন্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজের স্পয়লার আছে) অনেকটা যেন রূম অব রিকোয়্যারমেন্টে পোশন বই লুকিয়ে রাখার জায়গায় চিহ্ন হিসেবে রাখা টায়রাটার ডেথলি হ্যালোজে এসে হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ার মত!

আবার দেখা যায় সিরিজের মূল চরিত্রগুলোর পাশাপাশি একটা দুটো পার্শ্বচরিত্র আলতো করে দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে। এরা চলতি সিরিজের সাথে সেভাবে জড়িত নয়, তাই পাঠকের কাছে বাড়তি মনোযোগও দাবী করে না। অথচ এরাই কিন্তু পর্দার অন্তরালে বুনে যাচ্ছে কজমেয়ারের মূল ঘটনা! এই ধরুণ মিস্টবর্ণের প্রথম বই দ্য ফাইনাল এম্পায়ারে কেলসিয়ারকে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করা একজন গুপ্তচরের কথা। ছোট্ট একটা চরিত্র, একবার দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। ওকে খুব বেশিক্ষণ মনে থাকার কথা নয়। মিস্টবর্নে তার আর খুব বেশি কিছু প্রভাব ছিলও না। তাই পুরো মিস্টবর্ণ সিরিজ উপভোগ করে ফেললেন ঐ চরিত্রটার কথা দ্বিতীয়বার না ভেবেই (দ্যাটস ওকে, আমিও তাই করেছি)! কিন্তু স্টর্মলাইট আর্কাইভের দ্বিতীয় বইয়ে এসেই টের পেলেন আরে, একে তো মিস্টবর্ণেও দেখেছি, তাই না? এই ব্যাটা এখানে কী করে? এই শুরু হয়ে গেলো আপনার কজমেয়ারের উপস্থিতি টের পাওয়া! এবার আরেকবার ফিরে তাকান আগের সিরিজগুলোতে। হঠাৎ করে টের পাবেন বেশ কিছু চরিত্র ভিন্ন একটা মাত্রায় ধরা দিচ্ছে আপনার কাছে। ওদের কিছু কিছু কথারও অন্য একটা মানে খুঁজে পাবেন। 

এর পাশাপাশি কজমেয়ারের অনন্য আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা না বললেই নয়। কজমেয়ারে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জগত রয়েছে। একটা হলো বাস্তব জগত বা বস্তু জগত। আরেকটা হলো মনলৌকিক বা অতিন্দ্রীয় জগত (কগনিটিভ রিয়্যাল্ম) আর তৃতীয়টা হলো আত্মার জগত (স্পিরিচুয়াল রিয়্যাল্ম)। কজমেয়ারের সকল প্রাণি ও বস্তুরই তিনটি জগতেই উপস্থিতি রয়েছে। বাস্তব জগত হচ্ছে যেখানে আমরা আছি (বা কাহিনির চরিত্ররা আছে)। অতিন্দ্রীয় জগত হচ্ছে চিন্তা-চেতনার জগত এবং এখন পর্যন্ত এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম (শেডস্মার)। আত্মার জগতের দেখা আমরা এখনো পর্যন্ত পাইনি, শুধু একটু আভাস দেয়া হয়েছে। বস্তু জগত ছাড়া বাকি জগতগুলি সম্পর্কে আমরা খুব বেশী কিছু জানি না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে স্যান্ডার্সনের চরিত্রগুলোও অন্য জগত সম্পর্কে আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করছে, আর খুব ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে। (স্টর্ম লাইট আর্কাইভের স্পয়লার আছে) যেমন চরম দুর্ঘটনার সময়ে নিজের জান বাঁচাতে শেডস্মারে চলে যেতে পারে কেউ কেউ, যাদের সে ক্ষমতা রয়েছে! 

 এই গেলো মোটামুটি কসমেয়ার সম্পর্কে একেবারে প্রাথমিক ধারণা। পরের পর্বে জানাবো কসমেয়ার সম্পর্কে ব্র্যান্ডন স্যান্ডার্সনের বক্তব্য। আর সেই সাথে আলোচনা করবো ভিন্ন ভিন্ন গ্রহে ভিন্ন ভিন্ন জাদু সিস্টেম কিভাবে এলো, শার্ড কী আর কসমেয়ারের সাথে শার্ডগুলির নিবিড় সম্পর্কের কথা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

 

৪. 

কসমেয়ার নিয়ে আলোচনার এই পর্বে আমরা জানবো স্যান্ডার্সনের ফ্যান্টাসি সিরিজগুলোতে ঐ সিরিজের ঘটনাবলীর অন্তরালে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করতে থাকা আরেকটা কাহিনি। এই কাহিনি আরো বেশী ব্যপক, আরো বেশী গভীর। 

আগের পর্বের মতোই স্পয়লার ওয়ার্নিং দিয়ে রাখি শুরুতেই। কজমেয়ারের মুল কাহিনি আলোচনা করতে গেলে বর্তমানে চলতে থাকা সিরিজগুলোর স্পয়লার না দিয়ে উপায় নেই! আরেকটা কথা। লেখার সাথে দেয়া ছবিদুটো এখনই বেশী মনোযোগ দিয়ে দেখবেন না। সময়মতো আমি বলে দেবো ছবি দেখার জন্য। তখন অনেক রহস্যই পরিষ্কার হয়ে যাবে! 

স্যান্ডার্সনের এপর্যন্ত প্রকাশিত বইগুলোতে কসমেয়ার কাহিনি সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। এখানে ওখানে কিছু সূত্র, একটা দুটো গল্প রোপণ করে স্যান্ডার্সন খুব সূক্ষভাবে বুনে চলেছেন কসমেয়ার কাহিনি। তবে এর মূল অংশটা আসছে পরের বইগুলোতে। স্যান্ডার্সনের এ পর্যন্ত প্রকাশিত কসমেয়ার জগতের বইগুলোর কথা তো আগের পর্বেই বলেছি। স্যান্ডার্সনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে আসছে – 

  • স্টর্মলাইট আর্কাইভের ৫ থেকে ১০ নাম্বার বই
    • মিস্টবর্ণ ৩ ত্রয়ী
    • এলানট্রিস ২
    • নাইটব্লাড (ওঅরব্রেকার ২)
    • দ্য সাইলেন্স ডিভাইন এবং এইথার অব নাইট
    • স্কাইওয়ার্ড (ইয়াং অ্যাডাল্ট কসমেয়ার কাহিনি)
    • দ্য লায়ার অব পার্টিনেল (ড্রাগনস্টিলের প্রিকুয়েল)
    • ড্রাগনস্টিল (৭টা বইয়ের সিরিজ। এখানেই কজমেয়ারের পিছনের গল্প আসার কথা)
    • হয়েড (একটা বইও হতে পারে, আবার একটা ত্রয়ীও হতে পারে)

এই তালিকা থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ব্র্যান্ডন স্যান্ডার্সন সামনে কী একটা মাথা নষ্ট, উড়াধুড়া, তারছিঁড়া টাইপের রহস্য জমিয়ে রেখেছেন আমাদের জন্য! 

এবার চলুন একবার চট করে চোখ বুলিয়ে নিই কসমেয়ার গ্যালাক্সির কোন গ্রহে কোন কাহিনিটা ঘটছে বা ঘটবে বলে জানা গেছে। 

  • সেল (Sel) - এলানট্রিস, দি এমপেরার’স সৌল 
  • স্ক্যাড্রিয়াল (Scadrial) - মিস্টবর্ণ
  • ন্যালথিস (Nalthis) - ওঅরব্রেকার
  • রোশার (Roshar) - দ্য স্টর্মলাইট আর্কাইভ
  • ব্রেইজ (Braize) - দ্য স্টর্মলাইট আর্কাইভে আসবে। 
  • অ্যাশিন (Ashyn) - দ্য সাইলেন্স ডিভাইন
  • ট্যালডেয়িন (Taldain) - হোয়াইট স্যান্ড
  • ইয়োলেন (Yolen) - দ্য লায়ার অব পার্টিনেল, ড্রাগনস্টিল

এখন একবার চট করে সাথের প্রথম ছবিটায় চোখ বুলিয়ে নিন। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! ছাই রঙের বৃত্তগুলো কজমেয়ারের গ্রহগুলোকে দেখাচ্ছে। আর পাশে লেখা আছে কোন সিরিজটা কোন গ্রহে। নিশ্চয়ই ভাবছেন সোনালী রঙের গাঢ় রেখাগুলো আর নীল রঙের ছেঁড়া ছেঁড়া রেখাগুলো আবার কিরে বাবা! সাথে আবার এতগুলো খুদে খুদে কী জানি লেখা! চিন্তা করবেন না, ওগুলোও পরিষ্কার হয়ে আসবে সময়ের সাথে সাথে। এখন আপাততঃ ছবিটাকে “আবার ফিরে আসবো তোমার কাছে” এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলুন দেখা যাক কজমেয়ারের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কী কী জানতে পারি। 

অনেক, অনেক, অ-নে-ক যুগ আগে অ্যাডোনালজিয়াম বলে দেবতা বা ঈশ্বরতুল্য একজন ছিলেন। বেশ কয়েকটি বইয়ে অ্যাডোনালজিয়ামের কথা এসেছে। কিন্ত তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি কোথাও। একদিন, কী কারণে এখনো জানা যায়নি, এই অ্যাডোনালজিয়াম ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যান। এই টুকরোগুলো শার্ড নামে পরিচিত। কজমেয়ারের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই “শ্যাটারিং” বা অ্যাডোনালজিয়ামের ষোলটি শার্ডে ভেঙে যাওয়া (ড্রাগনস্টিল বা তার প্রিকুয়েলে শ্যাটারিঙের উপরে আলোকপাত করা হবে বলে ধারণা করা হয়)।

শ্যাটারিঙের সময়ে অ্যাডোনালজিয়ামের ঈশ্বরতুল্য ক্ষমতার এক একটা অংশ এক একটা শার্ডে জমা হয়। শার্ডগুলো কোন ভৌত বস্তু নয়। বরং বলা যেতে পারে এরা এক একটা ধারণা। ভালো এবং মন্দ, উভয় ধারনাই আছে সেখানে। যেমন সুরক্ষা (প্রেজার্ভেশান) এবং  বিনাশ (রুইন), কিংবা আধিপত্য (ডমিনিআন) এবং আনুগত্য (ডিভৌশান)। কেউ যদি একটা শার্ড করায়ত্ব করে তখন সেই শার্ডের অন্তর্গত ধারণাটাও তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে যায়। শার্ডগুলো আবার তাদের নিজ নিজ ধারণা সম্পর্কিত বিপুল ক্ষমতা বা জাদুকরী শক্তির আধারবিশেষ। যে শার্ডকে করায়ত্ব করতে পারে, সে সেই শার্ডের ক্ষমতারও অধিকারী হয়ে যায়। এখানে একটা কথা বলে রাখি - স্যান্ডার্সনের এক একটা সিরিজে আমরা কিন্তু এক এক রকমের জাদুকরী ক্ষমতার বর্ণনা দেখি। যেমন মিস্টবর্ণে শরীরের ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন ধাতু দহন করলে ভিন্ন ভিন্ন শারিরীক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আবার স্টর্মলাইট আর্কাইভে মাধ্যাকর্ষণ, আকর্ষণ, বিকর্ষণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা অর্জন করা যায়। অথবা হোয়াইট স্যান্ড সিরিজে শরীরের ভেতরে জমে থাকা পানি ব্যবহার করে শ্বেতবালুকণাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন এই জাদুকরী ক্ষমতাগুলোর উৎস আসলে এক একটা শার্ড! 

শ্যাটারিঙ সংঘটিত হওয়ার সময়ে সেখানে উপস্থিত ষোলজন প্রত্যেকে একটা করে শার্ড খুঁজে পায়। এরা শার্ডগুলোকে গ্রহন করে এবং নিজেরা এক একজন দেবতা হয়ে ওঠে। শার্ডগুলো এদেরকে গ্রহণ করা ব্যক্তিদেরকে অপার ক্ষমতা প্রদান করে। প্রভুত ক্ষমতার অধিকারি হয়ে এরা একেকজন একেকদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এদের কেউ কেউ পছন্দসই কোন গ্রহে থিতু হয়। সেখানকার প্রকৃতি-পরিবেশে বা অধিবাসীদের মধ্যে নিজস্ব ক্ষমতা আর জাদুশক্তিকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। কোন কোন শার্ড তার গ্রহের প্রকৃতিতে জাদুশক্তি সঞ্চার করে। যেমন দেখা গেছে ওঅরব্রেকারের ‘টিয়ারস অব এডগ্লি’তে কিংবা স্টর্মলাইট আর্কাইভে রোশারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তুঙ্গ বজ্রঝড়ে। আবার কোন কোন শার্ডের গ্রহে ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে জাদুশক্তির স্ফুরণ ঘটতে দেখা যায়। শুধু এই জাদুশক্তিকে চালানোর জন্য জ্বালানীর প্রয়োজন হয়। যেমন মিস্টবর্ণে দেখা যায় নির্দিষ্ট জাদুশক্তি প্রয়োগ করার জন্য শরীরে নির্দিষ্ট ধাতু গ্রহন করে তাকে দহন করতে হয়। 

এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো। দেবতার সমান ক্ষমতা নিয়ে শার্ডগুলো গ্যালাক্সির নানা কোণে ছড়িয়ে পড়ে নিজ নিজ সুবিধা বা কৌতুহল অনুযায়ী কজমেয়ারের প্রকৃতির মৌলিক শক্তিগুলো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছিল। কিন্তু তাতে হলো টা কী? কার বা বাড়া ভাতে ছাই পড়লো, নাকি কার পাকা ধানে মই দিলো কেউ? তা একটা কিছু তো থাকতেই হবে। তা নাহলে কাহিনি জমবে কোথা থেকে? সে কথায় আসছি এবার। 

আগেই বলেছি শার্ডগুলো এদেরকে গ্রহণ করা ব্যক্তিদেরকে অপার ক্ষমতা প্রদান করে। সেই সাথে ঐ শার্ডের বৈশিষ্ট্যগুলোও আস্তে আস্তে তার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। আমরা পরবর্তীতে বুঝতে পারি যে যত বেশিদিন কেউ একটা শার্ডের অধিকারী হয়ে থাকে, ততই তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব লোপ পেতে থাকে। তার ব্যক্তিত্বের জায়গা দখল করে ঐ শার্ডের ধারণা। যেমন মিস্টবর্ণ সিরিজের রুইনের কথাই ধরা যাক (মিস্টবর্ণের স্পয়লার আছে। যাঁরা মিস্টবর্ণের প্রথম ত্রয়ী পড়েননি এখনো, তাঁরা এই প্যারার বাকী অংশটুকু বাদ দিতে পারেন)। রুইন শার্ডের প্রথম অধিকারী ‘অ্যাটি’ কিন্তু খুব ভদ্র এবং দয়ালু একজন ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু রুইন শার্ডের অধিকারী হওয়ায় তিনি ধীরে ধীরে ধ্বংসের প্রতিমূর্তি, ভয়ানক একটা দানবে পরিণত হন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘটে এবং শেষ মেষ তাঁকে হত্যা করা হয়। শার্ডের ব্যপারে আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা আমরা জানতে পারি মিস্টবর্ণ সিরিজ থেকেই। একাধিক শার্ডের ক্ষমতাকে একত্রিত করে নতুন একটা ধারণা বা ক্ষমতার সৃষ্টি করা যায়। যেমন মিস্টবর্ণ ত্রয়ীর শেষে প্রেজার্ভেশান এবং রুইন একত্রিত হয়ে হারমোনি তৈরি করে। 

সুতরাং, ভালো ধারণার শার্ডগুলো জগতের উপকারের প্রচেষ্টা চালালেও মন্দ ধারনার শার্ডগুলো একই রকম ভাবে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যায়। তেমনই একটা শার্ড হচ্ছে ওডিয়াম। নাম শুনে বোঝা যায় না, কিন্তু ওডিয়ামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঘৃণা! হ্যাঁ, জগতের সমস্তকিছুর উপরে একটা প্রবল ঘৃণা আর অপরিসীম ক্রোধ। এই প্রবল ঘৃণার বশবর্তী হয়ে ওডিয়াম সিদ্ধান্ত নিলো যে সে নিজে ছাড়া আর অন্য কোন শার্ড থাকতে পারবে না কজমেয়ারে। না, সে কিন্তু অন্য শার্ডগুলোকে দখল করতে চায়নি। সে জানে যে অন্য শার্ড দখল করলে দখল করা শার্ডের প্রভাবে তার ঘৃনা আর ক্রোধ বদলে যাবে। তাই সে অন্য শার্ডগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 

এ প্রসঙ্গে এর বেশী আর কিছু বললে স্টর্মলাইট আর্কাইভের স্পয়লার হয়ে যাবে। আর ওডিয়ামের খুব বেশি কিছু এখনো জানা যায়ও নি। তবে নিঃসন্দেহে এই সিরিজের বাকি ৬টা বইয়ে আমরা ওডিয়াম এবং তার সাথে যুদ্ধের আরো অনেক গল্প শুনবো।

আর এখানেই আরো একটা চরিত্র ধীরে ধীরে লাইমলাইটে চলে আসে। তার নাম হয়েড। হয়েডকে আমরা খুবই ছোট ছোট চরিত্রে দেখেছি অন্যান্য সিরিজে। হয়েড সম্পর্কে আমরা এখনো খুব বেশি কিছু জানি না। শুধু এটুকু জানি যে সে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারে। হয়তো একাধিক ধরণের জাদুশক্তি প্রয়োগ করতেও সে পারদর্শী। আর এটা নিশ্চিত যে পুরো কসমেয়ার জুড়ে আসলে কী খেলা চলছে, হয়েড সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। শ্যাটারিঙের সময়ে হয়েড ছিলো সেখানে। কিন্তু কোন শার্ড গ্রহণ করেনি। এখন তাকে দেখা যায় ওডিয়ামের অপপ্রচেষ্টা থামানোর জন্য ব্যস্ত। সেজন্য সে অন্যান্য গ্রহচারীদের (ওয়ার্ল্ডহপার – বিপুল জাদুক্ষমতার অধিকারী অন্যান্য চরিত্র, যারা এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাতায়াত করতে পারে) একজোট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। 

কজমেয়ারের ইতিহাস ও ভূগোল তো মোটামুটি জানা হলো। এবার এই পোষ্টের প্রথম ছবিটাকে উপরে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, সেটা মনে আছে তো? চলুন, সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আরেকবার ছবিটার কাছে ফিরে যাই। ইয়োলেন থেকে স্ক্যাড্রিয়াল পর্যন্ত যাওয়া সোনালী রেখাটা দেখুন। কী বুঝছেন? ঠিক ধরেছেন। সোনালী রেখাগুলো আসলে শার্ডগুলোর ছড়িয়ে পড়ার ভূগোল! এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তার উপরে ভিত্তি করে এই শার্ডগুলোকেই ট্রেস করা গেছে। 

আর নীল ছেঁড়া রেখা গুলো? স্ক্যাড্রিয়াল থেকে ন্যালথিস পর্যন্ত যাওয়া ভগ্নরেখাটা দেখুন। এবার ক্লিয়ার, একদম পানির মতো, তাই না? হ্যাঁ, নীল রেখাগুলো এ পর্যন্ত জানা ওয়ার্ল্ডহপারদের বিচরণের মানচিত্র। 

সাথের দ্বিতীয় ছবিটা ব্রান্ডন স্যান্ডার্সনের সর্বশেষ বই ট্রেস অব দ্য এমারেল্ড সী’র সাথে দেয়া কসমেয়ার গ্যালাক্সির চিত্র। কোন গ্রহটা কোন নক্ষত্রমন্ডলীতে অবস্থিত, আর সাথে নক্ষত্রমন্ডলীর চেহারা কেমন সেটা দেখানো হয়েছে।

আচ্ছা, ইতিহাস ও ভূগোল তো জানলাম। এবার? এই রে, এই প্রশ্নটা করেই তো বিপদে ফেলে দিলেন! আমার পেটে যা ছিল, সব তো উগরে দিলাম। এর পর আরো জানতে চাইলে স্যান্ডার্সনের নিজস্ব ওয়েবসাইতে চলে যান। এই যে এইখানে মাউস দিয়ে একটা টিপ দিলেই হবেঃ https://www.brandonsanderson.com/

ও, আরেকটা কথা তো বলাই হয় নি! ষোলটা শার্ডের কথা বলেছি না আগে? এবার সতেরতম শার্ডের কথা জানাই। না, না, ঠাট্টা করছি না (আফটার অল, আপনি তো আর আমার শ্বশুর মশায়ের ছেলে নন, ঠাট্টা করবো কেন!), সত্যি সত্যিই সতের নাম্বার শার্ড আছে। এটা আপনার আমার মত স্যান্ডারসন এবং কজমেয়ারের চরম কিছু ভক্ত মিলে তৈরী করেছে। যদি ঘুরে দেখতে চান, এইখানে টিপ দিয়ে চলে যানঃ https://www.17thshard.com/

কথা দিতে পারি, আপনার সময় মন্দ কাটবে না! 

এই লম্বা সময় ধরে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। (মাঝে মাঝে একটি আধটু বেলাইনের কথা বার্তা বলে ফেলেছি বোধহয়, ফ্যান্টাসি ভক্ত হিসেবে নিজগুণে কিছু মনে করবেন না, প্লীজ)।