পোস্টস

গল্প

"হঠাৎ বৃষ্টি"

১০ জুন ২০২৪

সিয়াম কবির

হঠাৎ বৃষ্টি

ধোঁয়া উঠা গরম চা, শুকনা রুটি আর একটা সিগারেট সকালের নাস্তা আমার। এই শহর আমার ভীষণ আপন, প্রতিদিন কতইনা স্বপ্নের বীজ বোনা হয় এখানে। হাজারো স্বপ্নের জাল বোনা হয় এখানে সবাই ছুটতে ব্যস্ততার পিছনে কেউ ছুটছে দুমুঠোভাতের জন্য, কেউবা প্রাচুর্যের শক্ত ভিত্তের জন্য।

প্রতিদিনেরমত স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ব্যস্ত আমি। বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে এক কাপ চা আর হাতে জলন্ত সিগারেট হঠাৎ  দমকা হাওয়া আর ঝুম বৃষ্টিতে কাঁক ভেজা হয়ে ছাউনির নিচে এসে দারালো একটা  মেয়ে। কৃষ্ণ কালো চুল মায়াবীচোখ দুধে আলতা গায়ের বরন প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরতে বাধ্য। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম মেয়েটার দিকে একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হতে পারে তাকে না দেখলে বুঝতামি না মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, নিজেকে তখন শাহরুখ কিংবা সালমান মনে হচ্ছিলো, বোধহয় প্রেমের ফুল আমারো ফুটলো, যাক এতদিনে একজন তো মুখতুলেচাইলো। ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়জানতাম তাই বলে এতমিষ্টি তা কল্পনাতেও আসেনি। 

ধিরেধিরে সে আমার কাছেআসতে লাগলো বোধ হয় এখনিপ্রপোজ করে ফেলবে!  আচ্ছা আমি কি ডিরেক্টরাজি হবো? নাকি একটু ভাব নিবো? 

হাতের সিগারেট টা ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে সিগারেটের ছ্যাঁকায় ঘোর কাটলো আমার। আর সে আমার পাশে বসে থাকা বিড়াল ছানা কে আদর করতে ব্যস্ত, এখন বুঝলাম ওই মায়াবী চাহনি আসলে আমার জন্য ছিলো না, ছিলো বিড়ালের জন্য। আমার ফাটা কপালে কেউ ট্যার চোখেও তাকালো না আর এই চন্দ্রাক্ষী তাকাবে! এসব ভাবনা আমার মানায় না। এতক্ষনে ভার্সিটিবাস চলে এসেছে আর আমার বিবেক আমাকে আমার স্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কি আর করার আবার ছুটতে লাগলাম স্বপ্নের পিছে।

বাসের লাস্ট সিটটা আমার জন্য ফাঁকায় থাকে সব সময়। বাস মানে আমার কাছে ঘুমের রাজ্য। ভোর ৬ টায় বিছানার সাথে যুদ্ধ করে বাসের সিটকে মনে হয় রাজ সিংহাসন এখানে চোখ খুলে রাখাটা মুশকিল বটে। চোখ বুঝতে যাব অমনেই দেখি চন্দ্রাক্ষী আমার পাশে! তার মানে সে আমার ক্যাম্পাসেরই কিন্তু কথা কি বলবো? কি বা বলবো মেয়েদের সাথে কথা বলতে আমি বড্ড দুর্বল, থাক আমি বরং ঘুমাই কিন্তু পাশে এমন সুন্দরী তরুণীর গায়ের চন্দন কাঠের সুবাস কি আর ঘুমতে দেয়।

ইক্সকিউসমি, আমি কি জালানার পাশে বসতে পারি!?

হ্যাঁ, শিওর। নিজের সিট টা ছেরে দিতে হলো তাকে।

কোন ডিপার্টমেন্টের? 

আমি? 

জ্বী, আপনাকেই তো বলছি

সাইকোলজি, আপনি? 

আমি "ল", আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?

হ্যাঁ, শিওর 

সাইকোলজি পড়লে কি মানুষের মনের কথা জানা যায়!? মানে আপনি তো সাইকোলজির স্টুডেন্ট আপনি আমার মন পড়তে পারবেন!?

মুচকি হেসে বললাম এ মন পড়ার চ্যাপ্টার টা আমার এখনো পড়া হয় নাই! তবে পড়তে পারলে আপনাকে জানাবো!

ফিক করে হেসে দিলো সে, এ যেন হাসি নয় কোনো তীব্র ঝরনার কল কল শব্দ! মনের প্রশান্তি আনার জন্য এই হাসিটাই যথেষ্ট। 

বেশ চঞ্চল মেয়েটা তার এই চঞ্চলতা আমাকে তার প্রেমে আষ্টেপৃষ্ঠে ফেলছে, শত সহস্র বছরধরে এমনি কারো উপরমুগ্ধ হবার অপেক্ষায় আমার মন। রাতারাতি তাকে নিয়ে স্বপ্নেরবীজ বোনা শুরু করে দিয়েছি, লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইডএ কখনো বিশ্বাস ছিলোনা আমার সেই আমিই কিনা প্রথম দেখায় প্রেমে পরে গেলাম!  প্রেমে আমি বহুবার পরেছি কিন্তু কাউকে এভাবে অনুভব করিনি তার মায়াবী চোখকলকল হাসি আর উদ্দাম চঞ্চলতা আমার চাই চাই।

বাসের হার্ড ব্রেকে ঘুম ভাঙ্গল আমার, তারমানে কি এগুলো স্বপ্ন ছিলো? না না বাস্তবই ছিলো বাস সিটেযে তার সুবাস এখনো ভাসছে কিন্তু সে তো এতক্ষনেলা-পাত্তা। এত বড় ক্যাম্পাসে এখন কোথায় খুজি তাকে, যাহ বাবা, নামটাই তো জিগ্যেস করা হয় নাই!  কি নামে ডেকে বলবো তোমাকে, মন্দ করেছে আমাকে ওই দুটি চোখে... মিফতা জামান এর গানটা শুনতে শুনতে ছুটলাম চণ্ডাল গুপ্তের ক্লাসে।

এমনিকরে কেটে গেলো দুইটা দিন কিন্তু তার দেখা আর মিললো না, এই দুই দিনে এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ভাবনার আরালে রাখতে পারি নি। আজ যেমনেই হোক তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। ল ডিপার্টমেন্টে একবার করা নেরে দেখি, পৃথিবী তো গোল ঘুরতেঘুরতে দেখা হতেও পারে!

দীর্ঘ দুই ঘন্টা খোঁজার পরেও এত সুন্দরীর মাঝে আমার চন্দ্রাক্ষী কে খুজে পাইলাম না। তার নামতো জানিনা আপাতত চন্দ্রাক্ষী বলেই ডাকি তাকে! 

কি ব্যাপার, মি.  সাইকোজিস্ট মন বুঝার চ্যাপ্টার পড়া বাদ দিয়ে হঠাৎ আইন অঙ্গনে পদার্পণ!?

আপনার মন পড়তে এসেছি, সেদিন তো আর পড়তে পারলাম না। 

হাহাহা, চা খাবেন আমার ডিপার্টমেন্টে এসেছেন চলেন আপনাকে চা খাওয়াই। 

আচ্ছা আপনার নাম টাই তো জানা হয় নাই, কিনাম আপনার? 

নীলিমা!

আমি আবি... 

জানি আপনি আবির, সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট, ফাইনাল ইয়ার পড়াশুনায় বেশ ভালো তবে একটু বাউণ্ডুলে স্বভাবের, টুকটাক লেখালিখি করেন গত বইমেলায় আপনার একটা বই বের হয়েছে যার খদ্দের মাত্র এক জন।।

আপনি আমার সম্পর্কে এত কিছু কেমনে জানেন?? 

ওইএকজন খদ্দের টাই আমি বস!  তবে যাই বলেন আপনি কিন্তু দূর্দান্ত লেখেন।

আর বইলেন না, লেখালিখি ছাইড়া দিবো মানুষ আজকাল বই পড়েই না, সবাই বন্দি ইন্টারনেটের শক্ত মায়াজালে। 

কে বলছে পড়েনা আপনি অবশ্যই লিখবেন আপনার লেখার প্রথম পাঠক হবো আমি।

আচ্ছা ঠিক আছে।

তবে আপনার শক্ত শক্ত ভাষা পড়তে আমার বেশ কষ্ট হয় তবে আপনার লেখার মাঝে একটা প্রেম আছে। আপনি একদিন অনেক বড় লেখক হবেন। আপনাকে প্রথম দেখেই আমার চেনা চেনা লাগছিলো পরে আপনার বইএর লাস্ট পেজে ছবিটা দেখে শিওর হয়েছি। আর এই দুই দিন আপনাকে নিয়ে একটু রিসার্চ করেছি। 

তা রিসার্চ এর রিপোর্ট কি!?

তা পরে জানতে পারবেন, এখন আমার ক্লাস আছে আপনার নাম্বারটা দেন মাঝে মাঝে আপনাকে জ্বালাবো! 

নাম্বার নিয়েই আচমকা উধাও হয়ে গেলো সে। মনের ভিতর একঝাক কবুতর বাক বাকুম করে উঠলো! পুরো মুহূর্তটা আমার কাছে সিনেমাটিক মনে হচ্ছিলো। এভাবেও কাছে আসা যায়!?

এমনি করেই কেটে গেলো কয়েকটা মাস ধিরে ধিরে গড়ে উঠলো বন্ধুত্ব কিন্তু এই বন্ধুত্ব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। ধিরে ধিরে আমি তার মায়ায় আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে পরলাম, তাকে এক পলক দেখার জন্য বেকুল হয়ে থাকতো আমার চোখ, তার সাথে কাটানো সময় গুলো আমার জীবনের সবচেয়ে দামী কিছু, প্রেমে পরার মত এত স্নিগ্ধ সুন্দর অনুভূতি বোধ হয় আর কিছুতে নেই!  আমার প্রতিটি স্বপ্নের পাতায় পাতায় খোদায় করে লিখেছিলাম তার নাম। 

আমাকে নিয়ে তার অনুভুতি কিবলে তা আমার জ্ঞানের বাহিরে তবে আমার প্রতি তার যত্ন, আমাকে বন মানুষ থেকে মানুষ করা, অগোছালো জীবন গুছিয়ে দেয়া এগুলো তো ভালোবাসারই বাহিরপ্রকাশ। এতটুকু তো অনুভব করতে পারতাম কিন্তু মুখ ফুটে বলার শক্তি ছিলো না কারো।

আমার ফাইনাল পরীক্ষা ইতি মধ্যেই শেষ, অবশেষে জীবন নামক প্রথম চ্যাপ্টার ক্লোজ করলাম, এইবার সময় এসেছি চন্দ্রাক্ষী নামক স্বপ্নটা পূরন করার। জরুরী একটা কাজে কয়েক দিনের জন্য গ্রামে যাইতে হবে ফিরে এসে এবার তাকে বলে দিবো আমার অনুভূতির কথা, বলে দিবো সেই কাব্যের কথা যার কাব্যলক্ষ্মী শুধুই সে, এই নর্দানলাইটে সে জ্বালিয়েছে ভালোবাসর আলো, সেই আলোতে তাকে ভেজানর সময় এসে গেছে।।

সিগারেট ধোয়া উরাতে উরাতে ভাবছিলাম তার কথা, তাকে কল দিতে যাবো অমনিতার কল, কি টাইমিং!

হ্যালো

কালকে একটু দেখা করতে পারবা কিছু বলার ছিলো তোমাকে।

কিন্তু, আজকে রাতের ট্রেনেই যে আমি গ্রামে যাচ্ছি আর্জেন্ট কাজ পরে গেছে, বলেছিলাম তো তোমাকে, ফোনে বলা যাবে না? 

সরি ভূলে গেছি, ফিরবা কবে? 

সাত আট দিন তো লাগবেই

ঠিক আছে তাহলে ফিরো তারপর বলবো।সাবধানে যেও আর আসার সময় মায়ের হাতের আঁচার আনতে ভুলোনা। 

আচ্ছা, ঠিক আছে। 

এই প্রথম বাড়ি যাওয়ার আনন্দের থেকে খারাপ লাগা অনুভব করছি বেশি। একটা শুন্যতা, কিছুটা চাপা কষ্ট ভিতর থেকে গুমড়ে উঠছে! বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে নিজেকে। এই অনুভূতি বলে বোঝানোর ভাষা আমার নাই।কর্ম ব্যস্ত ঢাকা আজ অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, কেনো এত কষ্টহচ্ছে আমার? যাচ্ছি তো মাত্র কয়েক দিনের জন্যই, কিন্তু অনুভূতি টা ঠিক এমন যেনো ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছি তাকে! 

এসবকি ভাবছি আমি, এত ইমোশনাল হলে তো চলে না, হে অতৃপ্ত আত্মা কন্ট্রোল করো নিজের সুপ্তবাসনা আবার আসিব ফিরে এই স্বপ্নের শহরে, পূর্ণতা দিতে এক অসমাপ্তপ্রেম কাহিনির।।

ট্রেনে উঠে বসতেই তার কল, তার সাথে কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পরছিলাম। ক্লান্ত শরীরে ঘুমটা এত গভীর হয়েছিলযে ঘুম ভাঙ্গার পরে একদম লাস্ট স্টেশনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। ট্রেন থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরালাম, ওহ নীলিমা কে জানানো দরকার পৌছে গেছি একটা কল দেই। 

একি আমার ফোন কোথায়!? সব পকেট, ব্যাগ কিংবা ট্রেনের পুরা বগি খুঁজেও পেলাম না ফোনটা।  এখন আমি কি করবো এই ফোন ই যে তার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তার নাম্বার টা ফোনেই সেভ ছিলো কখনো মুখস্থ করা হয় নাই।  তবুবৃথা চেষ্টা করলাম মনে করার কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলামনা।  নিজের উপর প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে, এ কয় দিন কি করে থাকবো কথা না বলে, হতাশার চরম শিখরে পৌছেগিয়ে ছিলাম। 

সাতটা দিন কোনো রকম পার করতে পারলে হয়, কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না বাবাকে ডাক্তার দেখানো এবং জমি জমা নিয়ে কিছু জামেলায় ঢাকায় ফিরতে ফিরতে আমার এক মাসের বেশি সময় লেগে গেলো।ঢাকায় পৌঁছে প্রথমেই গেলাম তার সাথে দেখা করতে পুরা ক্যাম্পাস তন্ন  তন্নকরে খুঁজেও তার দেখা কোথাও পেলাম না। আচ্ছা ওর বাসার ঠিকানা তো আমার জানা, কত রাত ওকে নামিয়ে দিয়েছি ওর বাসার সামনে।একবার ওর বাসায় গিয়েদেখি, কিন্তু কোন মতেই সাহস করে উঠতে পারছিলাম না, কেমন যেন একটা ভয় ভয় লাগছিলো এই ভয় হারিয়ে ফেলার ভয় এই ভয় না পাওয়ার ভয়।।

এরপরে আমার সাথে কি ঘটতে চলেছে তা আমার কল্পনার ওবাহিরে ছিলো!!

কলিং বেলের সুইস টা তে চাপ দিতেই দরজা খুলে দিলো এক মধ্য বয়সী নারি।সম্ভবত ওর মা_

আসসালামু আলায়কুম 

অলায়কুম সালাম, কাকে চাই?

আন্টি আমি নীলিমার ফ্রেন্ড ওকে একটু ডেকে দেওয়া যাবে?

ওতো বাসায় নেই, গত ৫দিন আগে স্কলারশিপে দেশের বাহিরে চলে গেছে। 

দেশের বাহিরে গেছে মানে! আমি ওর খুব ভালো বন্ধু আমি তো ওর স্কলারশিপের ব্যাপারে কখনো শুনিনি। 

আসলে ওর স্কলারশিপ এর জন্য অনেক আগে অ্যাপ্লাই করা ছিলো হঠাৎ করেই মেইল আসছে এবং ওকে ১ মাসের মধ্যে যাইতে বলছে_

মুহুর্তেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসতে লাগলো আমার আকাশ, চোখ ভিজে আসতে লাগলো অদ্ভূত এক কান্নায়, এমত অবস্থায় ওখানে দাড়িয়ে থাকার শক্তি আমার ছিলোনা।  টিমটিম করে জ্বলতে থাকাল্যাম পোষ্ট টার নিচে নিজেকে সমর্পণ করে সিগারেটের আগুনে ঠোঁট পোড়াতে লাগলাম। একটি দূর্ঘটনা আমার জীবনকে দুমরে মুচরে দিয়েছে, এই ধূসর ধোঁয়াটে শহরে আমি এক অতৃপ্ত প্রেমিক, যে কিনা নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করার আগেই হারিয়ে ফেললাম। সেদিন যদি ফোনটা না হারাতাম হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ আর ঘৃণানিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে চিলেকোঠার সেই ছোট্ট নীড়ে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা যে কি তাসেই বুঝে যে কারোউপর শক্ত ভাবে আকৃষ্টহয়েছে, আর সেই ভালোবাসা যদি হয় অপ্রকাশিত তাহলে সে যন্ত্রণা আরো কোটি গুন বাড়িয়ে দেয়।  আমি এক অপ্রকাশিত ব্যর্থ কবি যার কবিতা প্রথম চরণেই ফুরিয়ে গেলো!!

সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরে বুকটা ভারি হয়ে আসে, চিনচিন ব্যথা অনুভব করি, একটা হাহাকার দীর্ঘশ্বাস সব সময় তারা করে বেড়ায় নিজেকে। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন নীলিমার বাহিরেও তো আমার একটাস্বপ্ন ছিলো বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম সেটা। আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, নিজের জন্য না হলেও বাবা মার জন্য হলেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

জীবনে এমন কিছু না পাওয়া, এমন কিছু কষ্ট থাকা খুব দরকার, যে কষ্টের কথা মনে করে একদিন অঝোরে কাঁদা যায়।  যেনা পাওয়ার কথা ভেবে সিগারেটে আগুনে ঠোঁট পোরান যায়।  তাকে পেয়ে গেলে হয়তো সব পাওয়া হয়ে যেতো, নিজে কেমনে হতো সুখের ফেরিওয়ালা।তখন সে সুখ টাও পানসে লাগতো। প্রতিদিন বিরিয়ানী খাইতে যেমন ভালো লাগতো না তেমনি সবসময় সুখী অনুভব করলেও ওই সুখটা এক সময় গিয়ে বিরক্তির কারন হয়ে দাড়াতো। তাই থাক না কিছু অপূর্ণতা, কিছু ব্যর্থতা, খুব পছন্দের  কিছুনা পাওয়ার বেদনা, জীবন হোক টক, ঝাল, মিস্টি। কখনো হাসি কখনো কান্না এইতো জীবন।।

তাকে অন্তরে লালন করেই কেটে গেলো দুইটা বছর। এই দুই বছরে অনেক কিছু চেঞ্জ হয়েছে, আমার ঘামে ভেজা কোঁকড়ানো  টি শার্ট এখন ফর্মাল শার্ট, প্যান্টের রূপ নিয়েছে। বেকারত্বের অভিশাপ ছাপিয়ে সার্ভিস হোল্ডার এর ট্যাগ লেগেছে নামে।  রোজ গারের মত আজও আমি সেই বাস স্টন্ডের শক্ত  স্টিলের ব্রেঞ্চিটাতে বসে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। আজ তাকে বড্ড মিস করছি, ঠিক এমনি একটা  ঝুমবৃষ্টির সকালে কালো চোখের মুগ্ধতায় ডুবিয়ে সে এসেছিলো আমার অন্তরে, সময়ের বিবর্তনে আজ সে হাজার মাইল দূরে অথচ আমার মন থেকে সে এক মিলিমিটার ও দূরে যায়নায়।  খুব আদরেই রেখেছি তাকে। 

বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তেই আছে, বাসটাও আসছেনা, আজ বের হওয়া উচিৎ হয় নাই বৃষ্টিটা আর একটু আগে আসলে কম্বল মুড়ি দিয়ে তরতাজা একটা ঘুম দিতাম! 

ঢাকার বুকে বৃষ্টি মানে এক আকাশ ভালোলাগা, চার দিকে নিস্তব্ধ, গাড়ির প্যা পো আওয়াজের  যায়গায়বৃষ্টির ঝম ঝম আওয়াজ, এর মধ্যে জেগে উঠেছে আমার কবি মন বৃষ্টি  নিয়ে কবিতা লিখতে ব্যস্ত আমি হঠাৎ একটা ধূসর রঙের গাড়ি এসে থামলো ছাউনির সামনে, গাড়ির দরজা খুলে কেউ একজন গোলাপি পা জোরে মেলেদিলো জল জমা রাস্তার বুকে, হালকা নীল শাড়ি পরিহিত কোনো এক রূপ কথার রাজকন্যা এসে দাড়ালো বৃষ্টির মাঝে, বৃষ্টির ঝাপসা ধোয়ায় ঠিক করে দেখতে পাচ্ছিলাম না মুখটা তবে স্পষ্ট  বুঝতে পারছি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আশেপাশে তাকালাম কিন্তু আজ আর কোনো বিড়াল ছানা নেই আমার পাশে যেমনটা প্রথম দিন ছিলো! তাকানো হুবহুব নীলিমার মত, তাহলে কি নীলিমা ফিরে এসেছে??  নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম তার....

নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না, দুই বছর পরে একই সময়, একই যায়গায় মুখমুখি দাঁড়িয়ে আমরা দু'জন! কারো মুখে কোনো ভাষা নেই, নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দু'জন দুজনার দিকে, তার চোখে যেন হাজারো আক্ষেপ জমা, জমা সহস্র বছরের অভিমান। বৃষ্টির জলের মাঝেও তার চোখের নোনতা জলের স্রোত নজর এড়াতে পারে নি আমার...

তার চোখ বলে দিচ্ছে সে আমাকে ছাড়া ভালো নেই, ভালো থাকতে পারে না তবুও নির্লজ্জতার চরম শিখরে গিয়ে বলেই বসলাম কেমন আ...  অমনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে বলে উঠলো "হারিয়েই যদি যাবে তাহলে কেন এসে ছিলে? কেন এত স্বপ্নে জরালে, যদি স্বপ্ন ভাঙ্গাই হয় পরিনতি?" 

আমি হারাইনি নীলা, সেদিন বাড়ি যাওয়ার পথে আমার ফোনটা চুরি হয়ে যায়, আমি অনেক চেষ্টা করেও তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি, ঢাকায় এসে তোমাকে অনেক খুজছি শেষমেশ বাধ্য হয়ে তোমার বাসায় গিয়ে জানতে পারি তুমি স্কলারশিপে বাহিরে চলে গেছে। 

আমি তো যেতে চাইনি আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। এই স্কলারশিপ টা আমার স্বপ্ন ছিলো কিন্তু তোমার সাথে কথা না বলে আমি এই স্বপ্ন পূরণ করতে চাচ্ছিলাম না।বাবা যখন আমাকে না যাওয়ার কারন জানতে চাইলো তখন আমি কিছু বলতে পারি নি, এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে যেতে হয়েছে। এই দুই বছরে এক মুহূর্তের জন্যেও তোমাকে মনের আরাল করতে পারি নাই। আজ ফিরে পাবো সে আশাও করিনাই তবে এই দিনে আমাদের এইখানে প্রথম দেখা হয়েছিলো তাই একটা অস্পষ্ট বিশ্বাস নিয়েই এখানে আসা, 

নীলা আমি জানিনা পাঁচ বছর পরে কি হবে কিংবা এখান থেকে চলে গেলেই আমাদের জীবনে কি পরিবর্তন আসবে, আমি জানিনা এই গল্পের উপসংহারে কি আছে তবে এতটুকু জানি আজকে যদি তোমাকে একটা কথা বলতে না পারি আমাকে সারা জীবন পস্তাতে হবে, সারাটা জীবন আমার এটাই মনে হবে কেন আজকে তোমাকে বললাম না চন্দ্রাক্ষী আমি তোমাকে অসম্ভব বেশি ভালোবাসি! 

অমনি সে শক্ত করে জরিয়ে ধলো আমায়, প্রথম বারের মত কোনো নারীর স্পর্শ অনুভব করলাম, চন্দন কাঠের তীব্র সুবাস এখনো ভাসছে তারগায়ে, অবশেষে পূর্ণতা পেলো আমার অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী, প্রকাশিত হলো একটি অপ্রকাশিত গল্প। 

এই দূষিত শহরে আবার ফুটলো রক্তজবা, ধুলোর শহর হয়ে উঠলো রঙ্গিন, এই শহরে বারংবার নেমে আসুক ঝুম বৃষ্টি, হঠাৎ বৃষ্টির মতই পূর্ণতা পাক অপূর্ণ গল্প গুলো। ফিরতে জানলে এভাবেও ফিরে আসা যায়...!