Posts

গল্প

ফেসনেট

June 10, 2024

মোস্তফা হাসান

ফেসনেট
(১)
আজকাল আমার কেমন সব অদ্ভুত অনুভূতি হয়। মা মারা যাবার কিছুদিন পর থেকে এরকম হচ্ছে। 
(২) 
সেদিন আকাশটা ছিল ভারি পরিষ্কার। ছিল সারা আকাশে সাদা-নীল মেঘের ছড়াছড়ি। সারা রাস্তা মা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি মা কে ওল্ডহ্উাসে রেখে আসতে যাচ্ছিলাম। ইলেকট্রনিক স্বয়ংক্রিয় গাড়ি। সর্বশেষ মডেল। আমি স্টিয়ারিং ধরে বসে ছিলাম ঠিক, কিন্তু আমাকে কিছু করতে হচ্ছিল না। গাড়ির মডিউলে নিদের্শ দেয়া ছিল। ঠিক পৌছে যাবে। গন্তব্য শহরের শেষ প্রান্তের ওল্ডহাউস।
মার চোখেমুখে খানিকটা বিষণœতা। দেশের সাধারন আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়স হলেই সবাইকে ওল্ড হাউসে থাকতে হবে। মা আইনটি ভালো করেই জানে। তাই তার বিষণœ হওয়ার যথাযথ কারণ খুজে পেলাম না। 
শুনেছি প্রাচীনকালে কেউ তার বাবা-মাকে ওল্ড হাউসে রেখে আসলে সবাই সেটাকে খারাপ চোখে দেখত। যে সন্তান তার বাবা-মাকে ওল্ডহাউস বা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসত, সবাই তাকে ধিক্কার জানাত-অভিশাপ দিত। প্রাচীনযুগের ঈশপের গল্পটিও আমি পড়েছি ই-লাইব্রেরি থেকে। একলোক তার বৃদ্ধা মাকে ঠুঙ্গিতে উঠিয়ে দূরে কোথাও ফেলে আসতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনি তার ছোট বাচ্চা ছেলে তাকে অনুরোধ করে- ‘বাবা, ঠুঙ্গিটা আবার নিয়ে এস, যাতে তুমি যখন বৃদ্ধ হবে, তখন আমি ওই ঠুক্সিগ করে তোমাকেও সেখানে ফেলে আসতে পারি।’ একথা শোনার পর লোকটি আর একপাও সামনে এগোতে পারে নি । পারে নি তার বৃদ্ধা মাকে দূরে ফেলে আসতে। কিন্তু আমাদের সময় যে ভিন্ন সময়। এখন বরং কেউ তার বৃদ্ধা বাবা-মাকে নির্ধারিত সময়ে সরকারি নির্দেশমত ওল্ডহাউসে না রেখে আসলে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত ডিটেনশন শাস্তি তো পেতেই হয়, সাথে সাথে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্যে অবহেলা করার জন্য তার সুনাম নষ্ট হয়। দেশের অন্যতম বৃহৎ বায়ো-রোবোটিক কোম্পানীর একজন প্রভাবশালী বিজ্ঞান-কর্মকর্তা হিসেবে আমার বিশেষ সুনাম আছে। আমি সে ঝুকি নিতে চাই নি। 
দেশের এ্কজন সাধারন মানুষও আজ ভীষণরকম ব্যস্ত। সেখানে বৃদ্ধা বাবা-মাকে ঠিকমত দেখাশুনা করা; সেবা-শ্রশ্রæষা করা দুরূহ কাজ। তাই সরকার এক দশক আগে প্রতি লোকাল ইউনিটে আধুনিকতম ওল্ডহাউস তৈরি করেছে। সেখানে চিকিৎসা-বিনোদনসহ সব ধরনের জীবনধারনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। ওল্ডহাউসগুলোতে  স্বয়ংক্রিয় সুপার কম্পিউটার দিয়ে সবকিছু কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করা হয়। একঝাক দক্ষ কর্মচারীসহ সপ্তম প্রজন্মের মানুষের মত সহানুভূতিসম্পন্ন রোবট সেবক-সেবিকা দ¦ারা এখানে সবাইকে দেখাশুনা করা হয়। কোন অসুবিধা ও অবহেলা হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। তবু বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আমি গত সপ্তাহে এসে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে গেছি। এখানকার প্রধান কর্মকর্তার সাথে কথা বলে গেছি। তিনি জানিয়েছেন আমি যখনই চাইব দেখা করতে আসতে পারব। সেটার হয়ত প্রয়োজন হবে না । কারন হলোগ্রাফিক ভিডিও মডিউলের মাধ্যমে এখন দুরের দুইজন মানুষ পাশাপাশি বসে কথা বলতে পারে। ঘুরে আসতে পারে যে কোথাও। 
অফিশিয়াল সব ফরমালিটি শেষে মাকে বিদায় জানিয়ে আসার পালা। মায়ের চোখদুটো কেমন ছলছল করে উঠল টের পেলাম। বাবা মারা গিয়েছিল সেই ছোটবেলাই। একমাত্র সন্তানকে মানুষ করার জন্য আমার মাকে জীবনে বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। মা আমার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। বলা যায় শুধুমাত্র মায়ের চেষ্টায় আজ আমি এতদুর এসেছি। তবে আমার মা সবসময় একটু অন্যরকম। যেন প্রাচীনকাল থেকে উঠে এসেছে। এ পৃথিবী- এসব নিয়ম কানুনের মধ্যে জীবন পার করেছে, তবু মনে হয় চারপাশের সব কিছ তার কাছে কত অপরিচিত।
মা আমকে কাছে নিয়ে পাশে বসালেন। কৃত্রিম এক বিশেষ তন্তু দ্বারা তৈরি সোফা। বেশ নরম আর খুব আরামদায়ক।  অন্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আডাডায় মশগুল। হাসিখুশি। শুধু আমার মায়ের চেহারায় কি এক বিষণœতা। আমি ছাড়া তা আর কেউ লক্ষ্য করার কথা নয়। 
মাকে বললাম- ‘তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি, মা।’ 
মা আমার পাশে রাখা ডান হাতটি চেপে ধরল। বলল- ‘আমিও তোকে খুব ভালবাসি, খোকা।’ 
মায়ের কন্ঠ যেন কোথায় আটকে গেল। আমি জানি আমার মা সবার থেকে একটু আলাদা। তাই বিশেষ কিছু মনে করলাম না। স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম- ‘আমি প্রতি সপ্তাহে তোমাকে দেখতে আসব, মা। চিন্তা কর না।’ 
মা শুধু বলল- ‘আচ্ছা’। আমি উঠে দাড়ালাম। মা তাড়াহুড়া করে চলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম না কেন। 
(৩)
ওল্ডহাউস থেকে বের হতেই মেবাইলে বিশেষ ইলেকট্রনিক ভয়েস মেসেজ এল। টিক করে একটু শব্দ হল। সরকারি দপ্তর থেকে বিশেষ অভিনন্দন বার্তা। “ মায়ের প্রতি আপনার কর্তব্য যথাযথ পালনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি এদেশের একজন সুসন্তান। ” খুব যান্ত্রিক রোবোটিক কন্ঠ। 
গাড়িতে চড়ে মনে হল ফেসনেটে একটা স্ট্যাটাস দেওয়া দরকার। দিলাম। মোব্ইালে কি চেপে চেপে  টাইপ করা লাগে না। শুধু মুখে বললেই চলে। অটোমেটিক টাইপ হয়ে যায়। মাকে আমি কতটা ভালবাসি তা জানাতেও ভুল করলাম না। আমার ব্যক্তিগত ডাটাবেসে সংরক্ষিত সব ছবিগুলো বিশেষ একটি সফটওয়ার দিয়ে বাছাই করলাম মায়ের সাথে তোলা বেস্টমুহূর্তটি। মায়ের সাথে তোলা আমার একটা সেলফি। সেটি আপপলোড করলাম স্ট্যাটাসের সাথে। মূহুর্তের মধ্যে কয়েক হাজার লাইক। অভিনন্দন বার্তা। 
ফেসনেট- এই জিনিসটা আমার খুব পছন্দ। অনেক আগের কালের ফেসবুকের আপগ্রেডেড ভার্সন। গত কয়েকশ বছরে পৃথিবী প্রায় পাল্টে গেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বায়ো-রোবোটিক প্রযুক্তি আর যুগান্তকারী সব কমুনিকেশন টেকনোলজির আবিষ্কার আমাদের জীবনযাত্রাকে তীব্রভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। শুধু আগের যুগের ফেসবুক টিকে গেছে ফেসনেট নামে। আমাদের পারস্পারিক ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রায় সব কাজই এখন আমরা সম্পন্ন করি এই ফেসনেটে। 
আমি একটি বিশেষ কারনে ফেসনেট খুব পছন্দ করি। কারনটি হল এই ফেসনেটে আমি আমার বন্ধুদের সাথে যখন খুশি তখন আড্ডা  দিতে পারি। ব্যস্ততার কারনে কোন একটা জায়গায় উপস্থিত হয়ে দেখা করা-মিলিত হওয়া প্রায় অসম্ভভব। প্রয়োজনটাই বা কি? আমি কোন প্রয়োজন দেখি না। ফেসনেটেই আমরা হলোগ্রাফিক গ্রæপ আড্ডায় মেতে উঠি। আমরা সবাই ভার্চুয়ালি হলোগ্রাফিক ভিডিও-ইমেজিং মডিউলের মাধ্যমে একজায়গায় একত্র হতে পারি। যেন আমরা সবাই একরুমে বসে আছি। আমরা ভার্চুয়ালি হ্যান্ডশেক করি-একে অন্যের পেটে খোঁচা মারি-মাস্তি করি। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি আগে তরুনদেরকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য কত না কষ্ট করতে হত। 
অফিসে পৌছে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। রোবোটিক ডিসিপ্লিন ডিসঅর্ডার নং শূন্য শূন্য নয়। এরকম কেস তাৎক্ষনিক নিষ্পত্তি করার বিশেষ নির্দেশনা আছে। ‘এরম’ নামের রোবটটি নাকি রোবট ‘ইরনা’র গালে চুমু খেয়েছে। এরা সবাই নবম প্রজাতির ছয় মাত্রার রোবট। মানুষের মত কিছু আবেগ দেওয়া হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। মেজাজটা চড়ে গেল। এ এক নতুন উপদ্রব। আমরা মানুষেরা আর প্রেম করি না-ডিনএ প্রোফাইল ম্যাচিং যেখানে আছে, সেখানে প্রেম করে মনের মিল খোজা ¯্রফে সময়ের অপচয় । আর এই রোবটেরা প্রেম করা শুরু করছে। এজন্য আমি রোবটের কপোট্রনে মানুষের মত আবেগ দেওয়ার ঘোর বিরোধী। যাহোক, একটা সামারি ট্রায়াল করে আমি ‘এরম’ কে তার নিউকিøয়ার পাওয়ার বন্ধ রেখে এক সপ্তাহ অচল করে রাখার নির্দেশ দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলাম। 
মনটা কেন জানি খালি খালি লাগছে। মাকে ওল্ডহাউসে রেখে এসছি বলে! না, তা তো হওয়ার কথা নয়। এটাতো একটা সাধারন নিয়ম। আমরা সবাই নিয়ম পালন করে করে অভ্যস্ত। নাকি খুব বেশি নিয়ম পালন করে ফেলছি আমরা? আমি অবাক হলাম এসব বাতুল চিন্তা আমার মাথায় তো আসার কথা না। 
(৪)
কয়েকমাস কেটে গেছে মা কে ওল্ডহাউসে রেখে এসেছি। ব্যস্ততার কারনে আমি মাকে সশরীরে দেখা করতে যেতে পারিনি। তবে দুয়েকদিন পরপর মায়ের সাথে দেখা হয়, কথা হয় হলোগ্রাফিক ভিডিও মডিউলে। কোন রকম অসুবিধা হচ্ছে না। জীবনধারনের সব উপকরণ সেখানে রয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক সেবা ও পরিচর্যার ব্যবস্থা । বরং মা আমার সাথে থাকলেই আমি ঠিকমত হয়ত পরিচর্যা করতে পারতাম না। তবে এখন আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করছি- প্রথম প্রথম মা আমার সাথে ফেসনেটে হলোগ্রাফিক ভিডিও মডিউলে অনেক গল্প করত। কয়েকদিন থেকে খুব বেশি কথা বলে না। আস্তে আস্তে কথা বলার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মাযের চোখের কোণায় কালি পড়েছে। কি যেন একটা লুকাতে চায় আমার মা। সে কি চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রæ? তাই বা হবে কেন! ওল্ডহাইসে কিসের অভাব? 
বুঝতে পারছি মার শরীরটা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ওল্ডহাউসের মেডিকেল প্রধানের সাথে কথা বলা দরকার। কথা বলব বলব বলে আরো সপ্তাহখানেক চলে গেল। মাঝে মাঝে মনে হয় এত ব্যস্ত না হলে কি হয় না! কিন্তু পারি না। একটা তীব্র নেশা- দুর্মট প্রতিযোগিতা আমাকে থামতে দেয়না। পাছে আবার আমি অন্যদের থেকে পিছনে পড়ে যায়। 
মেডিকেল প্রধান ডাক্তার আমার অনুরোধে বিশেষভাবে আমার মাকে চেকআপ করালেন। কোন সমস্যা নেই বলে তিনি আমাকে আশ^স্ত করলেন। আমি আশ^স্ত হলাম। এখনকার মেডিকেল পরীক্ষা শতভাগ নির্ভুল-সেখানে আশ^স্ত না হওয়ার কিছু নেই। 
আমি মাকে ফেসনেটে ভিডিও কল করছি। পাচ্ছি না। আগে সবসময় মাকে পেতাম। এখন মা সবসময় ফেসনেটে থাকেন না। তিনি কি নিজের আলাদা জগৎ তৈরি করে নিচ্ছেন। না কি আমার উপর কোন কারনে অভিমান। অভিমানই বা হবে কেন? আমি তো সবসময় মায়ের সাথে কথা বলছি, খোজ খবর নিচ্ছি- দেখা হচ্ছে আমাদের ফেসেনেটের হলোগ্রাফিক ভিডিও মডিউলে। 
শেষ পর্যন্ত সন্ধাবেলা মাকে পেলাম। 
‘খোকা, আজ পূর্ণিমা বোধ হয়। একটু পরেই ভরাট চাঁদ উঠবে আকাশে।’ মাকে আজ একটু হাসিখুশি লাগছে। পরক্ষনে আবার মনে হল নাকি আমার সাথে কথা বলার সময় মা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করছে। আজকাল মাকে বুঝতে আমার খানিকটা কষ্ট হয় বৈকি!
‘তোমার বয়স হয়েছে, চাঁদ দেখো, জ্যোন্সা উপভোগ কর; আমার কি সেই সময় আছে, মা?’ আমি বললাম্ । কন্ঠে খানিকটা কি বিরক্তি ঝরে পড়ল? আমি নিজেই অবাক হলাম। আমি তো কখনও মাকে সামান্যতম কষ্টও দিতে চাই ন্।া 
মা আমার কন্ঠের বিরক্তিভাব খেয়াল করল বলে মনে হল না। বলল- ‘খোকা, একটু আসবি তুই এখানে। তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।’
এবার সত্যি সত্যি আমি খুব অবাক হলাম। মাকে বললাম- ‘তোমার সাথে আমার তো প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়। এখনও তো তুমি আমাকে দেখছই।’
‘এভাবে না খোকা। আমার খুব ইচ্ছে করছে তোকে পাশে বসিয়ে নিয়ে গল্প করি। তোকে স্পর্শ করি। তোর মাথায় একটু হাত বুলায়, চুলে বিলি কাটি। আর তোর কপালে চুমু খায়-ঠিক ছোটবেলার মত!’ মায়ের কন্ঠ ভারি হয়ে এল। 
আমি কোনরকমে বললাম- ‘কাল পরশু একসময় চলে আসব, মা। তুমি চিন্তা কর না।’ 
(৫)
পরের সপ্তাহটা এত ব্যস্ততার মধ্যে কাটল যে আমি ভুলেই গেছি মার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। এমনকি মার সাথে ফেসনেটেও দেখা করতে পারিনি। 
মাকে কল করব ঠিক তখনি ওল্ডহাইস থেকে টেলিফোন। আমাকে জানানো হল আমার মা মারা গেছে কিছুক্ষন আগে। আমি মুহূর্তের মধ্যে পাথরের মূর্তি হয়ে গেলাম। হঠাৎ করে পৃথিবীটা আমার স্তব্দ হয়ে গেল। আমি একটা শব্দও উচ্চারন করতে পারলাম না। আমাকে স্বান্ত¡নাাসূচক কিছু কথা বলে আর আমার মায়ের আতœার শান্তি কামনা করে টেলিফোন লাইন কেটে গেল। 
আমি পড়ি কি মরি অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলাম। কোনমতে ওল্ডহাউসের ঠিকানা গাড়ির মডিউলে সেট করে সিটে এলিয়ে পড়লাম।  

(৪)
ওল্ডহাউসে বিশেষ রুমে মার লাশ রাখা হয়েছে। মৃত মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল। কান্নায় আমি ভেঙে পড়লাম। ওল্ডহাউসের প্রধান এসে আমাকে স্বান্তনা দিতে লাগলেন। আমি আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নিলাম। মৃত মায়ের মুখের পাশে মুখ নিয়ে আমি একটা সেলফি তুললাম। ফেসনেটে সেটি আপলোড করে সবাইকে আমার মায়ের মৃত্যসংবাদ জানালাম। আমার মায়ের আতœার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করতে অনুরোধ করলাম। 
কিছ্ক্ষুণের মধ্যে কয়েক হাজার স্যাডলাইক। আমার সব বন্ধুরা শোক ও সমবেদনা জানিয়ে কমেন্ট করল। কিন্তু আমর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আমার বন্ধুরা সশরীরে আমার পাশে উপস্থিত থাকুক। আমি খুব কষ্ট পেলাম-কেউ আমার মায়ের বিদায়বেলা এল না। কবর দেয়ার সময় কাউকে পেলাম না।  আমার হঠাৎ খেয়াল হল আমিও আমার কোন বন্ধুদের বাবা-মার মৃত্যর পর তাদের শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত থাকিনি। শুধু ফেসনেটে একটা শোকবার্তা পাঠিয়েছি।  
(৫)
আমার হাতে ধরে রাখা ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছি। দিন দিন আমার মধ্যে একটা আকাঙ্খা তীব্র হচ্ছে। ছবিটার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকি আর বুকের মধ্যে একটা প্রচন্ড শূণ্যতা অনুভব করি। মার শেষকৃত্য শেষে চলে আসার সময় ওল্ডহাউসের প্রধান আমাকে ছবিটা দিয়েছেন। মা এই ছবিটা আমাকে দেওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করে গিয়েছিল। আমার শৈশবের একটা ছবি। মা আমাকে পরম মমতায় বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। বিস্তৃত হাসি তার চোখেমুখে। এই ছবিতে আমার মাকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী রমণীর মত মনে হচ্ছে। 
মার শেষ ইচ্ছেটার কথা বার বার মনে পড়ছে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমারও খুব ইচ্ছে করছে মাকে জড়িয়ে ধরতে। মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প করতে। তার মমতামাখা স্পর্শ পেতে। 
দিনদিন আমার মধ্যে এই অনুভূতি তীব্র হচ্ছে। এসব অনুভূতি আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগে। মা মারা যাবার পর কি সবার এরকম অনুভূতি হয়?
 

Comments

    Please login to post comment. Login