পোস্টস

চিন্তা

হাসির মধ্যে বেদনা

১০ জুন ২০২৪

মোঃ সিফাত আল ইসলাম

আজ কত স্যার তাদের গল্প ও বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের বেদনা প্রকাশ করলেন। সেই দিন আর কোনো দিন না, আমাদের দশম শ্রেণির আনুষ্ঠানিক ক্লাসের শেষ দিন। প্রায় পাঁচ বছর যাবত এই গাইবান্ধা বয়েজ স্কুলে পড়েছি। অবশ্য প্রাইমারি থেকে হাইস্কুলে চলে আসার সময় অতটা বেদনাদায়ক ভাবে ভাবিনি। তবে আমি এখনও ভাবতে পারি না যে, এই স্কুলে আর জীবনও পড়াশুনা করতে পারব না। প্রথমে কিছু মনে হলো না। ক্লাসে হাসাহাসি করলাম, স্যারদের সাথে ছবি তুললাম, কথা বললাম, তাঁদের কথাও শুনলাম। কিন্তু.. কিন্তু যখন সবাই হই দিয়ে স্কুল থেকে বের হলাম, কেউ আটকালো না! সবাই একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকল। ছুটি হয়েছে ছুটি! কিন্তু ওদের না, আমাদের এই স্কুল থেকে ছুটি হয়ে গেছে! অনেকে স্কুলের মেইন গেট থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাকিরা ছবি তুলল মাঠে। আমি সাইকেলে চড়ে আস্তে আস্তে চলছি। সাথে কয়েকজন বন্ধু। গোরস্থান মসজিদের সামনের মোড়ে এসে হাসাহাসি করতে করতে ভাবলাম এখন তো স্কুল জীবনে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। ভেবেই মনটা কাঁদো কাঁদো হয়ে এলো। ওদের সাথে মতামত প্রকাশ করলাম। এখন চলে যাই আগের ঘটনায়...। সাইকেল চালিয়ে স্কুলে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে দেখি আমার আগে অনেক বন্ধুরা ক্লাসে পৌঁছে গেছে। সাইকেলে তালা দিয়ে ব্যাগ রাখলাম ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে। ক্লাস শুরু হলো ১২ টা ২০ এ। সাপুন স্যার আসলেন, নাম পেজেন্ট করলেন। তারপর আলমগীর স্যার ক্ষুদে ডাক্তারদের এনে আমাদের ওজন, উচ্চতা মাপলেন। আজকে এমন একটা দিন যা বলে প্রকাশ করা যাবে না! আজকে আমাদের অনেক কাজ স্কুলে। আমরা আশা করে আছি আজকে অন্য দিনের তুলনায় একটু ভালো টিফিন পাবো। জহুরুল স্যারকে অনুরোধ করায় আশা কিছুটা পূরণ হলো। একে একে তিনজন স্যার নিজের মনের ভাব প্রকাশ করলেন। অজিত স্যারের কথাগুলো আজ আরও ভালো লাগল। প্রায় টিফিনের সময় হয়ে এলো। টিফিন আনতে গেলো কয়েকজন। নাই টিফিন আসে নাই। বারবার ঘোরে অফিসের সামনে। অন্যান্য ক্লাস টিফিন পেল। আমাদের টিফিনের সময় শেষ তবু টিফিন আসে না। আনোয়ারুল স্যার আমাদের একজন প্রিয় স্যার। তিনি ক্লাসে এসে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে শুরু করলেন। এ সময় ওরা টিফিন আনল। সবাই দু’টি করে টিফিন পেল শেষ ক্লাসে। চলছে চতুর্থ ক্লাস। কেউ ক্লাসের বাইরে আর বেশিরভাগই ক্লাসে স্যারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। টিফিন পেয়ে একটি করে খেলাম, একটি করে প্যাকেট করলাম প্রায় সবাই। স্যার ভবিষ্যতের কথা জোরালো ভাবে বলে তার বক্তব্য শেষ করলেন এবং আমাদের স্কুল লাইফের ক্লাসের সমাপ্তি করলেন। দুঃখের বিষয় আজ অনেক স্যার-ম্যাডামের সাথে দেখা হয়নি। ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোন দিনে। হয়তো বিদায়ী ছাত্র হিসেবে। যদিও আমাদের সামনে টেস্ট পরীক্ষা। এখনও বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি, আরও দেরি আছে। তবুও এভাবে ক্লাস তো আর করা হবে না। জীবনের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ক্ষণের দ্বারপ্রান্তে আমরা। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী। "কত স্মৃতি পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে, পুরনো কথা মনে পড়ে বেদনায় কাতর স্কুলের তরে"