পোস্টস

পোস্ট

এনওএস৪এ২

১৯ এপ্রিল ২০২৩

রূপম আদিত্য

মূল লেখক জো হিল

অনুবাদক রূপম আদিত্য

এনওএস৪এ২ লেখক জো হিল রচিত তৃতীয় উপন্যাস। বইটি ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল উইলিয়াম মরো অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এটি একটি হরর উপন্যাস। বইটির শিরোনাম জার্মান ভাষার নোস্ফেরাটু শব্দের একটি প্রতিরূপ, যার অর্থ ভ্যাম্পায়ার। এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালে একটি টিভি সিরিজ নির্মিত হয়।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিক্টোরিয়া ম্যাককুইন, যার ডাকনাম ভিক। ছোটবেলা থেকেই ভিকের হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে। বনে-বাদাড়ে বাইক নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সে এক অলৌকিক কাঠের সেতুর সন্ধান পায়, যেই সেতু পাড়ি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই চলে যাওয়া যায় বহুদূর। এই সেতুই তাকে পৌঁছে দেয় হারানো জিনিসটার কাছে।

উপন্যাসের অপর প্রধান চরিত্র চার্লস ট্যালেন্ট ম্যাংক্স নামের এক বৃদ্ধ, যে ভিকের মতোই আরেক অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী। ভিকের জরাজীর্ণ সেতুর মতো তারও রয়েছে আদ্যিকালের এক রোলস রয়স রেইথ গাড়ি। রেইথটার বিশেষত্ব হলো, আর দশটা গাড়ির মতো তেল-গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের জ্বালানিতে সে চলে না। মানুষের দুঃখ আর ভয় তার চালিকাশক্তি।

রেইথটা ম্যাংক্সকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় ক্রিসমাসল্যান্ড নামের এক বিনোদন পার্কে, যেখানে বছরের প্রতিটা দিনই বড়দিন। পৃথিবীর কোনো মানচিত্রে ক্রিসমাসল্যান্ডকে খুঁজে পাওয়া যায় না, কারণ মানুষের চিরচেনা বাস্তব পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব নেই। জায়গাটার অবস্থান ম্যাংক্সের মাথার ভেতরে। বৃদ্ধ চার্লি ম্যাংক্স শিশুদের ক্যান্ডি, খেলনা আর চিরসুখী এক শৈশবের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় ক্রিসমাসল্যান্ডে। সেখানে সে শিশুগুলোর শরীর থেকে তাদের আত্মা শুষে নেয়, যা তাকে স্বাভাবিক আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বাঁচিয়ে রাখে। অন্যদিকে শিশুগুলো একেকটা অনুভূতিশূন্য জীবন্ত লাশে পরিণত হয়, যাদের আর ক্রিসমাসল্যান্ড থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসার কোনো উপায় থাকে না।

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে একদিন মায়ের সাথে ছোট্ট ভিকের বড় রকমের ঝগড়া হয়। সে হারিয়ে গেলে মায়ের একটা উচিত শিক্ষা হবে, এই ভেবে ভিক বাইক নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। শর্টার ওয়ে ব্রিজ পাড়ি দিতেই তার দেখা হয়ে যায় চার্লি ম্যাংক্সের সাথে। সেবারে সে ম্যাংক্সের হাত থেকে কোনোমতে বেঁচে ফিরে আসে, তার মিথ্যা বিবৃতির কারণে ম্যাংক্সের আমৃত্যু জেল হয়ে যায়।

সেদিন যে ছেলেটার সাহায্যে ভিক বেঁচে ফিরতে পেরেছিলো, সেই লু কার্মোডির সাথে সম্পর্ক হয় ভিকের। তাদের একটা ছেলে হয়। কিন্তু ম্যাংক্সের সাথে দেখা হওয়ার সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভিককে তাড়া করে বেড়ায় তার বড়বেলাতেও। ক্রিসমাসল্যান্ড থেকে জীবন্মৃত শিশুদের ফোন পেতে পেতে এক পর্যায়ে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, তার গোটা জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায়। তাকে আশ্রয় নিতে হয় মানসিক হাসপাতালে। সেখান থেকে অবশেষে যখন সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করে, এমন সময়ে জেলের ভেতরে মৃত্যু হয় ম্যাংক্সের। কিন্তু এই মৃত্যুতে তার জীবনের গল্প শেষ হয় না, বরং নতুন করে শুরু হয়। ভিকের ওপর প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসে ম্যাংক্স, ভিকের কাছ থেকে তার ছেলেকে কেড়ে নিয়ে রওনা দেয় ক্রিসমাসল্যান্ডের পথে। ভিক সংকল্প নেয়, যে করেই হোক ম্যাংক্সকে খুন করে নিজের ছেলেকে ফিরিয়ে আনবে, মুছে ফেলবে মা হিসেবে নিজের ব্যর্থতাকে।