দারিদ্র্যের কষাঘাতে ক্ষুধার চেতনা খুন—০১
১০ জুন ২০২৪
ওয়ালিউর রহমান
জুন মাসের শুরু, উত্তরের জনপদে আগাম বন্যার পূর্বাভাস। প্রতিবছর দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শৃঙ্খলাহীন পানির দম্ভক্তি দেখে অভ্যস্ত এসব এলাকার মানুষ। গতবছরের আঘাতের ক্ষত না শুকাতেই আসে নতুন আঘাত।ভাসিয়ে নেয় মাঠের ফসল,গোয়ালের গরু,ঘরের আসবাবপত্র।
প্রতিবছর, মরা নদীতে ভরা যৌবন দিতে ফিরে আসে বন্যা।যমুনায় জল বাড়তে থাকে,চিন্তার ভাঁজ বাড়তে থাকে চরের বাসিন্দাদের কপালে।এখানকার একেকজনের জীবনে বহুবারের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা রয়েছে, গলাপানিতে সাঁতরে নিজের শ্বাসটুকু রক্ষা করার।প্রত্যকের বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত মেহমান হয়ে প্রবেশ করে ঘোলা পানি। অহেতুক মেহমানের উৎপাতে ইট দিয়ে উঁচু করতে হয় গৃহস্থের খাট।এতো সম্মানিত অথিথি যে,তাকে পেয়ে রান্নাঘরের চুলা উঠাতে হয় টীনের চালে।আর গোয়ালের পশুকে জায়গা করে দিতে হয় নৌকার পাটাতনে।
জয়নাল মোল্লা, বাপদাদার পেশা হিসেবে গ্রহন করেছে কৃষিকাজ।একমাত্র সন্তান হিসেবে সে পেয়েছে অল্পকিছু জমি।সেটুকুতে চাষ করে পেটের প্রয়োজন মেটে;তবে পিঠের কাপড়টুকু থাকে ছিন্নভিন্ন। বাল্যকালে চরের মধ্যে একটা অস্থায়ী বিদ্যালয়ে অ- আ -ই আর ক-খ জাতীয় কিছু বর্ণ সে শিখেছে।কিন্তু আফসোস রয়েছে অকালে বাবা মারা যাওয়ায়।না হলে ইন্জিনের নৌকায় পাড়ি দিয়ে সেও হয়তো পড়তে যেত কাবডোবা হাইস্কুলে।মাকে নিয়ে জয়নালের সংগ্রামের শুরু বাল্যকালেই।নানান স্বপ্ন দেখে দিন কাটতো জয়নালের।একদিন সে পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে।বাবা-মাকে নিয়ে শহরে থাকবে।চরের জীবন তার ভালো লাগে না।কিন্তু নিয়তি তাকে চরের কাঁদায় এমন ভাবে আঁটকে দিয়েছে;সেখান থেকে সে আর বের হতে পারেনি।
সদ্য কৈশোর পেরোনো মিতুর দিন কাটে স্বপ্নহীন।পরিবারের জন্য নিজেকে মনে হয় পাথরের বোঝা।পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে অভাবের তাড়নায়।বাবা মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে মিতু বড়।ছোট্ট আরেকটি ভাই আছে মিতুর।মিতুর চেহারার স্বপ্নহীন ফ্যাকাশে ভাবটা যে কেউ ধরতে পারবে।ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু সামর্থ্যের কাছে পরাজয় মেনেছে মিতুর স্বপ্ন।তার বাবা রুস্তম আলী একজন জেলে। সকালে দলবেঁধে মাছ শিকারে যায় নদীতে।যা মাছ পায় তা বটতলীর হাঁটে বেচে আসে।সামান্য টাকায় কোনোদিন কিছু কিনতে পারে; কোনোদিন খালি হাতে ফিরে আসে। বাবার খালি হাতে ফিরে আসা মানে, সেদিন না খেয়ে দিন কাটানো ।খালি পেটে রাতে মিতুর ঘুম আসে না। ক্ষুধার কষ্ট ঝিঁঝিঁ পোকার সাথে অন্ধকারে হারিয়ে যায়, আবার চুপিচুপি ফিরে আসে। এপাশ ওপাশ করেও যখন চোখের পর্দা নামতে চায় না।তখন কয়েক গ্লাস পানিতে পেটের ক্রুদ্ধ ক্ষুধাকে মিথ্যা শান্তনা দেয় মিতু। রুস্তম আলী নিজের অসহায়ত্ব ঢাকতে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে।জাগ্রত চোখগুলোর ক্ষুধার্ত দৃষ্টি তাকে ব্যাকুল করে তোলে। বাবা হিসেবে এটা তার জন্য অসহ্য যন্ত্রনার।মিতুর মা সাহেরা বেগম। বাবা আসবে অপেক্ষা করো, বলতে বলতে ছোট্ট ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্ত বাবা ফিরে না।
মিতু বুঝতে পারে বাবা আজ দেরিতে ফিরবে। আরেকটি রাত কাটবে স্বাদহীন জলপানে।
প্রতিবছর, মরা নদীতে ভরা যৌবন দিতে ফিরে আসে বন্যা।যমুনায় জল বাড়তে থাকে,চিন্তার ভাঁজ বাড়তে থাকে চরের বাসিন্দাদের কপালে।এখানকার একেকজনের জীবনে বহুবারের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা রয়েছে, গলাপানিতে সাঁতরে নিজের শ্বাসটুকু রক্ষা করার।প্রত্যকের বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত মেহমান হয়ে প্রবেশ করে ঘোলা পানি। অহেতুক মেহমানের উৎপাতে ইট দিয়ে উঁচু করতে হয় গৃহস্থের খাট।এতো সম্মানিত অথিথি যে,তাকে পেয়ে রান্নাঘরের চুলা উঠাতে হয় টীনের চালে।আর গোয়ালের পশুকে জায়গা করে দিতে হয় নৌকার পাটাতনে।
জয়নাল মোল্লা, বাপদাদার পেশা হিসেবে গ্রহন করেছে কৃষিকাজ।একমাত্র সন্তান হিসেবে সে পেয়েছে অল্পকিছু জমি।সেটুকুতে চাষ করে পেটের প্রয়োজন মেটে;তবে পিঠের কাপড়টুকু থাকে ছিন্নভিন্ন। বাল্যকালে চরের মধ্যে একটা অস্থায়ী বিদ্যালয়ে অ- আ -ই আর ক-খ জাতীয় কিছু বর্ণ সে শিখেছে।কিন্তু আফসোস রয়েছে অকালে বাবা মারা যাওয়ায়।না হলে ইন্জিনের নৌকায় পাড়ি দিয়ে সেও হয়তো পড়তে যেত কাবডোবা হাইস্কুলে।মাকে নিয়ে জয়নালের সংগ্রামের শুরু বাল্যকালেই।নানান স্বপ্ন দেখে দিন কাটতো জয়নালের।একদিন সে পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে।বাবা-মাকে নিয়ে শহরে থাকবে।চরের জীবন তার ভালো লাগে না।কিন্তু নিয়তি তাকে চরের কাঁদায় এমন ভাবে আঁটকে দিয়েছে;সেখান থেকে সে আর বের হতে পারেনি।
সদ্য কৈশোর পেরোনো মিতুর দিন কাটে স্বপ্নহীন।পরিবারের জন্য নিজেকে মনে হয় পাথরের বোঝা।পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে অভাবের তাড়নায়।বাবা মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে মিতু বড়।ছোট্ট আরেকটি ভাই আছে মিতুর।মিতুর চেহারার স্বপ্নহীন ফ্যাকাশে ভাবটা যে কেউ ধরতে পারবে।ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু সামর্থ্যের কাছে পরাজয় মেনেছে মিতুর স্বপ্ন।তার বাবা রুস্তম আলী একজন জেলে। সকালে দলবেঁধে মাছ শিকারে যায় নদীতে।যা মাছ পায় তা বটতলীর হাঁটে বেচে আসে।সামান্য টাকায় কোনোদিন কিছু কিনতে পারে; কোনোদিন খালি হাতে ফিরে আসে। বাবার খালি হাতে ফিরে আসা মানে, সেদিন না খেয়ে দিন কাটানো ।খালি পেটে রাতে মিতুর ঘুম আসে না। ক্ষুধার কষ্ট ঝিঁঝিঁ পোকার সাথে অন্ধকারে হারিয়ে যায়, আবার চুপিচুপি ফিরে আসে। এপাশ ওপাশ করেও যখন চোখের পর্দা নামতে চায় না।তখন কয়েক গ্লাস পানিতে পেটের ক্রুদ্ধ ক্ষুধাকে মিথ্যা শান্তনা দেয় মিতু। রুস্তম আলী নিজের অসহায়ত্ব ঢাকতে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে।জাগ্রত চোখগুলোর ক্ষুধার্ত দৃষ্টি তাকে ব্যাকুল করে তোলে। বাবা হিসেবে এটা তার জন্য অসহ্য যন্ত্রনার।মিতুর মা সাহেরা বেগম। বাবা আসবে অপেক্ষা করো, বলতে বলতে ছোট্ট ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্ত বাবা ফিরে না।
মিতু বুঝতে পারে বাবা আজ দেরিতে ফিরবে। আরেকটি রাত কাটবে স্বাদহীন জলপানে।