পোস্টস

গল্প

স্নিগ্ধ প্রেমের গল্প

১১ জুন ২০২৪

মোস্তাফা শিবলী

মূল লেখক মোস্তাফা শিবলী

_"আম্মুর ডাকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।‌ চোখ কচলিয়ে উঠে বসলাম। তখন আম্মু বলল,


 

"এই যে কখন থেকে ফোন বেজে যাচ্ছে নি কথা বল?


 

আমি আম্মু কাছ থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরলাম।

তারপর একজন লোক হঠাৎ বলল। আপনার চাকরি হয়ে গেছে। আপনি আজকে আমাদের অফিসে আসুন?


 

_"মায়া লাফিয়ে উঠে বসলো। কি বলবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। অপরপাশ থেকে আবার বললো,মিস আপনি কি শুনতে পারছেন?


 

_"মায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, জি শুনতে পারছি । ওকে  আমি যাবো ধন্যবাদ।


 

"অপরপাশ থেকে কল কেটে দিল। মায়া ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়। ও ভাবতে পারেনি এতো কম সময়ে চাকরিটা পেয়ে যাবে। মায়া এর চোখে পানি চিকচিক করছে। এবার হয়তো একটু ভালো করে চলতে পারবে। মায়ার ঠোঁটে হাসি চোখে জল। আজ মনে হচ্ছে পরিবারের জন্য কিছু করতে পারবে। মায়া উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।


 

(আসুন এই সুযোগে পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমি হলাম মোহিনী ইসলাম মায়া আমার ছোট পরিবার মা, বাবা ছোট ভাই। বাবা ৬ মাস‌‌ হলো এক্সিডেন্ট করেছে। তারপর পর থেকে তিনি আর কিছু করতে পারে না পা দুইটা কাঁটা। আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। চলুন গল্পে ফিরে আসা যাক)


 

_"মায়া ফ্রেশ হয়ে এসে রেড়ি হলো , হলুদ রঙের একটা থ্রি-পিস পড়ে নিল। দুধে আলতা গায়ের রং হলুদ রং টা ভালোই মানিয়েছে। চুল খোলে দিল।মায়া চোখে একটু মোটা করে কাজল দিল ডাগর ডাগর চোখে মোটা কাজল বেশ মানিয়েছে কপালে ছোট একটা কালো টিপ পরে নিল ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিল নিজেকে আর একবার আয়নায় দেখে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। ডয়িং রুমে এসে রহিমা বেগম কে ডাকতে লাগল। 


 

_"আম্মু আম্মু কোথায় তুমি আমি বের হবো তাড়াতাড়ি নাস্তা দেও? 


 

_"মা তুই একটু বস আমি আসছি। (রহিমা বেগম)


 

_" মায়া ডয়িং রুম থেকে তার আব্বুর রুমে গেল। রুমে গিয়ে দেখে খবরের কাগজ পড়তাছে।‌মায়া মুচকি হাসলো তার বাবা সব কিছু ভুলতে পারলেও খবরের কাগজের কথা ভুলে না। মায়া দরজা দাঁড়িয়ে সালাম দিল। আসসালামু আলাইকুম আব্বু আসবো?


 

_"রাজ্জাক রহমান খবরের কাগজ পাশে রেখে মুচকি হেসে বললো ,এসো‌ মা ভিতরে এসো।


 

_"মায়া আব্বুর পাশে গিয়ে বসলো , আব্বুর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে। বললো, আব্বু তোমার শরীর এখন কেমন?


 

_"রাজ্জাক রহমান বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। মা কিছু বলবে এই সময়ে তো তুমি ভার্সিটিতে থাকো?


 

_"হ্যা আব্বু বলতে এসেছি। আমার একটা কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে পিএ হিসেবে। আমার জন্য দোয়া করবে?


 

_"রাজ্জাক রহমান এর চোখ জলে চিকচিক করছে। তিনি আদুরে স্বরে বলল, আলহামদুলিল্লাহ, আচ্ছা তোমার খুব কষ্ট করতে হচ্ছে তাই মামনি?


 

_"মায়া তার আব্বুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো, আব্বু আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। তুমি প্লিজ মন খারাপ করবে না প্রমিজ করো।


 

_"রাজ্জাক রহমান মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলল,মা অনেক বড়ো হও। আমার দোয়া সব সময় তোমার সাথে আছে। 


 

_"মায়ার চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।‌ডান হাত দিয়ে মুছে নিল।


 

"রহিমা বেগম এতোক্ষণ বাপ মেয়ের ভালোবাসা দেখতে ছিল তার ও চোখে জল চিকচিক করছে। তিনি এগিয়ে এসে বলল, ভালো মা কে রেখে শুধু আব্বু কে আদর করা হচ্ছে। আমি পর হয়ে গেছি তাই না?


 

_"মায়া তার আম্মু কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার বেস্ট আম্মু । আমার জন্য দোয়া করবে।


 

"হয়েছে অনেক আদর খাওয়া হয়েছে দেখেছ কয়টা বাজে কখন যাবে?


 

"মায়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা বাজে মায়া ওর আম্মু কে বলল,


 

"আম্মু তাড়াতাড়ি নাস্তা দেও অনেক লেট হয়ে গেল।


 

"হুম চলো নাস্তা দেওয়া আছে। 


 

"আব্বু আসি তাহলে?


 

"রাজ্জাক রহমান মুচকি হেসে বলল, ওকে মামনি সাবধানে যাবে । 


 

"ওকে আব্বু। মায়া , তাড়াতাড়ি করে চলে গেল।


 

"হালকা নাস্তা করে রহিমা বেগম কে,বলল,আম্মু আমার জন্য দোয়া করবে?


 

"রহিমা বেগম মেয়ের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, অনেক বড়ো হও মা ।


 

"আম্মু আসি এখন। মায়া ব্যাগ টা হাতে নিয়ে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়ল।


 

_"মায়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কোন ওটো বা রিকশা কিচ্ছু পাচ্ছে না। তাগ বাধ্য হয়ে হাটা ধরলো।


 

_"তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে লাগলো। সেই ব্যক্তি হেঁচকা টান দিয়ে বুকের নিয়ে ফেললো শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ আকস্মিক ঘটনায় মায়া চমকে উঠল। তাল সামলাতে না পেরে লোকটার কাঁধ শক্ত করে ধরলো। মায়ার সব চুল চোখে মুখে এসে পড়ল। আকস্মিক ঘটনায় লোকটাও থমকে গেছে।


 

_"হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে চুল গুলো উঠতে লাগলো। এইবার মায়া এবং লোক টা একে অপরের দিকে তাকালো। ব্যক্তিটা মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে স্বদ্ধ হয়ে গেল। 


 

"মায়া লোকটার চোখের দিকে তাকালো। বাদামী রঙের চোখের মণি। ফর্সা মুখে বাদামী রঙের মণি মায়াকে যেন আকর্ষন করছে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে মায়া যেন এই চোখের নেশায় তলিয়ে যাচ্ছে।


 

_"দুজন দুজনের চোখে হারিয়ে গেল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দুজন। 


 

_" স্নিগ্ধ স্নিগ্ধ কি হচ্ছে এখানে?


 

হঠাৎ কারো ডাকে হুস ফিরল দুজনের একে অপরের থেকে সরে দাঁড়াল। লজ্জায় মায়া তাকাতে পারছে না। 


 

_"স্নিগ্ধ একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে মায়া কে পুরো পর্যবেক্ষণ করলো। হলুদ থ্রি-পিস ফর্সা শরীরে খুব মানিয়েছে। ডাগর ডাগর চোখে মোটা কাজল। কপালে ছোট টিপ ঠোঁটে গোলাপি রঙের হালকা লিপস্টিক। স্নিগ্ধ তাদের অগচড়ে মুচকি হাসলো।


 

_"স্নিগ্ধ রায়হান এর দিকে তাকিয়ে বলল, যাস্ট এক্সিডেন্টলি ধাক্কা লেগেছে।


 

_"রায়হান বলল,ও আচ্ছা। তারপর মায়া দিকে তাকিয়ে বলল, হাই বিউটিফুল আমি রায়হান মাহমুদ। 


 

_"মায়া চোখ তুলে তাকালো একবার স্নিগ্ধ দিকে। তারপর রায়হান এর দিকে নজর দিয়ে বলল, হ্যালো, আমি মোহিনী ইসলাম মায়া। আচ্ছা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে চলি ভাইয়া। একবার স্নিগ্ধ দিকে তাকিয়ে মায়া সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।


 

"স্নিগ্ধ মায়া এর যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। 

রায়হান লক্ষ্য করল। স্নিগ্ধ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুষ্টু হেসে বলল,কি মামা প্রেমে পড়ে গেলে নাকি?


 

_"স্নিগ্ধ মুখ গম্ভীর করে চলে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।


 

_"রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কেন নিজের ভালো লাগা খারাপ লাগা প্রকাশ করিস না তুই না বললেও তোর ভালো লাগা খারাপ লাগা আমি বুঝতে পারি।

তারপর রায়হান গাড়িতে উঠে গাড়ি ইস্টার দিল। ছুটলো তাদের গন্তব্যে।


 

_"মায়া হাঁটতে লাগলো হঠাৎ একটা রিকশা পেল। রিকশাওয়ালা কে বলল,মামা যাবেন??


 

"রিকশাওয়ালা হ্যা যাবো ।

মায়া রিকশায় উঠে বসলো। রিকশাওয়ালা বলল, কোথায় যাবো ?


 

মায়া ঠিকানা বলে দিল। রিকশা আপন গতিতে চলতে লাগল।


 

"মায়া কিছুতেই সেই বাদামী চোখের দৃষ্টি নিজের মন এবং মস্তিষ্ক থেকে সরাতে পারছে না। মায়া মনে মনে বলতে লাগলো। 


 

"কেন হঠাৎ করে সামনে এলেন?'

-এই সময়ের মধ্যে আপনার চোখের নেশায় তলিয়ে যাচ্ছি। 

"আপনাকে কখনো হয়তো পাওয়া হবে না। কিন্তু চিরদিন থেকে যাবেন আমার হৃদয়ে।


 

_"কিছুক্ষণ এর মধ্যে পৌঁছে গেল মায়া। রিকশাওয়ালা কে টাকা দিয়ে। গেটের ভিতরে প্রবেশ করল। ভিতরে গিয়ে দেখে অফিস টা অনেক বড়ো  । মায়া অফিসের ভিতরে চলে গেল। ভিতরে গিয়ে আরো অবাক হলো মনে হচ্ছে রাজ্যমহল অনেক পরিপাটি করে সাজানো। মায়া সব চিন্তা বাদ দিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। সামনে একটা লোক কে জিজ্ঞেস করল। ম্যানেজার এর রুম কোনটা ?


 

_"লোকটা বলল , সামনে গিয়ে ডানে যে কেভিন ওই টা।


 

"মায়া লোকটার দেখানো অনুসরণ করে কেভিনের সামনে গিয়ে দরজা হালকা খুলে বলল,

May I come in sir?


 

ম্যানেজারঃ yes come .


 

মায়া ভিতরে গিয়ে অবাক হয়ে গেল। কারণ,সে আর কেউ না রায়হান। 


 

_"রায়হান মায়া কে দেখে অবাক হয়ে বলল, ও মাই গড। তুমি তাহলে নতুন পিএ?'


 

_"মায়া মুচকি হেসে বলল,হ্যা।


 

_"রায়হান মায়া কে জয়েনিং লেটার দিয়ে বলল,কাল থেকে জয়িন দিবে।


 

_"মায়া মুচকি হেসে বলল, ওকে স্যার।


 

"রায়হান বলল,চা খাবে নাকি কফি?'


 

"না স্যার আমি কিচ্ছু খাবো না। আজ আসি তাহলে।  


 

রায়হান বলল, ওকে এসো কাল ১০ টার আগে এসে পড়বে বস কিন্তু অনেক কড়া ।


 

_"মায়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝাল। তারপর সালাম দিল আসসালামু আলাইকুম আসি স্যার।


 

মায়া চলে গেল রায়হান বিরবির করে বলল, মা এই জন্য এতো কিছু।


 

_"মায়া বেরিয়ে গেল অফিস থেকে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল গাড়ির জন্য।


 

_"এদিকে একজন কেভিন বসে মায়ার আসা চলে যাওয়া দেখছে ল্যাপটপে । লোকটা মুচকি হেসে উঠে এসে জানালার গ্ৰিল ধরে বলল,


 

_"প্রিয়সী তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল, তোমার ফুলের সুবাসে আমি যে মাতোয়ারা।


 

"কিভাবে করিব তোমায় প্রেম নিবেদন?'

-আমার প্রেমে গাধবে কি ফুলের মালা?'