Posts

গল্প

কলকাতার অমরগাথা: কালীঘাটের অভিশপ্ত মন্দির

June 11, 2024

বিরহ দাস

Original Author বিরহ দাস

Translated by বিরহ দাস

191
View

কলকাতার অমরগাথা: কালীঘাটের অভিশপ্ত মন্দির

কলকাতা শহর বরাবরই রহস্যময়। প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি অলিগলিতে লুকিয়ে আছে অসংখ্য কাহিনী। এখানে আছে একদিকে ঐতিহ্যের গন্ধ, অন্যদিকে আধুনিকতার ছোঁয়া। এই শহরের বুকেই লুকিয়ে আছে এক অভিশপ্ত মন্দিরের গল্প, যা একদিন সমস্ত শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। রঞ্জন একটি বেসরকারি সংবাদপত্রের সাংবাদিক। তার কাজ ছিল সত্য উদ্ঘাটন করা। কিন্তু তার জীবন একঘেয়েমিতে ভরে গেছে। রঞ্জনের জীবনে পরিবর্তন আসে সেদিন, যেদিন কালীঘাটের পুরনো মন্দির সম্পর্কে এক অদ্ভুত খবর তার হাতে আসে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায়। মন্দিরের ভিতরে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে বলে গুজব রটে। রঞ্জন ঠিক করল, এই রহস্যের সমাধান করতেই হবে।

কালীঘাটের মন্দির শতাব্দী প্রাচীন। কথিত আছে, এই মন্দিরের ভিতরে একটি গুপ্ত কক্ষ আছে, যেখানে প্রবেশ করলে ফিরে আসা অসম্ভব। রঞ্জন সেই গুপ্ত কক্ষের কথা শোনার পর থেকেই কৌতূহলবশত মন্দিরে গিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। মন্দিরের পুরোহিতরা তার প্রবেশের অনুমতি না দিলেও, রঞ্জন নিজের পেশাগত দক্ষতায় মন্দিরে ঢুকে পড়ে।

মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেই রঞ্জনের মনে হলো, এখানে কিছু একটা আছে যা সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। মন্দিরের দেয়ালে খোদাই করা প্রতীক, প্রাচীন শিলালিপি, সবকিছুই যেন এক রহস্যময় ইতিহাসের ইঙ্গিত দেয়। রঞ্জন খুঁজতে খুঁজতে পাণ্ডুলিপির সন্ধান পায়, যা বহু বছর আগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। পাণ্ডুলিপিতে লেখা ছিল এক অভিশপ্ত ইতিহাসের কথা, যা মন্দিরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

রঞ্জন পাণ্ডুলিপি নিয়ে ফিরে এসে তার বন্ধু সৌমিত্রর সাহায্য নেয়। সৌমিত্র একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ, এবং প্রাচীন লিপি সম্পর্কে তার ব্যাপক জ্ঞান রয়েছে। তারা দুজনে মিলে পাণ্ডুলিপির লেখাগুলো পড়তে শুরু করে। সেখানে লেখা ছিল, কালীঘাটের মন্দিরে এক প্রাচীন রাজার গুপ্তধন লুকিয়ে আছে। সেই ধন খুঁজতে গিয়ে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে। মন্দিরের অভ্যন্তরে আছে একটি গুপ্ত কক্ষ, যেখানে প্রবেশ করলে ফিরে আসা অসম্ভব। এই তথ্য পাওয়ার পর রঞ্জন ও সৌমিত্র ঠিক করল, তারা সেই গুপ্তধনের সন্ধানে নামবে। রঞ্জনের সাংবাদিকতা আর সৌমিত্রর প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার জ্ঞান একসাথে মিলে এই অভিযানকে সফল করবে। তারা একটি পরিকল্পনা করল, কিভাবে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে সেই গুপ্ত কক্ষ খুঁজে পাওয়া যাবে।

পরবর্তী রাতে, রঞ্জন ও সৌমিত্র মন্দিরের পাশেই একটি ছোট্ট ঘরে আশ্রয় নেয়। রাতে মন্দিরে প্রবেশ করা অনেক কঠিন, কিন্তু তারা সাহস করে রাতের আঁধারে মন্দিরে প্রবেশ করে। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেই তারা অনুভব করে, তাদের চারপাশে কিছু একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। অদ্ভুত আওয়াজ, হাওয়ার ঝাপটা, সবকিছুই তাদের আতঙ্কিত করে তুলছে।

তারা ধীরে ধীরে মন্দিরের ভিতরে এগিয়ে যেতে থাকে।

মন্দিরের পুরনো দেয়ালের ভিতরে একটি গোপন দরজা খুঁজে পায়, যা পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখিত ছিল। তারা দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। দরজার ভিতরে অন্ধকার ঘর, যার মেঝেতে ছিল কিছু অদ্ভুত প্রতীক। সৌমিত্র প্রতীকগুলো দেখে চিনতে পারল, এগুলো প্রাচীন তান্ত্রিক চিহ্ন, যা বহু বছর আগে ব্যবহার করা হত।

ঘরের মধ্যে একটি সিঁড়ি দেখতে পেল তারা, যা নিচে নেমে গেছে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার পর তারা পৌঁছল এক বিশাল গুহায়। গুহার ভিতরে ছিল অসংখ্য প্রাচীন মূর্তি, শিলালিপি, আর সেই প্রাচীন ধনের বাক্স। তারা ধন খুঁজে পেয়ে খুব খুশি হলো, কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। গুহার ভিতরে হঠাৎ করে অদ্ভুত আলো জ্বলে উঠল। তারা দেখতে পেল, গুহার এক কোণায় এক তান্ত্রিক মন্ত্র জপ করছে। সেই তান্ত্রিক তাদের দেখে হেসে বলল, "তোমরা এখানে এসে ভুল করেছ। এই ধন অভিশপ্ত, যা স্পর্শ করবে, তার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।"

রঞ্জন ও সৌমিত্র তান্ত্রিকের কথা শুনে আতঙ্কিত হলো। তান্ত্রিক তাদের বলল, "এই ধন রাজার অভিশাপ বহন করছে। তোমরা যদি এটি নিতে চাও, তবে এর মূল্য চুকাতে হবে।" তারা বুঝতে পারল, ধন নিলেই তাদের জীবন বিপন্ন হবে। তারা সিদ্ধান্ত নিল, ধন নিয়ে কিছু করা যাবে না। তারা ধন রেখে গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে, তান্ত্রিক তাদের পথ আটকায়। তান্ত্রিক তাদের বলল, "তোমরা মন্দিরে প্রবেশ করেছ, এখন এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়।" রঞ্জন ও সৌমিত্র ভয় পেয়ে যায়, কিন্তু তারা ঠিক করল, তারা মন্দির থেকে বেরিয়ে আসবেই। তারা গুহা থেকে বেরিয়ে মন্দিরের পথে পা বাড়ায়। মন্দিরের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা অদ্ভুত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে থাকে। মনে হচ্ছিল, মন্দিরের প্রতিটি ইঞ্চিতে অভিশাপ লুকিয়ে আছে। কিন্তু তারা সাহস করে মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইরে এসে তারা ঠিক করে, এই অভিশপ্ত ধন নিয়ে কিছু করা যাবে না। তারা সেই মন্দিরের পুরোহিতদের কাছে সব কথা খুলে বলে, আর ধনটি মন্দিরেই রেখে দেয়। পুরোহিতরা তাদের সাহায্য করে মন্দিরের বাইরে যেতে। রঞ্জন ও সৌমিত্র ধনটি রেখে বাইরে আসে, কিন্তু তাদের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, এই ধন তাদের জীবন ধ্বংস করতে পারত। তারা ধন নিয়ে কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েই সন্তুষ্ট হয়েছিল।

এই ঘটনার পরে রঞ্জন ও সৌমিত্র ফিরে আসে তাদের স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু তাদের এই অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে এক নতুন দিশা দেখায়। তারা বুঝতে পেরেছিল, জীবনের সত্যিকারের ধন মানুষের মনুষ্যত্বে, আর তা অর্থ বা সম্পদের নয়। কালীঘাটের মন্দির আবার তার আগের মতোই রয়ে গেল। মন্দিরের পুরোহিতরা ধনটি নিয়ে কিছু না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাদের এই কাহিনী একদিন কলকাতার প্রতিটি গলিতে গুঞ্জরিত হয়, এবং রঞ্জন ও সৌমিত্র হয়ে ওঠে সেই শহরের আসল হিরো।কলকাতা শহর আবার ফিরে পেল তার প্রতিদিনের চেহারা। কিন্তু সেই শহরের অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল এক ইতিহাস, যা রঞ্জন ও সৌমিত্রের কলমে ধরা পড়েছিল। তাদের এই কাহিনী একদিন কলকাতার প্রতিটি গলিতে গুঞ্জরিত হলো, এবং তারা হয়ে উঠল সেই শহরের আসল হিরো।

কালীঘাটের মন্দিরের অভিশপ্ত ধনের কাহিনী শেষ হয়েও শেষ হলো না। কারণ সেই ধনের অভিশাপ হয়তো এখনো মন্দিরের ভিতরে লুকিয়ে আছে, যা একদিন আবারো জেগে উঠতে পারে। কিন্তু রঞ্জন ও সৌমিত্রের সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তা সেই অভিশাপকে কিছু সময়ের জন্য হলেও থামিয়ে দিয়েছিল। তাদের এই কাহিনী হয়ে রইল কলকাতার অমরগাথা, যা সবসময়ই মানুষের মনে এক রহস্যময় কাহিনী হিসেবে বেঁচে থাকবে।

সমাপ্তি

(এই কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তব কোনো ঘটনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।)

লেখক:  বিরহ দাস

Comments

    Please login to post comment. Login