পোস্টস

গল্প

রাতের অন্ধকারে

১১ জুন ২০২৪

Md Shariful Islam

রাত গভীর হয়েছে। শহরের সব আলো নিভে গেছে, শুধু চাঁদের ক্ষীণ আলোয় আকাশটা কিছুটা আলোকিত। তপু বাসায় একা। মা-বাবা গ্রামের বাড়ি গেছে, আর বোনটা বেড়াতে গেছে খালার বাসায়। তপু সাধারণত একা থাকতে ভয় পায় না, কিন্তু আজ যেন এক অজানা ভয়ের অনুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

 

তপু বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ সে একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল। শব্দটা যেন বাসার ভেতর থেকেই আসছে। সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শুনল, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। মনে হলো, হয়তো মনের ভুল। তাই আবার ঘরে ফিরে গেল।

তপুর মন শান্ত হলো না। সে বারবার শুনতে পাচ্ছে সেই একই শব্দ, যা কিছুক্ষণ পরপর বাড়ছে। এবার সে সাহস করে শব্দের উৎস খুঁজতে বের হলো। ঘরের প্রতিটা কোণা ভালোভাবে দেখল, কিন্তু কোথাও কিছুই পেল না। একসময় শব্দটা থেমে গেল, তপুর মনে হলো, হয়তো সব কিছুই স্বাভাবিক।

 

রাত আরও গভীর হলো। তপু শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল। হঠাৎ সে দেখল, তার জানালার পর্দা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে, যেন কেউ তা সরাচ্ছে। তপু ভয়ে জমে গেল। কিছুক্ষণ পরেই সে স্পষ্ট দেখতে পেল, জানালার বাইরে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।

তপু আতঙ্কে চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। ছায়ামূর্তিটা ধীরে ধীরে জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকল। তপুর শরীর কাঁপছে, সে কিছুতেই নড়তে পারছে না। ছায়ামূর্তিটা তপুর দিকে এগিয়ে আসছে, তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, শুধু দুটো লালচে চোখ।

তপু মনে সাহস সঞ্চয় করে চিৎকার করল, “কে তুমি? কি চাই?”

 

ছায়ামূর্তিটা থমকে দাঁড়াল, তারপর আস্তে আস্তে বলল, “তুমি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যাও। এটা আমার বাসা।”

তপু অবাক হয়ে বলল, “তোমার বাসা? এটা তো আমাদের বাসা। তুমি কি বলছ?”

ছায়ামূর্তিটা একটু হাসল, “অনেক বছর আগে আমি এখানে থাকতাম। আমার মৃত্যুর পরও আমি এখানেই আছি। কেউ আমার ঘরে থাকতে পারবে না।”

 

তপু ভয়ে চিৎকার করে উঠল। হঠাৎই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। তপুর চোখ খুলতে সময় লাগল। সে দেখল, সে মাটিতে পড়ে আছে, তার মাথা ঘুরছে। তপুর মনে হলো, সব কিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্ন ছিল। কিন্তু ঘরের কোণায় একটা পুরোনো ছবি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেই একই লালচে চোখওয়ালা মানুষটা, যে তার স্বপ্নে এসেছিল।

তপু ছবি হাতে নিয়ে দেখল, ছবির পেছনে লেখা, “এই ঘরের আসল মালিক, রতন সাহা। মৃত্যু: ১৯৮৫।” তপু আতঙ্কে শিউরে উঠল। সে বুঝতে পারল, এটা কোনো স্বপ্ন নয়। সত্যিই রতন সাহা তার ঘরে ফিরে এসেছে।