Posts

গল্প

দাদুভাইয়ের অবোল তাবোল

January 21, 2024

Sajib Sen

Original Author সজীব সেন

ছোট্টবেলায় এক বিকেলে আমার মন খারাপ দেইখা দাদুভাই আমারে ডাকল। মা বকাবকি করলে যেমন হয় ...  
যাক দাদু বড় বড় রুদ্রাক্ষ মালা গলায় দিয়া আমাকে ধর্মজ্ঞানী রূপে বলল , "শোন শোন, এদিকে আয়, মন খারাপ! আইসক্রিম খাবি?"
আমি বললাম, " আমি অল্প আইসক্রিম খাই না "।
আমার বজ্জ্বাতি মার্কা কথা দাদু বুঝতে  পেরে কিছুটা হাসি দিল। 
তাঁর হাসি দেখে আমার মন খারাপ থেকে মাথা হয়ে গেল গরম ১০০ তে ১১০ ।
দাদুভাই আমাকে জোর করো কোলে নিল। 
আমি ভাব মেরে দেখাইতে চাইলাম আমি এসব কোলে নিয়ে আদর একদমই কেয়ার করি না। 
কিন্তু মনে মনে তার উল্টো। দাদুভাইয়ের আদর তো জীবনের মহাপ্রাপ্তি।
কারণ তাঁর আদর মানেইতো নানা ধরনের গিফট, আর আইসক্রিম, চকোলেট।
দাদুভাই সেদিন একটা গল্প আমাকে বলছিল। শুরুটা করেছিল একটা বাক্য দিয়ে, "মন খারাপ হলে মনে মনে ভৈরবকে ডাকবি"।
আমার স্বভাবসুলভ প্রশ্ন ,"আরে পঁচা ভৈরবটা কে, তা তো বলো!"
দাদুভাই তো মহা যন্ত্রণায় পরে গেল, কথা বললেই নানান প্রশ্ন শুনতে হয়।"
তবে এখন হয়তোবা বুঝতে পারি, সে সময় দাদুভাই বেশ মজাই পেত। কারন বুড়ো বয়সে নাকি সবাই শিশু হয়ে যায়। তাই ছোটদের সাথে শিশুদের বেশ ভাব জমে।
যাক এবার দাদুভাইয়ের বলা গল্পে আসি,
" ভৈরব নাকি শিবের আরেক রূপ"
আমার আবারো পঁচা প্রশ্ন, "শিবরে ভৈরব বললে আমি কি করব তো?"
দাদুভাই বলল, "আরে শোন, একবার পড়ালেখার দেবি সরস্বতী ব্রহ্মারে প্রদক্ষিণ করছিলেন, পুর্ব দিক থেকে ঘুরেতে ঘুরতে উত্তর, পশ্চিম, দক্ষিণ মানে চার দিক ঘুরে আসছে। সে কারনে ব্রহ্মার চার মুখ হলো।"
(বি.দ্র: শুনেন, সাদা দাড়িওয়ালা  ব্রাহ্মারে আমি আগেই চিনতাম, ক্লাস টু-এর বইতে দেখছি)

আমি বললাম, "তাহলে তো বেশ ভালো চারটা মুখে ব্রাহ্মা বেশি বেশি চকলেট খেতে পারবে। কিন্তু দাদু , স্বরস্বতী দেবী যদি একটু উপরে নিচে ঘুরতো তাহলে ব্রাহ্মা আরো দুটো মাথা বেশি পেত। আরো বেশি চকোলেট, আইসক্রিম খেতে পারতো।"
দাদুভাই বলল, "আর বলিস না, শোন স্বরস্বতী উপরের দিকে যেতেই ব্রাহ্মার হলো পঞ্চম মুখ, সেই মুখটাই শিব নিয়ে চলে গেল। আর এই কারণে ব্রহ্মার সাথে দুষ্টোমির শাস্তি হিসেবে শিবকে ভৈরব-এর রুপ নিতে হলো। ভৈরব মহাকাল, যিনি আমাদের সমস্ত যাতনাকে পুঞ্জিভুত করে এক সেকেন্ড বানিয়ে দিতে পারেন"। বুঝো ব্যাপারটা!
আমি বললাম, " দাদুভাই আমিতো শিবকে পছন্দ করি, শিব এমন দুষ্টোমি না করলে পারতো। কিন্তু দাদু তুমিতো একবার বলেছিলে শিব নাকি সব কাজ কোন না কোন ভালো উদ্দেশ্যেই করেন! আচ্ছা বলোতো দাদু ভৈরব এখন কই?"
দাদুভাই বলল, "ভৈরব কাশীধামে থাকেন, তাই লোকে কাশিধামে শেষ যাত্রা করতে চায়, যেনো সমস্ত কষ্ট, মন খারাপ এক সেকেন্ডে শেষ হয়ে যায়। 
কেউ খুব দুঃখ কষ্ট পেলে তাই ভৈরবরে মনে মনে ডাকতে হয়, যেনো বেশিক্ষণ মন খারাপ না থাকে।"
 সেদিন হয়ত বুঝতে পারি নাই শেষ যাত্রা মানে কি। তবে দাদুভাই কাশিধাম যাননি। কারন তঁদার জীবনে খুব বেশি প্রাপ্তির আশা ছিল না। জীবন তাঁকে না চাইতেই সব হয়তো দিয়েছিল। আর আমি পেয়েছিলাম ছোট্টবেলার সাথি, যিনি আমাকে নানা ছলে হয়তো কিছু পথের দিশা দিতে চেয়েছিলেন।
আর মহাকাল নিয়ে জানার আগ্রহ, তাতো অন্য আলোচনা। চারপাশে আকারণে মানবঘটিত আকাল চলছে, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ... 
কঠিন করে কিছু ভাববার দরকার নাই। কারনে অকারনে দাদুভাইদের থেকে গল্প শুনার সুযোগ হারানো যাবে না।

Comments

    Please login to post comment. Login