পোস্টস

গল্প

পড়ন্ত বিকেল

১১ জুন ২০২৪

Tanvir Mozumder

মূল লেখক তানভির আহমেদ মজুমদার

ডাক্তার বলে দিয়েছে আমার হাতে বড়োজোর আর তিন মাস সময় আছে। মনে যা চায় এই তিন মাস সময়ের মধ্যে করে নিতে হবে। আগে থেকেই এরকম কিছু একটা শুনব বলে ধারণা করে রেখেছিলাম। হয়ত এই কারণেই খুব একটা কষ্ট লাগল না। তাছাড়া গত কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম বেঁচে থেকেই বা কি করছি? প্রতিটা দিন শুধুই পরের দিন দেখার জন্যে কাটিয়ে দেয়া, এটাকে কি আদৌও বেঁচে থাকা বলে?

মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, আমার জীবনে এখন সবচেয়ে মূল্যবান কী? অর্থ-সম্পদ? পরিবার? স্বপ্ন? তুমি? কোনটা???? হঠাৎ করে ভেবে দেখলেতো এসব বিকল্পগুলোই মাথায় আসে কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এসব কোনটিই আমার কাছে নেই। এখন আমার কাছে তাহলে কি আছে?? আমার কাছে এখন শুধু আছে মাস তিনেক সময়। কাকে যেন বলতে শুনেছিলাম “যা আছে তা আগলে ধরে বেঁচে থাক” আমার কাছে যে তিনমাস সময় আছে তা আগলে রাখার কোন উপায় নেই, হয়ত তাই তিন মাস পর বেঁচে থাকারও কোন উপায় নেই। ওহ!! ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আমার কাছে আরও একটা কিছু আছে, স্মৃতি আছে। আমার এই সাতাশ বছরের স্মৃতি আছে।

গত বছরের স্মৃতিই হয়ত সবচেয়ে আনন্দের। তোমার সাথে আমার পরিচয়, পাশাপাশি পথচলা, এক সময় হাতে হাত। কত ভালোই না কেটেছে আমাদের দিনগুলো। আমাদের বলা কি ঠিক হল? তোমার কি দিনগুলো ঠিক ততোটাই ভালো কেটেছে?

সেই সময় আমার এক একটি দিন কাটানোর জন্যে যে জীবনীশক্তির প্রয়োজন হত তার সবই পেতাম একবার তোমার দেখা পেলে। তোমার চোখে প্রতিদিনই নতুন কিছু খুঁজে নেবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাকে পরবর্তী দিন দেখার জন্য বাঁচিয়ে রাখত। তুমি কি জান, তোমার চোখ কতটা সুন্দর করে হাসে? তুমি কি জান, তোমার ঐ চোখের হাসি আমার কত কষ্ট ভুলিয়ে রেখেছিল?

আমার রোগটা যখন ধরা পড়ল, তারপর থেকে কিছুদিন তোমার মন খুবই খারাপ ছিল। তোমার সে হাসি আমার কতদিন দেখা হয়নি!!! অবশেষে তুমি আমার কাছে এসে একদিন জানলে যে আমার সাথে তুমি কোন সম্পর্ক রাখতে চাও না। আমার সাথে পথ চলতে চলতে তুমি বিরক্ত। আমি হাসি মুখেই তোমার কথা মেনে নিয়েছিলাম। তোমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন চেষ্টাই করিনি। ভেবেছিলাম আমি দেখতে না পেলেও, সে হাসিতো আবার তোমার চোখে ফুটে উঠবে।
তোমার চলে যাবার পর, হয়ত তুমি ভালো আছ এই ভাবনায় আরও দুটো দিন কাটিয়ে দিয়েছিলাম। দুইদিন পর শুনলাম তুমি আতœহত্যা করেছ। একটা চিরকুটে লিখে গেছ যে আমার চলে যাওয়া তুমি সহ্য করতে পারবেনা। এটা কি একবারও ভেবে দেখেছিলে যে, তোমার চলে যাওয়া আমি কিভাবে সহ্য করব? 
তুমি চলে যাবার পর আর বেচে থাকার কোন উদ্দেশ্য খুজে পাইনি। তোমার মত সরাসরি আত্মহত্যাও করে উঠতে পারিনি। তবে ঔষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। তাই হয়ত সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সময়!! সময় থেকে মনে পড়ল আমার জীবনে এখন আছেই কিছু সময়। সেই মূল্যবান কিছু সময়ের থেকে আবারও একটা বিকেল তোমাকে ভেবেই নষ্ট করলাম!!!