Posts

গল্প

অনুভূতিহীন সব,তা কেন আজ চরম সত্য?

June 12, 2024

Tanmi Shaharin

Original Author তানমি শাহারিন

Translated by তানমি শাহারিন








অনুভূতিহীন সব


সূদুরপ্রসারী অবসর,ইউনিভার্সিটি লাইফে ৯দিন হুট করে ছুটি পাওয়া বিশাল বিষয়। আর এই ৯ দিনের কর্মমুক্তিতে বেড়াতে এসেছি,অবশ্য বেড়ানোর জায়গাটা বড্ড একঘেয়ে।ঢাকার একপাশ থেকে আরেকপাশে আসা,এটা কখনো রিফ্রেশমেন্ট আনতে পারেনা,এ আরেক শাস্তি।যাইহোক সে শাস্তির এই এক সংক্ষিপ্ত সংগ্রহ বলতে অচ্ছে করছে।
প্রতিদিন মুভি,সিরিজ বা নাটক দেখতে দেখতে রাতে ঘুমাতে যাই ৩ টায়, কখনো রাত শেষে ভোর হয়ে যায়।যদিও ভোরের সূর্য বা আলো কিছুই এই বাসায় স্পষ্ট না।একটা জেলখানার মত, পুরোনো একটা ফ্ল্যাট।ফ্ল্যাটে ঢোকার পর অবশ্য নিজেকে পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হবে।আমারও তাই মনে হয়।বেড়াতে এসেছি তো,তাই দেখতে দেখতে দিন চলে যাবে ভেবেই পার করে দিচ্ছি। 
আজকে আমি সন্ধার দিকে একটা মুভি দেখছি,হুট করে বিকট একটা শব্দ,ভয়ে আমি চিৎকার দিলাম,বাইরে বেরিয়ে পাশের ফ্লাটের আপু কে জিজ্ঞেস করলাম কিসের শব্দ। আপু মুখ ফিরিয়ে নিলেন,শুধু তাই নয় বেশ বিরক্তির সাথে বললেন, কত শব্দই হয়, আমি জানি নাকি।
উনি আমাকে মনে মনে বেকুব ভাবলেন।
ভাবতেই পারে,সব কিছুই আপেক্ষিক। আমার কাছে যা চিন্তার,অন্য কারোর কাছে হয়তো তা ধরতব্যের মধ্যেই আসে না।আমি নিচের তলায় গেলাম,আরেক ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম কি যেন একটা ধপাস করে শব্দ হলো,আপনি কি কিছু জানেন এ ব্যাপারে।উনি হেসে ফেললেন।বললেন আপু ভিতরে আসেন,নতুন এসেছেন তো!
তাই। এই বাসার আশে পাশে প্রায়ই এমন বিকট,বিশ্রী আওয়াজ হয়,আসলে বস্তি টাইপ এলাকা তো তাই।উনি আমার কথায় মনোযোগ না দিয়ে চা আনতে গেলেন,আমি না করলাম।
শহরে এক বদ্ধ ফ্ল্যাটে থাকে,উনি আমাকে কথা বলার মানুষ ভেবে বেশ খুশি হলেন।উনার মনের ভাব এই,চা খায়িয়ে হলেও ৫ মিনিট গল্প করা যাবে।
আমি অবশ্য চা খেলাম না,উনার মেয়েকে বলে চলে আসলাম।বাসার গার্ডের কাছেই গেলাম, কারণ ফ্ল্যাটের কেউই এই কথা হয়তো জানেন না।সবাই সবার মতো কাহিনী ক্রিয়েট করছেন।
গার্ড ঘুমুচ্ছিলো,ম্যাক্সিমাম সময় বাড়ির গার্ড রা কেমন ঘুম ঘুম ভাবে থাকে,আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,এতো বড় একটা সাউন্ড হলো,কেউ পাত্তাই দিচ্ছেন না।
আপনি তো গার্ড আপনার তো জানা দরকার।
তার এক্টাই কথা," আপা আমার তো গেইট তে বাইর হওয়া নিষেধ, আমি কেম্নে জানমু কন তো!
বাইরে হয়তো কোনো কিছুর শব্দ।হইলে হউক আপা,আপনের কী?"
পরক্ষণেই আমি ভাবলাম আসলেই তো?আমার কী?আমার কিছুই না।
উপরে যেতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম ফ্ল্যাটের মানুষগুলো সব অনুভূতিহীন,হুট করে মন মানলো না।ভাবলাম নীচে বাসার সাইডে দেখে আসি তো। 

পুরো বাসার সাইডেই হাঁটছি কিছুই নেই।হাঁটতে হাঁটতে পেছনের অংশে গিয়ে আমি কয়েক সেকেন্ড স্তম্ভিত থেকে,জোরে একটা চিৎকার দিলাম।গার্ড বেড়িয়ে এলো।এসে তারও চিৎকার।
আমাদের চিৎকারে একে একে অনেকেই আসলো। 

আসলে সন্ধ্যা থেকে প্রায় রাত হলো।শুনেছি সন্ধ্যা বেলায় ভূত থাকে।কি অদ্ভুত কাহিনি। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের যে আপু একটু বিরক্ত হয়েছিলেন,উনার ছেলে বিকেল বেলায় ছাদে গিয়েছিল,ছাদে খেলতে খেলতে ছাদের লাগানো বড় সর একটা আম গাছের টব নিয়ে,আসলে টব বলা ভুল,বড় ড্রাম নিয়ে ৪ তলা থেকে পড়ে যায়।ছেলেটার হয়তো ভাগ্যবান, বাড়িটার পেছনে বালুর স্তূপ, কারণ এই বাসার ছাদে রেলিঙের কাজ হচ্ছিলো।অতএব বাচ্চাটার এত উঁচু থেকে পরেও মৃৃত্যু হয়নি।
আম গাছের ঢ্রামসহ পড়েছে বলেই, নীচের অংশে অনেক ব্যথা পেয়েছে।মাথায় আঘাত নেই।হয়তো ছেলেটি বেঁচে যাবে।
কিন্তু ডাক্তার বলেছে ছেলেটি ড্যাঞ্জার ফ্রী না।কারণ ৩০ মিনিট ধরে পড়ে থাকার, ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে।এমন কি ডাক্তার এও বল্লো যে আরেকটু পর আনলে ছেলেটিকে বাঁচানো অসম্ভব ছিল। 

নিজের প্রতি নিজের বেশ ভালোলাগা কাজ করছে,আমার জন্য ছেলেটির বাঁচার আশা জেগে আছে,নিজেকে ট্রিট দিতে ইচ্ছে করছে।কি ভয়ংকর কঠিন হয়ে উঠেছে আমার হৃদয়!
একটা ছোট বাচ্চা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!নিজের হাতেই হস্পিটালে নিয়ে গেলাম,হুট করে সে বিষয় ভুলে গিয়ে নিজের বড়ত্বে মুগ্ধ হয়ে গেলাম!
আসলেই যান্ত্রিক শহরে এসে, অন্তর এখন কৃত্রিম।কোনো কষ্টই আজ কষ্ট না।অনুভূতিহীন সব!










 

Comments

    Please login to post comment. Login