পোস্টস

গল্প

পাওয়া না পাওয়া

১২ জুন ২০২৪

মোহাম্মদ সাকিব (সাকু মিয়া)

মূল লেখক সাকু মিঞা - মোহাম্মদ সাকিব

পাওয়া না পাওয়া

পাওয়া না পাওয়া।


 

শাওনদের কলেজ জীবন শেষ প্রায়। সে এবং পুষ্প শেষ পরিক্ষার পরে একত্রিত হলো। তারা দু'জনেই শুধু একত্রিত হলো। বাকিদের কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। দুজ একত্রিত হওয়া হয়তো তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা সম্পর্কে একটা সুন্দর ধারণা দিচ্ছে।


 

শাওন: আমাদের কলেজ লাইফ তো শেষ। এখন নতুন করে ভাবার সময়। কী করবি এরপর?

পূষ্প: এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি। সামনে এডমিশন এক্সাম দিবো। হয়তো কোনো পাবলিকে চান্স পাবো। আবার হয়তো পাবো না। সবই নিয়তির হাতে। তুই কি করবি?

শাওন: কি করবো তা তো জানিনা। কিন্তু তোকে খুব মিস করবো। সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে পথচলা শুরু করেছি। হয়তো আজকের পর থেকে দেখা টাও হবেনা। 

পূষ্প: আজব তো বোকা নাকি তুই। সামনে এডমিশন এক্সাম। আমরা একই কোচিং এ ভর্তি হয়ে যাবো। আর তাছাড়া আমরা তো একই এলাকায় থাকি তাইনা?

শাওন শাওন একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে বললো - জানিনা কিভাবে কি হবে। তবে আমার মনে হচ্ছে খুব মিস করবো। অনেক মনে পরবে সেই খুনসুটি গুলো। মনে আছে? হাইস্কুলে থাকতে কতো কাহিনি করেছি আমরা? আমি অন্য মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করলে তুই আমাকে আর দেখতে পারতি না। কথা বলা টাও বন্ধ করে দিতি। সময়গুলো যে কীভাবে পার হয়ে গেলো।

পূষ্প: অতিত মনে করিয়ে দিলি?  ফার্স্ট ইয়ার এর কথা মনে আছে? শাওন আমাকে প্রোপোজাল দিয়েছিলো পরে তুই কি মারটাই না দিছিলি বেচারাকে। কি বলতি যে বন্ধুত্ব করতে হলে দুজনের একজনও প্রেম করতে পারবেনা। হাহা

শাওন: বাদ দে সেসব কথা। আমাদের জীবন থেকে প্রাইমারি, হাইস্কুল এবং কলেজ! তিনটাই চলে গেলো চোখের পলকে। এখন যেটা আছে সেটা শুধুই স্মৃতি। আর দু'মাস আছি। এরপর হয়তো তুই এক জায়গায় আমি অন্য জায়গায়। 

পূষ্প চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো - শাওন।  আমাকে বাড়ি থেকে কল দিচ্ছে। আমি যাই রে আজ। অন্য একদিন কথা হবে। 

শাওন : হ্যা!  তাই কর। সময়গুলো আগের মতো নেই। এখন তুই চাইলেও এক বিকেল আমার সাথে পার করতে পারবি না। আর আমি চাইলেও এখন তোকে কলেজ ছুটির বাহানায় বাড়ি পৌছে দিতে পারবোনা। সে অযুহাত দেয়ার মাধ্যমটি নেই। 

পুষ্প: ভালো থাকিস!

শাওন: সাবধানে যা তাহলে।




 

 


 

রোজ বিকেলের মতো শাওন তার নিত্যদিনের সঙ্গী সাব্বিরের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হয়ে পরলো। সাব্বিরের সাথে আড্ডা দেয়াটা শাওনের এক প্রকারের অভ্যাসের মতো। একদিন আড্ডা না দিতে পারলে শাওনের কাছে দিনটাকে অপরিপূর্ণ লাগে।


 

প্রতিদিন বিকেলের মতো আজও একসাথে হলো দুজন।



 

শাওন: কীরে মোবাইলে মুখ গুজে আছিস যে কার সাথে কথা বলছিস?

সাব্বির: পুষ্প'র সাথে।

শাওন: তোর সাথে ইদানীং ভালোই খাতির দেখছি পুষ্পর সাথে।

সাব্বির: মেয়েটা কিন্তু সুন্দর আছে।

শাওন: হ্যা অসম্ভব রকমের। 

সাব্বির: অনেক মায়াবী আছে কিন্তু।

শাওন: হ্যা! ঠিক রবী ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থের হৈমন্তীর মতো মায়াবী। 

সাব্বির: দোস্ত তোর কাছে আমার একটা অনুরোধ ।  রাখবি?

শাওন: বল! এ জীবনে তোর কোনো কথা আমি ফেলিনি। আজও ফেলবো না।

সাব্বির: (হুট করে বলে ফেলবে) পুষ্পর সাথে আমার প্রেম করিয়ে দিবি? তুই তো অর সব থেকে ক্লোজ বন্ধু।

শাওন: (কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পরবে চোখ টলমল করবে)

সাব্বির: বলনা।  দিবি? দোস্ত ওর সাথে ২ মাস কথা বলে আমি ওর মায়ায় পরে গেছি। আমি শিওর ও নিজেও আমার প্রতি দুর্বল। তুই শুধু ব্যাবস্থা করে দে।

শাওন মাথা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে একটা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো!

সাব্বির: দিবি দোস্ত? 

শাওন চোখ বন্ধ করে বললো: হ্যা দিবো। 

সাব্বির শাওনকে জড়িয়ে ধরে বললো :থ্যাংক ইউ দোস্ত। তুই আমার আসল বন্ধু।

শাওন: চোখের কোন থেকে জল গড়িয়ে মাটিতে পরতে লাগলো।

সাব্বির: কিছু খাবি দোস্ত? আমার খুব খুশি খুশি লাগতেছে। আয় কফি খাই।

শাওন: ইচ্ছে নেই রে। 

সাব্বির: কেনো রে? মন খারাপ? তোর চোখ ভেজা কেনো?

শাওন: না তেমন কিছু না। মন ঠিকই আছে। তোর মনে নেই? আজ যে আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী।  সেজন্য মনটা ভালো নেই। মায়ের কথা খুব মনে পরছে। আমি যাই রে। থাক তুই। শাওন চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো।


 

সাব্বির পথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আজ শাওনকে বড় অন্যমনস্ক লাগছে তার কাছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শাওন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো! 


 

শাওন একটা ফাকা জায়গায় দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছে সাব্বির কে কীভাবে বলি। পুষ্পকে আমি ভালোবাসি। নিজের চেয়েও অনেক বেশী। সে এবার বিড়বিড় করে বলে ফেললো- আল্লাহ তুমি তো জানো। আমার এ চোখের পানি মা কে মনে পরার নয়। ভালোবাসা কে হারানোর। আমি জানি পুষ্প কে আমি নিজ হাতে সাব্বিরের হাতে তুলে দিবো। কারণ আমি আমার বন্ধুকে ভালোবাসি ওর জন্য সব পারবো। নিজ হাতে ভালোবাসা কোরবানি দিবো। আর ভালোবাসা হারানোর পর সর্বপ্রথম মা তোমার কথা মনে পরছে। জীবনের চোখের জল পড়তে পড়তে চোখের মাঝে লালভাব ফুটে উঠতে লাগলো।


 

হঠাৎ করে তার আরেক বন্ধু সুজন চলে এলো চলে 

সুজন:  কিরে বন্ধু। তুই এইখানে? তোকে আমি কতো জায়গায় খুজলাম পেলাম না। পরে ভাবলা। তোর মন খারাপ হলে তো তুই এখানে আসিস। যা ভেবেছি তাই হলো।  কি হয়েছে তোর চোখে পানি কেনো?

শাওন: কিছু না। মায়ের কথা মনে পরছে। 

সুজন: এটা না অন্য আরেকটা কারণ আছে সেটা বল।

শাওন: অন্য কোনো কারণ নেই।

সুজন: তুই মিথ্যে বলছিস। আমি জানি। পুষ্পকে নিয়ে মন খারাপ?  সাব্বির আমাকে বলেছে ও পুষ্পকে ভালোবাসে। প্রেম করতে চায়। কেউ না জানলেও আমি জানি পুষ্পের প্রতি তোর যে অনুভুতি রয়েছে। সেই ছোটবেলায় থেকে তোদের দেখছি আমি। দেখে বার বার মনে হতো তোরা একজন অন্যজনের জন্যে জন্মেছিস। এখন কি করবি তুই? সব বলে দিবি?

শাওন: সুজন কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাদতে লাগলো!  দোস্ত আমি পুষ্পকে ভালোবাসি। আমি ওকে হাড়াতে চাই না। কিন্তু সাব্বির। ও তো আমার বন্ধু। ও একটা অনুরোধ করেছে। কীভাবে ফেলি বল? 

সুজন: দোস্ত। যে জিনিসটা আমি বুঝেছি। তোদের মধ্যকার সম্পর্ক টা আমার চেয়ে সাব্বিরের বেশী বোঝা উচিৎ ছিলো। ও চাইলেই তোদের মেলানোর জন্য চেষ্টা করতে পারতো। কিন্তু ও এটা কি করলো।

শাওন : দোস্ত আমি এখন কি করবো তুই বল।

সুজন: তুই গিয়ে পুষ্পের কাছে তোর প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দে। যা। এরপর যা হবে দেখা যাবে। পুষ্পের প্রতি যদি কারো হক থাকে সেটা তুই। অন্য কেউ না।

শাওন: কিন্তু সাব্বির?

সুজন: ওর কথা মাথা থেকে ঝাড়। ঝেড়ে ফেল। পৃথিবীতে ওর জন্য আরো মেয়ে আছে। কিন্তু তোর জন্য পুষ্প ছাড়া কেউ জন্মে নি।

শাওন: আমি পারবো না দোস্ত।

সুজন: তুই পারবি দোস্ত। আমি বলছি তুই পারবি। চেষ্টা করে দেখ। একটা বার চেষ্টা কর। দুমাস পর তোদের মধ্যে এমনেও যোগাযোগ থাকবে কিনা গ্যারান্টি নেই। তুই একটু বলেই দেখ। একদিন আফসোস করবি আজ না বললে। আমার মনে হয় ও তোকে ভালোবাসে। কিন্তু যদি আজ তুই না বলিস। সাব্বির না হয় অন্য কেউ ওকে নিয়ে যাবে। এরপর তুই শুধু আফসোস করবি। দোস্ত আফসোস নিয়ে মরার চেয়ে কলংক নিয়ে মরা ভালো।তুই ওকে বলে দে।  


 

শাওন: তবে তাই হোক।



 

শাওন চলে গেলো পুষ্পের কাছে। হয়তো তাকে সব খুলে বলবে আজ। 


 

শাওন: পুষ্প!

পুষ্প: বল।

শাওন: একটা কথা বলবো।

পুষ্প: বল।

শাওন: কিছু মনে করবি না তো?

পুষ্প: এ জীবনে কোনোদিন তোর কোনো কথায় কিছু মনে করেছি?

শাওন: না কিন্তু এই কথাটা ভিন্ন।

পুষ্প: কথা না পেচিয়ে সোজাসুজি বলে ফেল তো।

শাওন: প্রমিস কর কিছু বলবি না।

পুষ্প: আরে বলবি তুই?

শাওন: চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলবে এরপর বলা শুরু করলো  তুই…. শুধু একটা শব্দ উচ্চারণ করার সাথে সাথে শাওনের চোখ বন্ধ হয়ে এলো। একটা দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে শাওনের উপর থেকে। চুলগুলো উড়ছে সাথে তার গায়ে জড়ানো শালটাও উড়ে যাবার ক্রমে। হয়তো এ বাতাস তাকে নিষেধ করছে।  হয়তো এ বাতাস তাকে চুপ করে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে, সে বুঝতে পারছেনা। 


 

এবার শাওন এক নিশ্বাসে বলে ফেললো: তুই সাব্বিরের সাথে প্রেম কর। ও তোকে অনেক ভালোবাসে।


 

এই কথার প্রতিত্তোরে পুষ্প যা বললো তা শোনার জন্য শাওন মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।

পুষ্প: গতকাল রাতে সাব্বির আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব  দিয়েছে। ওর বাবা মা এসেছিলো। 

শাওন: কিঃহ। কি বলিস এসব। সাব্বির একটাবার জানলো না আমাকে?

মেয়ে: মেয়ে শাওন এর কথায় কর্নপাত না করে রোবোটের মতো বলতে লাগলো একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো-:  আমার মা বাবা রাজি। বলেছেন এডমিশন এক্সামের পরেই সব কার্যক্রম আগাবেন।

শাওন: তুই রাজি?

পুষ্প: হয়তো হ্যা। আবার হয়তো না। এই পৃথিবীতে এমন অনেক গল্প থাকে। যা প্রকাশ হবার আগেই হারিয়ে যায়। যাই রে। বহুত কাজ পরে আছে বাসায়। 

শাওন: শক খেয়ে রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে মেয়ে চলে যাওয়ার জন্য হাটা দিয়েছে।   একটা মৃদু হাওয়ায় শাওন দুলছে। সে দুলছে আর তার চুলগুলো উড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এ হাওয়া তার দু:খে দু:খিত হয়ে কাদছে। বাতাদের এক ধর্ম রয়েছে!  মানুষের দু:খে মানুষ না কাদলেও বাতাস কাদে,জ্বল কাদে, গাছ কাদে! শুধু আমরা তা দেখতে পাই না।


 

পুষ্প হঠাৎ করে তৈরি হচ্ছে। কোথায় যেনো যাবে সে। সে একটি রিকশা নিয়ে নেমে গেলো।


 

সে এসেছে সুজনের বাড়ির নিচে। সুজনকে ডেকে পাঠিয়েছে কল করে। 


 

পুষ্প: সুজন! 

সুজন: বল।

পুষ্প: তুই কি জানিস? আমি।

সুনন: (মেয়েকে থামিয়ে দিবে) তুই শ্রাবণকে ভালোবাসিস তাই তো? আমি এটা সেই স্কুল লাইফ থেকে জানি।

পুষ্প: কিন্তু এদিকে তো আমার বিয়ে হয়ে যাবে সাব্বিরের সাথে। আমাদের গল্প কি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে? আমি কি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো?

সুজন: দোস্ত তুই ওকে ভালোবাসিস। ও তোকে ভালোবাসে।  কিন্তু তোরা কেউ কাউকে বলছিস না। দুজন ভিতরে ভিতরে রেখে মরছিস। কিন্তু কেনো?

পুষ্প: বন্ধুত্ব। 

সুজন: জীবিনের চেয়ে কি বন্ধুত্বের মুল্য বেশী?

পুষ্প: না। 

সুজন: শাওন কে ছাড়া তুই সুখে থাকতে পারবি? 

পুষ্প: বাচতে হয়তো পারবো। কিন্তু সুখে না। মরার মতো বাচা। যাকে বলে জিন্দা লাশ।

সুজন: তাহলে তোরা বলছিস না কেনো? তোরা দুজন মিলে সাব্বির কে বল তাহলেও তো হয়। কিন্তু আগে প্লিজ নিজেরা একটু কথা বল।

পুষ্প: তুই একটু শাওন কে বোঝা না। সাব্বির শ্রাবনের বেস্টফ্রেন্ড।  শ্রাবন বললে সাব্বির ঠিকই মানবে।

সুজন: হ্যা ঠিক বলেছিস।  আমি তাই করছি তাহলে।

কাট।



 

সুজন: দোস্ত! পুষ্পর সাথে কথা বলছি। ও তোর প্রতি অনেক উইক। তুই একটু সাব্বির এর সাথে কথা বল। বোঝা একটু

শাওন: না দোস্ত। বন্ধুত্বের কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ। আমি ভালোবাসা কোরবানি করলাম। আর ভালোবাসা কি আমরা তো শুধুই বন্ধু।

সুজন: এই কথা কি মুখ থেকে বলছিস নাকি মন থেকে?

শাওন: মন থেকে।

সুজন: আরেকবার বল তো।


 

শাওন: দোস্ত তুইতো সব জানিস। সাব্বিরের ওকে পছন্দ হয়েছে। আমি কীভাবে ছিনিয়ে নেই বল? 

সুজন: দোস্ত বোঝ একটু। তোরা একসাথে বড় হয়েছিস। একই সুতোয় বাধা। একটু চেষ্টা করে দেখ।

শাওন: পুষ্প কে ছাড়া সাব্বির বাচবে কীভাবে।

সুজন: তুই বাচবি কেমনে? সাব্বিরের তো দুদিনের সম্পর্ক। তোর তো ২ যুগের।

শাওন: পারবো আমি।

সুজন: পারবি না তুই। তুই ওকে ছাড়া থাকতে পারবি না।আমি জানি! তুই ওদের বিয়ের পর শহর ছেড়ে চলে যাবি।

শাওন: তুই কীভাবে জানলি?

সুজন: বন্ধু হই তোর। দোস্ত প্লিজ একটা বার চেষ্টা কর। আর তাছাড়া সাব্বির তোর বেস্টফ্রেন্ড।তুই বললে ও শুনবে। অবশ্যই শুনবে।


 

 


 

শাওন: সাব্বির দোস্ত।

সাব্বির: বল।

শাওন: দোস্ত পুষ্পের সাথে আমার সেই ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্ব।  আমরা এক সাথে বড় হয়েছি এক সাথে থেকেছি। কবে যে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানিনা!  তুই সেদিন বলাতে আমি অনুভব করেছি আমি ওকে ভালোবাসি। তুই প্লিজ ওকে ছেড়ে দে দোস্ত। তোর পরিবার কে বল তুই বিয়ে করবি না প্লিজ দোস্ত। আমি ওকে ছাড়া বাচবোনা। তুই ওকে বিয়ে করিস না দোস্ত।

সাব্বির জীবনকে থাপ্পর মেরে বসবে।

শাওন মোটেও এর জন্য প্রস্তুত ছিলো না। নিজের ভাইয়ের মতো বন্ধুর থেকে হিংসাত্মক আচরণ পেয়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলো সে।

সাব্বির: তোর কাছে কি ছেলেখেলা মনে হয়? আমি বলেছি না ওকে আমি ভালোবাসি ।আর ও নিজেও আমাকে ভালোবাসে।  বাড়িতে বলেছি।  বিয়ে হবে মানে হবেই।


 

শাওন: কিন্তু ও তো আমাকে ভালোবাসে। 

সাব্বির: তুই আজকের পর থেকে আমার সাথে কথা বলবি না।

শাওন: দোস্ত শোন প্লিজ দোস্ত।

সাব্বির: চলে যাবে


 

বন্ধুর দেয়া কষ্টের ভার নিতে না পেরে দু:খে কষ্টে শরীর ছেড়ে মাটিতে অসহায়ের ভঙ্গিতে বসে পরে শাওন




 

শাওনের সাথে হিংসাত্মক আচরণ করে সাব্বির চলে যায় তাদের আরেক বন্ধু সুজনের কাছে।


 

সাব্বির: সুজন।

সুজন: কি হয়েছে।

সাব্বির: পোলাপান রেডি কর তো। একজন কে পেটাবো।

সুজন: কি হইছে কাকে মারবি?

সাব্বির: শাওন কে!

সুজন: কিহ? শাওন কে মানে? তুই কি ভুলে গেছিস? ছেলেটা এতিম। ছোটবেলায় তোরা একই সাথে থাকতি। আপন ভাইএর মতো।আজ তুই এইটা কি বলছিস।

সাব্বির: ও আমার বিয়ে ভাংতে চায় কত্তোবড় সাহস।


 

সুজন: একটা মেয়ের জন্য বন্ধুকে মারবি?

সাব্বির: কে বন্ধু।  ও আমার কোনো বন্ধু টন্ধু না। তুই পোলাপান রেডি করবি? নাইলে থাকুক লাগবোনা। আর একবার যদি ও বিয়া ভাংতে চায়। অথবা পুষ্পকে কিছু বলে আমি ওকে মাইরা ফেলবো। বইলা দিস।


 

সুজন: তুই যা যা বলতেছোছ বাসায় গিয়া ভাব কাকে নিয়া বলতেছোছ। যা যেই মেয়ের জন্য বন্ধুকে মারতে চাস। যা পুষ্পকে তুই নিজেই বিয়ে কর। ও আর আসবেনা। তাও এতিম ছেলেটার মনে কষ্ট দিস না। তোর একটা ঝারি আর জন্য ছুড়ির আঘাত। তাকে তুই মারতে চাস?  ছিহ।  

সাব্বির: নাটক দেখাইস না। বিয়া করমুই তো সব ঠিক করছি কি এমনি এমনি নাকি?




 

এভাবে কয়েক ঘন্টা হয়ে গেলো! সাব্বিরের রাগ কিছুটা কমে এলো তবে শাওন এর দু:খ বেরেই চলেছে


 

শাওন- নদীর পারে খোলা বাতাসে একা একা কিছু সময় বসে রইলো। এরপর সেখানেই শুয়ে রইলো! 



 

অপর দিকে সাব্বির নিজেও ভালো নেই। সে ভাবছে বন্ধুর সাথে এমন আচরণ করাটা কি ঠিক হলো?  থাক সরি বইলা দিবোনে।  





 

 

শাওন হতাশা নিয়ে শুধু ভাবছিলো। আমার বন্ধু আমাকে মারলো? আমি তো এতিম। যাকে নিজের ভাই ভাবতাম।  যার জন্য এতো কিছু সে আজ আমার সাথে এমন করলো?। তার কল্পনায় শুধু ঘুড়ছে মেয়েটার সাথে কাটানো সময়! বন্ধুর সাথে কাটানো সময় ‌! 

বহু বছর আগে!  যখন শাওন এর আম্মু মারা যায়। শাওন প্রায় ৭ দিন ভাত ছোয় না! তখন সাব্বির তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো!

এবং বলেছিলো- আজ থেকে আমার মা তোর মা! আর আমি তোর ভাই.!

শাওনকে সাব্বিরের মা'ও গ্রহন করে নিয়েছিলো! এরপর আর কখনোই শাওনের মন খারাপ হতোনা। কিন্তু আজ ভিষন হচ্ছে!  এর কারণ কি? এর কারণ কি এটা হতে পারে? যে আজ এই ভুপৃষ্ঠে শাওন একা। তার কেউ নেই। তাই সে মন খারাপ করে আছে?

 

 

অনেক বছর পর তারা এলাকাতে ফিরেছে!


 

সাব্বিরের চোখে কাকে যেনো দেখা যাচ্ছে! 

শাওন না? হ্যা শাওন ই তো! শাওন একজায়গায় বসে আছে। পুরনো ড্রেস পড়ে। ম


 

সাব্বির: পুষ্প দেখো শাওন বসে আছে। আসো ওর সাথে দেখা করি। আমাদের এতোবছর পর একসাথে দেখলে ভীষণ খুশি হবে ও নিশ্চয়ই। 


 

পুষ্প কিছুতেই যেতে চাচ্ছিলো না। কোন মুখ নিয়ে সে দাঁড়াবে শাওন এর সামনে? সে কি পারবে শাওন এর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে?  পুষ্প যেতেই চাচ্ছিলো না তবে সাব্বিরের জোরাজুরিতে আর না যেয়ে পারলো না। 


 

সাব্বির গিয়ে শাওনকে ডাকতে থাকে। তবে শাওন কোনো জবাব দিচ্ছিলো না। সাব্বির ভেবেছে হয়তো বেচারা ধ্যানে আছে তাই শাওন এর কাধে হাত রেখে তাকে ডাকার জন্য ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেয়ার সাথে সাথেই শাওন এর নিথর দেহখানি মাটিতে লুটিয়ে 


 

পুষ্প ও সাব্বির একে অন্যের দিকে হতভম্ব তাকিয়ে ভাবতে থাকে কি হলো?  সাব্বির এর চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো মনে হচ্ছে। তার চোখ বেয়ে অশ্রু মাটিতে পড়ছে তবু মুখ যেনো শক্ত! সাব্বির কাদছে। তবে বন্ধু হারানোর জন্যে! কিন্তু তার পাশে দাঁড়ানো পুষ্প পাথর হয়েই রইলো! সেই মুহুর্ত থেকে আর কোনোদিন এক বিন্দু কথা বলে নি পুষ্প! জীবিত হয়েই সে মৃত্যুর সাধ গ্রহণ করে ফেললো! মৃত্যুর আগ অবধি পুষ্প চোখ মেলে তাকায় নি! শাওনের লাশ দেখার সাথে সাথেই কোমা হয়ে গিয়েছে পুষ্পের অবস্থান! বাকি জীবন কোমাতেই পার করলেন সে! আর সাব্বির শুধু ভাবছে কি হয়ে গেলো! সে হয়তো জানতো না! সে প্রেমে পড়েছিলো সৌন্দর্জের! আর শাওন আত্মার! তার সৌন্দর্জের প্রেমে পরা মন যখন শাওন এর আত্মা থেকে পুষ্পের আত্মাকে আলাদা করে নিয়েছিলো! তখন কিছুদিন ঠিকই ছিলো! তবে পুষ্পর আত্মা শাওন এর আত্মাকে ছাড়া এক বিন্দু থাকতে পারছিলোনা। তারা একই সুতোয় গাথা!  শাওন যতদিন জীবিত ছিলো! তাদের আত্মা দিব্বি একত্রে ছিলো।  তাই হয়তো পুষ্প জীবিত ছিলো! তবে আজ কে বাচাবে তাকে? এভাবেই দুটো প্রান পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো!


 

শাওন এর মৃত্যুই ছিলো পুষ্পের আত্মার মৃত্যু! তারা আসলেই এক সুতোয় গাথা ।