Posts

কবিতা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর হাসসান ইবনে সাবিত (রা) এর শোকগাথা

June 12, 2024

Talk islamic

Original Author নাজমুল ইসলাম মুন্না

Translated by আকরাম ফারুক

 

“ মদীনাতে রাসূলের উজ্জ্বল নিদর্শন ও স্মৃতি রয়েছে।
সাধারণ নিদর্শন ও স্মৃতিসমূহ বিলীন ও ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
কিন্তু সেই পবিত্র স্থানের চিহ্নসমূহ অক্ষয় ও অমর,
যেখানে মহান পথ প্রদর্শকের আরোহণের স্মৃতি বিজড়িত মিম্বার বর্তমান।
সেখানে সেই সব ঘর রয়েছে যার মধ্যে আল্লাহর তরফ থেকে
জাজ্বল্যমান জ্যোতি নাযিল হতো।
সেখানে তত্ত্বজ্ঞানের এমন সব কালজয়ী নিদর্শন বিদ্যমান
যা যুগ যুগ কালের আবর্তনেও বিকৃত হয় না।
তা যতই প্রাচীন হয় ততই তা থেকে নতুন তত্ত্ব উদগত হয়।
সেখানে আমি চিনতে পেরেছি
রাসূল (সা) এর চিহ্ন ও আদর্শকে, আরও চিনেছি
তাঁর কবরকে যাতে তিনি হয়েছেন সমাহিত।
সেখানে বসে আমি রাসূলের জন্য অশ্রুপাত করছি যার কারণে
অনেক চক্ষু অশ্রুপাত করে সৌভাগ্যবান হচ্ছে।
চক্ষুগুলো অশ্রুপাত করে প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা) এর
অবদানগুলোই স্মরণ করছে,
যার সংখ্যা নির্ণয় করা আমার অসাধ্য।
আহমদ (সা) কে হারানোর বেদনায় রিক্ত ও ভারাক্রান্ত আমার মন তাঁর অবদান
স্মরণ করার কাজে নিয়োজিত হয়েছে।
কিন্তু তাঁর কোন অবদানের দশ ভাগের এক ভাগও স্মরণ করতে পারিনি।
কেবল দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মুহাম্মাদ (সা) যে কবরে শুয়ে আছেন তার পাশে
দীর্ঘ সময় অবস্থান করা এবং অশ্রুপাত করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।
হে রাসূলের কবর, তুমি অশেষ বরকত ও কল্যাণের আধারে পরিণত হয়েছো।
যেমন হয়েছে নির্ভুল পথের দিশারী পদছোঁয়া এই গোটা অঞ্চল।
হে কবর, তোমার ভেতর ভেতর বরকতে পরিপূর্ণ হয়েছে যা এক পূতঃপবিত্র সত্তাকে
ধারণ করে রেখেছে এবং আমার অতি প্রিয়জনকে।
প্রশস্ত ও স্তরে স্তরে সুবিন্যস্ত করে তৈরী করা হয়েছে।
সেই কবরের ওপর অনেকে মাটি ফেলেছে এবং চিরসবুজ
‘ সুদ ’ বৃক্ষ তাতে প্রোথিত হয়েছে।
রাত্রে লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা) কে সমাহিত করার মাধ্যমে
জ্ঞান, দয়া ও সহিষ্ণুতাকে
সমাহিত করেছে এবং তাঁর ওপর মাটি চড়িয়ে দিয়েছে যদিও
তিনি মাটিতে শোয়ানোর মত লোক নন।
সমাহিত করার পর তারা নবী (সা) কে হারিয়ে ব্যথিত মনে ফিরে গেছে
এবং তাদের পিঠ ও হাত দুর্বল হয়ে গেছে।
সেই মহামানবের শোকে কাঁদতে কাঁদতে গেছে- যার শোকে তাঁর মৃত্যুর দিন
আকাশ আর পৃথিবীও কেঁদেছে
তাই তাঁর জন্য মানুষ আরো বেশী শোকাহত।
কোনদিন কি কোন মৃত ব্যক্তির শোক মুহাম্মাদ (স) এর  মৃত্যুশোকের সমতুল্য হয়েছে?
এই মৃত্যুর কারণে মানুষ ওহীর অবতরণক্ষেত্র হারালো
যিনি ওহীর অবতরণক্ষেত্র ছিলেন তিনি আল্লাহর জ্যোতিতে উদ্ভাসিত ছিলেন
এবং সেই জ্যোতি তিনি ইয়ামান ও নাজদে পর্যন্ত বিতরণ করতেন।
যারা তাঁকে অনুসরণ করতো তাদেরকে তিনি দয়াময় আল্লাহর পথ দেখাতেন,
রক্ষা করতেন লাঞ্ছনা গঞ্জনা থেকে এবং ন্যায়ের পথ দেখাতেন।
তিনি তাদের এমন এক নেতা যিনি তাদেরকে হকের দিকে চালিত করতেন
এবং তার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করতেন।
তিনি সত্যের এমন এক শিক্ষক ও দিশারী ·
যার অনুসরণ করলেই পরিশুদ্ধি অর্জন করা যায়।
তিনি মু'মিনদের ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন
এবং তাদের ওজর মেনে নিতেন।
যদি তারা ভালো ও নির্ভুল কাজ করতো তাহলে তো তাদের কল্যাণে
স্বয়ং আল্লাহই উদারহস্ত ছিলেন।
আর যদি তাদের ওপর এমন কোন কজের দায়িত্ব অর্পণ করা হতো
যা তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য,
তাহলে একমাত্র তিনিই তা সহজ করে দিতেন।
মুহাম্মাদ (সা) এর অনুসারীরা যতদিন আল্লাহর নিয়ামতের মধ্যে থাকবে ততদিন
তিনি তাদের কাছে এমন এক দলীল হয়ে থাকবেন যা দিয়ে
তারা সকল ব্যাপারে সঠিক কর্মপন্থা নির্ণয় করতে পারবে।
মানুষের গোমরাহ হয়ে যাওয়া তাঁর কাছে অসহনীয় এবং তাদের হিদায়াত প্রাপ্তি
ও হিদায়াতের ওপর বহাল থাকা তাঁর একান্ত কাম্য।

তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পাশীল, সহানুভূতিশীল ও তাদের
জীবনকে নিরাপদ করতে সদা উদগ্রীব
তারা সেই নূর বা জ্যোতির মধ্যে কালাতিপাত করছিল
মৃত্যুর বর্শা এমন সময় সহসা তাদের জ্যোতির ওপর অব্যর্থভাবে নিক্ষিপ্ত হলো।
ফলে তিনি আল্লাহর দিকে গেলেন আর ফিরিশতারা অশ্রুসিক্ত নয়নে
ও রোরুদ্যমান অবস্থায় তাঁর প্রশংসা করতে লাগলেন।
হারাম শরীফের গোটা এলাকা বিরান হয়ে ঊষর মরুতে পরিণত হলো
কেননা তাঁর কাছে যে ওহীর বিধান আসছিল তা বন্ধ হয়ে গেল।
একমাত্র কবরের জগতটি বিরান হলো না যেখানে
সেই হারানো মানুষটি অতিথি হলেন।
যার শোকে গাছপালা তরুলতা ও সমভূমি কাঁদতে থাকলো
আরো কাঁদতে থাকলো মসজিদ এবং নির্জন স্থানগুলো তাঁর বিয়োগ ব্যথায়।
কেননা এগুলো তাঁর বিচরণের ও অবস্থানের ক্ষেত্র ছিল।
কিন্তু আজ তা চিরতরে শূন্য হয়ে গেল।
জামরাতুল কুবরাতেও ছিল তাঁর বাসস্থান, মুক্তাঙ্গন, জন্মস্থান ও বিচরণের ক্ষেত্র
অতঃপর এখন তা বিরান জায়গায় পরিণত হয়েছে।
অতএব যে অশ্রুসিক্ত নয়ন, আল্লাহর রাসূলের শোকে কাঁদ।
আমার জানা নেই মহাকাল কবে তোমার অশ্রুপাত নিবারণ করতে পারবে।
মানুষের ওপর অপরিমেয় ও সর্বব্যাপী অবদানের অধিকারী সেই
মহান ব্যক্তির জন্য কাঁদাই তো তোমার জন্য স্বাভাবিক।
তাকে অন্ততঃ অশ্রুর উপহার অকৃপণ হস্তে দাও।
কেননা যুগ যুগ কাল ধরে খুঁজলেও তাঁর মত মানুষ আর পাওয়া যাবেনা।
অতীতে এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্তও তাঁর মত কোন মানুষ
মৃত্যুবরণ করবে না।
কিয়ামত পর্যন্তও পাওয়া যাবে না তাঁর মত চরিত্রবান
দায়িত্বশীল, কর্তব্যনিষ্ঠ, অমায়িক ও
দানশীল— যার কাছে কেউ কখনো বঞ্চিত হয় না
সদ্য অর্জিত কিংবা পুরনো সঞ্চিত সম্পদ বিতরণে তাঁর সমতুল্য কেউ নেই-
অতি বড় দানশীলও যখন তার পুরনো সঞ্চিত সম্পদের ব্যাপারে কার্পণ্য করে।
তাঁর মত সুনামখ্যাত ও পূর্বপুরুষদের দিক থেকে তাঁর মত সম্ভ্রান্ত
নেতৃস্থানীয় মক্কাবাসী আর কেউ নেই।
তিনি সবচেয়ে দুর্জয় পর্বতশৃংগের মত অদম্য ও অপ্রতিরোধ্য।
সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে সুদৃঢ়ভাবে নির্মিত সম্ভ্রম রক্ষাকারী স্তম্ভ।
শাখা কিংবা উদ্ভিদ কিংবা গাছ হিসেবে বিবেচনা করলে
তিনি সবচেয়ে স্থিতিশীল গাছ,
যাকে মেঘের বারিধারা সজীব ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।


মহাপবিত্র প্রভু তাঁকে তার জন্মমুহূর্ত থেকেই শ্রেষ্টতম গুণাবলী দিয়ে
লালন করে তাঁকে পুষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ করে গড়ে তুলেছেন।
তাঁর অধীনে মুসলমানরা মতামত প্রকাশের সর্বোচ্চ অধিকার ভোগ করেছে,
জ্ঞানকে কখনো সীমিত এবং চিন্তা ও মতামতকে কখনো দূষণীয় মনে করা হয়নি।
আমি আজ যা বলছি তা একমাত্র নির্বোধ ছাড়া কেউ দূষণীয় মনে করবে না।
আমার মন কিছুতেই তাঁর প্রশংসা থেকে নিবৃত্ত হতে চায় না- কেননা
এ উছিলায়  আমি জান্নাতে চিরস্থায়ী বসবাসের সুযোগ লাভের আশা রাখি।
এ প্রশংসা দ্বারা আমি মুস্তাফার কাছে আশ্রয় লাভের জন্য উদগ্রীব এবং
সেই লক্ষে আমি যথাসাধ্য সচেষ্ট। "
 

Comments

    Please login to post comment. Login