মা।
শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগম।
যিনি ১৪ বছর ভাত খাননি কারন তার ছেলে একদিন জেলে তার কাছে ভাত খেতে চেয়েছিলো তিনি ভাত নিয়ে গিয়ে ছেলেকে আর পাননি,ভাত খাওয়াতে পারেননি ছেলেকে।
যিনি টানা ১৪ বছর খাটে ঘুমান নি,মেঝেতে চাটাই পেতে ঘুমিয়েছেন কারন তার ছেলে আজাদকে শেষ তিনি জেলে মেঝেতে ঘুমাতে দেখেছেন।
যার নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তার স্বামীর দেওয়া অনেক ধন সম্পদ থাকা স্বত্তেও শুধুমাত্র স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করার কারনে সবকিছু ত্যাগ করে রাজপ্রাসাদতুল্য বাড়ি ছেড়ে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তিনি চলে আসেন নিম্নবিত্ত জীবনে।ছেলেকে মানুষ করানোর জন্য সংগ্রাম করে যান একা। ১৯৬০ এর দশকেও একজন মহিলার,একজন মায়ের অাত্নমর্যাদাবোধ যে এত তীব্র হতে পারে সাফিয়া বেগম তারই প্রমান। স্বামী ২য় বিয়ে করার পর তিনি বেঁচে ছিলেন আরো ২৪ বছর। এই ২৪ বছরে একবারও তিনি স্বামীকে নিজের মুখ দেখাননি।তিনি মরার আগে বলে গিয়েছিলেন তার কবরে শুধু একটিই পরিচয় থাকবে- শহীদ আজাদের মা।তাই এখনো জুরাইন গোরস্থানে গেলে দেখা যায় তার কবরটা।প্রস্তরফলকে লেখা মায়ের পরিচয়ঃসাফিয়া বেগম,শহীদ আজাদের মা।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা খুব সুন্দর ভাবে বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক আনিসুল হক স্যার।বইটা পড়তেছিলাম আর প্রতিটা মূহুর্তে মনে হচ্চিল মুক্তিযুদ্ধ খুব রিসেন্ট একটা ঘটনা এই তো আমার চোখের সামনেই কিছুদিন আগে মুক্তিযুদ্ধ হইছে।
ঢাকায় গেরিলারা আক্রমণ করে উড়ে দিচ্ছে মিলিটারিদের ক্যাম্প।আক্রমণ করেই হাইড আউট,গায়েব হয়ে যান গেরিলারা। সবকিছুই মনে হয় যেন কিছুদিন আগের ঘটনা।
মোটামুটি বইটা পড়ে অনুভব করা যায় দেশপ্রেম কি।দেশকে ভালোবেসে দেশকে স্বাধীন করতে দেশের যুবকদের এত বড় আত্নত্যাগ । যুবকেরা কিভাবে দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিল।
অাজাদ,তার বন্ধু রুমি,জুয়েল,হ্যারিস,আশরাফুল,বদি বাকের,সামাদ আরো অনেকে ।সবাই মিলে কিভাবে দেশকে স্বধীন করার জন্য নিজেরা ঝুঁকি নিল,নিজেদের জীবন কে বিলিয়ে দিল।সাফিয়া বেগম তার ছেলে আজাদকে, জাহানারা ইমাম তার ছেলে রুমিকে, আরো কত মুক্তিযোদ্ধার মা কিভাবে দেশের তরে নিজের সন্তানদের উৎসর্গ করল।
আজাদের ইচ্ছা ছিলো দেশ স্বাধীন হলে সে তার মায়ের জীবন সংগ্রামের কথা সবাইকে জানাবে,সে লিখবে তার মাকে নিয়ে।দেশ স্বাধীন হলো ঠিকই কিন্তু অাজাদ আর ফিরে আসলো না।আজাদের সেই অপূর্ন ইচ্ছাকেই বাস্তবায়ন করল লেখক আনিসুল হক ।এই বইটার রিভিউ পাতার পর পাতা লিখলেও বইটা কে কখনোই সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করা যাবে না।এই পর্যন্ত অামার পড়া সেরা বইগুলোর একটা।এক কথায় অসাধারন একটা বই। আসলেই চোখে পানি আসার মতো কাহিনী।
যে কেউ দেশের মুক্তিযুদ্ধকে আরো ভালো করে বুঝতে চায়,দেশপ্রেমকে অারো ভালো করে অনুভব করতে চায়, তার মাকে আরো বেশি করে ভালোবাসতে চায় আমার মনে হয় এই বইটা তার জন্য একটা মাস্ট রিড বই।