নিরো এক সারি চেয়ারের একদম শেষের চেয়ারে বসে আছে। একা। হাতে গোনা কয়েকজন নার্স ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে। রিসেপশনে যে মহিলা বসে আছে সে ঘনঘন হাই তুলছে আর ঘড়িতে সময় দেখছে— শিফট শেষ হতে চলেছে সম্ভবত। তাছাড়া ঘরটা মোটামুটি খালিই বলা চলে।
নিরো ঠিক বলতে পারবে না ও কতক্ষণ এখানে বসে আছে। দেয়ালে ঘড়ি আছে বটে, তবে ও যেদিকে ফিরে বসেছে তার একদম উল্টো পাশে। প্রথমে কিছুক্ষণ ঘড়ির দিকে খেয়াল রেখেছিল ও, এখন আর ঘাড় ফেরাতে ইচ্ছা করছে না। সম্ভবত কয়েক ঘণ্টা কেটে গেছে, কিংবা কয়েক যুগ— কে জানে! ও ক্ষণিকের জন্যে চোখ বন্ধ করল।
‘নিরো! নিরো!’
নিরো চোখ খুলল। সে অবাক হয়ে তাকাল সামনে ঝুঁকে থাকা মেয়েটার দিকে। মেয়েটার পরনে সাদা অ্যাপ্রন, সোনালি চুলগুলো পনিটেইল করে বাঁধা। মেয়েটা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখদুটো আশ্চর্য রকম মায়াবী— বিষাদ মাখা। ঠোঁট মৃদু কাঁপছে। নিরো ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসল।
‘এখানেই ঘুমিয়ে পড়লে? জানো বসে বসে কারা ঘুমায়? ঘোড়ারা। তুমি কি ঘোড়া?’
নিরো হেসে বলল, ‘হ্যাঁ, ঘোড়া। দুপেয়ে ঘোড়া।’ সে ঘোড়ার ডাকের মত শব্দ করার চেষ্টা করল। মেয়েটা হাসল।
‘তোমাকে গোছগাছ করতে হবে। আটটার মধ্যে তোমাকে ডক্টরের রুমে যেতে বলেছে। তারপর তোমাকে রিলিজ করে দেবে।’
নিরো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পুরো ব্যাপারটা অনেক তাড়াতাড়ি ঘটে গেছে। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
‘ফ্লোরা?’
‘হুঁ।’
‘ব্যাপারটা একটু অস্বাভাবিক তাড়াতাড়ি ঘটে গেছে মনে হচ্ছে না?’
ফ্লোরা কোনো উত্তর দিল না। পায়ের নখ মেঝেতে ঘষতে লাগল। কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে একজন হওয়া খুব সহজ কথা না। ওর নিজের কাছেও ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগছে।
‘আচ্ছা চল যাই। প্যাক করাই আছে, ব্যাগটা নিয়ে আসলেই হবে।’
ফ্লোরা আর নিরো ৩০১ নম্বর রুমের দিকে এগুলো। রুমটা তিন তলায়। লিফটে যাওয়া উচিত। কিন্তু নিরো লিফট নিল না। সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছে। ফ্লোরা ওকে তাড়া দিচ্ছে না— যদিও ওকে বলা হয়েছে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নিরোকে ডক্টরের রুমে নিয়ে আসতে।
রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ওরা। খুব সুন্দরভাবে সাজানো একটা রুম। এক পাশে একটা সিঙ্গেল বেড, তার উপর খুব নিপুণভাবে সাজিয়ে রাখা বালিশ আর তোষক।
‘বাঃ! এর মধ্যেই সাজিয়ে ফেলেছে? নতুন ভাড়াটের জন্যে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে দেখছি!’
ফ্লোরা কোনো উত্তর দিল না। মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে ও।
‘চল বেরোই।’
‘জামা চেঞ্জ করে নাও। টেবিলে এক সেট জামা কাপড় রাখা আছে, ওগুলো পড়ে নাও। আর এগুলো বিছানায় রাখ।’
নিরো বাথরুম থেকে জামা কাপড় পড়ে আসল। ‘চল যাই।’
‘হ্যাঁ, চল।’
ওরা এবারো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। ডক্টরের রুমটা সাত তলায়, হলরুমের একেবারে শেষ মাথায়।
ওরা যখন সাত তলায় আসলো তখন নিরো হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়।
‘ফ্লোরা!’
‘বল।’
‘একটু ছাদে আসবে? তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।’
ফ্লোরা একটু ইতস্তত করে। ‘দেরি হয়ে যাচ্ছে…’
‘যাক এসো।’
ফ্লোরা ইতস্তত করে আবার। কিছুটা অনিচ্ছায় পা বাড়ায় ও।
ছাদটা অন্ধকার। পাশে সমুদ্রের তাজা বাতাস নাকে লাগছে। হঠাৎ হঠাৎ দমকা বাতাস মুখে ঝাঁপটা মারছে। সমুদ্র পাড়ে ঢেউয়ের বাড়ি খাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ আসছে না। মাঝে মাঝে কয়েকটা ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। আজ সম্ভবত পূর্ণিমা, তাই সমুদ্রের তীর ধরে বেশ দূর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তবে দেখার বেশি কিছু নেই। আশে পাশে কয়েকশ মাইল জুড়ে কিছুই নেই বলার মত। বলা যায় প্রায় শূন্যের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এই ফ্যাসিলিটিটা।
নিরো কিছু বলছে না। ফ্লোরা অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরপর ঘড়ি দেখছে ও।
‘ফ্লোরা!’
‘বল।’
‘আমাদের মনে হয় আর দেখা হবে না।’
‘অবশ্যই হবে। তুমি রিলিজ হয়ে গেলে কী আমাকে দেখতে আর আসবে না?’
‘এখান থেকে যারা চলে যায় ওদেরকে কখনো ফিরে আসতে দেখেছ?’
ফ্লোরা কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘তাহলে তুমি তোমার ঠিকানা আমাকে দিয়ে রাখবে। আমি দেখা করব তোমার সাথে। পারবে না?’
নিরো একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। ‘আমি কোথায় যাচ্ছি তা কি আমি জানি?’
ফ্লোরা আরো উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘তাহলে আমিই তোমাকে খুঁজে বের করব। যেভাবে পারি! অবশ্যই করব!’
নিরো হা হা করে হাসে। ওর হাসির শব্দে নীরবতা খান খান হয়ে যায়। এই নিস্তব্ধ রাতে ওর হাসি ফ্লোরার কাছে ভৌতিক মনে হয়।
‘ফ্লোরা!’
‘বল।’
‘তোমাকে একটা জিনিস দেই। এটা সাথে রাখবে।’
ফ্লোরা কোনো উত্তর দিল না। নিরো ওর ঘাড়ে হাত রাখল। ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
নিরো ওর হাতের মুঠোতে একটা মাইক্রোচিপের মতো জিনিস রাখল। ‘আমার কথা মন দিয়ে শুনো। এটা একটা মাইক্রো পেজার। আমার কাছে আরেকটা আছে। তুমি যখনই…’
ফ্লোরা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। জিনিসটার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর তাকাল নিরোর দিকে। ‘আমি জানি এটা কী। তুমি এটা কীভাবে পেলে? এটা কাছে থাকা বেআইনি তা তুমি জানো?’
‘হ্যাঁ জানি,’ নিরো ফিসফিসিয়ে বলল। ‘কীভাবে পেলাম তোমাকে পরে জানাব। আগে বল তুমি এটা ব্যবহার করতে জানো কিনা?’
‘হ্যাঁ, জানি।’
‘গুড।’ নিরো একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ‘আমাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এটা তুমিও জানো আমিও জানি। কিন্তু যদি কখনো সম্ভব হয় তাহলে তোমার সাথে আমি দেখা করতে চাই।’
‘কিন্তু… কিন্তু…’ নিরোকে মাঝপথে থামিয়ে দিল ফ্লোরা। ‘এটা ব্যবহার করা মাত্রই ওরা জেনে যাবে! তারপর কী করবে?’
‘হ্যাঁ, জেনে যাবে ঠিকই।’ নিরো একটা দম নিয়ে বলল, ‘তাই এটা কোনো বিশেষ প্রয়োজনেই ব্যবহার করবে।’
‘কী ধরণের বিশেষ প্রয়োজন?’
নিরো উত্তর দিল না। ফ্লোরাও উত্তরের আসা করল না। কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না।
কিছুক্ষণ পর সে বলল, ‘এখানে তুমি ছাড়া আমার পরিচিত আর কেউ নেই। ওরা নিশ্চয় আমার পরিচয় পরিবর্তন করতে বলবে। আমি চাই না আমার অতীত একেবারে হারিয়ে যাক।’
ফ্লোরা চুপ করে ওর কথা শুনতে থাকল। ওরা আর কিছুক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকল। নিরোর ইচ্ছে করছে এই মেয়েটার গালে একটা চুমু খেতে। বিদায় চুম্বন। কিন্তু সে সাহস করতে পারছে না। ফ্লোরাই নীরবতা ভাঙল। ‘আমাদের মনে হয় এখন যাওয়া উচিত।’
‘হ্যাঁ,’ বলার পরও নিরো জায়গা থেকে নড়ল না। ‘ফ্লোরা!’
‘বলো, নিরো।’
‘আমাকে মনে রেখ।’
ফ্লোরা ঘুরে দাঁড়াল। ওর চোখ টলমল করছে, নিরোকে দেখতে দিতে চায় না সে এটা। ‘চল, এখন যাই। সময় ফুরিয়ে এসেছে,’ যথাসম্ভব শান্ত গলায় বলার চেষ্টা করল ও। ‘আমরা যা যা শিখিয়ে দিয়েছিলাম মনে আছে?’
নিরো বলল, ‘হ্যাঁ, মনে আছে।’
‘ঠিক আছে চল। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কথা বার্তা বলো। শেষ মুহূর্তে গুলিয়ে ফেলো না যেন।’
‘ঠিক আছে।’
‘বিদায়।’
‘বিদায়।’
ফ্লোরা আর ওর দিকে তাকাল না। হেঁটে চলল সামনে। নিরো ওর পেছনে হাঁটতে হাঁটতে দেখল মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে মেয়েটা। ওর বুকে চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভূত হল। এতো দিন ওর মাথাই একটাই চিন্তা ঘুরত— কীভাবে এখান থেকে বের হবে। আর এখন ওর মন চাইছে থেকে যেতে। এই ফ্যাসিলিটি, চেনা মানুষজন, এই মেয়েটা— এদেরকে ফেলে ও খুশি থাকতে পারবে?
***
নিরো এই রুমটাতে আরো বেশ কয়েকবার এসেছে। যতবারই এসেছে ততবারই অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছে— গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে।
রুমটার জানালার চারদিকে মোটা কালো পর্দা দেয়া, দিনের বেলাতেও এক ফোটা আলো ঢুকতে পারে না। বাইরের কোনো শব্দ এই রুমে ঢুকে না, ভেতরের শব্দও বাইরে যায় না। আশ্চর্যরকম শীতল করা এই রুমটা, আরেকটু শীতল করলে সম্ভবত হিমাঙ্কের নিচে চলে যাবে তাপমাত্রা।
এই রুমে একটাই ডেস্ক— যেটার পেছনে ডক্টর বসেন। আজ ব্যতিক্রম। আজ ডক্টর ডেস্কের পেছনে নেই। তার বদলে দুই জন উর্দি পড়া ষণ্ডা মার্কা লোক বসে আছে। দেখেই মনে ভয় জাগে। এই আলো আঁধার রুমের মধ্যেও দুজন সানগ্লাস পরে আছে।
হুটহাট ঘাবড়ে যাওয়ার ছেলে নিরো নয়। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে স্নায়ু শক্ত রাখা ওর জন্য খুব একটা কঠিন বিষয় না। ও একটা দম নিল। ওকে শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো মনে করবার চেষ্টা করল।
‘স্যার, আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্যে আপনাদের ধন্যবাদ। আমার উপর যে দায়িত্বই দেয়া হোক না কেন আমি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করব। আমি…’
উর্দি পড়া লোকদুটোর মধ্যে একজন হাত উঁচু করে নিরোকে থামিয়ে দিল। লোকটার ঠোঁটের উপর খুবই পাতলা একটা গোঁফের রেখা। চেহারা গম্ভীর। দেখে বেশ বয়সী মনে হলেও চেহারা দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। দূর থেকেই কিছু মানুষের ক্ষমতার আঁচ পাওয়া যায়। ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্যে তারা তেমন কিছুই করেন না, বডি ল্যাংগুয়েজ দেখেই বুঝে ফেলতে হয়। পাতলা গোঁফের এই লোক এমন একজন। নিরো সাথে সাথে কথা থামিয়ে দিল। কিছু না বলেও পুরো পরিস্থিতিটা কীভাবে নিজের দখলে নিয়ে নিল এই লোক— তা ভেবে মনে মনে প্রশংসা করল সে।
লোকটা হাত নামিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে নিরোর দিকে তাকিয়ে থাকল। চোখে সানগ্লাস, তাই কী ভাবছে না ভাবছে কিছুই বোঝার উপায় নেই।
বেশ কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভঙ্গ করলেন তিনি। খুব পরিষ্কার গলায় বললেন, ‘তুমি এখন থেকে এজেন্ট থার্টি ওয়ান।’
নিরো কী বলবে বুঝতে পারছে না। লোকটার কথা শুনে একটু চমকে গেছে। ‘স্যার?’
‘কম্যান্ডার,’ বললেন তিনি। ‘আমাকে কম্যান্ডার ডাকবে, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।’
‘জী কম্যান্ডার।’
‘গুড।’ উঠে দাঁড়ালেন তিনি। দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা ঋজু। নিরোও উঠে দাঁড়াল। সে নিজেকে যথেষ্ট লম্বা বলে মনে করে। স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে সে লম্বাই বটে। কিন্তু কম্যান্ডারের সামনে দাঁড়িয়ে এই মূহুর্তে তার নিজেকে বামন বামন লাগছে। তাঁর
‘তোমার ফাইল আমরা বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি। ইম্প্রেসিভ। সব টেস্টেই তুমি কৃতিত্ব দেখিয়েছ। তবে বাস্তব জীবন আর টেস্টরুমের মধ্যে অনেক তফাত। এটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র। আর যুদ্ধে একবার নামলে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। তুমি যদি আজ কন্ট্রাক্টে সাইন কর, তবে তোমার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মালিকানা আমাদের হাতে চলে যাবে। তুমি চাইলেও আর এই ফ্যাসিলিটির স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। টোটাল ডিভোশান। আমরা চাই সম্পূর্ণ আনুগত্য। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার, বয়?’
‘ইয়েস স্যা… কম্যান্ডার।’
‘গুড।’ এবার উনি হেঁটে ডেস্কের কাছে গেলেন। উর্দি পড়া আরেকট লোককে ইশারা করলেন হাত দিয়ে। লোকটা কোনো কথা না বলে ব্রিফকেস থেকে একটা কাগজ আর একটা কলম বের করল। তারপর ছুঁড়ে দিল নিরোর দিকে। নিরো উলটে পালটে দেখল। তারপর সাইন করার জন্যে কলমটা হাতে নিল।
হঠাৎ কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়া বজ্রপাতের মতো কম্যান্ডারের মুষ্টি নেমে এল ডেস্কের উপর। নিরো চমকে উঠল। হাত থেকে কলম পড়ে গেল ওর।
কম্যান্ডার ওর দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন, ‘না পড়ে কোনো কিছুতে সাইন করবে না। লেসন নাম্বার ওয়ান।’
নিরোর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুল না।
কিছুক্ষণ পর উনি আবার বললেন, ‘তোমার কাজ কী আর তোমার প্যামেন্ট, পার্ক সবই এই ডকুমেন্টে লিখা আছে। এটা ই-প্যাপার। সাইন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরো ডকুমেন্টটা মুছে যাবে। তোমার জন্যে যানবাহনের ব্যবস্থা করা আছে। আজ রাত থেকেই তুমি এজেন্ট থার্টি ওয়ান। তোমার আগের পরিচয় এই ডকুমেন্টের সাথে মুছে যাবে। বেস্ট অফ লাক, বয়।’ বলেই আর অপেক্ষা না করে ধীর পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। তাঁর পেছন পেছন অন্য লোকটাও বেরুল।
ডকুমেন্টটা পড়ে পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল নিরো। সে নিশ্চিত তাকে যতটুকু বলা হচ্ছে ঘটনা তার চেয়ে অনেক বেশি গভীর এবং অনেক বেশি প্যাঁচালো। কিন্তু পড়ে যতটুকু বুঝল ও— তাতেই ঘাড়ের প্রত্যেকটি রোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে ওর। উত্তেজনায় ওর বুক কাঁপছে দুরু দুরু। কিছুক্ষণ আগের বিষন্নতা কেটে গিয়ে এখন ওর মনে কেবল বিরাজ করছে উত্তেজনা। এর স্বপ্নই তো দেখেছিল সে সারাজীবন। ফ্যাসিলিটি থেকে বের হয়ে ও তো এমনই কাজ করতে চেয়েছিল। আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কাঁপা হাতে সাইন করল সে। সাথে সাথে সম্পূর্ণ ডকুমেন্টটা মুছে গেল। খালি কাগজটা ফেলে দিল ও।
হঠাৎ ওর ঘাড়ে হাত রাখল কেউ একজন। পেছন ফিরে তাকাল সে। ডক্টর। এই লোকটার আশ্রয়ে এতো দিন ছিল সে। ছোটখাট লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে মলিন একটা হাসি দিল।
***
ছাদে কিছুক্ষণ আগের নীরবতা আর নেই এখন। হেলিকপ্টারের পাখার গর্জনে কানে তালা লেগে যাচ্ছে। নিরো মাথা নিচু করে উঠে পড়ল। কানে হেডফোন লাগাল। পাইলট পেছন ফিরে হাত উঁচু করল। নিরো বুড়ো আঙুল উঁচু করে বুঝাল— সে প্রস্তুত। পাইলট মাথা নাড়ে সামনে ফিরল। অজানা গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ল নিরো।
ফ্লোরা দেখল একটা হেলিকপ্টার উড়ে যাচ্ছে রাতের আঁধার ছাপিয়ে। শক্ত করে হাতে থাকা ছোট্ট চিপটা চেপে ধরল সে।
(চলবে)