পোস্টস

প্রবন্ধ

আমার কৈশরে হুমায়ূন

১২ জুন ২০২৪

MIZAN FARABI

দিন তারিখ মনে নেই, সম্ভবত দু'হাজার আট সাল। গল্পটা বলি। একাডেমিক বইয়ের বাইরে সবেমাত্র দুয়েকটা বই হয়তো পড়ছি তখন। আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করতো। এ সময়ে হুমায়ূনের লেখা পড়েছিলাম পত্রিকায়, সাময়িকীতে। তারও অনেক পরে গল্পের বই পড়লাম। বিকেলে খেলার রুটিন থাকলেও মাঝে মধ্যে টুকটাক বইয়ে চোখ বুলাতাম। ক্লাসের বইয়ের চেয়ে বড় ভাইয়ের সংগ্রহে থাকা নানান বই, পত্রিকা, কিশোর ম্যাগাজিন নিয়ে চলে যেতাম, কখনো ঘরে আবার কখনো বিকেলে কোন গাছ তলায় পাটি বিছিয়ে নাড়াচাড়া করতাম। এভাবেই শুরু হলো কৈশোরে বই পড়ার গল্প।

 

 

গ্রামের বাজারে পুরনো যে কয়টা বইয়ের দোকান আছে তার একটা ভৌমিক লাইব্রেরি। বইটই কেনার জন্য আব্বার সাথেই প্রায় যেতাম। সেই সুবাদে পরিচয়। একবার একাডেমিক বই কিনতে গিয়ে অনেকটা উপরের তাকে চোখে পড়লো "অচিনপুর" নামের একটা বই। পাশে হুমায়ূন লেখা। হুমায়ূনের লেখার সাথে তখনো পরিচয় হয়নি। বইয়ের পর বই লিখে যখন হুমায়ূন ইতিহাস হচ্ছেন তখন কৈশরে আমি। গ্রামে তেমন একটা বেচা-বিক্রি হয় না বলে ধুলোবালি পড়ে আছে। নামিয়ে দিতেও যেন অলসতা। দাদা, আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুই নিবি? নিবো, দেন। অচিনপুর নামটা ভালো লাগলো। অনেকটা টেনে ধরলো যেন বলছে আমারে নিয়ে যা। বইটা নিয়ে বাড়িতে যাবার অপেক্ষা, বিকেলেই পড়বো।

 

 

হুমায়ূনের অন্য অনেক বইয়ের তুলনায় এটা ছোট বই। পড়তেই শেষ হয়ে যাবে। অল্প পড়ে আবার রেখে দিই। শেষ না করে রাতে বালিশের পাশে রাখলাম। পাশে অচিনপুর নিয়ে ঘুমালাম। একবার সুন্দরপুর নামে একটা নাটক দেখছিলাম টেলিভিশনে। ওই দৃশ্যটা বারবার সামনে আসতে লাগলো। ভাবতেছি অচিনপুরও কি এরকম সুন্দর একটা গ্রাম! কখন যে সকাল হবে। এর মধ্যে কৌতুহলে বালিশের পাশে হাত দিয়ে কয়েকবার দেখলাম বইটা আছে কি-না। আনন্দ আমার ঘুম হচ্ছে না। পরদিন ছিলো শুক্রবার। বইটার সাথেই আমার দিন কাটলো।

 

আমরা থাকি অচিনপুরে যার সবটা আমাদের চেনা হয় না। এই না চেনার জগতে থাকার সময় ফুরিয়ে এলেও আবারো পাড়ি জমাই আরেকটা অচিনপুরে। হুমায়ূনের গ্রাম নিয়ে অনেক গল্প পাবেন। আছে কিছুটা ছোট মলাটের উপন্যাসও। অচিনপুরটাও অনেকটা এরকম। এটা হুমায়ূনের প্রথম দিকের লেখা তৃতীয় গল্পের বই। লেখায় অল্প কথায় অনেক কিছু হাজির করে পাঠকের মনে। এটাও সেই রকমের। হুমায়ূনের নিজস্ব লেখার যে ছাপ তা এখানে পাঠক ধরতে পারবেন। একটা গ্রামের পরিবার বা গ্রামবাংলার চিত্র রূপায়নে চেনা হুমায়ূন পা বাড়ালেন গল্পে, অচিনপুরে। তো, কৈশরে যে পড়লাম এর কিছুই মনে নেই। এটা পরের বারের স্মৃতি বললাম।

 

সেই প্রথম সংগ্রহের বইটাও আমার কাছে নেই, কেউ নিয়ে গেছে অথবা ঘর মেরামতের পর আর খুঁজে পাইনি। স্মৃতির বইটা না পাওয়া বেদনার। অনেক বছর পরে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের বইঘর থেকে বইটা আবার কিনেছিলাম। হুমায়ূনের যে বইগুলো কয়েকবার পড়া হয়েছে এটা তার একটা। শুরুর দিকের অন্য আরো স্মৃতি আছে। হুমায়ূন নিয়ে বলতে গেলে আমার একাডেমিক বইয়ের বাইরে এটা বই পড়ার স্মৃতি। সুযোগ পেলে আবার পড়বো— হারাবো হুমায়ূনের অচিনপুর।