পোস্টস

গল্প

অদ্ভুত ২

১২ জুন ২০২৪

মাসুদ হোসেন

মূল লেখক মাসুদ হোসেন

একের পর এক দুর্ভাগ্যে একসময় ধনী পরিবার টা প্রায় ফতুর হবার দশায় যখন পৌছালো। রাজ কান্ত তার চেয়ারে বসে কি যেন একটা ভাব ছিল, খুব হতাশ দেখাচ্ছিল তাকে। রাজ কান্ত তার প্রানের বন্ধু বিমল বসু কে চিঠি লিখলো। চিঠিতে লিখা হলো বন্ধু আমি খুব হতাশ, তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন।
আমি আশা করি আমার চিঠি পেয়ে তুমি আসবে, আর তুমি হয়তো জানো আমরা সেই পুরনো বাড়িটিতেই এখনো থাকি।

চিঠি পেয়ে বিমল চলে আসলো রাজ কান্ত
বিমল কে দেখে খুব একটা খুশি হলো না কেননা রাজ কান্ত খুবই হতাশ। বিমল রাজ কন্তের হতাশাকে তাড়ানোর জন্য তাকে সান্তনা দিতে লাগল,বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে বন্ধু তোমার আমাকে বলো। কিন্তু কোন উত্তর আসে না ,হঠাৎ করে রাজ কান্ত বলল বন্ধু তুমি এসেছ। বিমল বললো তোমার কি হয়েছে আমাকে বল।

তুমি তো জানোই আমার একটা বোন রয়েছে, বলল রাজ কান্ত!

ও এমিলির কথা বলছ, বলল বিমল!

হ্যাঁ বন্ধু এমিলি ও কিছুদিন ধরেই কেমন যেন আচরণ করছে নিজেকে একটি ঘরে বন্ধি করে রেখেছে,ডাকলেও সাড়া দেয় না,এ নিয়ে আমি খুবই হতাশ তাই তোমাকে আমি ডেকেছি, বলল রাজ কান্ত!

এখন এমিলি কোথায়? বলল বিমল!

সে তার নিজের ঘরে সব সময় দরজা বন্ধ করে থাকে ঠিক মতন খাবার ও খায় না, তুমি তো জানোই আমাদের বংশে আমি আর এমিলি ছাড়া কেউ নেই,তাই খুব চিন্তা হচ্ছে। বলল রাজ কান্ত!

এই ঘটনা কতদিন ধরে চলছে? বলল বিমল!

তুমি আসার তিন দিন আগে থেকে, বলল রাজ কান্ত!

আমি একটু এমিলির সাথে দেখা করতে চাই, বলল বিমল!

রাজ কান্ত এমিলির ঘর দেখিয়ে আবারো চেয়ারে বসে চিন্তা ভেঙে পড়ল।
বিমল এমিলির সাথে কথা বলার জন্য তার ঘরের দিকে গেল দেখল তার ঘরে দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করার পরও কোনো জবাব দিল না। বিমল খুবই হতাশ হয়ে ফিরে আসলো।

রাত তখন আটটা বাজে, বিমল আর রাজ কান্ত তাদের ঘরের চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিল, হঠাৎ এমিলির ঘর থেকে বিকট আওয়াজ আসলো, বিমল চমকে উঠল কিন্তু যখন বিমল রাজ কান্তের দিকে তাকালো দেখলো রাজ কান্ত চা খাচ্ছে যেন রাজকান্ত কোন শব্দই শুনেনি। বিমল ও ওকে বিভ্রান্ত‌ করলো না। কিছুক্ষণ পর আবার ও সেই বিকট আওয়াজ আসলো,বিমল আবার ও চমকে উঠল।কিন্তু রাজকান্ত এবারও কোন প্রতিক্রিয়া দিল না সে চা খাচ্ছে,বিমল আবার ও রাজকান্তকে বিভ্রান্ত করলো না।
চা খাওয়া শেষ। রাজ কান্ত বলে উঠলো আওয়াজ গুলো শুনতে পেয়েছিলে।

হ্যা শুনলাম, কিসের আওয়াজ? বলল বিমল!

এটা সেই আওয়াজ যা আমি গত তিন দিন দ্ধরে শুনে আসছি, বলল রাজকান্ত!

বিমল আর রাজকান্ত ঘুমানোর জন্য চেষ্টা করলো, কিন্তু তাদের ঘুম আসছে না।তাই তারা রাতটা কাটানোর জন্য বই পড়া শুরু করল। বেশ কয়েক ঘণ্টা দ্ধরে তারা বই পড়লো। হঠাৎ ই বিমল এমিলির ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ পেল।

তুমি কিছু শুনতে পেলে? বল রাজ কান্ত!

হ্যাঁ, বন্ধু শুনলাম। মনে হয় এমিলি ঘরে দরজা খুলেছে। বলল বিমল!

চলো আমরা এমিলির পিছনে পিছনে যাই দেখি ও কি করছে। বলল রাজ কান্ত!

তারপর ওরা দুজনেই এমিলির পিছনে পিছনে মেতে লাগলো।
এমিলি হাঁটতে হাঁটতে একটি তেঁতুল গাছের নিচে বসল।
রাজকান্ত আর বিমল ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রইলো।
তারা অবাক হয়ে গেল এবং তারা ভয় ও পেল। কারন তারা যা দেখেছে তা সত্যিই ভয়ঙ্কর।এটা এমিলি নয় এমিলির রূপ দ্ধরে আসা ডাইনি।

বন্ধু হয়তো ডাইনিটা এমিলিকে লুকিয়ে রেখেছে।বলল বিমল?

হতে পারে বন্ধু তুমি কোন চিন্তা করো না‌। আমি তোমার বোনকে ঠিক বাঁচাবো।বলল বিমল!

হঠাৎ করে ডাইনি বলে উঠল হা... হা... হা... আর মাত্র দুইদিন, দুইদিন পরে আমবস্সা। আর আমি হয়ে যাব সবচেয়ে বড় শক্তিশালী ডাইনি, এমিলিকে মেরে আমি হয়ে যাব সবচেয়ে বড় ডাইনি হা...হা.. হা...

বন্ধু ও এমিলিকে এখন কিচ্ছু করবেনা,কারন এমিলিকে মারার চিন্তা করেছে আর মাত্র দুই দিন পরে তার মানে আমাদের কাছে এখনো অনেক সময়। বলল বিমল!

আমাদের খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে। বলল রাজ কান্ত!

ঠিক বন্ধু তোমার বোনকে আমি কিছু হতে দেব না। বলল বিমল!

রাজকান্ত আর সহ্য না করতে পেরে দৌড়ে চলে গেলো ডাইনির কাছে, আর বলল ডাইনি তুমি আমার বোনকে ছেড়ে দাও।

তোর বোনকে আমি ছেড়ে দেবো কি ভাবলি তুই,আমার সামনে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে, তুই তোর বোনকে নিয়ে চলে যাবি।আরে আমি ডাইনি.. ডাইনি.. মায়া বলে জাদুকরে তোকে এখন আমি পাথর করে দিতে পারি। তুই জানিস তুই আমার কিছু করতে পারবি না।আমার প্রাণভোমরা আমার কাছে নয় আমার প্রাণভোমরা এই তেতুল গাছে হা.. হা.. হা.. হা..হা..

ওদিকে বিমল সবকিছু শুনে ফেলল সে বুঝে গেল তাকে মারার জন্য আগে তেঁতুল গাছ টাকে ধ্বংস করতে হবে। তাই সে এক দৌড়ে ঘরে চলে গেল এবং সেখান থেকে কুড়াল নিয়ে আসলো গাছকে কাটার জন্য।

বিমল কুড়াল এনে সঙ্গে সঙ্গে তেঁতুল গাছকে একটি কোপ দিয়েছে। আর ডাইনি উঠে বলল, একি করছিস, থাম থাম থাম আর করিস না আমি মরে যাব। তুই যা চাস আমি তাই তাই তোকে দেবো।তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নাই।

কে বলেছে তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নাই। তুই আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধুর বোনকে আটকে রেখেছিস। ওদের কে আগে ছেড়ে দে তারপর আমি তোকে ছেড়ে দিব।বল বিমল!

ডাইনির সাথে সাথে ওদেরকে ছেড়ে দিল।

আর বিমল এদিকে সঙ্গে সঙ্গে তিন চার কোপ মেরে দিল তেঁতুল গাছে সঙ্গে সঙ্গে তেঁতুল গাছ মাটিতে পড়ে গেল।আর ডাইনির সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে পুড়ে শেষ।

রাজ কান্ত ও তার বোন এমিলি বিমলকে ধন্যবাদ জানালো।
আরে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।আমি তোমাদের বন্ধু এটা আমার কর্তব্য।বলল বিমল!

আর এই ভাবেই পতন হল দুষ্টু ডাইনির।