Posts

গল্প

জামাই ষষ্ঠী

June 12, 2024

বিরহ দাস

Original Author বিরহ দাস

কথায় বলে, জামাই বাঘের খাঁচায় বাঘ। এমনই এক উৎসব হলো জামাই ষষ্ঠী, যা বাংলার ঘরে ঘরে আনন্দের দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই বিশেষ দিনটি হলো জামাইদের জন্য এক আলাদা মর্যাদা এবং আনন্দের সময়। তবে কল্পনা করুন যদি এই জামাই ষষ্ঠীর দিনটি কিছু মজার এবং অবাক করা ঘটনার মধ্য দিয়ে কাটে, তাহলে কেমন হবে? আজকের গল্পের প্রধান চরিত্র হলেন - জামাইবাবু শুভ্র। শহরের চাকরিজীবী শুভ্র খুবই সাধারণ একটি ছেলে, কিন্তু জামাই ষষ্ঠীর দিন তার জীবনে যে কাহিনী ঘটবে, তা একেবারেই অস্বাভাবিক এবং হাস্যকর। আসুন দেখি, শুভ্রর জামাই ষষ্ঠী কেমন কেটে যায়।

পরিকল্পনা শুভ্রর শ্বশুরবাড়ি শীতলপুর গ্রামে। সেখানে বার্ষিক জামাই ষষ্ঠীর আয়োজন হয় ধুমধাম করে। এবারের জামাই ষষ্ঠীতে শুভ্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে দাওয়াত করা হয়েছে। শুভ্রর স্ত্রী মিতা খুবই উত্তেজিত, কারণ তার বাবা-মা এবার শুভ্রর জন্য অনেক আয়োজন করেছেন। মিতা শুভ্রকে জানিয়ে দিল যে, তাকে সেখানে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। শুভ্র: "বাবা গো, গ্রামে গিয়ে কী করব? আবার এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন! আমি কি করতে পারব?" মিতা: "কী বলছো তুমি? এটা তো আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য! তোমাকে ভালো জামাই হিসেবে দেখাতে হবে।" শুভ্র (বিরক্ত মুখে): "ওহ, আচ্ছা। যা বলেছো, তাই হবে।" গ্রামে যাত্রা শুভ্র এবং মিতা ট্রেনে চেপে শীতলপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। ট্রেনের ভেতরে মিতা সবসময়ই গ্রামের গল্প করছিল, আর শুভ্র একদম মনোযোগ দিচ্ছিল না। সে কেবল ভেবে যাচ্ছিল, গ্রামের জীবনে কিভাবে মানিয়ে চলবে। ট্রেনের মধ্যে বেশ কিছু মজার ঘটনা ঘটল। শুভ্র: "এই যে ভাই, একটু সরে বসবেন? আমার একটু বসার জায়গা হচ্ছে না।" অন্য যাত্রী (মুখে হাসি নিয়ে): "দাদা, জামাই ষষ্ঠীর ট্রেনে বসার জায়গা পাওয়া অত সহজ নয়।" শুভ্র (হতাশ): "বুঝলাম, ভাই। ধন্যবাদ।" গ্রামে পৌঁছানো শুভ্র আর মিতা অবশেষে শীতলপুরে পৌঁছাল। মিতা গ্রামের বাড়ি দেখে একেবারে খুশিতে পাগল হয়ে গেল। শুভ্রকে নিয়ে সে সোজা বাড়ির দিকে রওনা হল। বাড়িতে পৌঁছে দেখল, তার শ্বশুর, শাশুড়ি আর মিতার ছোট ভাই-বোনেরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। শ্বশুর: "আরে জামাইবাবু, এসো এসো! তোমার জন্য তো আমরা অনেক কিছু প্রস্তুত করেছি।" শাশুড়ি: "তুমি না খালি হাতে এসেছ? কিছু নিয়ে আসোনি?" শুভ্র: "না না, আমি তো ভাবলাম যে, আপনারা এত আয়োজন করবেন, তাই কিছু নিয়ে আসার দরকার নেই।" শ্বশুর (হাসি চেপে): "ঠিক আছে, তোমার জন্য একটা বড় চমক আছে।"

চমক শুভ্রকে বসিয়ে শ্বশুর বললেন, "আমাদের গ্রামে একটা বিশেষ রীতি আছে। জামাইবাবুকে আমরা গ্রাম ঘুরে ঘুরে সব আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে যাই। সেখানে জামাইবাবু সবার আশীর্বাদ নেন এবং দই-মিষ্টি খান।" শুভ্র (মনে মনে): "আহারে! আজকে তো আমার পেট ফেটে যাবে।" মিতা: "চলো চলো, শুভ্র! আজ তোমাকে সব ঘর ঘুরিয়ে দেখাবো।" শুভ্র (নিঃশ্বাস ফেলে): "আচ্ছা, যা বলেছো।"

গ্রাম ঘোরা শুভ্র মিতার হাত ধরে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গেল। সবার বাড়িতেই দই, মিষ্টি, পান্তুয়া, রসগোল্লা ইত্যাদি খাবারের অভাব ছিল না। শুভ্র প্রথম প্রথম খুশি মনে খাচ্ছিল, কিন্তু ক্রমে তার পেট ভরে যেতে থাকল। শুভ্র: "মিতা, আর পারছি না। এভাবে চললে আমি আর ফিরতে পারব না।" মিতা (হাসতে হাসতে): "এটাই তো আসল মজা! তুমি তো জানো না, আরও কত কিছু বাকি আছে।" মজার কাণ্ড একটি বাড়িতে গিয়ে শুভ্র দেখল, সেখানকার ছোট ছেলেমেয়েরা জামাইবাবুকে নিয়ে কিছু মজার পরিকল্পনা করেছে। তারা শুভ্রকে তাদের সাথে একটি খেলার অংশ হতে বলল। খেলার নাম হলো "জামাইবাবু ধরা"। খেলাটি হলো, জামাইবাবুকে পেছন থেকে ধরা এবং জামাইবাবু যতক্ষণ ধরে রাখতে পারে ততক্ষণ ধরা থাকবে। শুভ্র (হতবাক): "এই কী ধরনের খেলা! আমি কি বাচ্চাদের মতো খেলব?" শিশুরা: "জামাইবাবু, আপনি যদি খেলেন, তাহলে আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসবো।" শুভ্র (বিরক্ত মুখে): "আচ্ছা, যা বলছো।" খেলার সময় শুভ্র কিছুতেই ধরা দিতে চাইছিল না, কিন্তু বাচ্চারা একত্র হয়ে তাকে ধরে ফেলল। শুভ্রর মুখে তখন এক বিশাল হাসি।

ফিরে আসা দিনের শেষে শুভ্র আর মিতা বাড়ি ফিরে এল। শুভ্র ক্লান্ত, কিন্তু খুশি। সে বুঝল, গ্রামের জীবন কতটা মজার এবং আনন্দময় হতে পারে। শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে অভিনন্দন জানালেন। শ্বশুর: "জামাইবাবু, তুমি আজ সত্যি আমাদের মন জয় করেছো। আশা করি, প্রতি বছর এভাবেই আমাদের সাথে জামাই ষষ্ঠী পালন করবে।" শুভ্র (হাসি দিয়ে): "অবশ্যই! এই বিশেষ দিনের মজাটা সত্যিই অসাধারণ।"

শুভ্রর জামাই ষষ্ঠীর দিনটি একেবারে মজার এবং আনন্দময় কেটে গেল। এই বিশেষ দিনের মজার ঘটনাগুলো তাকে এবং তার পরিবারকে একত্রে নিয়ে এল এবং তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত করে দিল। জামাই ষষ্ঠী শুধু একটি উৎসব নয়, এটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন এবং ভালবাসার প্রতীক। এভাবে, শুভ্র এবং তার পরিবার প্রতি বছর এই দিনটি উদযাপন করে, এবং প্রতিবারই নতুন নতুন মজার কাণ্ড ঘটে। জামাই ষষ্ঠী হয়ে ওঠে তাদের জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়, যা শুধু হাসি আর আনন্দে ভরপুর। (গল্পটি এখানেই শেষ নয়, পরবর্তী জামাই ষষ্ঠী হয়ত আরও মজার এবং অবাক করা হবে।) 

Happy Jamai Shosthi! 

Comments

    Please login to post comment. Login