Posts

পোস্ট

কায়রোর নীলচিঠি ও অন্যান্য .৩

March 18, 2024

মুয়ায আবদুল্লাহ

Original Author মুয়ায আবদুল্লাহ

পরিপূর্ণভাবে কেউ গ্রহণ করেনি আমাকে, কোনোদিন। তাই অপ্রস্তুত ঘরছাড়া জীবনের সাথেই দূরত্ব কমিয়েছি। গিয়েছি একটা অসম্ভব নীলের সমুদ্রে। যেখানে উথালপাথাল করা ঢেউ আছে, শূন্যতার আবেদন আছে। নেই কেবল পিছুটান, অন্য হওয়া চোখের ভাষা। যেখানে ছায়ায়, সন্ধ্যার দুঃখি আলোয় প্রতিফলিত হয় আমারই নাম। 

ভাবনায় ছিলো খাঁ খাঁ করা মরুভূমি কিংবা রুক্ষ হাওয়ার স্রোত। অথচ সারাটা পথজুড়ে সবুজের বিস্তৃত সমারোহ, গাধার পিঠে চড়ে চাষার বাড়ি ফেরার দৃশ্য অবাক করলো—এতো সবুজও আছে তাহলে! বাই রোডের কথা জানি না। আমি যাচ্ছি রেলপথে, সমুদ্রকন্যার কাছে। 

ধরুন, ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী স্বপ্নের মতো সুন্দর একটা অঞ্চল—খৃষ্টপূর্ব ৩৩১ এ যার জন্ম আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের হাতে। এটি ছিলো মিশরের টলেমীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী, বর্তমান মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর—সুন্দরী ক্লিওপেট্রার ছোঁয়া-সিক্ত আলেকজান্দ্রিয়ার চিত্রই আঁকতে চাইছিলাম। কিন্তু প্রেমিকার মুখ ঠিকঠাক কে কবে এঁকেছে!

সাগরঘেঁষা লাইব্রেরিটা বিশ্বের প্রাচীন ও বৃহত্তম লাইব্রেরিগুলোর একটি। টলেমীয় রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিলো এই লাইব্রেরি। সারা বিশ্ব থেকে আনা বিষয়ভিত্তিক সাত কি আট লাখ বইয়ের সংগ্রহ ছিলো এতে। কয়েকবারের অগ্নিদূর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া লাইব্রেরিটা ২০০২ সালে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা দেশের পর্যটকের ভিড় ঠেলে, আমার স্টুডেন্ট কার্ড দেখিয়ে পাঁচ পাউন্ডে এন্ট্রি পেলাম। ভিতরটা সুনসান, মনোযোগী পরিবেশ। পাশেই আলেকজান্দ্রিয়া ইউনিভার্সিটি থাকায় তুলনামূলক শিক্ষার্থীই বেশি। পুরো ভবনটা খুব সম্ভব ৭তলা, ওপর থেকে ক্রমশ ঢালু হয়ে সি ভিউ তৈরি হয়েছে। যেন সমুদ্র ডাকছে আপন কোনো স্পর্শে!

লিলুয়া বাতাসের আসলে সঠিক কোনো সংজ্ঞা নেই। এই যে নীল সাগরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাড়ে, দুলছে ফিশবোট। কিবা জানলাবিহীন দ্বিতল বাসে জমে যাচ্ছে দু'টি শরীর—উদাস হয়ে পড়ছে ভাবনা—এটাই হয়তো লিলুয়া বাতাস, কানে কানে বলে যায়—আলেকজান্দ্রিয়ার মেরিন ড্রাইভে বসে থেকেই অনায়েসে পেরিয়ে যেতে পারি নিঃসঙ্গতার একশো বছর!

Comments

    Please login to post comment. Login