পোস্টস

গল্প

অন্ধকারের রহস্য: জনের ভৌতিক যাত্রা

১৩ জুন ২০২৪

বিরহ দাস

মূল লেখক বিরহ দাস

অন্ধকারের রহস্য: জনের ভৌতিক যাত্রা

নিঃশব্দ শহরে রাত গভীর হয়েছে। বাতাসে অজানা বিপদের আভাস। শহরের প্রান্তে একটি পুরানো বাড়ি, যার চারপাশে গা ছমছমে অন্ধকার। এই বাড়িটিকে ঘিরে মানুষের নানা কল্পকাহিনী, যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো কুয়াশার মধ্যে এক রহস্যময় ছায়ার অস্তিত্ব। জনের জীবন ছিল সাধারণ, কিন্তু একদিন তার জীবনে ঘটে গেল অদ্ভুত ঘটনা। জন একজন তদন্তকারী, বিভিন্ন রহস্য সমাধানে পটু। একদিন সে একটি অজানা ফোনকল পায়, যেখানে তাকে জানানো হয় পুরানো বাড়িতে ঘটে যাওয়া ভৌতিক ঘটনার কথা। জন, নিজের কৌতূহল দমাতে না পেরে, রাতের অন্ধকারে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বাড়ির কাছে পৌঁছে, জন দেখে দরজা খুলে পড়ে আছে। ভিতরে ঢুকে, সে অনুভব করে আশেপাশে একটা অস্বাভাবিক শীতলতা। ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে আছে পুরনো পত্রিকা, দেয়ালে ঝুলছে ধুলো জমে থাকা পেইন্টিং। হঠাৎ জনের চোখে পড়ে একটি পুরানো ডায়েরি, যার পাতা উল্টাতে গিয়ে সে দেখতে পায় ভয়ঙ্কর ঘটনা। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লেখা আছে এক মেয়ের কথা, যার আত্মা নাকি এখনও এই বাড়িতে ঘোরাফেরা করে। জনের শরীরে শিহরণ বয়ে যায়, কিন্তু সে স্থির থাকে। ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা, "যদি আমার আত্মার মুক্তি চাও, তবে রাত বারোটার মধ্যে আমার পছন্দের ফুল নিয়ে আসো।" জন সময় নষ্ট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে, কাছের বাগানে যায় ফুল খুঁজতে। সে ফিরে এসে দেখে বাড়ির ভিতরে অদ্ভুত আলো জ্বলছে। জন ভিতরে ঢুকে দেখে একটি মেয়ে, যার চেহারা ভীষণভাবে ডায়েরির মেয়েটির সাথে মেলে। জন মেয়েটির সামনে ফুল রেখে বলে, "তোমার মুক্তি দিন, এখন শান্তি পাবে।" মেয়েটি এক মধুর হাসি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। জন বুঝতে পারে, সে একটি আত্মার মুক্তি ঘটিয়েছে। এরপর জন ফিরে আসে নিজের জীবনে, কিন্তু প্রতিদিন রাত হলেই তার মনে পড়ে সেই বাড়ির কথা, সেই মেয়ের কথা। জন জানে, তার জীবনে আরও অনেক রহস্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও সাহসী করে তুলেছে। তিনি জানেন, সব রহস্যের পিছনে লুকিয়ে থাকে একটি গল্প, এবং সে গল্পটি খুঁজে বের করাই তার কাজ।

জীবনের প্রতিটি দিনেই জনের কাছে নতুন নতুন রহস্য আসে। একদিন একটি নিখোঁজ মেয়ের ব্যাপারে একটি নতুন কেস পায়। মেয়েটির নাম ছিল লিসা। জন খোঁজ করতে করতে জানতে পারে, লিসাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল একটি পুরানো পরিত্যক্ত স্কুলে। জন স্কুলে পৌঁছে দেখে, সেখানেও রয়েছে নানা রহস্যময় চিহ্ন। দেওয়ালে আঁকা কিছু অদ্ভুত প্রতীক আর মেঝেতে ছড়ানো কিছু খেলনা। স্কুলের এক কোণায় জন পায় একটি ছোট্ট বাক্স। বাক্সটি খুলে জন দেখতে পায় লিসার ডায়েরি। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লিসার শৈশবের কথা, তার হাসিখুশি দিনের কথা লেখা। কিন্তু শেষের দিকে লিসা লিখেছে, "কেউ আমাকে অনুসরণ করছে। আমি ভয় পাচ্ছি।" জন বুঝতে পারে, লিসার জীবনে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটেছিল। ডায়েরির পাতায় আরও লেখা, "যদি আমাকে খুঁজে পেতে চাও, তবে রাতের অন্ধকারে পুরানো ঝর্ণার পাশে এসো।" জন সেই পুরানো ঝর্ণার দিকে রওনা দেয়। ঝর্ণার কাছে পৌঁছে জন দেখে, ঝর্ণার পাশে বসে আছে লিসা। জন তার কাছে গিয়ে বলে, "তোমার ভয় কেটে গেছে। এখন তুমি নিরাপদে আছো।" লিসা এক মধুর হাসি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। জন বুঝতে পারে, সে আরও একটি আত্মার মুক্তি ঘটিয়েছে।

এভাবে জনের জীবন কাটতে থাকে। প্রতিটি রহস্য তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু তার মন থেকে কখনও মুছে যায় না সেই পুরানো বাড়ি, সেই মেয়ে, আর সেই ডায়েরির কথা। জন জানে, তার জীবনে আরও অনেক রহস্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু সে তৈরি। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, রহস্য সমাধান করে নিরপরাধ আত্মাদের মুক্তি দেওয়া। এভাবেই জনের জীবন চলে, নতুন নতুন রহস্যের সন্ধানে। প্রতিটি রহস্যের পিছনে লুকিয়ে থাকে একটি গল্প, একটি অদ্ভুত কাহিনী। জন সেই কাহিনীর সমাধান করে আত্মাদের শান্তি দেয়। তার জীবনের প্রতিটি দিনেই সে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, কিন্তু কখনও পিছপা হয় না। জনের জীবনের এই রহস্যময় যাত্রা চলতেই থাকে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে অপেক্ষা করে নতুন রহস্য, নতুন অভিযান।