পোস্টস

গল্প

বাউল চাচা

১৩ জুন ২০২৪

মোঃ আল আমিন

প্রথম পর্ব

 

-বাউল চাচা, একটা গান ধরোনা, কতদিন একটা আসর বসাওনা তুমি। 
-শরীরডা ভালোনারে বেনু

বলতে বলতে পুটুলিটা বেঞ্চের উপর রেখে তার পাশেই বসে দোতারায় হাত দিলেন জমিরউদ্দীন বাউল। এলাকায় বাউল চাচা নামেই বেশি পরিচিত। গাঁয়ের মাঝেই এক গানের ঝুপড়িতে তার বাস। ছন পাতার চালের ছোট্ট একটি মাটির ঘর জুড়ে তার গান ছড়ানো ছিটানো। একতারা, দোতারা, গানের বই, এসব দিয়েই ঘর পরিপূর্ণ। গভীর রাত্তিরে কিংবা ভরা দুপুরে তার ঘর থেকে ভেসে আসে গানের আওয়াজ। তাই গানের ঝুপড়ি বলাই যথার্থ৷ গাঁয়ের মানুষজন তাকে যেমন ভালোবাসতো তেমনি তিনিও গাঁয়ের মানুষের জন্য নিজের জানটা বিলি করতে দুবার ভাবতেননা। কারো সাথে ঝগড়া তো দূরের কথা, কথা কাটাকাটি হয়েছে কিনা তাও কেউ বলতে পারবেনা। 
-এইদিকে কয়দিন আসোনা৷ শরীর বেশি খারাপ? 
-ওই একটু জ্বর আইছিলো আরকি। কাইল রাইত থেইকা একটু ভালো৷ 
-কি খাইবা কও
-আর কি? এক কাপ চা দাও আর একটা নেভী দাও
-আইচ্ছা তুমি বইসা একটা গান ধরো আমি চা বানাই। 
-গলাটা ভালোনারে বেনু
-আরে চাচা তুমি গাওতো... শুধু তোমার গলায় গাইলেই হয়, আর কিছু লাগেনা।
-হা হা হা (খানিকটা মুচকি হেসে) আচ্ছা গাই একটা গান..

"বন্ধুগো.....
বুকের ভিতর জ্বলে দ্বিগুণ 
বন্ধুয়ার পিরিতের আগুন।।
বিরহে রহিব কেমনে।

আমার প্রাণ বন্ধু স্বরনে
রাজি আমি মরনে।।
জীবন যৌবন সবি দিলাম
সঁপি তোমার চরনে"

দোতারার টুংটাং আওয়াজে ভারী গলায় গান ধরলেন জমিরদ্দীন বাউল। গানের স্বরের সাথে লোকসমাগমও বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। এক বাউল চাচায় গাঁয়ের হিন্দু মুসলিম মিলেমিশে একাকার। দুচোখ বন্ধ করে ভাবের দুনিয়ায় হারিয়ে যায় বাউল। হাঁক ছেড়ে গায়,

"বন্ধুগো___তোমার স্বপন দেইখা মনে
            দিন রজনী বৃথাই কাটে।।
            একি ব্যাথা দিলা পরানে
            আমার প্রাণ বন্ধু স্বরনে...."

এলাকার নতুন মেম্বর কাফিলউদ্দিন খাঁ। বড়বাজারে ব্যাবসা করেন।

 

(পরবর্তী পর্ব পেতে লেখকের প্রোফাইল দেখুন।)