Posts

গল্প

শ্রাবণের জ্যোৎস্না

June 13, 2024

আলতাফ শেহাব

92
View
শ্রাবণের জ্যোৎস্না

মৃদুমন্দ বাতাস, অঝোরে ঝরছে রিমঝিম বৃষ্টি। জনালার ঘোলা কাঁচে অতিকায় চাঁদের ছায়া। থেকে থেকে শিশুদের কান্নার মতো অনাহারি কুকুরের অসহায় আর্তনাদ। ল্যাম্পোস্টের মৃদু আলোর নিচে বৃষ্টিভেজা জনশূন্য রাস্তায় নিঝুম রাতের নিরবতা। কিন্তু এখন মধ্যরাত নয়, মহানগরে রাতের প্রথম প্রহর মাত্র। হঠাৎ করেই এ ব্যস্ত নগরের সমস্ত কোলাহল গ্রাস করেছে করোনা মহামারি।

কিছুক্ষণ আগে দু’জন পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে—শ্রাবণকে একটি সাদা ব্যাগে ভরে নিয়ে গেছে বিশেষ সুরক্ষা পোশাক পরিহিত চার জন স্বেচ্চাসেবকের একটি দল। জ্যোৎস্নাই ট্রিপল নাইনে কল করে কর্তৃপক্ষকে শ্রাবণের মৃত্যু সংবাদটি জানিয়েছিল। পুলিশ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে জ্যোৎস্নার নিকট থেকে শ্রাবণের যাবতীয় তথ্য ও আইডি কার্ডের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। পরিবারের কোন পুরুষ সদস্য উপস্থিত না থাকায়, স্বেচ্চসেবকরাই নিজ দায়িত্বে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করবে।

শোকে হতবিহ্বল জ্যোৎস্না একবারের জন্যও কাউকে বুঝতে দেয় নাই, পাশের রুমেই বিছানায় খুব যত্ন করে শোয়ানো ছিল মৃত সন্তানের নিথর দেহ। সবাই চলে যাবার পর, নয় মাস বয়সি একমাত্র সন্তানের বরফ শীতল দেহটি বুকে আগলে জানলায় দাঁড়িয়ে আছে শোকে স্তব্ধ জ্যোৎস্না। দু’চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরছে অশ্রুধারা। এ এমনই এক ভয়াবহ সময়, প্রবল শোকেও পাশে কোন সমব্যথী নাই। সঙ্গহীন মানুষ। বাইরে পূর্ণ চাঁদের আলোয় বিগলিত জ্যোৎস্নার মতো নিরবে ঝরে পড়ছে শ্রাবণধারা।

কয়েকদিন ধরে ধীরে ধীরে পচা তীব্র দুর্গন্ধে আশেপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠলে প্রতিবেশিদের টনক নড়ে, উদ্যোগি হন তারা। সপ্তাহখানেক পর এক নির্জন সকালে কয়েকজন প্রতিবেশির উপস্থিতিতে দরোজা ভাঙ্গা হয় শ্রাবণদের ফ্লাটের। বসার ঘরের ভেতর জানলার নিচে মেঝেতে পড়ে আছে দুটি অর্ধগলিত লাশ। বাড়িওয়ালা সনাক্ত করেন যুবতী মেয়েটি জ্যোৎস্না আর পাশে শিশুটি শ্রাবণ ও জ্যোৎস্নার নয় মাস বয়সি একমাত্র সন্তান প্রভাত।

প্রতিধ্বনিতে প্রকাশিত

Comments

    Please login to post comment. Login