Posts

গল্প

খরপোষ

June 13, 2024

আলতাফ শেহাব

92
View
খরপোষ 

সাতাশ বছর পর খরপোষের মামলা দেখে প্রতিপক্ষের উকিলের মতো আপনাদের কেউ কেউও হয়তো হেঁসে উঠবেন। কিন্তু বিচারকের পক্ষে কি হেঁসে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব। সাতাশ বছর পূর্বে স্বামীর বাড়ী হতে দুই শিশুপুত্র সহ তাড়িয়ে দেওয়া হয় শবনমকে। স্বামী পরিত্যাক্তা শবনম যৌবনে মনে একপ্রকার ঘৃণা নিয়েই অনেক কিছু উপেক্ষা করেন। নানা রকম গঞ্জনা সহ্য করে বাবার বাড়িতে থিতু হন। এবাড়ি ওবাড়ি ঝিগিরি করে বড় করে তোলেন দুই ছেলেকে। বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু ছেলেরা কেউই মানুষ হয়ে উঠেনি। মাদকাসক্ত বড় ছেলে দিনের বেশিরভাগই ঝুপড়ির ঘরে ঘুমিয়ে কাটায়, রাতভর নেশা করে প্রায়দিনই ভোরে বাড়ি ফেরে। শবনমের বাবা বেঁচে থাকতেই বাড়ির আঙিনার একপাশে ঝুপড়িটি করে দিয়েছিলেন যা ভাইদের দয়ায় এখনও টিকে আছে। রুগ্ন ছোট ছেলেটার কিস্তির টাকার টং দোকানের আয়ে কোনরকম টিকে আছে তিনজনের জীবন। না এখন আর ঝি-গিরি করার শক্তি নাই শরীরে। নিভুনিভু সংসারের বাতি যেকোন সময়ে নিভে যাবে দোকানের কিস্তি ফেল করলে।

এখন আর ক্ষমতা না থাকলেও, চুরি ছেঁচড়ামি করে মেম্বার হয়ে এক সময় অনেক টাকা কামিয়েছে স্বামী মেরাজ সরদার। বাকি দুই পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের সাথেও সম্পর্ক ভালো না সরদারের। তিন তালাক বলে তাড়িয়ে দেয়ার পর সারা জীবনে একবারও যার মুখাপেক্ষী হয়নি শবনম, মনে প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়েও সাতাশ বছরের বঞ্চনার হিসাব কসতে হচ্ছে আজ তার সাথে। স্ত্রী হিসাবে দেনমোহর, নিজের ও সন্তানদের খরপোষ সব মিলিয়ে বর্তমান বাজারে বেশ মোটা টাকার দাবি তুলেছে উকিল। মরার পরের চিন্তা নাই শবনমের, যেকোন ভাবে দাফনের ব্যবস্থা করবে লোকজন। কিন্তু যতক্ষণ বেঁচে আছে ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেয়ার নিশ্চয়তা চাই, চাই নিরাপদে শেষ নিঃশ্বাস নেয়ার নিশ্চয়তা।

বেশ্যার ঘরে জন্ম নিয়ে এনজিওর দয়ায় অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা উকিল অনিমেষ এখন পিতৃ-পরিচয় জানে। কিন্তু সমাজের ঘৃণ্য এই লোকটার পরিচয়ে নিজেকে আর নোংরা করতে চায় না। অর্থলোভে নয় শবনমের মামলার মাধ্যমে যদি মেরাজ সরদারকে সর্বশান্ত করা যায়, তবেই মায়ের শেষ জীবনের চরম অর্থকষ্টের উপযুক্ত প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

প্রতিধ্বনিতে প্রকাশিত

Comments

    Please login to post comment. Login