টিউশনিতে গিয়ে দেখি স্যার বাড়ি নেই। স্যারের বউ বলল, ‘আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করো।’ বাধ্য হয়ে স্যারের বাড়ির পাশের পার্কের বেঞ্চিতে বসে ছিলাম।
‘আসসালামুয়ালাইকুম! আপনি! ও মাই গড! আমি কি ঠিক দেখছি?’
আগুন্তকের কথায় চমকে তাকালাম। আমার চেয়ে বয়সে বেশ ছোট। নাইন-টেনে পড়া একটা ছেলে। আমাকে দেখে এমন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে যেন ক্যাটরিনা কাইফ বা আলিয়া ভাটকে দেখছে!
ছেলেটা আবার ইতস্তত করে বলল, ‘আপনিই তো... ইয়ে মানে...’
আমি লাজুক গলায় বললাম, ‘হ্যাঁ! আমি জান্নাতুল ফেরদৌস।’
‘ইয়েস, ইয়েস! জান্নাতুল ফেরদৌস! ও মাই গড!’
বলতে বলতে ছেলেটা আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল।
এ বয়সের ছেলেরা খুব উড়নচণ্ডী হয় বলে জানতাম, অথচ এই ছেলেটার ভক্তি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
ছেলেটা বলল, ‘আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান! আপনার সব ছবি দেখি!’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কিসের ছবি? আমি তো ফেসবুকে কখনো ছবিই দিই না!’
ছেলেটা আবার আমতা আমতা করে বলতে লাগল, ‘ওই! ইয়ে মানে...’
আমিই ছেলেটার ভুল ভাঙ্গিয়ে বললাম, ‘তুমি বোধহয় বলতে চাইছ লেখার ছবি। এই যে আমি পত্রিকায় লিখি, সেই ছবি তাই না?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ! ইয়েস! আমি ওই ছবির কথাই বলতে চাইছিলাম আসলে। একটা অটোগ্রাফ দেবেন?’
আমি লাজুক গলায় বললাম, ‘অটোগ্রাফ কী করে দেয়? আসলে কখনো দিইনাই তো!’
‘আপনি লিখে দেন, জীবনে অনেক বড় হও। তারপর আপনার নাম সই করে দেন।’
অটোগ্রাফ দিলাম। ফটোগ্রাফও দিলাম। তারপর ছেলেটা বলল, ‘আমি আপনার জন্য ছোট্ট একটা উপহার এনেছি।’
‘ছিঃ ছিঃ! এসবের আবার কী দরকার ছিল!’
বলতে বলতে ছেলেটার হাত থেকে সেন্টের শিশিটা নিলাম। ছেলেটা বলল, ‘একটু দেখেন কেমন গন্ধটা!’
আমি সেন্টটা হাতে স্প্রে করে গন্ধ দেখতে গেলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সেই পার্কের বেঞ্চিতেই শুয়ে আছি। মাথার ওপর সূর্য। পাশে ব্যাগটা নেই।
‘হায় হায়! ব্যাগে বিকাশ থেকে সদ্য তুলে আনা নয় হাজার দুইশ টাকা ছিল! সব গেছে!’
বলতে বলতে হঠাৎ করেই আমার সেই ফ্যানের কথাটা মনে পড়ল। আশেপাশে তাকে অনেক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।