পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

পাখিদের ঠোঁটে চমকিত মন

১৩ জুন ২০২৪

ফারুক সুমন

পাখিদের ঠোঁটে চমকিত মন
🍂
বিভাসায় এসে বেশ চুপসে গেলে
অথচ অন্ধকারে কোমল সাবলীল
বেজে ওঠে তোমার মিহি হারমনি
কেঁপে কেঁপে ওঠে পায়ের ঘুঙুর।

কচিপাতামুখ, বনবাসী খেয়াল
সবুজে স্বাচ্ছন্দ্য খুব, লাজুক
অন্ধকারে যাচ গভীর ওষ্ঠঘুম
নিলাজ পেখম; হাওয়ায় উৎসুক।

মাটির বাসন হাতে প্রান্তসীমায়
দাঁড়িয়ে দিশা খোঁজে বনচারী বউ
বেহুশ বাতাসে কাঁপে কলমিপুঁথি 
ভ্রুভঙ্গি প্রজাপতি, শাড়ির আঁচল।

মগ্নমানুষ, হারিকেনকাঁপা আলো
সন্দেহ হেঁটে যায় মনচোরা পথে
হেলায় জলশূন্য বিটপীর পাতা
ঝরে পড়ে লেগে থাকে রক্তকথা।

এখনো উত্থিত বুক শামুকের মুখ
সেখানে সুরেলা গীত বরষার সুখ
এখনো ওষ্ঠকোণে মোলায়েম মায়া
সে যেন ঘুমিয়েছে নিরিবিলি ছায়া।

অন্তরতমা, প্রিয় আরাধ্য আমার
হাঁটুমুড়ে আর কত ছড়াবে সুবাস?
তোমার নিঃশ্বাস বুঝি নদী ডাকাতিয়া
যেখানে ভেসে বাঁচে সুমনের হিয়া।

অন্ধআলিঙ্গনে অতিদূর ঘোর
নির্জনে খোল দেখি পায়ের ঘুঙুর 
সিথানে জমে থাক কলাপাতামন
এই ঘোরে বিশুষ্ক তাপিত যাপন।

একদিন গিয়েছিলে গোলাপগ্রাম
তারপর সেখানে আশ্রমের হাওয়া 
তাপিত মন নিয়ে আমি তো অবাক
কোথা থেকে উড়ে আসে বিহঙ্গঝাঁক!

প্রণয়প্রহারে গড়ায় উদ্ভিন্ন স্রোত
লাটিমঘূর্ণি, বিভ্রান্ত বালিহাঁস
আড়ালের আর্তধ্বনি প্রেমমৌতাত
আঁচলের হাওয়ায় হাসে প্রেমপত্রালি।

কথা ছিল হৃদাঙ্গনে—
ছড়াবে ডাটাফুল, রক্তিম বীজ
কথা ছিল প্রণয়দিনে—
খুলে দিবে বুকের বোতাম
উন্মোচিত হবে হৃদয়কামিজ।

কথা সব ফুরিয়েছে কাবিননামায়
কথা সব মিলিয়েছে হরিৎহাওয়ায়
এখনো কাকলীমোড়ে বিষাদবালিকা 
খুঁজে ফেরে আত্মহননের ছুরি।

পাখিদের ঠোঁটে চমকিত মন
নিস্তরঙ্গ জলের স্তব্ধদহন
কামারের হাপর-হাওয়ায়
কাঁদে আগুনবরণ লৌহখণ্ড।

শুন্যে ভাসে তরবারি চাঁদ
অথচ বেছে নিলে গৃহকোণ 
মাছরাঙার একনিষ্ঠ শাণিত দাঁত
ভালোবেসে পেয়েছি এমনি বরাত।

ভীষণ সুন্দরের পাশে—
পড়ে আছি অচল বৈঠা 
সম্মুখে আপেলোদ্যান
তার পাশে স্বচ্ছতোয়া নদী।

নদীর নাম শূন্যতল 
জলপ্রবাহে সৃষ্টি হয় ছল
ক্ষণচরে মিহিসুরে রূহরোদন 
জলজ মধ্যাহ্নে বিরহকূজন। 

তুচ্ছ হয়ে উড়ে যাই শূন্যে 
যেন বিরান প্রান্তরের হাওয়া
মগডালে বাসা নড়েচড়ে
প্রতিবেশী নেই, নেই আসাযাওয়া। 

বৃক্ষ যত মাথা তোলে, লম্বা হয়
ততই বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ রয়
হাতে হাত পড়ে থাকে নিঃশব্দে 
ধুয়ে যায় সৈকতের বালিচিহ্নদাগ।

বঁধুয়ার বাঁকবিহীন বাড়ির পথে
ছড়ানো হলুদবন সরিষাবাড়ি 
এইযে রঙচঙা ফুলেল জীবন
উড়ে উড়ে পড়ে যাই আগুনাবর্তে।

এই যে বৈরাগ্যদিন পাহারাবিহীন
পড়ে আছে হেলায় মদির পেয়ালা
সেরে নেয় নিভৃতে নিরিবিলি ভোজ
আমি যে পথের কুটো 
কে রাখে খোঁজ?

একদিন সবুজ ঘাসের গায়ে 
গা এলিয়ে শুয়ে থাকবো
তারাময় আকাশ চাদর হয়ে
জড়িয়ে ধরবে কামকাতর শরীর। 

তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে
কোনো এক আশ্বিনের দিনে
বাঁকবিহীন দীর্ঘ রেলপথ হেঁটে
পৌঁছে গেছি শালবন ঘেরা একলা ঘরে। 

শরৎরাতের মাদকতা বড় ভয়ানক
হারিকেনের হালকা আলোয় 
আমোদে মেতে উঠেছিলাম 
বোহেমিয়ান দুই লড়াকু।

সে কেবল আমি জানি—
তুমি নারী হলেও সাধারণ নারী নও
ক্লিওপেট্রা, হুররাম সুলতানের মতো
অদ্ভুত আনন্দ তোমার বক্ষজুড়ে। 

উন্মাতাল ভালোবাসায় রিদমিক ঢেউ
আছড়ে পড়ে নৈঃশব্দ্য অন্ধকারে 
কামকাতর চাকু উপড়ে ফেলে শরমের তাঁবু 
ক্রমাগত কম্পমান মৃদু হারিকেন 
ধ্বসে পড়ে দিল্লির কুতুবমিনার।

নিশ্চিত, তোমার সান্নিধ্যে এলে 
বিজ্ঞানী ভুলে যাবে নিবিড় মগ্নতা
প্রভুভক্ত অনুরক্তি নিয়ে 
তুমি হবে তার ধ্যানাশ্রম।

একদিন সবুজ ঘাসে পা ফেলে 
রোমন্থন করবো রমণীয় সেইসময়
বাঁকবিহীন দীর্ঘপথে একলা রমণ
মনে মনে একলা ভ্রমণ।

লেখক সম্পর্কে

ফারুক সুমন
কবি ও প্রাবন্ধিক 
পিএইচডি ফেলো। একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন ‘নিপ্পন ফাউন্ডেশন অব জাপান’ (২০০৬)  শিক্ষাবৃত্তি। ২০১৯ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত 'সার্ক সাহিত্য সম্মেলন' এবং ‘নেপাল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’-এ যোগদান করেন।

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ
কাব্যগ্রন্থ
১.'অচঞ্চল জলের ভিতর নিরাকার বসে' (২০১৭)
২. 'আঙুলের ডগায় সূর্যোদয় (২০১৮) 
৩. 'বিচঞ্চল বৃষ্টিবিহার' (২০২০)
৪. বিরামচিহ্নের কান্না (২০২২)
প্রবন্ধগ্রন্থ
১. 'শামসুর রাহমানের কবিতা: নগর-চেতনা ও নাগরিক অনুষঙ্গ' (২০১৫)
২. 'শিল্পের করতালিi' (২০১৯)
৩. 'শামসুর রাহমানের কাব্যস্বর' (২০২১)
৪. শিল্পের সারগাম (২০২২)
৫. বঙ্গবন্ধু : অন্তরঙ্গ পাঠ (২০২৩)
৬. দীপ্তিমান মনীষা (২০২৪)

ভ্রমণগ্রন্থ
১. ভ্রমণে অবাক অবগাহন (২০২১)

ফারুক সুমন ফারুক সুমন কবি ও প্রাবন্ধিক