রঙ নাম্বার
মোবাইলে রিং বাজছে! কল ধরতে ইচ্ছে করছেনা কে হতে পারে এই অবেলায় বুঝতে পারছি না। মোবাইল হাতে নিতেই দেখি অপরিচিত নাম্বার।
: হ্যালো কে?
: ৩০ মিনিট ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আর তুমি কল ধরে বলছো কে? বাহ।
কল ধরে মেয়ে কন্ঠ শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। কে হতে পারে এই মেয়ে?
: কিন্তু আপনি কে সেটা বলবেন তো?
: দেখো নাটক করবার সময় এটা না। তুমি আসবে কিনা বলো।
: কিন্তু আপনার পরিচয়টা তো দিবেন।
: এখন চিনতে পারছো না তাই তো? অবশ্য না চেনাটাও স্বাভাবিক। পুরুষ মানুষের এই এক স্বভাব। কাজের সময় নেই অকাজের বেলায় আছে।
: আরে বাবা! চেচামেচি করবেন না তো। বলেন কোথায় আসবো।
: লেকের আসার কথা ছিলো ভুলে গেলে এর মধ্যে? আমি দাঁড়িয়ে আছি দ্রুত আসো বলছি।
: দেখুন আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে।
: না আমার ভুল হচ্ছে না। আসবে কি না তা বলো।
: আচ্ছা আসছি।
অপরিচিতা কে হতে পারব? ভুল করে কল করেছে? নাকি আমার পরিচিত কেউ? সে যখন আমার কোনো কথাই শুনছে না তাহলে হয়তো পরিচিত কেউ হবে। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। বাইক নিয়ে অর্ধেক পথ গেলাম। তখন আবার কল বাজছে! আমি বাইক থামিয়ে কল টা ধরলাম।
: হ্যালো!
: ভাইয়া স্যরি।
: স্যরি মানে?
: ইয়ে মানে! আমার ফ্রেন্ড কে কল দিতে গিয়ে ভুল করে আপনার নাম্বারে কল করে ফেলেছি।
আমি এই কথা শোনার পর কীভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
: আপনি জানেন আমি কি পরিমান পেইন খেয়েছি আপনার জন্য? আপনার কারনে আমি ঘুম থেকে উঠে বাইক নিয়ে এতদুর এসেছি। আপনাকে বারবার বললাম আপনার ভুল হচ্ছে। তবুও বললেন হচ্ছেনা আপনি ঠিক জায়গায়ই কল করেছেন। এখন নাটক শুরু করে দিয়েছেন?
: স্যরি ভাইয়া।
: রাখেন আপনার স্যরি। পরবর্তীতে কাউকে কল করার আগে ভালোভাবে দেখেশুনে কল করবেন।
আমি কল রেখে বাইক ঘোরালাম। তখন আবার কল এলো।
: হ্যালো।
: কোই আসলে না?
: মাত্র না কল করে বললেন রঙ নাম্বার? ভুলে আমাকে ডেকেছেন। এখন আবার কল দিয়েছেন কেনো।
: ও তোমাকে বলে ফেলেছি? আরে একটু আগে তোমায় কল দিতে যেতে ভুলে অন্য একজন কে ডেকে ফেলেছি।
: সেই অন্য একজন টাই আমি রে ভাই। আপনি কাইন্ডলি নাম্বার টা চেক দিন প্লিজ।
: ঠিকই আছে আমি তোমাকেই কল দিয়েছি।
: ধুর রাখেন তো আপনি আমি এসবের মাঝে নেই।
: আরে এমন করোনা প্লিজ। এতক্ষন ধরে তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। আসো না দ্রুত।
: দেখেন আমার কিন্তু নাটক ভালো লাগছে না।
: নাটক না সত্যি। এসে দেখো একবার।
আমি রাগে ফেটে যাচ্ছি।
অনেক্ষন ভেবে রওনা হলাম লেকের দিকে। তখন আবার কল এলো। আবার একই ঘটনা। এবার সে বলছে রঙ নাম্বার। ভুলে আমায় ডেকেছে। আমি এবার সিদ্ধান্ত নিলাম যেই হোক না কেনো আমি যাবো যেয়ে এরপর ধরবো। বারবার কেনো আমাকে কল দিচ্ছে। নাটক বের করছি দাড়াও।
আমি বাইক নিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখি লেকের যেখানে যাওয়ার কথা সেস্থান পুরো ফাকা।
নীরবতায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। এমন সময়ে চারিদিক থেকে শব্দ এলো। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থ ডে ডেয়ার সাকিব। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখি কলেজের সব বন্ধু বান্ধুবিরা এখানে উপস্থিত। যে আমাকে কল দিচ্ছিলো সে আর কেউ না। আমারই প্রিও মানুষ। যাকে বলে ক্রাশ। নিজের জন্মদিনে এর চেয়ে বড় সারপ্রাইজ আর কি হতে পারে।
সুহা: কি কেমন দিলাম?
: এসব তোমাদের প্লান?
: ইয়েস বার্থডে বয়। কেমন লাগলো সারপ্রাইজ।
: চমৎকার। আমি তো এসেছিলাম কলে যে জ্বালাচ্ছে তার দফা রফা করতে। এসে দেখি ঘটনা ভিন্ন। আমি নিজেও জানতাম না আজ আমার জন্মদিন। তারাহুরোয় খেয়ালও ছিলোনা।
সত্যি আমি খুব সারপ্রাইজ হয়েছি। আমি ভেবেছিলাম কোনো অপরিচিত মেয়ে আমার সাথে মজা করছে। অথবা ভুলে এমন করেছে। তবে তার শাস্তি দরকার তাই দৌড়ে এসেছিলাম। কিন্তু জন্মদিনের জন্যে সে এতোবড় সারপ্রাইজ পাবো তা ভাবতেও পারিনি। কেউ কি কল্পনা করতে পারে এমন ঘটনা!