পোস্টস

চিন্তা

আমি বনাম আমি

১৪ জুন ২০২৪

সাবিরা এন.

 

ছোটকাল থেকেই আমাদেরকে একটা বিষয় শেখানো হয় যে কিভাবে অন্যের সাথে টেক্কা দিতে হয়। পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে, "অমুকের ভালো ফলাফল হয়েছে তোমার এরকম ফলাফল কেন?"। খেলা করছো, "ওমুকে খেলায় প্রথম হয়েছে, তুমি হতে পারো নি কেন?"। নিজের শখের কিছু করছো, "এটা কেন করছো, করে কি হবে? ওমুকে ওটা করছে, সেটা করতে পারো না কেন?" ইত্যাদি... ইত্যাদি... 

আমাদেরকে কখনো হয়তো সরাসরি এই কথা বলা হয় নি যে 'অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় নামো', কিন্তু আমাদের আসেপাশের মানুষ, পরিবেশ, পরিস্থিতি সবই পরোক্ষভাবে এই কথাটাই বলে আসছে আমাদেরকে। কিন্তু কেন? অন্যের তুলনায় ভালো করাটাই কি আমাদের জীবনের সার্থকতা? অন্যের সাথে টেক্কা দিতে পারাটাই কি আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে? 

আমরা বুঝি সবই, কিন্তু সেদিকে আগাই না। ছোটকালে হয়তো নেতিবাচক কথা শুনে এসেছি, তবে এখন তো আমরা বড় হয়েছি। দুঃখের বিষয় হলো, এখনো আমরা আগের মতোই অন্যের সাথে টেক্কা দিয়ে ভালো করতে চাই। 

একজন ভালো ফলাফল করেছে, আমার ফলাফল ভালো হয় নি, তার মানে আমার ভবিষ্যতে ভালো কিছু নেই। একজন চাকরি করছে, আমার চাকরি হয় নি এখনো; অতএব আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। একজন বেশি বেতনে চাকরি করছে, আমার বেতন কম; তাহলে তো আমি অনেক পিছিয়ে আছি। একজন বিয়ে করেছে, আমার বিয়ে হয় নি; এর মানে আমি ব্যর্থ। এরকম নেতিবাচক চিন্তা আমরা প্রায়ই করে থাকি। 

এতে ভালো কিছু হয় না বরং নিজেদেরই ক্ষতি হয়। আমরা যখন অন্যের জীবনের দিকে বারবার তাকাই, আমরা নিজেদের জীবনের দিকে তাকাতে ভুলে যাই। আমরা যখন অন্যের বড় একটি সফলতা দেখি, নিজের ছোট ছোট সফলতাগুলো তুচ্ছ মনে হয়। 

আমার জীবন একমাত্র আমার। অন্যের জীবনের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? আমরা বাঁচবো কেবল একবার। অন্যের জীবনের সাথে তুলনা করে এই একটি মাত্র জীবন নষ্ট করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে কাজ করলে সেকাজে আনন্দ খুজে পাওয়া যায় না। কেননা কোন না কোন ব্যক্তি আমাদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেই। তাই এই প্রতিযোগিতায় কেউ কখনোই জয়ী হয়ে পারবো না। 

জীবন হবে 'আমি বনাম আমি'। আমি আগে কিরকম ছিলাম, এখন কেমন আছি এবং আগামিকাল কেমন থাকবো। এগুলো আমাদের মূল ফোকাসের বিষয় হওয়া জরুরি। আমরা নিজেদেরকে দক্ষ করার চেষ্টা করবো। অন্যের তুলনায় দক্ষ? না, বরং পূর্বের 'আমি'-র তুলনায় দক্ষ। 

নিজেকে কিভাবে এক ধাপ উন্নত করা যায় সেদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। এতে আমরা নিজেদের সার্থকতার পেছনে নিজেদের পরিশ্রমকে বাহবা দিতে পারবো। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে যে একবার আনন্দ খুজে পায়, তাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। কেননা সে এই বাধাকেই একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিবে। এই বাধা তাকে অনুৎসাহিত করার পরিবর্তে উদ্দীপনা দিবে। 

পৃথিবীতে যতো সফল ব্যক্তি আছে, সবাই নিজেদের কাজ আনন্দের সাথে করেই সফল হয়েছেন। আমরা নিজেদের মাঝে এবং আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের মাঝে 'আমি বনাম আমি' মূল্যবোধের প্রচলন করতে পারলে একটি উন্নত, সচেতন এবং সফল জনগোষ্ঠী তৈরি করতে বেশি দিন লাগবে না। 

আশা করছি আপনারাও আমার সাথে সহমত এই বিষয়ে। আমার লিখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 

শুভকামনা,
সাবিরা এন.