Posts

নন ফিকশন

রহস্য ৮

June 14, 2024

মাসুদ হোসেন

Original Author মাসুদ হোসেন

160
View

শীতকাল হয়তো একটু আগেই চলে এসেছে,হাড়কাঁপানো ঠান্ডা বলে যে শব্দটা আছে,সেরকম কিছু না হলেও শীতের রেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে! নগ্ন পায়ে দুর্বাঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে মন্দ লাগছে না বৈকি,তবে এমন উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটার মাঝে এক পিছুটান থাকে,বাড়ি ফেরবার টান,যত লম্বা দুরত্ব পাড়ি দিব,ফিরতে তত বেশি সময় লাগবে,,অবহেলিত শরৎ শেষে আগন্তুক শীতের সকালের মায়া কাটিয়ে তাই উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের পথের বিপরীতে বাড়ি ফিরে আসলাম! সুনসান নীরবতায় মুখরিত আমার পরিবেশ, হ্যা নীরবতাতেই মুখরিত!কোমল স্পর্শে সদর দরজা ঠেলে ভেকরে ঢুকলাম,কঠোর স্পর্শে উচ্চ আওয়াজ হয়-যা নীরবতার সৌন্দর্য নষ্ট করে,আমার অধিকার নেই এই মৃয়মান আমেজে শব্দ প্রয়োগের,এতে করে শব্দ নামক এক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতির অপমান হয় বৈকি!ধীরপায়ে দোতলার পূর্বপাশের কাঁচের দরজার ওপাশের অন্ধকারে প্রবেশ করলাম..|||

আইন থাকায় খুব বেশি সুবিধা হয়নি আমার,এই আইন কতোটা শক্তপোক্ত তার ধারণা থাকাটা দরকারি ছিলো..আইনের সূক্ষ ফাঁকফোকর গলিয়ে কৈ মাছের প্রাণমতো বেরিয়ে আসা কতোটা সহজ বা কঠিন তার একটা ছোটখাটো এক্সপেরিমেন্ট করতে বসেছি আজ,,,ক্যান্সারে আক্রান্ত এক মৃতপ্রায় তরুনকে গতকাল তুলে এনেছি নর্দমার ধারের ঝুপড়িঘর থেকে," মানবসেবা পরমধর্ম" এই মহাসত্যকে প্রতিষ্ঠা করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার জন্মায়নি,,আস্তাকুঁড়ে পরে থাকা মৃতপ্রায় একটি প্রানের সন্ধান করে যাচ্ছিলাম বিগত দুইবছর দুইশ পয়ত্রিশ দিন ধরে,,নিজস্ব আঙিনায় কিছু পরীক্ষালব্ধ ফলাফল পাওয়ার নেশাই আমাকে হয়তো সাময়িকভাবে মানবপ্রেমী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে জনসম্মুখে!!তরুনটির বয়স খুব বেশি হবেনা,তবে শরীরের রোগব্যাধি বাসা বেঁধে এক ধাক্কায় তার বয়েস যেন পন্চাশের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছে,,সুদর্শন এক যুবক হতে পারতো সে,তবে ভাগ্যের পরিহাসে আজ নিতান্তই কিছুদিনের অতিথি,মর্মর শব্দের শুকনো পাতা,,আর সবচেয়ে বড় আমার এক্সপেরিমেন্টের সামগ্রী,! তরুনের মনে আমার জন্য এক আকাশ পরিমান শ্রদ্ধা জন্মেছে ইতিমধ্য!,শ্রদ্ধা-ভক্তি-বিনয়--কি এক অপূর্ব সংমিশ্রন কৃতগ্যতা প্রকাশের!!তবে আমার করা উপকারে কৃতগ্যতা প্রকাশের উপায় আমি তাকে জানিয়ে দিলে হয়তো তরুনের অভিব্যক্তি পরিবর্তন হবে মুহুর্তেই,বিনয়ের পরিবর্তে একরাশ ঘৃণার দখলে থাকবে সব অনুভুতি! তবে এক্সপেরিমেন্ট তো আমি নষ্ট করতে পারিনা মানবিক কিছু গুনের নিমিত্তে!!

""হাড়াকাঁপানো ঠান্ডা'- শব্দজোড়ের যথাযথ প্রয়োগ করছে প্রকৃতি|
""শুকনো পাতায় ছাওয়া বাঁশবনের মধ্য দিয়ে হেঁটে আসার অভিগ্যতা আছে?""---প্রশ্নটি করলো আমার সামনে বসা এক মধ্যবয়স্কা,
"প্রকৃতিটা খুব সুন্দর,তবে এই সৌন্দর্যের মধ্য প্রাপ্তিটা খোলাসা করলে তা রংচটা হয়ে যায়,বহুপুরোনো পরিত্যক্ত বাংলোর মতো'''---চায়ের কাপে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে চশমা হাতে নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দিলাম আমি||
মধ্যবয়স্কার নাম ঠিকানা কিছু জানার আগ্রহ মন আঙিনায় উঁকি দিচ্ছেনা আমার,তাই গত একঘন্টা যাবত সে আমার সামনে বসে থাকলেও আমি এসব কিছুই তার থেকে জানতে চাইনি,,কিছু মানুষের মনে ঝড় বয়ে যায়,তারা আড়াল খোঁজে,বিক্ষিপ্ত সমাগমে এসে ঠাঁই খোঁজে,ভরা জোৎস্নায় আঁধার হাতড়িয়ে যায়,কি অদ্ভুত তাদের কামনা!!একটুকরো সুখের আশায় কাটিয়ে দেয় যুগের পর যুগ,তবুও প্রশ্নের উত্তর মেলেনা কারোর ক্ষেত্রে,একতরফা প্রেমের মতো অনেকটা,একসমুদ্র ভালোবাসা চুপিচুপি বয়ে যায়,অথচ এই বিপুল সমারোহে অবগাহন করতে অপর প্রান্তের কোনো সাড়া মেলেনা,জোয়ার ভাটার পরেও মিষ্টতা কমেনা সাগরেই পতিত হওয়া নদনদীর!আমার সামনে বসা মধ্যবয়স্কার এখানে আসার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ অবশ্যই আছে,,কিন্তু শুরুটা খুজে না পাওয়ায় সে ইতস্তত করে যাচ্ছে এবং অবান্তর এক প্রশ্ন করে ফেলল যার সাথে তার আসার কারনের কোনো সংযোগ নেই!! আমার এই আলো আঁধারের কারসাজিতে সজ্জিত পরিবেশে নিজ থেকে কেউ আসেনা!বছরান্তে এক কি দুবার অচেনা কেউ প্রবেশ করে,,তবে প্রবেশের পরে বাহির হওয়া ব্যাপারটা খুব কমই ঘটে থাকে,,''নো এন্ট্রি""" কথাটার বিপরীত হয় ''নো এক্সিট''!!

মাঘের পরে বসন্তরাজ এসে দরজায় কড়া নাড়ছে,,চিলেকোঠার ঘরের অভাব বোধ করছি বেশ,,তবে কিছু অভাব পূরন হতে নেই,অভাব পূরন হয়ে গেছে নতুনত্বের প্রতি আকর্ষন চিরবিদায় নিবে,অভাব আছে বলেই এত রঙিন লাগে পৃথিবী,অভাব না থাকলে একদমই সাদামাটা হয়ে যেত সব!!বিকেলের মৃদু আলোয় দোতলার বারান্দায় বসে আছি,একটু পরেই পুলিশ আসবে,তল্লাশি হবে সেই আমার প্রতি একরাশ শ্রদ্ধায় ডুবে থাকা তরুনের ঘরখানায়!!তরুন এখন সুস্থ আগের চেয়ে তবে তার জীবনের শেষ সময়টা কাটবে অন্ধকার কারাগারের পিছনে,ফাঁসিও হতে পারে,তাও আমার জন্য!!--জীবনটা খুব সুন্দর,,উপভোগ করতে গিয়েই বুঝে যাই জীবনটা কত সুন্দর!!তবে সাম্যাবস্থা বলে কিছু একটা আছে,সেই প্রভাবটাই আজ পরতে যাচ্ছে তরুনটির জীবনে,,,আমার কাছে আজ জীবন ঠিক যতোটা সুন্দর,তার কাছে ঠিক ততোটাই অসুখের হবে!
..এখানে আমার প্রত্যক্ষ কোনো অন্যায় কেন ধরা হবে? সবই তো প্রকৃতির স্যামাবস্থা নীতি---তাই নয় কি?জীবনে সব উপভোগ করতে গেলে তোমায় কঠোর হতে হবে,মোমের মতো গলে আবার মোমটাই শক্ত হয়ে যায় ,দেখেছো তো?এতোটা উপভোগের কি কোনো বাস্তব প্রয়োজন আছে?

দুরদিগন্তে কালো মেঘ করছে,কালবৈশাখীর সময়- হতেই পারে ঝড়বৃষ্টি,,আমার বৃষ্টিতে কোনো অরুচি নেই.তবে বৃষ্টির মধ্য বিদ্যমান মোহে অরুচি আছে,বৃষ্টির পরে এক মোহনীয় সুগন্ধে ভরপুর হয়ে যায় পুরোটা,এটা আমার অপছন্দের,কারণ এমন নৈস্বর্গিক পরিবেশে থাকলে ক্ষতি করতে মন চায়না কারো,,তাইতো বৃষ্টিতে এত অরুচি!!আজকে আমার এক্সপেরিমেন্টের অন্তিম পর্যায়ে এসে গেছি,আজ বৃষ্টিটা না এলেই ভালো হতো,,মাটির সোদা গন্ধ-বৃষ্টির মাতাল করা তান,বিদ্যুৎ চমকে যে ভিতরের ক্ষুধার্ত মনুষ্যত্ব নাড়া দিয়ে ওঠে.বুভুক্ষ হয়ে ওঠে মন পরিশুদ্ধতার জন্য!!একে একে আলমারি থেকে সকল দলিল দস্তাবেজ বের করলাম,,নাহ এসব জমিজমার দলিল নয়,,এগুলো মানুষের জীবনের দলিল,জীবন বন্ধক রেখেও যারা যারা বাঁচতে চেয়েছিলো তাদের দলিল,,মানুষের জীবনের পরিমাপটা এই দোতলায় জমিজমার চেয়েও সস্তা!!!!১,২,৩, ...১০৯..মোট একশত নয়টি দলিল,,এত মানুষকে আমি মেরে ফেলেছি!!!বৃষ্টির বেগ বাড়ার সাথেই ভেতরের মানুষটা বুঝি জেগে যাচ্ছে!!দ্রুত দরজা জানালা বন্ধ করে ফুল স্পিডে ফ্যান ছাড়লাম..আমি মানুষ থাকতে চাইনা এইমুহুর্তে!!

"""মানুষের কষ্টগুলো শেষ করে দেয়া ভুল নয়,কষ্টের ভিতরে বাঁচিয়ে রাখা অন্যায়'''''--এই তত্ত্বের ওপরেই তো ১০৯ জনকে অতীতের পাতার অতীত করে দিয়েছি,,এই তত্ত্ব কোনদিক থেকে ভুল?দুইপ্রান্তই সঠিক,,!!
হঠাৎ ফোনকল এলো.চীফের ফোন,আমি রিসিভ করলাম,,
''''''আগামী এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় সব তৈরি তো?'''''((চিফ))
"""নাহ,নতুন কোনো এক্সপেরিমেন্ট করার আর প্রয়োজন বোধ করছিনা'''((কথক))
''''মজা করার সময় এটা নয়,দ্রুত সব ব্যবস্থা করে ফেলো,পরবর্তী এক্সপেরিমেন্টে আমরা সফল হবই,আর একবার সফল হলেই পুরো দুনিয়ার নজর কেড়ে নিতে পারব,সফল ব্যক্তির তকমা--জীবনটা সুন্দর '''((চিফ))
'''''''১০৯ তম এক্সপেরিমেন্টও বিফল,শুধু বিফলই নয়,সর্বসাকু্ল্যে বিফল,আমরা একটা কল্পনার পিছনে ছুটে এতগুলো মানুষকে মেরে ফেলেছি''''((কথক))
'''নাহ,,এটা হতে পারেনা,,আমরা কাউকে মারিনা,আমরা তাদের অতীতে পাঠিয়ে দিয়েছি,তারা এখন অতীতের বাসিন্দা,দে আর টাইম ট্রাভেলার''((চিফ))
'''''জীবিত সত্তাকে ট্রাভেল করানো যায়,মৃত সত্তাকে নয়,আর তারা কেউই অতীতে ফিরে যেতে পারেনি,তারা সবাই বর্তমানের মৃত,আমরা ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে জঘন্যতম ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলেছি'''((কথক))

সাইকো কিলারের মনে যখন থাকে বিগ্যানী হওয়ার নেশা,তখন এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারেনা,

Comments

    Please login to post comment. Login