কে এসেছে? পাব্লিকেশন থেকে এসেছে, চাচ্ছে আপনি নতুন করে বই লেখুন। চলে যেতে বলুন, আর বলে দিবেন আমি এখন আর বই লিখিনা। ঠিক আছে।
ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই আবার ফারহানের কম বয়স্ক ম্যানেজার হাজির হলো।
কী কিছু বলবে?
মেয়েটা যেতে চাইছে না।
কোন মেয়ে?
ঐ যে পাব্লিকেশন থেকে এসেছে যে।
তুমি ওকে বলোনি?
বলেছি কিন্তু মেয়েটি বলল ওর নাকি আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে, বই নিয়ে না অন্য কিছু নিয়ে।
ঠিক আছে আসতে বলো।
কিছুক্ষণ পরই ফারহান দেখতে পেল একজন কম বয়সি মেয়েকে। দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে না মেয়েটি কী কলেজে পড়ে না ভার্সিটিতে পড়ে।
বসুন।বলুন কী চান।
আমাকে তুমি করে বললে সাচ্ছন্দ্য বোধ করব। মেয়েটির কথায় মনে হচ্ছে খুব দাম্ভিক; অন্য রকম দাম্ভিক নয় আত্নমর্যাদাসম্পন্ন মেয়েদের মাঝে নিজেদের নিয়ে যেরকম একটা অহংকার কাজ করে সেরকম।
বলো কী বলবে?
আপনি কী জানেন আপনি একজন খারাপ মানুষ?
মেয়েটির কথা শুনে চমকে উঠার কথা থাকলেও চমকে উঠল না ফারহান, ইন্টারেস্টিং লাগছে।
তোমার কেন মনে হয় আমি খারাপ?
আপনার মনে হয় না?
একজন খুনিও খুন করে নিজেকে জাস্টিফাই করে, যদিও আমি এমন কিছু করিনি তার মানে আমি অতও খারাপ না কিন্তু তোমার কাছে খারাপ এর মানে কী সেটা আগে আমার জানা দরকার।
আপনার দার্শনিক কথাবার্তা বন্ধ করবেন প্লিজ? খারাপ মানে খারাপ।
আমি দর্শন পড়াই কাজেই বাস্তবে সেটাকে প্রয়োগ করা আমার কাজ।
আপনার গিলটি ফিল হয় না?
মেয়েটির কথা শুনে ফারহান হেসে ফেলল।
হাসছেন কেন?
তুমি বুঝি সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার দেখে এসেছ?
মানে?
হয় হয়, নতুন নতুন সত্যজিৎ দেখা শুরু করলে সবাই নিজেকে তার ছবির ক্যারেক্টারের মতো ভাবতে শুরু করে।
ইরার কথা মনে পড়ে না আপনার?
হঠাৎ করেই বুকের মধ্যে ধপাস করে উঠলো ফারহানের।
তুমি কে?
আমি কে সেটা জরুরি না।
ঠিক, তুমি কে সেটা জরুরি না। ইরার কী হয়েছে?
ইরার কিছু হয়নি কিন্তু আপনি ইরার সাথে যা করছেন তা ঠিক করেননি।
তুমি শিমু?
হ্যাঁ। আপনি কী করে জানলেন?
তোমার ম্যাডাম তোমার কথা প্রায়ই বলত।
আপনি কি জানেন আপু আজ পর্যন্ত সত্যটা জানে না?
সত্যটা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই জানেনা। তুমি আমাকে কীভাবে পেলে?
আপনার বইয়ের মাধ্যমে। I used to be your big fan.
ইরা কেমন আছে?
ভালো।
তাহলে তুমি এখানে কেন?
আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চাই।
কী রকম শাস্তি?
আপনি আপুর কাছে নিজে গিয়ে মাফ চাইবেন।
এতে তোমার ম্যাডামেরই বেশি ক্ষতি হবে।
হোক, তবুও আমি চাই আপনি মাফ চান। শুধুমাত্র নিজের বইয়ের জন্য গল্প তৈরি করতে একটা মানুষ অন্য আরেকটা মানুষকে এইভাবে ব্যবহার করতে পারে আপনাকে না দেখলে জানতাম না। ছিহ্!
তুমি কিছুই জানো না শিমু।
আপনি আপুর সাথে দেখা করবেন, আমি আপনাকে পালাতে দিব না।
ঠিক আছে।
দোয়েল চত্বর এলাকাটা আগের মতই আছে, এখনো এক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ফুলের দোকানগুলো। ফারহান কখনো কারো জন্য ফুল কিনেনি, সারাজীবন যাদের বইয়ের প্রতি নেশা তারা ফুল কিনে টাকা নষ্ট করতে রাজি নয়। আজকেই ইরার সাথে দেখা করার কথা তার। আচ্ছা ইরা কী তাকে বিশ্বাস করবে? একটা সময় দিনের পর দিন ফারহান ইরার সাথে ফোনে কথা বলত, বন্ধু হিসেবেই কিন্তু মিথ্যা পরিচয়ে। ফারহানের শুধুমাত্র একটা গল্পের প্লট দরকার ছিল আর ইরার? ইরা কী চাইত ফারহান আজও জানে না, কথাবার্তায় যে মেয়েটির এত সরলতা, যে মেয়েটি এত প্রানবন্ত সে মেয়েটির আসলেই চাওয়ার কিছু ছিল?
একবার ফারহান ইরা কে বলেছিল যদি কখনো তাদের দেখা হয় তাহলে ঠিক এই জায়গায়তেই যেন তাদের দেখা হয়। ইরা প্রশ্ন করছিল, "তোমাকে চিনব কিভাবে?" সুন্দর, লম্বা একটা ছেলে বসে একমনে বই বই পড়ছে, যখন এমন কাউকে দেখবে তখনই বুঝবে এটা আমি। ইরা ওর কথায় হেসেছিল।
৩০ মিনিট হয়ে গেছে ফারহান এসেছে, এখনো ওরা কেউ আসেনি। এই অবস্থায় ফারহানের নার্ভাস হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার কিছুই মনে হচ্ছে না। বহুকাল আগেই ফারহান সুখ, দুঃখ অনুভব করা ভুলে গিয়েছে। নিজের আদরের বিড়ালটা যখন মরে যায় তখন সে খুব কেঁদেছিল, এটা বললে ভুল হবে। ফারহানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল কিন্ত মনের ভিতর সে কিছুই অনুভব করতে পারছিল না। কান্না না করা নাকি ম্যাচুরিটি কিন্তু ফারহানের কাছে কান্না না করতে পারাটা তার দুর্বলতা। কারণ সে ভাবে মন খুলে কাঁদতে পারলে হয়ত খারাপ স্মৃতিগুলো সহজভাবেই ভুলে যাওয়া যায়। এগুলো ভাবতে ভাবতে ফারহানের মনে পড়ল সে বই নিয়ে এসেছে এবং ব্যাগ থেকে বের করে তৎক্ষণাৎ সেটি খুলে পড়তে বসল। বইয়ের নাম Letters from Millena, লেখক Franz Kafka.
ইরা প্রায়ই এই এলাকায় আসে, এমনিই আসে। ফুলের দোকানগুলোতে একই ধরনের ফুল বারো মাসই সাজানো থাকে। আচ্ছা এরা কী ভিন্ন রকমের ফুল আনতে পারে না? যেমন টিউলিপ।টিউলিপের কথা মনে পড়তেই ইরার নিজের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো। অনেক বছর আগে ধ্রুব তাকে এই ফুলের কথা বলেছিল। ধ্রুব বলেছিল কখনো তার সাথে দেখা করতে আসলে এখানে আসতে, গত ৬ বছরে ইরা এখানে অনেক এসেছে ধ্রুবর খোঁজে না এমনিই কারণ যে মানুষটা কখনো এক্সসিস্টই করে না তাকে সে কীভাবে খুঁজে পাবে।
হঠাৎ ইরা সামনে তাকাতেই দেখতে পেল একটা অবাক দৃশ্য যদিও খুব সাধারণ কিছু কিন্তু ইরার জন্য অবাক করার মতই। দেখতে লম্বা, সুন্দর একটা ছেলে খুব মনোযোগ দিয়ে বসে বসে বই পড়ছে; ধ্রুবও নিজেকে ঠিক এভাবেই বর্ণনা করছিল। ইরার খুব ইচ্ছা করল ছেলেটার কাছে গিয়ে বসতে এবং নাম জিজ্ঞেস করতে।
আপু কী করছো?
জেবার প্রশ্নে চমকে উঠল ইরা।
কিছু না, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
কখন এসেছ?
এইতো বেশিক্ষণ হয়নি।
জেবাও ফারহানকে লক্ষ্য করল। ঐ যে দেখ, এই ছেলেটার কথাই বলেছিলাম। ও ই তোমার সাথে দেখা করতে চায়।
দেখ আমি কিন্তু শুধু দেখা করতে এসেছি তুমি জোরাজুরি করছিলে বলে, অন্য কিছু কিন্তু না।
আচ্ছা, তুমি ওর সাথে কথা বলো তাতেই হবে।
ভয়ের কোনো কারণ নেই তবুও কেন জানি ইরার খুব অস্বস্তি লাগছিল।
Excuse me!
ফারহান এতক্ষণ বই পড়ছিল হঠাৎ একটা নারী কন্ঠ শুনতে পেয়ে চমকে উঠল। সে যা ভাবছে তাই বোধহয় হতে চলেছে, ফারহানের সাহস হচ্ছিলো না মুখ তুলে তাকানোর।
আপনি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
এবারও ফারহান তাকালো না।
অনেক্ষণ যাবত দুজনের মধ্যে নীরবতা চলছিলো।
ইরা হঠাৎ করেই বসে পড়লো ফারহানের পাশে, মানুষ যখন অনেক বড় ধাক্কা খায় তখন যেভাবে বসে পড়ে ঠিক সেইভাবে।
এইবার ফারহান মুখ তুলে তাকালো ইরার দিকে। কিছু বললো না।
তোমার নাম কী?
ফারহান।
কেন এসেছ?
শিমু বলেছে।
না হলে আসতে না?
আমি অনেক আগেই নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করছি তাই নিজেকে প্রকাশের কোনো ইচ্ছা আমার মধ্যে নেই।
কেন করছ এইসব?
জানি না, ধ্রুব বলতে কেউ কখনো ছিল না।
ফারহান ছিলো তাহলে।
ফারহান ধ্রুবর মত না।
ফারহান একটা কুত্তার বাচ্চা। তুমি কী জানো তুমি যে অনেক অসহায়?
অনেক বছর পর গালি খেয়ে ফারহান বুঝতে পারল না হাসবে না অবাক হবে। যদিও ব্যাপারটা গালির মধ্যেই শেষ ছিল না।
ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই আবার ফারহানের কম বয়স্ক ম্যানেজার হাজির হলো।
কী কিছু বলবে?
মেয়েটা যেতে চাইছে না।
কোন মেয়ে?
ঐ যে পাব্লিকেশন থেকে এসেছে যে।
তুমি ওকে বলোনি?
বলেছি কিন্তু মেয়েটি বলল ওর নাকি আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে, বই নিয়ে না অন্য কিছু নিয়ে।
ঠিক আছে আসতে বলো।
কিছুক্ষণ পরই ফারহান দেখতে পেল একজন কম বয়সি মেয়েকে। দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে না মেয়েটি কী কলেজে পড়ে না ভার্সিটিতে পড়ে।
বসুন।বলুন কী চান।
আমাকে তুমি করে বললে সাচ্ছন্দ্য বোধ করব। মেয়েটির কথায় মনে হচ্ছে খুব দাম্ভিক; অন্য রকম দাম্ভিক নয় আত্নমর্যাদাসম্পন্ন মেয়েদের মাঝে নিজেদের নিয়ে যেরকম একটা অহংকার কাজ করে সেরকম।
বলো কী বলবে?
আপনি কী জানেন আপনি একজন খারাপ মানুষ?
মেয়েটির কথা শুনে চমকে উঠার কথা থাকলেও চমকে উঠল না ফারহান, ইন্টারেস্টিং লাগছে।
তোমার কেন মনে হয় আমি খারাপ?
আপনার মনে হয় না?
একজন খুনিও খুন করে নিজেকে জাস্টিফাই করে, যদিও আমি এমন কিছু করিনি তার মানে আমি অতও খারাপ না কিন্তু তোমার কাছে খারাপ এর মানে কী সেটা আগে আমার জানা দরকার।
আপনার দার্শনিক কথাবার্তা বন্ধ করবেন প্লিজ? খারাপ মানে খারাপ।
আমি দর্শন পড়াই কাজেই বাস্তবে সেটাকে প্রয়োগ করা আমার কাজ।
আপনার গিলটি ফিল হয় না?
মেয়েটির কথা শুনে ফারহান হেসে ফেলল।
হাসছেন কেন?
তুমি বুঝি সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার দেখে এসেছ?
মানে?
হয় হয়, নতুন নতুন সত্যজিৎ দেখা শুরু করলে সবাই নিজেকে তার ছবির ক্যারেক্টারের মতো ভাবতে শুরু করে।
ইরার কথা মনে পড়ে না আপনার?
হঠাৎ করেই বুকের মধ্যে ধপাস করে উঠলো ফারহানের।
তুমি কে?
আমি কে সেটা জরুরি না।
ঠিক, তুমি কে সেটা জরুরি না। ইরার কী হয়েছে?
ইরার কিছু হয়নি কিন্তু আপনি ইরার সাথে যা করছেন তা ঠিক করেননি।
তুমি শিমু?
হ্যাঁ। আপনি কী করে জানলেন?
তোমার ম্যাডাম তোমার কথা প্রায়ই বলত।
আপনি কি জানেন আপু আজ পর্যন্ত সত্যটা জানে না?
সত্যটা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই জানেনা। তুমি আমাকে কীভাবে পেলে?
আপনার বইয়ের মাধ্যমে। I used to be your big fan.
ইরা কেমন আছে?
ভালো।
তাহলে তুমি এখানে কেন?
আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চাই।
কী রকম শাস্তি?
আপনি আপুর কাছে নিজে গিয়ে মাফ চাইবেন।
এতে তোমার ম্যাডামেরই বেশি ক্ষতি হবে।
হোক, তবুও আমি চাই আপনি মাফ চান। শুধুমাত্র নিজের বইয়ের জন্য গল্প তৈরি করতে একটা মানুষ অন্য আরেকটা মানুষকে এইভাবে ব্যবহার করতে পারে আপনাকে না দেখলে জানতাম না। ছিহ্!
তুমি কিছুই জানো না শিমু।
আপনি আপুর সাথে দেখা করবেন, আমি আপনাকে পালাতে দিব না।
ঠিক আছে।
দোয়েল চত্বর এলাকাটা আগের মতই আছে, এখনো এক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ফুলের দোকানগুলো। ফারহান কখনো কারো জন্য ফুল কিনেনি, সারাজীবন যাদের বইয়ের প্রতি নেশা তারা ফুল কিনে টাকা নষ্ট করতে রাজি নয়। আজকেই ইরার সাথে দেখা করার কথা তার। আচ্ছা ইরা কী তাকে বিশ্বাস করবে? একটা সময় দিনের পর দিন ফারহান ইরার সাথে ফোনে কথা বলত, বন্ধু হিসেবেই কিন্তু মিথ্যা পরিচয়ে। ফারহানের শুধুমাত্র একটা গল্পের প্লট দরকার ছিল আর ইরার? ইরা কী চাইত ফারহান আজও জানে না, কথাবার্তায় যে মেয়েটির এত সরলতা, যে মেয়েটি এত প্রানবন্ত সে মেয়েটির আসলেই চাওয়ার কিছু ছিল?
একবার ফারহান ইরা কে বলেছিল যদি কখনো তাদের দেখা হয় তাহলে ঠিক এই জায়গায়তেই যেন তাদের দেখা হয়। ইরা প্রশ্ন করছিল, "তোমাকে চিনব কিভাবে?" সুন্দর, লম্বা একটা ছেলে বসে একমনে বই বই পড়ছে, যখন এমন কাউকে দেখবে তখনই বুঝবে এটা আমি। ইরা ওর কথায় হেসেছিল।
৩০ মিনিট হয়ে গেছে ফারহান এসেছে, এখনো ওরা কেউ আসেনি। এই অবস্থায় ফারহানের নার্ভাস হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার কিছুই মনে হচ্ছে না। বহুকাল আগেই ফারহান সুখ, দুঃখ অনুভব করা ভুলে গিয়েছে। নিজের আদরের বিড়ালটা যখন মরে যায় তখন সে খুব কেঁদেছিল, এটা বললে ভুল হবে। ফারহানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল কিন্ত মনের ভিতর সে কিছুই অনুভব করতে পারছিল না। কান্না না করা নাকি ম্যাচুরিটি কিন্তু ফারহানের কাছে কান্না না করতে পারাটা তার দুর্বলতা। কারণ সে ভাবে মন খুলে কাঁদতে পারলে হয়ত খারাপ স্মৃতিগুলো সহজভাবেই ভুলে যাওয়া যায়। এগুলো ভাবতে ভাবতে ফারহানের মনে পড়ল সে বই নিয়ে এসেছে এবং ব্যাগ থেকে বের করে তৎক্ষণাৎ সেটি খুলে পড়তে বসল। বইয়ের নাম Letters from Millena, লেখক Franz Kafka.
ইরা প্রায়ই এই এলাকায় আসে, এমনিই আসে। ফুলের দোকানগুলোতে একই ধরনের ফুল বারো মাসই সাজানো থাকে। আচ্ছা এরা কী ভিন্ন রকমের ফুল আনতে পারে না? যেমন টিউলিপ।টিউলিপের কথা মনে পড়তেই ইরার নিজের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো। অনেক বছর আগে ধ্রুব তাকে এই ফুলের কথা বলেছিল। ধ্রুব বলেছিল কখনো তার সাথে দেখা করতে আসলে এখানে আসতে, গত ৬ বছরে ইরা এখানে অনেক এসেছে ধ্রুবর খোঁজে না এমনিই কারণ যে মানুষটা কখনো এক্সসিস্টই করে না তাকে সে কীভাবে খুঁজে পাবে।
হঠাৎ ইরা সামনে তাকাতেই দেখতে পেল একটা অবাক দৃশ্য যদিও খুব সাধারণ কিছু কিন্তু ইরার জন্য অবাক করার মতই। দেখতে লম্বা, সুন্দর একটা ছেলে খুব মনোযোগ দিয়ে বসে বসে বই পড়ছে; ধ্রুবও নিজেকে ঠিক এভাবেই বর্ণনা করছিল। ইরার খুব ইচ্ছা করল ছেলেটার কাছে গিয়ে বসতে এবং নাম জিজ্ঞেস করতে।
আপু কী করছো?
জেবার প্রশ্নে চমকে উঠল ইরা।
কিছু না, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
কখন এসেছ?
এইতো বেশিক্ষণ হয়নি।
জেবাও ফারহানকে লক্ষ্য করল। ঐ যে দেখ, এই ছেলেটার কথাই বলেছিলাম। ও ই তোমার সাথে দেখা করতে চায়।
দেখ আমি কিন্তু শুধু দেখা করতে এসেছি তুমি জোরাজুরি করছিলে বলে, অন্য কিছু কিন্তু না।
আচ্ছা, তুমি ওর সাথে কথা বলো তাতেই হবে।
ভয়ের কোনো কারণ নেই তবুও কেন জানি ইরার খুব অস্বস্তি লাগছিল।
Excuse me!
ফারহান এতক্ষণ বই পড়ছিল হঠাৎ একটা নারী কন্ঠ শুনতে পেয়ে চমকে উঠল। সে যা ভাবছে তাই বোধহয় হতে চলেছে, ফারহানের সাহস হচ্ছিলো না মুখ তুলে তাকানোর।
আপনি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
এবারও ফারহান তাকালো না।
অনেক্ষণ যাবত দুজনের মধ্যে নীরবতা চলছিলো।
ইরা হঠাৎ করেই বসে পড়লো ফারহানের পাশে, মানুষ যখন অনেক বড় ধাক্কা খায় তখন যেভাবে বসে পড়ে ঠিক সেইভাবে।
এইবার ফারহান মুখ তুলে তাকালো ইরার দিকে। কিছু বললো না।
তোমার নাম কী?
ফারহান।
কেন এসেছ?
শিমু বলেছে।
না হলে আসতে না?
আমি অনেক আগেই নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করছি তাই নিজেকে প্রকাশের কোনো ইচ্ছা আমার মধ্যে নেই।
কেন করছ এইসব?
জানি না, ধ্রুব বলতে কেউ কখনো ছিল না।
ফারহান ছিলো তাহলে।
ফারহান ধ্রুবর মত না।
ফারহান একটা কুত্তার বাচ্চা। তুমি কী জানো তুমি যে অনেক অসহায়?
অনেক বছর পর গালি খেয়ে ফারহান বুঝতে পারল না হাসবে না অবাক হবে। যদিও ব্যাপারটা গালির মধ্যেই শেষ ছিল না।