Posts

গল্প

তোমার অসুখে কিংশুকে

June 15, 2024

Amir Hamza

“এখন কেমন লাগছে?” ……কাঁধের নিচে বালিশ নিয়ে সোয়া অবস্থা থেকে  দুই হাতে চাপ দিয়ে  উঠতে উঠতে বললো, “এখন ইকটু ভালো,তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো!” আমি ওর কোমড়ের ঐখানে কোমরের পাশে বসলাম,মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে কেমন করে উঠলো। শান্ত স্নিগ্ধ গোলগাল মুখ,কয়েকদিনের টাইফয়েডে মুখের উপরের চামড়া বসে গেছে,চোখ অনেকটা ভেতরে চলে গেছে।ঠোঁট  কেমন শীর্ণ হয়ে গেছে। নাকটাও অনেকটা দেবে গেছে।ও উঠে বসতে চাচ্ছিলো,আমি ওর দুইবাহু ধরে খাটের সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে দিলাম,এরপরে ওর পাশে বসে ওর হাত আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে হালকা চেপে ধরে ওর মুখের দিকে তাকালাম,আমার তাকানো ওর চোখে পড়তেই আমার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো।আমি হাসি ফেরত দিতে পারলাম না।কি মনে হতে ও অন্যরকম  ভাবে বললো, “ আমার মনে হচ্ছে আমার অসুখ হওয়াতে আমার থেকে বেশি কষ্ট তোমার হচ্ছে।” আমি বললাম, “ তাই কি হয়।” সুচিত্রা কেমন বড়ো মানুষের মতন গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “হু,হয়। যখন দুইটা মানুষ অনেকটা কাছে চলে আসে তখন অনেক কিছু হয় ।” 

“যেমন?” 

“যেমন ধরো, আমি এখন অসুস্থ না থাকলে অন্য কিছু হতে পারতো,মনের দিক দিয়ে কাছে আসা সহ আমরা বস্তুগত ভাবেও কাছে আসতে পারতাম।”

আমি এইবার ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম ঠোটের কোলে মৃদু হাসি ধরে রেখে বললাম, “ আরেহ,পাগলী আমরা তো বস্তুগত ভাবেও কাছে,এইযে তোমার হাত ধরে আছি।”

সুচিত্রা আমার কথায় ঘাড় উঁচিয়ে মাথাটা রাজকীয় ভঙ্গিমায় নিয়ে গিয়ে যেন মহারানী আমার কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন,তেমন ভঙ্গিতে বললো, “দেখুন বোকা মানুষ,আমি জানিনা আপনি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন কিনা,নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন।তবে আমি এইটা জানি,আমি সুস্থ থাকলে আর  শরীর দুর্বল না হলে এতক্ষনে আপনার খবর খারাপ ছিল।”

“আচ্ছা আগে তাহলে সুস্থ হাও তার পরে খবর খারাপ নাহয় ভালোই করে দিও!”

আর পরে আমরা অনেকক্ষন কোনো কথা বললাম না,আমি ওর হাত ধরে চুপচাপ বসে ছিলাম।মস্তিষ্কে চিন্তা ভাবনার ঝড় উঠে চলছিল।সুচিত্রা আমার হাত ওর হাতের মধ্যে নাড়িয়ে বললো, “ কি ভাবছো,পাখি?”

আমি লজ্জা পেলাম,বিয়ের ৬ মাস হতে চললো তও যতবার ওর মুখে পাখি ডাক শুনি আমার লজ্জা লজ্জা লাগে,পেট নেমে ডাকা ঠিক আছে তাই বলে ২৩ বছর বয়সী যুবককে পাখি !মানাজায়। আমি সুচিত্রাকে বলেওছিলাম, “পাখি ডাকবে না প্লিজ,নিজেকে কেমন বাচ্চাবাচ্চা লাগে।” ওর উত্তর ছিল, “ তুমি তো বাচ্চাই,আর পাখি ডাক আমি ছাড়ছি না এইটা বলতে তো আমার ভালো লাগে।” আমি আর কিচ্ছু বলিনি পরে। আমি মাথা উঠিয়ে ওর টলটলে চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “কৈ কিচ্ছু ভাবছি না তো।” সুচিত্রা কিছু বলতে যাবে আমি ওকে বলতে না দিয়েই বললাম, “কিছু খাবে?”

“খাবো!”

“কী খাবে?”

‘চকলেট খাবো!”

“আচ্ছা দাড়াও দেখি ফ্রিজে আছে নাকি।”

আমি উঠতে যাবো সুচিত্রা হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, “এখন যেতে হবে না কিছুক্ষন আমার পাশে বসে থেকে কথা বলো আমি তোমার কথা শুনি।” আমি হাসালাম।এই জন্যে যে,এই অসুখের মধ্যে এতটা বিরক্তির মধ্যেও মেয়েটা আমার কথা শুনতে চাচ্ছে। আমি ওর কোমরের কাছে বসারতো অবস্থা থেকে বুকের কাছে পাশে গিয়ে বসলাম।কপালে হাত রেখে দেখলাম,শরীরের তাপমাত্রা মাপলাম।এখন জ্বর অল্প।হাতের আঙ্গুল দিয়ে গালের নাকের পাশের শক্ত  অংশের উপরে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলাম।আর হাতের পুরা অংশ গালের উপরে দিয়ে রাখলাম।সুচিত্রা এক হাত দিয়ে আমার হাত যেইটা ওর গালের উপরে ছিল, ওইহাতে স্পর্শ করলো। আমি কিছুটা বেদনা অনুভব করে বললাম, “তুমি কবে সুস্থ হবে বলতো!!” সুচিত্রা ঠোঁট বাকিয়ে বললো, “আমি তো জানিনা,আর তোমার কি আমাকে বিরক্ত লাগছে?”

আমি ওর কথা শুনে হাসলাম,যেন ছোট বাচ্চা কাউকে জিজ্ঞেস করছে, “তুমিকি আমাকে আর ভালোবাসো না!!” বাচ্চাটা জানে ভালোবাসার কমতি নেই,তবুও সে মুখে শুনার জন্যে এতটা জিজ্ঞেষ করছে।আমি উঠে বসে ঝুকে আমার কোপাল ওর কপালের সঙ্গে লাগিয়ে দিলাম,বললাম, “ তোমার মনে হচ্ছে আমি বিরক্ত হচ্ছি?” সুচিত্রা নাকের সঙ্গে নাক লাগিয়ে দিয়ে বললো “হচ্ছে না,আর আমার চকলেট কোথায়?” 

“এইতো তোমার কপাল থেকে আমার কপাল হাঁটলেই এনে দিচ্ছি তো!” ফ্রিজের হাতল ধরে চকলেট বের করার জন্যে টান দেওয়ার সময় থেমে গেলাম,সুচিত্রার সঙ্গে প্রথম পরিচয়,ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব,সখ্যতা গভীর হওয়া,প্রেমিক হয়ে উঠার কথা। এইতো সেদিন ওকে বৌ করে আনলাম।আমি যে কিনা নিজের যত্ন নিজেই ঠিকমতন করতে পারিনা,আজ কয়েকদিন যাবত ওর সেবা করছি।অনেকটা ভালো লাগছে।ওকে অসুখের মধ্যে সঙ্গ দিতে পেরে ভালো লাগছে,বাসায় থাকলে হয়তো ওর মা বাবা দেখে র্রাখতো,আমার জায়গায় ওর মা বাবা সেবা করতো।এখন তো ও আমার কাছে,ওর সকল দায়দায়িত্ব আমার।ওর সেবা যত্নও আমার কাজ।আমি ফ্রিজ খুললাম,ডিম্ রাখার জায়গায় একটা চকলেটের প্যাকেট,নির্ঘাত আমার কাজ।সুচিত্রা এই অসুস্থ অবস্থায় একবারও ফ্রিজ খুলেনি।খুললে এই অনিয়ম দেখে ডিমের খোসা খাইয়ে দিতো।আমি ওর কাছে গিয়ে চকলেট এগিয়ে দিয়ে বললাম, “এই নাও।”

সুচিত্রা বললো, “প্যাকেট ছিঁড়ে দাও।” এইটা ছোট্ট একটা আবদার তাও ভালোবাসার আবদার।


 

Comments

    Please login to post comment. Login