সময় তখনও আপেক্ষিকতায় বাঁধা পড়েন নি।
ফার্ন, এলম, পাইনের বনে গোপনে গোপনে
অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো হয়নি উদয়।
যুদ্ধে যাবার আগে কোনো পিতা নিজের সদ্য কৈশোরের কিশর পরা
সন্তানের হাতে কালাশনিকভ দেননি তুলে;
মৃত্যুদানের পথ আরও মসৃণ করবার দ্ব্যর্থহীন দাবিতে...
পৃথিবীর জনসংখ্যা সে বছরও উর্ধ্বগামী-ই ছিল,
আর বেবুনেরা সব বৃক্ষজীবী ছিল বলেই জানতাম।
বিজ্ঞানীরা তখন নিজেদের উর্বর মগজ কাজে লাগাতেন
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির স্বার্থে।
মানুষ নিজের স্বরযন্ত্র ব্যবহার করে
অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কথা ভাবতেও পারত না।
এমন এক সংকটহীন সময়ে
তোমাকে দেখেছিলাম স্বচ্ছ সাদা এক ঝিলের ধারে...
আমি মধ্যবয়স্ক সেসময় (কিছুটা ছাড়ে যুবকও যায় বলা।)
আংশিক অন্ধ চোখজোড়া এবং চতুর চশমার মিথস্ক্রিয়ায়
মগজে তোমার অবয়র এলো আবছা-
শরীরে জড়ানো ছিল সাধারণ কিছু।
পাশের গায়ের কোনও গোঁয়ার রাখালের মেয়ে কিবা বোন তুমি ছিলে?
মানবিক ওই মুখচ্ছবি সাগ্রহে জরিপ করতে করতে ভাবছি,
আফ্রোদিতির দ্যুতি এরচেয়ে বেশী ছিল কিনা।
আচমকা থেমে গেল চোখ-
যেন গ্যালাপাগোস এসে গেছে বলে
উদ্যত নোঙর নিয়ে প্রস্তুত বীগল।দেখলাম,
একটামাত্র ক্ষত ঈশ্বরের শিল্পকর্ম করে নস্যাৎ,
তোমার ঠোঁটের নিচে করে আছে বসতি স্থাপন।
সেদিন বাড়িতে ফিরতেই রেডিও কেঁদে উঠল, 'ফার্দিনান্দ হয়েছেন গত'।
তারপর পৃথিবী প্রথমবার আত্মহত্যার চেষ্টা করল এবং আরও অনেক কিছু।
ইতিহাস আমার প্রিয় ছিল না কখনো।
তোমাকে দেখিনি কতদিন! মাঝে মাঝে একটি নিখুঁত ক্ষত সমেত তোমার মুখ
ধরা দিত হ্যালুসিনেশনে।একদিন আমি...এক অশীতিপর
থুত্থুরে বৃদ্ধ (কিছুটা ছাড়ে মৃতও যায় বলা।) হাঁটছিলাম পিচ ঢালা পথে...
একটা ভিখারীনির মৃতদেহ দেখলাম।
অর্ধনগ্ন।উপুড় হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়।
ভেঙে গেছে চোয়ালের হাড়।
সারাদেহে কুষ্ঠরোগের দগদগে ক্ষত থেকে ব্যাথার তরল প্রবাহমান।
প্রযুক্তির কোনো চারপেয়ে উন্নয়নপুত্র পিষে দিয়ে গেছে কৃশকায় দেহ...
কিছুটা খারাপ লাগল বেচারার জন্য।
বাড়ি ফিরতেই টেলিভিশনের প্রলাপ শুনতে হলো আবারও,
'হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা সম্পন্ন।'
বুঝলাম, কুষ্ঠরোগীর সাথে আমার আছে পূর্বপরিচয়।
টেলিভিশনটা একঘেঁয়ে স্বরে চেঁচাচ্ছিল,
আমি নিজের যান্ত্রিক পায়ে ভর দেওয়ার কয়েক সেকেন্ড পর পর্যন্ত....
তারপর মানবজাতির আত্মহত্যার শেষ অস্ত্রের সাথে পরিচিত হয়ে আমি শুতে গেলাম।
ইদানিং নিয়ম করে ঘুমোতে হয় খুব।পৃথিবীরও ঘুমোবার সময় এসেছে...