পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-১০)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস ) 
*পার্থসারথি
পর্ব-১০  
তারপর এগিয়ে আসে রুচিরার কাছাকাছি। এরই মধ্যে মেয়েটা নিজেকে কিছুটা প্রস্তত করে নেয়। মুখমন্ডল কিছুটা শক্ত করে ফেলেছে। কাছে এসেই বলে- কী বলবেন বলুন। 
রুচিরা রাগত অথচ শান্ত কণ্ঠে বলে- আপনি বিকেল যে কমেন্টসগুলো করলেন তা কিন্তু ভীষণ রকম অপরাধ। 
আমিতো আপনাকে চিনিই না। কখন আবার কী বললাম।- মেয়েটি অবাক হওয়ার ভান করে বলে। 
রুচিরা রাগতঃ কন্ঠেই বলে এবার- আমি তাহলে ভুল শুনলাম! 
সেটা আপনার সমস্যা। আমি আপনাকে অনর্থক কিছু বলতে যাবো কেন? 
দেখুন, একদম মিথ্যা বলবেন না। 
মেয়েটির অস্বীকার করার চেষ্টা- আমি আপনাকে কিছুই বলিনি। 
যদি স্বীকার করার সাহস-ই না থাকে তবে অনর্থক কথা বলেন কেন?- রুচরিা বশে রাগ করেই চোখ রাঙিয়ে বলে। 
বললাম তো আপনাকে আমি কিছুই বলিনি।- মেয়েটি এবার চোখ রাঙিয়ে বলার চেষ্টা করে। 
রুচিরা চোখ গরম করে বলে- আমাকে বলেননি? আশেপাশে তো আর অন্য কেউ ছিল না। 
দেখুন বারবার এক কথা বলবেন না। বললাম তো আপনাকে আমি কিছুই বলিনি। 
র্তকাতর্কি শুনে রুমের অন্যান্যারা এগিয়ে এল। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। রুচিরা এবার আঙুল উঁচিয়ে বলে- স্বীকার যখন করছেন না তাই কিছু বললাম না। নইলে টের পাইয়ে দিতাম। 
এবার মেয়েটা উত্তেজিত হয়ে বলে- বলেছি, কী করবেন আপনি? 
রুচিরা হাত বাগিয়ে এগিয়ে যায় মেয়েটির দিকে। অন্য মেয়েরা সবাই মিলে ফিরিয়ে রাখে। পারমিতাও রুচিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে- শান্ত হোন রুচিদি, শান্ত হোন। ওই মেয়েটাও গরম হতে যায় কিন্তু পরক্ষণই শান্ত হয়। 
মেয়েগুলোর মধ্যে একজন বলে- ঘটনা কী হয়েছে আগে ভালো করে জানি, তারপর সমাধান করা যাবে। দিদি ভেতরে আসুন। 
রুমে ঢুকতেই রুচিরাকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিল। চেয়ারে বসেই রুচিরা মেয়েটিকে বল- আপনি আমাকে কতটুকু চেনেন বা জানেন? 
মেয়েটা এবার চুপচাপ। 
কারও সম্পর্কে কিছু বলতে হলে আগে জেনে নিন ওই ব্যক্তিকে । শুনবেন আর বিশ্বাস করবেন এটা কিন্তু ঠিক নয়। রুচিরার কণ্ঠে হালকা রাগ ছড়িয়ে পড়ল। 
মেয়েটি একপলক তাকিয়েই আবার চুপচাপ। 
হ্যাঁ আছে, কিছু মেয়ে আছে যে হোটেলে যায়। আচ্ছা ধরুন আমিই যাই। কথাটা শুনে মেয়েটা রুচিরার দিকে আশ্চর্য দৃষ্টি নিয়ে ফিরে তাকায়। 
রুচিরা বলে চলে- আমি যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি বা কেন বাধ্য হলাম এ জঘন্য কাজে যেতে সেটি কী কোনদিন জানতে চেয়েছেন কারও কাছে? উত্তরের অপেক্ষা না করে রুচিরা নিজেই উত্তর দেন- অবশ্যই করেননি। শুধু শুনেছেন আর সেই ধারণাটাই চাপিয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক কোন দায়িত্ববোধ কি আপনার নেই? 
অবনত হয়েই মেয়েটি নখে বিছানার চাদর খুটছে। রুমের ভেতর কারও মখে টু শব্দটি নেই। পিনপতন নীরবতা ভেঙে রুচিরা বলে- প্রতিটি মেয়েই তার সম্ভ্রমকে জীবনের পরম সম্পদ ভাবে। সুস্থ জীবন থাকতে এই সম্ভ্রম কেউ হারাতে চায় না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেভেলে যারা আসে তারা নিশ্চয়ই ইম্ম্যাচিউরড নয়। তারা নিজেদের ভালো-মন্দ বোঝে। যদি কিছু বলার ইচ্ছেই হয় তবে ওদের সাথে সরাসরি কথা বলেন। জানতে চেষ্টা করেন, এটা আপনার সামাজিক দায়িত্ব। 
মেয়েটি এবার বিনম্র দৃষ্টিতে তাকায় এবং বলে- সরি দিদি, এমনটি আর কখনও হবে না। 
রুচিরা চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে মেয়েটির পিঠে হাত রেখে বলে- ভুল তো মানুষেরই হয়। আর শোন আমি আড়ংয়ে পার্ট-টাইম চাকরি করি। টাকার দরকার তাই আমাকে চাকরিটা করতেই হয়। 
মেয়েটি এবার রুচিরাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদু কাঁদু কণ্ঠে বলে- আমার ভুল হয়ে গেছে দিদি, আমাকে ক্ষমা করে দিন। 
মেয়েটিকে বুকে টেনে নিয়ে রুচিরা বলে- ঠিক আছে, তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ সেটাই যথেষ্ট। একথা শেষে রুচিরা পারমিতাকে ডেকে বলে- পারমিতা উঠ, যাওয়া যাক।- এই বলে দরজার দিকে পা বাড়ায় রুচিরা। পিছু পিছু পারমিতা। মেয়েটিও এগিয়ে আসে। তারপর বলে- দিদি, আবার আসবেন কিন্তু। 
রুচিরা মিষ্টি হাসি হেঁসে সামনে পা বাড়ায়। 
*
সৈকত স্নান শেষে তোয়ালেতে মাথা মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে। রুমের ভেতর কয়েক কদম ফেলতেই হঠাৎ চোখ পড়ে পারমিতা ও রুচিরার ওপর। সৈকত আর্শ্চয হয়ে মুহূর্ত সময় থমকে দাঁড়ায়। খালি গা-টুকু তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নেয়। তারপর কাছে এগিয়ে এসে সৈকত বলে- কী ব্যাপার রুচিদি হঠাৎ এভাবে এলেন যে? কথাগুলো রুচিরাকে বললেও পারমিতার দিকেও এক পলক তাকায়। 
রুচিরা কিছুই বলে না। মিটিমিটি হাসে। রুচিরার হাসি পারমিতার মাঝেও ছড়ায়। পারমিতা এই প্রথম কোন ছেলে হলে এল। বেশ আড়ষ্টভাব জড়িয়ে আছে ওর মাঝে। সৈকত এক ফাঁকে ভেজা লুঙ্গিটা রোদে ছড়িয়ে দিয়ে আসে। তারপর একটা শার্ট গায়ে জড়িয়ে চেয়ার টেনে কাছাকাছি হয়ে বসল। সৈকত তাকিয়ে আছে রুচিরার দিকে কিছু একটা শুনবার প্রত্যাশায়। রুচিরা কিছুক্ষণ রহস্য করল। সৈকত তো তাকিয়েই আছে; আঁড়াচোখে তাকাতেই পারমিতার চোরা দৃষ্টি ধরা পড়লো।পারমিতা গুটিয়ে গেল লজ্জায়। 
রুচিরার দু’চোখ ঘরময় ঘুরে ঘুরে এসে বলল, তোমরা ছেলেরা এত অগোছালো থাক কেন?- এই বলে- দেয়ালের কোণায় কোণায় জমে থাকা মাকড়সার ঝুল, আলনায় পড়ে থাকা এলোমেলোভাবে জামা কাপড়ের ওপর থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে আসে বিছানায় ওপর। রুচিরা আবার বলে- এসব পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রেখো।রুচিরা উঠে দাঁড়ায়, তারপর বলে- পারমিতা বিছানাটা একটু গোছগাছ করে দাওতো। 
রুচিরার কথায় পারমিতার চোখ-মুখ রক্তবর্ণ হয়ে গেল। পারমিতা বিছানায় হাত দিতেই সৈকত ‘না, না ’ বলে পারমিতাকে ফেরাতে যায়। রুচিরা হালকা ধমকের সুরে বলে- সৈকত সরে দাঁড়াও। বিছানাটা একটু গুছিয়ে দিক। 
রুচিরার কথামত সৈকত একটু সরে দাঁড়ায়। পারমিতা বিছানা গোছাতে থাকে। 
রুচিরার শেষ কথাটায় অনিকের ঘুমের রেশটা কেটে যায়। সে ফিরে তাকায়। রুচিরার চোখে চোখ পড়ে। রুচিরাই প্রথমে কথা বলে- সরি অনিক তোমার ঘুমে ডিস্টার্ব করলাম বলে। 
অনিক ঘুম জুড়ানো চোখেই উঠে বসে এবং বলে- না, না কোন অসুবিধা হয়নি। এখনই উঠতাম। কখন এসেছেন? একদমই টের পাইনি। তারপর পারমিতার দিকে তাকিয়ে অনিক বলে- কেমন আছেন? 
পারমতিা বলে- আমি ভালো আছি। আপনার তো আর দেখাই পেলাম না।
 
চলবে...

লেখক সম্পর্কে

পার্থসারথি পার্থসারথি লেখক