পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-১৫)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের ধারাবাহিক  উপন্যাস )
*পার্থসারথি
পর্ব- ১৫ 
শত হলেও পাবলিক বিষয়। ওই লোকটা এসে পৌঁছায় আগ মূহূর্ত পর্যন্ত সৈকত শুধু উচ্চারণ করলে- ‘আই লাভ ইউ, পারমিতা। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ।' 
পারমিতা শুধু চুপচাপ শুনেই গেল। আর ভেতরে ভেতরে হাসির দমকা হাওয়া; সুযোগটা পেয়ে সৈকত বেশ করল। 
লোকটা কাছকাছি আসতেই সৈকত বলে- ‘তাহলে ক্লিনিকেই আসছি। রাখি!- এই বলে হালকা একটা চুমো বসায় রিসিভারে। রিসিভার রেখে পারমিতা একা একা হাসে। 
*
সপ্তাহ শেষে ক্লিনিক থেকে দিদি ফিরে আসে। মা এবং সন্তান দু’জনই বেশ সুস্থ। ওরা আসার পর থেকেই বাসায় আনন্দের বন্যা বইয়ে চলছে। মা প্রভাময়ী দেবী সবসময় মেয়ে ও নাতনীর কাছে বসে থাকেন। পারমিতা এবার একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু অভীক মজুমদারের বিষন্ন প্রহর কাটে। কেউ তা খেয়াল না করলেও পারমিতা ঠিকই খেয়াল করেছে। আবার পরক্ষণই ভেবেছে, হয়তো ধকলটা শরীরে একটু বেশি গিয়েছে তাই এমন দেখাচ্ছে। তবুও মনের ভেতরে কিছু অনির্দিষ্ট প্রশ্ন আনাগোনা করে। কারণ স্ত্রী এবং সন্তান দু’জনই সুস্থ আছে, দাদাবাবুর মনটাতো প্রফুল্ল থাকার কথা। নাকি মেয়ে হয়েছে বলে সন্তষ্ট নন। পারমিতা প্রশ্নটা আর মনের ভেতর লুকিয়ে রাখতে পারেনি। দাদাবাবুকে জিজ্ঞ্যেস করায় উনি বলেন- ‘কি যে বল-না তুমি, সন্তান সন্তানই। তা ছেলে হোক আর মেয়েই হোক। আমি খুশি, খুবই খুশি।' 
পারমিতা আবার প্রশ্ন রাখে- তবে দাদাবাবু আপনাকে আমি খুব একটা খুশি হতে দেখিনি? 
এমনি , মনটা ভালো যাচ্ছে না।- অভীক মজুমদার একটু এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। 
পারমিতা এ ব্যাপার নিয়ে আর কখনও ভাবেনি। নিজস্ব ভুবনে ডুবে গেল। ঝড়ের গতিতে দশ বারোটা দিন কেটে গেল। কিন্তু অভীক মজুমদারে কাছে একটি দিন যেন একটি মিনিট মনে হচ্ছে। একটি দিনের শেষে আরেকটি দিনের আগমন বার্তায় বুকের ভেতর কষ্টগুলো হু, হু করে বেড়ে চলে। এই কষ্ট ভীষণ কষ্ট। সুদেষ্ণার আয়ু আর বড় জোর পনের থেকে বিশ দিন। এ'কথাটা অভীক মজুমদারের বুকে বিষ কাঁটা হয়ে ফুটে। অসহ্য যন্ত্রণায় অভীক মজুমদারের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে। ভেতরে ভেতরে তিনি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছেন। অথচ মুখে কোনদিন এই কষ্টের আঙিনায় কাউকে টেনে আনেননি। প্রতি রাতে শব্দহীন কান্নায় বুক ভাসান। এই যে পাশে বাচ্চাকে কোলের কাছে রেখে শুয়ে আছেন সে কিছুদিন পর আর থাকবে না। কোন দৈহিক চিহৃ এই পৃথিবীর বুকে বিচরণ করবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অভীক মজুমদারের কণ্ঠ কষ্টে রোধ হয়ে যায়। হাজার কোটি লক্ষ বৎসর কথামালা গাঁথলেও এই কথা কখনও ফুরোবে না। যে কষ্টের কোন সীমান্ত রেখা নেই, তেমনই কষ্ট বুকের গহীনে বয়ে বেড়াচ্ছেন অভীক মজুমদার একাকি। 
খুব কাছাকাছি হয়ে শুয়ে আছেন অভীক মজুমদার। কিছুক্ষণ পরপর স্ত্রীর ঘাড়ে মুখ গুজে দিচ্ছেন। স্ত্রী সুদেষ্ণা সজাগ। ভাবছেন আদরে-সোহাগে স্বামীটি হয়ত এমন করছেন। সুদেষ্ণা চুপচাপ শুয়ে আছেন। এক ফোটা অশ্রু সুদেষ্ণার ঘাড়ে গড়িয়ে পড়ে। পতিত অশ্রুর খবর অভীক মজুমদার জানে না। সুদেষ্ণার হাত পৌঁছে যায় অশ্রু ফোটায়। অবাক হয়ে ফিরে তাকান সুদেষ্ণা। স্বল্প আলোয় কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সুদেষ্ণা জিজ্ঞ্যেস করেন অভীক, তুমি এখনও ঘুমাওনি? 
কথা বলার খুব ইচ্ছে হচ্ছে অভীক মজুমদারের। কিন্তু কণ্ঠটা খুলতেই পারছেন না। কেমন যেন অসম্ভব রকম ভারী লাগছে। তাই চুপচাপ শুয়ে আছেন। আর সুদেষ্ণাকে আরও জড়িয়ে ধরেন। এক সময় নিজেকে আর সামলাতে পারেন না অভীক মজুমদার। ডুকরে কেঁদে ওঠেন। সুদেষ্ণা হতবাক হয়ে যান। পরম আদরে অভীক মজুমদারকে বুকের মধ্যে টেনে নেন। তারপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সুদেষ্ণা জিজ্ঞ্যেস করেন- তোমার কী হয়েছে অভীক? 
অভীক মজুমদার কান্না থামাতে পারছেন না। বাঁধ-ভাঙা স্রোতের মতো কান্নার ঢেউ বেরিয়ে আসছে। 
অভীক, অভীক শান্ত হও। তোমার কী হয়েছে আমাকে বল। এত কষ্ট তুমি বুকের মধ্যে নিয়ে বেড়াচ্ছ অথচ আমাকে কিছুই জানাওনি। 
অভীক মজুমদার কথা বলতে পারছেন না। পাশের রুমে পারমিতা একা শুয়েছে। লেখাপড়া করে কিছুক্ষণ আগেই মাত্র শুয়েছে। তন্দ্রাভাব এসে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কান্নার শব্দ কানে পৌঁছতেই উঠে বসল। কান দুটো সর্তক করে বিছানায় বসে রইল। এবার স্পষ্টই শুনতে পেল, দাদাবাবু ডুকরে ডুকরে বাচ্চাদের মত কাঁদছেন। পারমিতার তো হতবিহ্বল অবস্থা। এগিয়ে যেতে পারছে না বলে পারমিতার আরও কষ্ট হচ্ছে। হাঁটুতে মাথা গুজেঁ চুপচাপ বসে রইল। কিছুক্ষণ পরই কান্না থেমে গেল। 
খুব কষ্ট করে অভীক মজুমদার নিজেকে সামলালেন। অবশ্য ভেতর জগতটা বিরানভূমি; ভীষণ রকম হাহাকার ওলটপালট করে দিচ্ছে। সুদেষ্ণাকে জড়িয়ে থেকে অনকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকেন। তারপর কষ্টের নিঃসীম সীমানা পেরিয়ে উচ্চারণ করেন- সুদেষ্ণা! আমি কি তোমাকে কোনরকম কষ্ট দিয়েছি?
সুদেষ্ণা বেশ কিছুটা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন- এতরাতে হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছ? আমি তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেছি কি? 
না। 
তাহলে? 
আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে। 
তুমি শুধু শুধু আমাকে দুঃখ দিতে যাবে কেন? 
আমার মত সুখী মেয়ে কয়টা আছে? মেঘাচ্ছন্ন আকাশের এক চিলতে রোদের মত উজ্জল আভা জড়িয়ে যায় অভীক মজুমদারে মুখমন্ডলে। অবশ্য সুদেষ্ণা তা বুঝতে পারেনি। অভীক মজুমদার ভালোলাগাটুকু শুধু অনুভব করলেন। তারপর বলেন- তুমি সত্যি বলছ তো? 
তোমার সাথে আমি কখনও মিথ্যা বলেছি? 
প্রসঙ্গে পাল্টে অভীক মজুমদার বলেন- এই ক'টা দিন তোমার শরীরে ওপর ঝড় বয়ে গেল। সত্যি খুব কষ্ট হয়, তোমরা মেয়েরা খুব কষ্ট সহ্য করতে পার। 
তোমার ভালোবাসার কাছে এসব তুচ্ছ।- সুদেষ্ণা স্বামীর বুকে সোহাগ ঢেলে বলেন। 
তুমি এত ভালো কেন সুদেষ্ণা? কণ্ঠস্বরটা আবার অসম্ভব রকম কেঁপে ওঠে। অভীক মজুমদার কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন- আই লাভ ইউ, সুদেষ্ণা, আই লাভ ইউ ! আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। 
কেন, আমি কি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি নাকি? এসব কি বলছো?- সুদেষ্ণা খুবই অবাক হয়।
অভীক মজুমদার চুপচাপ । সুদেষ্ণা শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছেন; অভীক এ'রকম আচরণ করছে কেন?
 
চলবে... 

লেখক সম্পর্কে

পার্থসারথি পার্থসারথি লেখক