পোস্টস

ভ্রমণ

Twenty Thousand League Under The Sea

১৬ জুন ২০২৪

Hasan Mehedi

মূল লেখক Jules Verne

অনুবাদক মেহেদী হাসান

#Twenty_Thousand_Leagues_Under_The_Sea

#part_1

সাল ১৮৬৭।  নড়েচড়ে বসেছে পুরো বিশ্ব। একের পর এক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সমুদ্রগামী জাহাজ। আন্তঃমহাসাগরীয় জলপথে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে রহস্যময় এক সাগরদানব। গুজবের ডালপালা উপকূলবর্তী সাধারণ অধিবাসী কিংবা মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের দারুণভাবে আলোড়িত করলেও এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে পেশাদার সি-ম্যানদের ওপর। বণিক, জাহাজমালিক, জাহাজের কাপ্তান থেকে শুরু করে ইউরোপ আমেরিকার মাস্টার মেরিনার আর বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেভাল অফিসাররা পুরো ব্যাপারটায় ভয়ানক বিব্রত, হতচকিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চুরুটাকৃতির রহস্যময় এই দানবের গা থেকে ঠিকরে বেরোয় জ্বলজ্বলে আভা। বিশালাকৃতির তিমির চেয়েও এটি বহুগুন বড় আর অকল্পনীয় দ্রুতগতি সম্পন্ন। লোকজনের মুখে মুখে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এর আকার-আকৃতি। এক সময় এই আজব জিনিসটির আকৃতি দাঁড়াল প্রস্থে মাইল খানেক আর দৈর্ঘ্যে তার তিনগুন। জনমতের চাপে রহস্যময় এই নারহোয়েলের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নিল দি স্টেটস অব দ্য ইউনিয়নের দ্রুতগতির #ফ্রিগেট_দি_আব্রাহাম_লিঙ্কন। 
নৌবাহিনীর অস্ত্রাগার খুলে দেয়া হল। কমান্ডার ফ্যারাগুট নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তার ফ্রিগেটকে নারহোয়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অস্ত্রসজ্জিত করতে। অভিযানের আমন্ত্রণ পেয়ে নিজের কর্ম সহায়ক #কনসিলকে নিয়ে জাহাজে হাজির হলেন ফরাসি প্রকৃতিবিদ প্রোফেসর #পিয়েরে_অ্যারোন্যাক্স। সাথে যোগ দিল দুর্ধর্ষ কানাডিয়ান হার্পুনার #নেড_ল্যাণ্ড। শিকারের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করল দি আব্রাহাম লিঙ্কন। কিন্তু শিকারি নিজেই পরিণত হল শিকারে। রহস্যময় জাহাজ নটিলাসে আশ্রয় মিলল প্রফেসর অ্যারোন্যাক্স, কনসিল আর নেড ল্যান্ডের। সেই সাথে সাক্ষি হয়ে রইলো রহস্যময় ক্যাপ্টেন নিমোর সঙ্গী হিসেবে সাগরতলে বিশ হাজার লিগ পরিভ্রমণের এক ঐতিহাসিক ঘটনার।

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, আপনারাও হতে যাচ্ছেন নতুন এক ইতিহাসের অংশ।

#অভিযান_শুরু

নিউইয়র্কে পা দিতে না দিতেই অনেকেই অত্যুগ্র আগ্রহী হ'ল প্রসঙ্গটা নিয়ে আমারসঙ্গে কথাবার্তা বলতে।গোড়াতেই আমি সতর্কতার সঙ্গে ব্যাপারটা সম্বন্ধে উদাসীন থাকলেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে ব্যাপারটা সম্পর্কে মুখ না খুলে পারলাম না।

নিউইয়র্কেরবিখ্যাত হ্যারল্ড পত্রিকা ও প্যারিস মিউজিয়ামের অধ্যাপক অ্যারোনাক্স আমাকে অনুরোধ করে বসল।হেরল্ড পত্রিকার ত্রিশে এপ্রিল সংখ্যায় ব্যাপারটা সম্বন্ধে আমার সুচিন্তিত ওসারগর্ভ বক্তব্য সম্বলিত প্রবন্ধ প্রকাশিত হ'ল। তাতে আমি ব্যক্ত করলাম,

""অতিকায়কোন জলজ প্রাণী সমুদ্রবক্ষে অবস্থান করছে। সমুদ্রের গভীরে, বারো কি পনেরমাইল জলের তলায় কোন্ কোন্ সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে তা আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি বহির্ভূত। আর আমাদের জৈবিক ক্রিয়া সম্বন্ধেও আমরা একেবারেই অজ্ঞ।ব্যাপারটা দুঃসাধ্যও বটে। সমস্যা থেকে উতরোনোর উপযোগী ও নির্ভরযোগ্য যেক'টা সূত্র পাওয়া গেছে তা থেকে কেবল মাত্র অনুমান করা ছাড়া আর কোন উপায়নেই। এখন জিজ্ঞাস্য যে, আমাদের যাবতীয় প্রাণীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় রয়েছে কিনা? সবার আগে আমাদের খোঁজ নিতে হবে মৎস্য-বিজ্ঞানের বহির্ভূত কোন জলচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে কিনা। যদি পাওয়াই যায় তবে মেনে নিতেই হবে সেটাসমুদ্রের তলদেশে বসবাস কারী অজ্ঞাত প্রাণী। আর কখনো সখনো খেয়াল বশতঃসমুদ্রের উপরিতলে ভুস করে ভেসে উঠে ও ভেসে বেড়ায়। নইলে অতিকায় দাঁতযুক্ত দৈত্যাকৃতি কোন তিমি। এরা খুব বড় হলে ষাট ফুট মত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়। যদি তাদের কারো আকার পাঁচ থেকে দশগুন বেড়ে যায় তবে এমন দৈত্যাকৃতি অমিতশক্তির অধিকারী আবারও একটা সামুদ্রিক প্রাণী আমাদের নজরে পড়বে।অতিকায় দাঁত দুটোকে তিমিরা অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করে। জাহাজের গায়ে তাদের দাঁত গেঁথে থাকতে দেখা গেছে। এমন ঘটনার বহু নজির রয়েছে। পনের ইঞ্চিপরিধি বিশিষ্ট আক্রমণাত্মক, অস্ত্র প্যারিসের চিকিৎসা বিভাগের মিউজিয়ামে সযত্নেসংরক্ষিত হচ্ছে ""।

পত্রিকার পাতায় আমার প্রবন্ধটা ছাপা হওয়া মাত্র সমুদ্রযাত্রীদের মধ্যে বিশেষভীতির সঞ্চার করল। সকলে আতঙ্কে শিউরে উঠল। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোও কমভাবিত হয়ে পড়ে নি। তবে নৌ-বিমার পরিমান বৃদ্ধি করার নোটিশ দেওয়া হ'ল।আমেরিকার উপকুলবর্তী সমুদ্রবক্ষ থেকে জমাট-বাঁধা আতঙ্কের অবসান ঘটাতেবিশালায়তন জাহাজ আব্রাহাম লিঙ্কনের উপর দায়িত্বভার অর্পণ করা হবে মনস্থ করাহ'ল।দ্রুতগতি ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজটাকে যুদ্ধের সাজে সাজিয়ে তুলতে সাধ্যমত ব্যবস্থা নেওয়া হ'ল।

আশ্চর্য ব্যাপার! আব্রাহাম লিঙ্কন যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হওয়ার পর আর রহস্য আতঙ্ক সৃষ্টিকারী অতিকায় সামুদ্রিক প্রাণীটার  নাগালও পাওয়া গেল না।

হতচ্ছাড়া প্রাণীটা হঠাৎ গা-ঢাকা দেওয়ার ফলে আমাদের দু'মাসের উদ্যোগআয়োজন বৃথা গেল।

আব্রাহাম লিঙ্কন যাত্রা করার ঠিক তিনঘন্টা পরে লেখা একটা চিঠি আমার হাতেএল। নৌ-বিভাগের সেক্রেটারী জে. বি. হবসন চিঠিটার লেখক। চিঠিতে তিনিআমাকে অনুরোধ জানিয়েছেন, আমি আব্রাহাম লিঙ্কনের দুঃসাহসিক অভিযানের সঙ্গীহলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ আনন্দিত হবে।

চিঠিটা হাতে পাওয়ার পর আমি ব্যাপারটা নিয়ে বিশেষ কৌতূহলী ও আগ্রহাম্মিত হয়ে পড়লাম। এর আগে এটা নিয়ে আমার সামান্যতম আগ্রহও ছিল না।আমার বয়স তখন বছর চল্লিশেক। আর আমার সর্বক্ষনের সঙ্গী কলসিন কে নিতে ভুললাম না। তার বয়স মাত্র ত্রিশের কাছাকাছি । এর আগেকঙ্গো ও চীন প্রভৃতি দেশে যখনই গেছি তখন ওর বুদ্ধি পরামর্শ আমার কাজেরবিশেষ সহায়ক হয়েছে। এবার আমার অভিযান অবশ্য স্বতন্ত্র ধরনের। আমার প্রস্তাবশোনার পরই সে সোৎসাহে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়ার কাজে মেতে গেল।

জাহাজ ঘাটে আমাদের স্বাগত জানাতে ক্যাপ্টেন ফ্যারাগুট জাহাজের দরজায়দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি মুচকি হেসে আমাকে স্বাগত-সম্ভাষণ জানিয়ে আমার জন্যরক্ষিত সুসজ্জিত ক্যাবিনে আমাকে নিয়ে গেলেন।

বিশালায়তন জাহাজটা সত্যিই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন। ঘন্টায় প্রায় আঠার মাইলবেগে ছুটতে পারে। তবে দ্রুতগতি সম্পন্ন সামুদ্রিক প্রাণীটার তুলনায় এর গতি বেগখুবই নগণ্য।
ক্যাপ্টেন ফ্যারাগুট খালাসীদের জাহাজের নোঙর তোলার নির্দেশ দিলেন।বিশালায়তন যুদ্ধ জাহাজ আব্রাহাম লিঙ্কন সমুদ্র তোলপাড় করে দ্রুত এগিয়েচলল গভীর সমুদ্রের দিকে। জাহাজের গতিবেগ ক্রমেই বাড়তে লাগল।ক্যাপ্টেন ফারাগুট প্রবীণ ব্যক্তি। জাহাজ চালনার ব্যাপারে তার জুড়ি পাওয়া ভার।

তার দৃঢ় বিশ্বাস, সমুদ্রের বুকে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী অতিকায় সামুদ্রিক প্রাণীই সমুদ্রযাত্রীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। এর বিরুদ্ধে মন্তব্য কারীদের তিনি মোটেই বরদাস্ত করতে পারেন না। আর তাঁর মনে এ আশঙ্কাও রয়েছে অতিকায় সে প্রাণীটাকে ধরতে গিয়ে তাদের বিপদাপন্ন হওয়াও কিছুমাত্র বিচিত্র নয়। যা-ই ঘটুকনা কেন তাকে তিনি যে করেই হোক ধরবেনই।

জাহাজের অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ অতিকায় জন্তুটাকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য শক্তিশালী দূরবীণ চোখে লাগিয়ে সমুদ্র বক্ষের ওপরে চঞ্চল চোখের মনিগুলোকে বারবার ঘোরাতে লাগল।এর কারণও রয়েছে যথেষ্টই। জাহাজের ক্যাপ্টেন ঘোষণা করেছিলেন, যে সবার আগে রহস্য সঞ্চারকারী অতিকায় সামুদ্রিক প্রাণীটাকে দেখতে পাবে তাকে পুরস্কারস্বরুপ দু'হাজার ডলার দেবেন। তাই তো জাহাজের অনেকেই দূরবীণ চোখে লাগিয়ে বাঞ্ছিত সে প্রাণীটাকে খুঁজে বের করার তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।