পোস্টস

ভ্রমণ

ভ্রমন ৩

১৬ জুন ২০২৪

মাসুদ হোসেন

মূল লেখক মাসুদ হোসেন

গাজীপুর খান স্কুল এন্ড কলেজের আইসিটি শিক্ষক মো. ফারুক আহমেদ স্যার বলেন, স্যার সরকার সম্ভবত আগামীমাসে স্কুল খুলে দিবে। আমরা আর সময় পাবো না তাই আরেকটি নদীপথে ট্যুর করি। এবার আমরা যাব স্বপ্নদীপে। আমি বললাম, এটা আবার কোথায়? ফারুক স্যার বলল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি নতুন দ্বীপ। খুব সুন্দর করে গড়ে তোলেছেন। আমরা একটি লঞ্চ ভাড়া করব। লঞ্চের উপরে চেয়ার বসে গল্প করবেন, ভাল না লাগলে শুয়ে ঘুমাবেন, বৃষ্টি আসলে নিচে চলে যাবেন। ইচ্ছে করলে তাস খেলবেন।
আমি আমাদের তিতাস উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা আইসিটি কমিটির ফেইসবুকগ্রুপে স্বপ্নদ্বীপের ভ্রমণের যাওয়ার ঘোষণা দিলাম এবং আমাদের সাথে অন্যান্য শিক্ষকদের যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ৩৫জন শিক্ষক স্বপ্নদ্বীপে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজী হল।
ফারুক স্যার এবং শাহ্‌ আলম স্যার ৩৫জন শিক্ষকের খাবার আয়োজন করেছেন। সকালের নাস্তা, দুপুরের ভাত, মাংস, মাছ, মুরগী, সবজি, ডাল ইত্যাদি এবং বিকেলে আবার একটু হালকা খাবার (কপি/চা/সফট ড্রিংস)।
১৬ আগস্ট ২০২১ তারিখ বিকেলেই হোমনা থেকে ময়ূরপঙ্খী নামে একটি লঞ্চ নিয়ে আসলেন লালপুর নকরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘাটে। ১৭ তারিখ সকাল সাতটা ত্রিশ মিনিটে আমরা গৌরিপুর ব্রিজ থেকে ময়ূরপঙ্খী লঞ্চে উঠলাম। লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. মামুনুর রশীদ, মৌটুপী দাখিল মাদ্রাসার হযরত আলী, লালপুর নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. কবির হোসেন, জিয়ারকান্দি আলিম মাদ্রাসার মো. সোহেল মিয়া, গাজীপুর খান মডেল সরকারি স্কুল এন্ড কলেজের শাহাদাৎ হোসেন মানিক এবং আরো দুজন সহকার্মী, কেশবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাওলানা বিল্লাল হোসেন, মঙ্গলকান্দি ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং তিতাস উপজেলা আইসিটি কমিটির সভাপতি মাওলানা নুরুল আমিনসহ আমরা মোট ২০জন শিক্ষক হলাম। আমাদের আর পনেরজন শিক্ষক বিভিন্ন কারণে আসে নাই। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যাবে আর খাবার অবচয় হবে।
আমরা গৌরিপুর ব্রিজ নিচ থেকে ময়ূরপঙ্খী লঞ্চে উঠে লালপুর ঘাট থেকে আমরা খাবার তুলে নিলাম। একটু হালকা বৃষ্টি পড়ছে। আমরা লঞ্চের নিচে বসে বিভিন্ন গল্প করলাম। একটু পরেই দাউদকান্দির ঢাকা-চট্রগ্রাম রোডের ব্রিজের নিচে চলে আসলাম। এখানে বৃষ্টির লোকোচুরি দেখলাম। একপাশে বৃষ্টি পরে আরেক পাশে বৃষ্টি নাই। আকাশের রোদ-বৃষ্টি লোকোচুরির পর আকাশ পরিস্কার হয়েছে। রোদ্র যখন প্রখর হল তখন শাহ্‌ আলম স্যার সবাইকে শশা খেতে দিলেন। রোদ্র, বাতাস এবং দুপাশের গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য আমরা রোদ্রের প্রখড়তা লক্ষ্য করিনি।
স্বপ্নদ্বীপে যাওয়ার পথে কালাপাহাড়িয়া দ্বীপ চোখে পড়ল। কালাপাহাড়িয়া গ্রামের নামেই এই দ্বীপের নাম কালাপাহাড়িয়া। ইহা আড়াইহাজার উপজেলায় অবস্থিত। কালাপাহাড়িয়ার গোরুর পাল চোখে পড়ার মত। দূর থেকে আমাদের লঞ্চ থেকে দেখতে গোরুর পাল খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। আমরা বাড়ি ফেয়ারা পথে কালাপাহাড়িয়া নামবো বলে ফারুক সাহেব সবাইকে জানিয়ে দিল।
যোহর নামাজের সময় আমরা স্বপ্নদ্বীপে উপস্থিত হলাম। ইহা চরশিবপুর, ব্রাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত। স্বপ্নদ্বীপের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সবার টিকেট নিলাম। স্বপ্নদ্বীপের এন্ট্রি ফি মাত্র ৩০ টাকা। পর্যটন স্পট খুললেই স্বপ্নদ্বীপ এ চলে আসুন একটা ভাল সময় কাটাতে।মেঘনা নদীর ঢেউয়ের নাচন, সবুজ প্রকৃতি আর শো শো বাতাসে মন জুড়াতে স্বপ্নদ্বীপের বিকল্প নেই। সবার প্রবেশ ফি দিলেন আইসিটি কমিটির সভাপতি মাওলানা নুরুল আমিন স্যার। স্বপ্নদ্বীপে টিনের ঘরের মসজিদ আছে। আমরা সবাই মসজিদে যোহরের নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ার পর আমার দুপুরের খানা খেতে আবার লঞ্চে উঠলাম। ঘরোয়া পরিবাশে দুপুরের খানা খেলাম।
খানা খেয়ে নেমে পড়লাম স্বপ্নদীপে। উত্তর পূর্ব পাশে জঙ্গলের মাঝে মাঝে নতুন গাছপালা রোপন করেছে। এই দ্বীপের পর্যটন বয়স মাত্র চার বছর। দ্বীপের চারপাশে বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছেন। প্রাকৃতিকভাবে ঢোল-কলমীর গাছে প্রাকৃতিক বেড়া তৈরি হয়েছে। মাঝখানে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নাগরদোলা, ম্যাজিক নৌকা, ঘোড় ইত্যাদি রাইডার আছে। আছে পুকুরে নৌভ্রমনের ব্যবস্থা। দুটি খেলার মাঠ আছে। একটি ছোট পাহাড় আছে যা ওয়াচ-টাওয়ার হিসেবে কাজ করে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আশের পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দার্যাবলী অবলোকন করা যায়।
আমি আর গৌরাঙ্গ স্যার হাটতে হাটতে বিল্লাল স্যার এবং মাওলানা নুরুল আমিন স্যারকে পেলাম। চারজনে মিলে লাচ্ছি খেলাম। এখানে পাওয়া যায় চমৎকার স্বাদের হট কফি এবং কোল্ড কফি। স্বপ্নদ্বীপ ঘুরাঘুরি করার ফাকে নিজেকে আরও চাঙ্গা করতে স্বপ্নদ্বীপ কফি হাইসে পাচ্ছেন মজাদার কোল্ড কফি, হট কফি, লাচ্ছ, চটপটি অথবা ফোসকা সহ নানা ধরনের স্ন্যাক্স অথবা ড্রিংস।
আছে সুন্দর সুন্দর ছোট ছোট ঘর বা মাচার উপরে স্থাপিত। বাড়া এক রাত মাত্র ১৫০০টাকা। দিনেও বিশ্রামের ব্যবস্থা। ঘোড়ায় চড়ে স্বপ্নদ্বীপের মাঠ ঘুড়ার ব্যবস্থা।
খেলার মাঠে গিয়ে দেখি ফুটবল খেলা চলছে। তিতাস উপজেলা বনাম নরসিংদী জেলা। আমি নেমে পড়লাম খেলায়। দৌড়া-দৌড়ি করে একটু হাপিয়ে উঠলাম। এক-শুণ্য গোলে আমরা জয়ী হলাম । ফুটবল খেলার একমাত্র গোলটি করেছেন তিতাস উপজেলার শাহাদাত হোসেন মানিক মিয়া।