ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-২৫)
১৬ জুন ২০২৪
পার্থসারথি
ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর (ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের ধারাবাহিক উপন্যাস )
*পার্থসারথি
পর্ব-২৫
পারমিতা হয়ত মাঝেমধ্যে রুচিরার কাছে আসে সৈকতকে ঘিরেই। কিন্তু সৈকত কোনরকম খোঁজখবর রাখে না। রুচিরা সবই বুঝে যে, নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে সৈকত। পারমিতা ও সৈকতের সাথে রুচিরার সম্পর্কটা সাাধারন নয়। ওদের শ্রদ্ধা মেশানো ভালোবাবা সত্যিই আবেগাপ্লুত করে তোলে রুচিরাকে। ওদের শূন্যতা এখন হৃদয়ের গভীরে অনুভব করে । ওদের ছাড়া রুচিরার খুবই একাকী সময় কাটে। অবশ্য রুচিরা নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। ক্লাস, লাইব্রেরি ওয়ার্ক, চারটা-আটটা অফিস এসবের মাঝে ডুবে থাকার চেষ্টা করে । কিন্তু শূন্যতাটুকু হঠাৎ হঠাৎ খুবই তীক্ষ্ণ হয়ে বুকে বাজে।
পারমিতা সৈকতের এখান থেকে সোজা রুচিরার রুমে চলে আসে। তারপর পারমিতা রুচিরাকে আদ্যোপান্ত বলে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে পারমিতা বলে- রুচিদি তুমি ওকে ফেরাও। তুমি ছাড়া আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।
সৈকতকে নিয়েই রুচিরা চিন্তায় মশগুল হয়। পারমিতা ভাবে, রুচিরা ওর কথাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই আবার রুচিরার হাত দুটো চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে- রুচিদি প্লিজ, তুমি ছাড়া ওকে আর কেউ ফেরাতে পারবে না। তুমি একটু দয়া কর।
শেষ কথাটায় রুচিরার টনক নড়ে। শান্ত চোখে পারমিতার দিকে তাকায়। দৃষ্টিটুকু পারমিতার ভেতর অবধি কাঁপিয়ে তোলে। কিন্তু পারমিতা কিছুই বলে না। চোখ সরিয়ে নেয়। রুচিরা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।
শান্ত গলায় ভালোবাসা জড়ানো কণ্ঠে রুচিরা বলে- আচ্ছা পারমিতা, আমি কি সৈকতকে একটু ভালোবাসি না? সৈকতের সবটুকুতে কি শুধু তোমার অধিকার?
না দিদি, আমি অমনটি ভাবিনি। আপনি সৈকতকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। সে আমি জানি। আপনার ভালোবাসা স্বার্থহীন ভালোবাসা। সৈকত আপনাকে অসীম শ্রদ্ধা করে। তাইতো আপনার কাছে ছুটে এসেছি।
পারমিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রুচিরা বলে- তুমি সৈকতকে নিয়ে কোনরকম দুঃশ্চিন্তা করো না। সব আমি দেখব। তুমি তোমার সংসার সামলিয়ে চলো। কারণ ছেলেদের মন বড় উদ্ভট প্রকৃতির। তুমি এখন বিবাহিত সেভাবেই চলাফেরা করা উচিত। জানি তুমি সৈকতকে খুবই ভালোবাস। কিন্তু এখন আর আগের মত করে ভালোবাসাটা বোকামি। কারণ সে আর তোমার কাছে আসতে চায় না। এমনকি আমাকেও এড়িয়ে চলে। এ পর্যন্ত ওকে নাগাল পর্যন্ত পেলাম না। তবে তুমি নিশ্চত থাক। আমি ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব।
পারমিতা বেশ শান্ত হয় রুচিরার আশ্বাস পেয়ে। তারপর থেকেই রুচিরা সৈকতকে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেল, ক্লাস শুরু হওয়ার পর কোন ক্লাসই করেনি সৈকত। সম্ভাব্য কয়েকটা জায়গায় খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। আগে প্রায়ই ব্যতিক্রম চত্বরে অথবা হাকিম চত্বরে বসতো। এখন এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে মনে চিন্তা করছে, প্রয়োজন হলে রুমে যতেে হবে। ব্যতিক্রম চত্বরের সামনইে অপেক্ষায় আছে যদি সৈকতের কোন বন্ধুকে পাওয়া যায় তাহলে হয়ত খোঁজ পাওয়া যেতে পারে এই আশায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা চায়ের অর্ডার দিল রুচিরা। চায়ের কাপটা হাত নিয়ে চুমুক দিতে যাবে এমন সময় অনিককে দেখতে পেল। অনিক এদিকে এগিয়ে আসছে। আরেকটা চায়ের অর্ডার দিল রুচিরা। অনিক কাছাকাছি হতেই রুচিরা ডাক দেয়। অনিক কাছে এসেই বলে- কেমন আছেন রুচিদি?
হ্যাঁ ভালো, তুমি ভালো আছো তো?
হ্যাঁ! আপনার সাথে অনকেদিন পর দেখা হল।
রুচিরা মাথা নাড়ে। দ্বিতীয় চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে অনিকের দিকে এগিয়ে দেয়। অনিক আমতা-আমতা করছিল। রুচিরা বেশ আন্তরিকতার সহিত বলে- তোমার জন্যই অর্ডার দিয়েছি।
অনিক চায়ের কাপটা হাতে তুলে নেয়। রুচিরা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে- অনিক চল, একটু ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসি।
এই বলে রুচিরা উত্তরের অপেক্ষা করেনি। পেছনের জামরুল তলায় নিচু দেয়ালটার গিয়ে বসল। অনিকও পাশাপাশি বসল। অনিক অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু মনটা পড়ে আছে রুচিরার দিকে, নিশ্চয়ই কিছু বলবে এই ভেবে। এভাবে কোনদিন অবশ্য রুচিরা অনিককে ডাকেনি।
রুচিরা প্রথমে নীরবতা ভাঙল- অনিক তুমি নিশ্চয়ই সৈকতের সম্পর্কে কিছু শুনেছ?
সৈকত নিজেই সবকিছু আমাকে বলেছে। ও এ ব্যাপারে খুবই আপসেট।- অনিক কথাগুলো খুবই শান্ত এবং স্বাভাবিকভাবেই বলে।
হ্যাঁ, আমি জানি। এ ব্যাপারে আমি নিরূপায়, আমার করার কিছুই ছিল না।
আপনার কথা সৈকত আমাকে বলেছে। আপনাকে সে অন্যরকম ভাবে।
অনিক, তুমি আমার সম্পর্কে তেমন কিছুই জান না।- রুচিরা অনিকের দিকে তাকায়।
অনিক তাকিয়ে আছে কিছু একটা শোনার জন্য। রুচিরা আবার শুরু করে- আমি তেমন মিশুক প্রকৃতির নই। আর ছেলেদের ব্যাপারেতো আরও বেশি । কিন্তু সৈকতের বেলায় একেবারে উল্টোরকম। ওকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করি আর প্রচগুরকম ভালোবাসি। কথা বলতে বলতে রুচিরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। তারপর নিজেকে সামলে নিযে রুচিরা আবার বলে- সৈকতও আমাকে শুধু শ্রদ্ধাই করে না, প্রচুর ভালোও বাসে। অথচ এ ঘটনার পর আমার কাছে আর একটি দিনও এল না। এভাবে নিজেকে কষ্ট দেয়ার কোন মানে আছে? তুমি জান না অনিক, সৈকতের কথা শুনে ক’দিন যাবৎ আমার চোখে ঘুম নেই। এই বলে রুচিরা দু’হাতের তালুতে চোখ ঢাকে।
কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না অনিক । অবশ্য সৈকতকে কয়েকবার বুঝিয়েছে, যেন ওরকম বাজে জীবনে না জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কোন কথা শোনেনি সৈকত। সে অনকিকে বলে রেখেছে যেন ওর কথা কাউকে না বলে। বিশেষ করে রুচিরার কাছে। অনিক এখন এ কথাটিই বসে বসে ভাবছে।
অনকেক্ষণ পর রুচিরা মুখ তুলে তাকায় এবং বলে- ও কোথায় যায়, সারাদিন কী করে কাটায় কিছুই খরব নিতে পারলাম না। দৃষ্টি দেখেই অনিক বুঝতে পেরেছে যে, কিছু জানতে চাচ্ছেন রুচিদি। কিন্তু অনিক কোন কথা বলে না।
প্লিজ অনিক, তুমি যদি হেল্প কর তাহলে সুবিধা হয়। তাছাড়া চোখের সামনে এভাবে একটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, সেটা হতে দেয়া যায় না।
অনিকের টনক নড়ে। সত্যিইতো সৈকত ধ্বংসের পথে চলেছে। এভাবে চললে সৈকত আর ফিরে আসতে পারবে না সুস্থ জীবনের বেলাভূমিতে। ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে অনিক রুচিরাকে বলে- ‘আমি যে সৈকতের খোঁজ দিচ্ছি তা কিন্তু বলবেন না।
চলবে...