পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-২৬)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর (ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের  ধারাবাহিক  উপন্যাস )
*পার্থসারথি
পর্ব-২৬  
রুচিরা অভয় দেয়- তুমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো। 
কথা শেষ হতেই রুচিরা উঠে দাঁড়ায়। চায়ের দাম মিটিয়েই অনিকের কাছ থেকে বিদায় নেয়। 
অনতিদূর থেকেই রুচিরা দেখতে পায় সৈকতকে। সিগারেটে চোখ বন্ধ করে লম্বা টান দিচ্ছে। আর গোল হয়ে বসা অন্যরা লোলুপ দৃষ্টিতে সৈকতের দিকে তাকিয়ে আছে যেন ক্ষুধার্ত নেকড়ে। রুচিরা থমকে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ তারপর ধাতন্থ হয়ে এগিয়ে যায়। রুচিরাকে দেখতে পেয়ে সৈকত যেন আকাশ থেকে পড়ল। রুচিরা বুঝতে পারে সৈকত মনে মনে কিছু একটা হিসাব করছে। সৈকত কিছু বলার আগেই রুচিরা ডাক দেয়। সৈকত সাথে সাথেই দাঁড়ায়। কিন্তু হাঁটতে গিয়ে যেন মুহূর্তে সময় নেয় নিজেকে সামলাতে । সৈকত হেঁটে এগিয়ে আসছে ঠিকই কিন্তু কোথায় যেন একটা ছন্দপতন হচ্ছে। রুচিরার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়;পৃথিবীর সকল দুঃখ আর কষ্ট যেন রুচিরাকে মুহূর্তেই আচ্ছন্ন করে ফেলল। মনের ভেতর জগতটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আসছে ক্রমশঃ। নিজেকে সামলে নিয়ে মন খারাপের হাওয়ায় দুলতে থাকে রুচিরা।  
কাছে এসে সৈকত মাথা নীচু করে দাঁড়ায়। রুচিরা সৈকতকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। অযত্নে চুলগুলো কেমন নোংরা এলোমেলো হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যায়, পোশাকের প্রতিও নজর নেই। স্বাস্থ্যটা অনেক খারাপ হয়েছে। রুচিরা খুবই ক্ষীণ এবং কষ্টের স্বরে ডাকে- সৈকত। 
সৈকত মাথা তুলে তাকায়। কিন্তু কোন কথা বলে না। সৈকতের চোখের কোণে কোণে কালির ছোপ পড়ে আছে। রুচিরা কোন কথা বলতে পারে না। সৈকত অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রুচিরা বলে- এসো কিছু কথা আছে। 
রুচিরার কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন অদ্ভুত রকমের অচেনা মনে হয় সৈকতের কাছে। খুব কষ্টে যে কথাগুলো রুচিদি বলেছেন সেটি সৈকত টের পায়। 
সৈকতকে নিয়ে রুচিরা অ্যানেক্স ভবনে চলে আসে। সামনের লনে দুর্বায় ওরা দু’জন পাশাপাশি বিছিয়ে বসে। অনেকক্ষণ কোন কথা নেই, রুচিরা বসে থেকে ঘাসের বুকে চিমটি কাটে আর নানান কথা ভাবে। সৈকত সিগারেটের প্যাকেট বের করতে করতে বলে, রুচিদি কিছু মনে করো না। একটা সিগারেট টানব। 
রুচিরা কোন কথা বলে না। সৈকত সিগারেট ধরায় এবং লম্বা লম্বা টান দেয়। 
সৈকত তোমাকে অন্য দশটা ছেলের চেয়ে আলাদা ভাবতাম।- নীরবতা ভেঙে রুচিরা প্রথমে কথা বলে। 
সৈকত তাকায়। কিন্তু কোন কথা বলে না।- এক পলক তাকিয়ে পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। 
আমার সম্পর্কে তো তোমাকে বলেছি। আমার জীবনটা অন্যরকম করে চালাতে পারতাম। কই আমি তো তেমন কিছু করিনি? দেহের ব্যাপার নিয়েও তো দেহটাকে কষ্ট দিইনি। আর তুমি কিনা মনের ব্যাপার নিয়ে অযথাই দেহটাকে ভোগাচ্ছো। এটা কিন্তু একদম অন্যায় করছো। তুমি নিজেই একদিন বলেছিলে জীবন একটাই। ভালো কিছু এক জীবনেই করা উচিত । অথচ তুমি!- রুচিরার কথা কিছুক্ষনের জন্য থেমে যায়। আবার আবারও বলতে শুরু করে- না, তোমার কাছে থেকে এমনটি কখনও আশা করিনি। 
সৈকত চুপচাপ সিগারেট টেনে যাচ্ছে। রুচিরার কথা শুনছে ঠিকই কিন্তু দৃষ্টি ঘাসের বুকে আটকে আছে। মনের ভেতর হাজার আকাশের তারার মতো কথাগুলো মিটমিট করছে অথচ সে একেবারে নীরব। 
জীবনে সবকিছু পাওয়া যায় না। আর পাওয়াতেই কি সুখ? না পাওয়াতেও কোন কিছ পাওয়ার চেয়ে অধিক আনন্দদায়ক করে তোলা যায়। চাইলেই পাওয়া যাবে, এমনটি হলে জীবনের তো কোন মানেই থাকে না।- রুচিরার প্রতিটি কথায় আদর, সোহাগ, মমতা আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। সৈকত তা' ভালো করেই টের পায়। 
সৈকত এবার রুচিরার দিকে সরাসরি তাকায়। তারপর সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলে- রুচিদি, না পাওয়াতে আমার তেমন কোন দুঃখ নেই। কিন্তুু পারমিতা আমার বিশ্বাসটাকে আচমকা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। 
তুমি বিশ্বাস করো আর না করো সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তুু আমি জানি পারমিতা এখনও তোমাকে প্রচণ্ডরকম ভালোবাসে। 
সৈকত প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে রুচিরার দিকে তাকায়। 
রুচিরা আশ্বস্ত করার প্রয়াসে জানায়- আমি কোনরকম মিথ্যে বলছি না। যা সত্যি তাই বলছি তোমাকে। 
এই ভালোবাসা আমাকে আরও কষ্ট দেয় রুচিদি। - চোখে চোখ রখেে সৈকত বলে। 
রুচিরা উত্তরে কোন কথা বলতে পারে না। সত্যিইতো এখন ভালোবাসা মানে কষ্টটাকে আরও উসকে দেয়া। গন্তব্যহীন চলা জীবনের কোন পাথেয় হতে পারে না। প্রসঙ্গ পাল্টাবার প্রয়াসে রুচিরা বলে- আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে ইদানীং এড়িয়ে চলছ। 
সৈকত লজ্জিত হয়ে আমতা-আমতা করতে লাগল- না, না, মানে। 
শোন সৈকত, জীবন কখনও থেমে থাকবে না। তোমার প্রতি আমার প্রচগুরকম বিশ্বাস ছিল, আছে এবং থাকবে। তুমি আশাবাদী হওয়ার চেষ্টা কর। 
রুচিরার কথাগুলো সৈকতকে সত্যিই বিমোহিত করছে। কিন্তু সত্যি কথা কী? প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার জন্য মানসিক প্রস্ততি থাকে না। ফলে জীবনটা কিছুটা হলেও এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তুু কিছু করার মত স্পৃহা থাকে না। সৈকত বলে- রুচিদি আমার জীবনকে এরকম কখনও কল্পনা করিনি। 
সৈকতের কথায় রুচিরা আশার আলো খুঁজে পায়। রুচিরা সৈকতের দিকে তাকায়। সৈকতের এলোমেলো কিছু চুল কপালে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুচিরা হাত বাড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে- এভাবে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করো না প্লিজ। প্রতিটি জীবনই সম্ভাবনাময়। যা হবার হয়েছে। না হয় কিছু স্মৃতি থেকে গেল। কষ্টের স্মৃতিওতো অনেক সময় সুখের ছোঁয়া দেয়। ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। 
সৈকতের চোখে-মুখে এক উজ্জ্বল আভা খেলে গেল। রুচিরা স্পষ্ট বুঝতে পারে সৈকত কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছে। 
তুমি নিজের প্রতি যত্ন নিও। কেমন করে রেখেছ নিজেকে। চেনার কোন উপায় নেই যে তুমিই সেই আগেকার সৈকত।- কথা বলতে বলতে রুচিরা বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। চোখের পলকেই নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে। 
সৈকত লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়। রুচিরা ঘড়ির দিকে তাকায়। তারপর বলে- ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরি। কিন্ত কোন উপায় নেই। কিছুক্ষণ লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে আবার অফিসে যেতে হবে। আমি যা বলেছি মনে থাকবে তো? যদি শুনি আবার নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো তবে তোমার সাথে আর যোগাযোগ করব না। 
সৈকত হাসে। রুচিরাও সেই শব্দহীন হাসিতে যোগ দেয়।
 
চলবে...

লেখক সম্পর্কে

পার্থসারথি পার্থসারথি লেখক