পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-২৮)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর (ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের  ধারাবাহিক  উপন্যাস )
*পার্থসারথি
পর্ব-২৮  
রুচিরা টের পাচ্ছে পরিস্থিতিটা আচমকা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। এমনটা রুচিরা ভাবেনি তা নয়। ভেবেছে তবে এতটা গভীর হয়ে নয়। কারণ ভাবতে গেলেই হাজারো প্রশ্ন এসে উঁকি দিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলত। সৈকতের দিকে তাকাতে ভীষণ লজ্জা করছে। সৈকত ভাবছে রুচিরা হয়তো খুব বেশি রাগ করে বসে আছে। কোন কথা বলছে না দেখে সৈকত আবার বলে- রুচিদি তুমি কোন কথা না বললে তোমার হাত আমি ছাড়ব না। 
সৈকতের কথায় রুচিরা চমকে ওঠে; শান্ত মেঘ দেখে ভয়ে মুষড়ে গিয়ে সূর্য যেমন সাত রঙের মধুর আভা ছড়ায় ঠিক তেমনি। কিন্তু কোন কথা মুখ ফুটে বলে না। এক অজানা ভালোলাগার মুহূর্তে ভেসে চলে। রুচিরা নিজেকে কোনরকমে সামলে নেয়। তারপর সৈকতের দিকে চাতক পাখির মতো শান্ত চোখে তাকায়। রুচিরার দৃষ্টিতে আটকে যেতেই সৈকত আচমক আহত পাখির মত ভেতরে ভেতরে ছটফট করে ওঠে। রুচিরার দৃষ্টি আকাশের মত স্বচ্ছ এবং গভীর। চোখে চোখ দু’জনার চলে অনন্তের পথে যাত্রা। সুখের অনুরণনে রুচিরা ক্রমশ কাবু হয়ে যাচ্ছে যেন সুস্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় সাদা মেঘ নরম থেকে মোলায়েম হচ্ছে। দূর পথের যাত্রী যেমন দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর গন্তব্যে পৌছায় এবং সুখে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সৈকত তেমনই ক্লান্ত। হাতের উষ্ণতায় ওদের ভালোলাগাটুকু ভালোবাসার মহীরুহ হয়ে ওঠে। চোখের দৃষ্টিতে গভীরতা কমিয়ে এনে রুচিরা বলে- যদি কথা না বলি তাহলে হাত দুটো কতক্ষণ ধরে বসে থাকবে। 
রুচিরার কথায় সৈকত কিছুটা যেন আস্কারা পেয়ে গেছে এমনভাব টেনেই বলে- আজীবন এবং এভাবেই।- এই বলে সৈকত হাত দুটো আরও চেপে ধরে। 
রুচিরা আড়ষ্ট হয়ে যায়। সৈকত একটু সাহস সঞ্চয় করেই বলে- রুচিদি আই লাভ ইউ! রুচিরার হাত দুটো টেনে নিয়ে সৈকত নিজের বুকে চেপে ধরে আবার বলে- রুচিদি আই লাভ ইউ! 
রুচিরার ভেতর জগতে এবার সমুদ্রের ঢেউ। সুখের স্বপ্নীল মোহনায় রুচিরা এখন বৃষ্টি ভেজা চাতকী। ইচ্ছে হচ্ছে সৈকতকে জড়িয়ে ধরে হাজার হাজার চুমোয় ভালোবাসার বাগানটুকু রাঙিয়ে তুলতে। বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করতে খুবই ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই করতে পারছে না। ভেতরে ঢেউয়ের কান্নার জল চোখের কোণ বেয়ে উছলে পড়ল। বাম্পাচ্ছন্ন চোখে শুধু সৈকতের দিকে তাকায়। সৈকত ভড়কে যায়। রুচিরার হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে সাবধাণী চোখে তাকায় । রুচিরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। হাঁটুতে মাথাগুজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে রুচিরা। সৈকত দৃষ্টি মেলে দেয় রৌদ্রময় নীল আকাশের প্রান্তে। এক সময় দৃষ্টিগুটিয়ে এনে সৈকত বলে- রুচিদি যদি তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। 
রুচিরার ইচ্ছে হচ্ছে সৈকতকে জড়িয়ে ধরতে তারপর মনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে শুধু কথা বলতে। কিন্তু রুচিরা নিশ্চল দৃষ্টিতে শুধু একবার তাকায়। আবার দৃষ্টি লুকিয়ে রাখে। ইচ্ছে হলেও রুচিরা কোন কথাই বলতে পারছে না। সব কথাই যে কণ্ঠের ভেতরে আটকে যাচ্ছে। সৈকতের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। 
কোন কথা বলতে আর ইচ্ছে হয়নি। উঠে দাঁড়ায় সৈকত। সাথে সাথে রুচিরাও উঠে দাঁড়ায়। র্পাটস থকেে রুমালটা বরে করে চোখরে কোণগুলো মুছে নয়ে। তারপর একটা র্দীঘশ্বাস ফলেে সৈকতের পিছুপিছু হাঁটে । হল গেইট পর্যন্ত সৈকত এগিয়ে দেয়। পুরো রাস্তায় আর কোন কথা হয়নি দু’জনার মাঝে। 
*
ভোরের আজানের সুর ভেসে আসতেই সৈকতের সম্বিৎ ফিরে আসে। দৃষ্টি যায় হাতের আঙুলে। সিগারেট নিভে গেছে। সিগারেটের অংশটুকু ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দেয়। তারপর শ্রান্ত-ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দেয়। 
আর এদিকে রুচিরারও একই অবস্থা। সৈকতের কাছ থেকে এসেই বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। সময় কেটে যায় একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে। রুচিরা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সৈকতের হাত ধরে বসে থাকার মুহূর্তটুকু। সুখের আবেশটুকু রুচিরাকে এখনও পুলকিত করছে। রুচিরার সারা অঙ্গে ভালোবাসার ঝড় বইছে অবিরাম। সৈকতের হাত ছোঁয়ায় ভালোলাগার মুহূর্তটুকু এখনও কাঁপাচ্ছে মনে এবং প্রাণে। আর কবিতা হয়ে অঝোরধারায় যেন বয়ে চলছে… 
প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর- 
আমার মনের আকাশ রঙিন হয়ে গেছে, 
মন বাগানে খেলা করে বসন্তের এলো হাওয়া, 
পৃথিবীর সকল ফুল খুবই আপন আমার কাছে, 
মনে হয় সকল গান দোয়েল পাখির গাওয়া। 
প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর- 
পূর্ণিমার রাত চাঁদের আলোয় ছাওয়া, 
সকাল-দুপুর-বিকেল কিংবা অন্য সকল বেলা 
তোমার মনের গহীন বনে চুপি চুপি যাওয়া, 
তুমি প্রিয়া মেঘ ডেকো না হবে শুধু মনকে নিয়ে খেলা। 
প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর- 
মনের উঠোন অগোছালো শিউলি ফুলের মেলা, 
হৃদয় বাগান সেজেছে আজ লক্ষ গোলাপ এসে, 
পাখির ডানা ফিরছে ঘরে এখন গোধূলী বেলা, 
মনের আকাশ উঠছে হেসে মেঘের কোলে ভেসে। 
প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর- 
আমার সময় আমার কাছে তোমায় শুধু দেখা, 
রঙধনুর সাত রঙে তাই আমার স্বপ্ন বোনা, 
তুমি আছো আমার পাশে নইকো আমি একা, 
সকল সময় হচ্ছে আমার ভ্রমর-গান শোনা, 
ক্ষণে ক্ষণে প্রজাপতি দিচ্ছে আমায় দেখা। 
প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর- 
বেঁধেছি আমার ঘর মনের ভেতর 
ভ্রমর গানের সুরে, 
রাতের আকাশ তারায় ঢাকা তারার ভেতর 
তুমি থেকো আমার মনে এমনি করে 
আমি না-হয় ভেবেই যাবো পুরো জীবনভর! 
সৈকতকে রুচিরা ভালোলাগার আঙিনায় বহুদিন থেকেই ঠাঁই দিয়ে রেখেছে। যে স্থানে অন্য কেউ পায়নি। কিন্তু এই ভালোলাগা যে মুহূর্তের নিঃশ্বাসে ভালোবাসায় পরিণতি পাবে সেটি রুচিরার ধারণায় ছিল না। অথবা এমনটি ভাববার সাহস করে ওঠতে পারেনি কোনদিন। আবার এমনও হতে পারে ভালোলাগাটুকু ভালোবাসায় অংকুরতি হতে সময় নিয়েছে নিয়তির গহ্বর থেকে। এও বলা যায় মনের ভেতর গোপনে লুকিয়ে থাকা ভালোলাগাটুকু ভালোবাসা হয়ে প্রস্ফুটিত হয়ে আকাশে জেগে ওঠেছে জোছনার আলোয়। 
এত সুখ রুচিরা মনের ভেতর গোপন করে রাখতে পারেনি। সেই তখন থেকেই খুশীর জোয়ারে দু’চোখ প্লাবিত হচ্ছে। বালিশ ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। কোন রকম ভ্রুক্ষেপ নেই রুচিরার। রুচিরার মনের বাগানে এই রোধ এই বৃষ্টি। আজ অফিসে যায়নি র্পযন্ত। খুশীর জোয়ারে ভাসতে ভাসতে ভীষণরকমের ক্লান্ত। আর এই ক্লান্ত-শ্রান্ত মনেই মনে মনে কথা বলে সৈকতের সাথে। আবার নিজে নিজেই লজ্জায় কুন্ঠিতা হয়। 
 
চলবে...

লেখক সম্পর্কে

পার্থসারথি পার্থসারথি লেখক