পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-৩০)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর (ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের  ধারাবাহিক  উপন্যাস )
*পার্থসারথি
পর্ব-৩০ 
ভাবছিলাম, ভাবছিলাম অনেক কিছু। 
যেমন? 
আমার নিজের কথা, স্বপ্নের কথা আর রাজকন্যার কথা। 
উত্তরে কোন কথা বলে না রুচিরা । শুধু মিটমিট হাসে। 
বিছানা ছেড়ে সৈকত নেমে আসে। তারপর বলে রুচিদি তুমি একটু বস, আমি হাত-মুখটা ধুয়ে আসি।
রুচিরা মাথা নাড়ে। 
তোয়ালে নিয়ে সৈকত বাইরে যায়। বারান্দার জানালা গলে সৈকত বাইরে তাকায়। একটা পিচ্চিকে ডেকে নাস্তা দিতে বলে। 
রুচিরা চেয়ার ছেড়ে উঠে। বিছানার চাদরটা তুলে ভালো করে ঝেড়ে একেবারে টানটান করে বিছায়। 
সৈকত রুমে ঢুকেই গোছানো বিছানায় পলকহীন তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি ফিরিয়ে রুচিরার দিকে তাকাতেই রুচিরা বলে- একটু গোছালো থাকা ভালো। এই বলে রুচিরা সৈকতের হাতের তোয়ালেটায় তাকিয়ে থাকে। 
সৈকত লজ্জিত হয়ে বলে- আজই পরিস্কার করব। 
রুচিরা হাসে। তারপর হঠাৎ করেই রুচিরা মন খারাপ করে বসে থাকে। 
সৈকত অবাক হয়ে বলে- কী ব্যাপার রুচিদি আকাশে হঠাৎ মেঘের ঘনঘটা কেন? 
অভিমানি রুচিরা বলে- গতরাতে এত দেরি করে ঘুমোতে গেলে কেন? 
সৈকতের ইচ্ছে হচ্ছিল সত্যি কথাটা বলতে কিন্তু কী যেন ভাবল, এড়িয়ে গিয়ে বলল- আর রাত করে ঘুমোব না। 
রুচিরা অবিশ্বাসী চোখে তাকায়। তারপর সাহসে ভর করে চোখে চোখ রাখে। এই দৃষ্টিতে রয়েছে ভীষণ রকম আস্কারা। 
কানে হাত লাগিয়ে দুষ্টুমিভরা হাসি ছড়িয়ে সৈকত বলে- এই যে রাণী এবার কানে ধরে বলছি, ভুল আর কখনও হবে না। 
রুচিরা আশ্বস্ত হয়ে মনকাড়া হাসি ছড়িয়ে বলে- দেখা যাবে কতটুকু বাধ্য হয়ে চলেন। 
দরজার কড়া নড়ে ওঠতেই সৈকত এগিয়ে যায়। পিচ্চি নাস্তা নিয়ে ঢুকে। 
পিচ্চি নাস্তা রেখে চলে যেতেই সৈকত দরজার খিল এঁটে দেয়। তারপর কাছে এসে সৈকত বলে- আচ্ছা রুচিদি একটা কথা বলব? সত্যি জবাব দেবে কি? 
জিজ্ঞ্যেস করতে পার। তবে সেন্ট পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিতে পারব না।- দুষ্টুমভিরা হাসি হেসে বলে রুচিরা। 
চোখে চোখ রেখে সৈকত বলে- আমি খালি পেটে সিগারেট টানলাম, কিছু বললে না যে? 
তোমার দিনের প্রথম আমেজটায় বাঁধা দিতে ভালো লাগছিল না। ভাবলাম তোমার নিজস্ব ভুবনে অন্তত কিছুক্ষনের জন্য হলেও নিশ্চন্তে বিচরণ কর।- এই বলে রুচিরা সৈকতের চোখে চোখ রেখে আবার বলে- সিগারেটটাই ক্ষতিকর তার ওপর খালি পেটে। এযে বিষ পান । এভাবে আর টেনো না। 
মহারানী যা বলবেন সবই মাথা পেতে নেব। টেবিলের ওপর একটা পেপার বিছিয়ে তাতে নাস্তাগুলো খুলে রাখে সৈকত। ডিম টোস্টের একটা টুকরো হাতে তুলে নিয়ে সৈকত রুচিরার দিকে বাড়ায়। রুচিরা লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। সৈকত মুচকি হাসে। রুচিরা মনে মনে ভাবে সৈকতের এগিয়ে দেয়া ভালোবাসাটুকু আমাকে গ্রহন করতেই হবে। হাতে হাত ধরে সৈকতের এগিয়ে দেয়া ডিম টোস্টে ভাগ বাসায় রুচিরা । তারপর রুচিরাও একটা টুকরো হাতে নিয়ে সৈকতকে খাইয়ে দেয়। সৈকত দুষ্টুমি করে রুচিরার হাতের আঙুলে হালকা কামড় বসায়। 
উঃ! বলে রুচিরা সৈকতকে মিছিমিছি মারতে আসে। সৈকত হাসে। তারপর কতক্ষণ নীরবতা। নাস্তা শেষে কৌটা থেকে চা গ্লাসে ঢেলে রুচিরাকে এগিয়ে দেয়। 
সিগারেটের প্যাকেটেটা হাতে নিয়ে সৈকত বলে এই যে, মাহারাণী এবার একটা সিগারেট খেতে পারি?
রুচির মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। তবে বলে- সিগারেটটা ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে। 
আজকের শুরু থেকে সৈকতের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল গতকালের দুঃসহ মূহূর্তের কষ্টগুলোকে রুচিবার সামনে তুলে ধরার। কিন্তু তেমন সাহস পাচ্ছিল না এবং বলতে গিয়েও যেন আগ্রহবোধ হচ্ছিল না। এমন সুযোগটা পেয়েই সৈকত বলল- সিগারেটটা আসলে এই ক'দিনে কমিয়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় কেটেছে তো তাই। 
রুচিরা উৎকণ্ঠচিত্তে জানতে চায়- কেন, কি হয়েছিল তোমার? 
‘না মানে, গতকাল তোমাকে কথাগুলো বলার পর তুমি যেভাবে কাঁদলে, ভাবলাম তোমাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম। তারপর থেকে সত্যিই আমার খুব খারাপ সময় কেটেছে। তোমাকে আমি হারাতে চাই না রুচিদি। যে কোন সম্পর্কেই হোক তোমার সান্নিধ্য আমি সবসময় পেতে চাই। সৈকতের কণ্ঠেস্বরে বেশ আবেগ ছড়িয়ে পড়ে। 
সৈকতের আবেগের মোহনায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় রুচিরা। কোন রকমে নিজের অস্তিত্বকে তুলে এনে বলে- ওটা আমার সুখের কান্না ছিল, সৈকত। আমি তোমার মতো একজন বন্ধু চাই। যে সবসময় সবকিছুই বুঝতে চেষ্টা করে। ইউ আর মাই বেস্ট ফ্রেন্ড, সৈকত। গতকাল এতটুকু কথা বলতে পারছিলাম না যে, অন্তত বিদায় বাক্যটুকু বলি। সুখের বন্যায় আমি হাবুডুবু খাচ্ছিলাম সৈকত। আই লাভ ইউ। সৈকত, আই লাভ ইউ । আমাকে তুমি কখনও কষ্ট দিও না সৈকত। আই লাভ ইউ সৈকত। 
কখন কে কাকে জড়িয়ে ধরেছে কেউ বলতে পারে না। রুচিরা খুশীতে আবার কেঁদে ফেলে। জড়িয়ে থেকে রুচিরা বলে- তুমি আমাকে সব সময় ভালোবেসো। 
হ্যাঁ রুচিদি, আমি তোমাকে সারজীবন এমনি করেই ভালোবাসবো। 
আর তোমার ভালোবাসাকে আমি বুকের গহীনে লুকিয়ে রাখব অনন্তকাল।- সুখের ভেলায় ভাসতে ভাসতে রুচিরার র্স্বগীয় উচ্চারণ। 
আই লাভ ইউ, রুচিদি। আই লাভ ইউ।- আবেগে আপ্লুত হয়ে সৈকত ভালোবাসার মহাসমুদ্ররে কিনারে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উচ্চারণ করে বিনম্র সুখী উচ্চারণ। 
রুচিদি নয়। একান্তে সবসময় রুচি বলেই ডাকবে। এখন একবার ডাক প্লিজ। শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।- চোখে চোখ রেখে চাতকীর মতো একটু ভালোবাসার প্রত্যাশী রুচিরা সৈকতের মনের আকাশে তাকিয়ে থাকে। 
দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে সৈকত বলে আই লাভ ইউ রুচি, মাই ডার্লিং, মাই হার্ট!- বলেই সৈকত ফিক করে হেসে ওঠে। সাথে সাথে রুচিরাও হাসে। তারপর দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ভালোবাসার মহাসমুদ্রে কতক্ষণ ভেসেছিল ওরা নিজেরাই জানে না। 
পারমিতা এসেছে পৌনে এগারোটায় লাইব্রেরি বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে। মোটামুটি সাজগোজ করেই এসেছে। পারমিতার আশপাশে ভীষণ ব্যস্ততা। অথচ ও নির্বিকার চিত্তে বসে আছে। ডুবে আছে নিজস্ব ভুবনে। ভাবছে রুচিরার কথা, সৈকতের কথা। ফেলে আসা স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াচ্ছে পারমিতা। সৈকতের সাথে প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তটা মনে হতেই বুকের ভেতরটায় যেন একটা ঝড় বয়ে গেল। এমনই নানান নস্টালজিয়ায় ডুবে আছে পারমিতা । রুচিরা ও সৈকত খুব কাছাকাছি হলে পারমিতা দৃষ্টি খুলে তাকায়। সৈকত ও রুচিরাকে বেশ সুখী সুখী মনে হচ্ছে। 
 
চলবে...

লেখক সম্পর্কে

পার্থসারথি পার্থসারথি লেখক