পরের চ্যাপ্টার আগের চ্যাপ্টার

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- শেষ পর্ব

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর (ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের  ধারাবাহিক  উপন্যাস )
*পার্থসারথি
শেষ পর্ব 
সৈকতকে বেশ স্মার্ট দেখাচ্ছে । চুলগুলোতে যত্নের হাত পড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সৈকতকে মনে হচ্ছে বেশ পরিচ্ছন্ন যুবক । সেই আগের সৈকত যেন। রুচিরাও মোটমুটি ম্যাচ করেই পোশাক পরেছে। এবং ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক রং। কাছাকাছি হতেই পারমিতা খুশী হয়ে বলে- রুচিদি তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে। এভাবে একটু সেজেগুজে থাকতে পার না? 
রুচিরা উত্তরে কোন কথা বলে না। শুধু হাসে। ওরা এসেই পারমিতার খুবই কাছাকাছি হয়ে বসে। সৈকত রুচিরার শরীরের সাথে ঘেঁষে বসে। 
কেমন আছ সৈকত?- পারমিতা জিজ্ঞ্যেস করে। 
খুব ভালো।– সৈকতে পারমিতার দিকে না তাকিয়েই কথা বলে। যেন কথায় কথায় ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিশোধ নেয়ার মুহূর্ত। 
শুনে খুশী হলাম।- পারমিতা বেশ সুখী কন্ঠেই মন-মাতানো আবহ ছড়িয়ে বলে। 
সৈকত কোন উত্তর দেয় না। তবে বলে অন্য কথা- তৃষামণি কেমন আছে? 
সৈকতের কথা শুনে পারমিতা খুব খুশী হয়ে বলে- ভালো আছে। পরে তো আর একদিনও দেখতে গেলে না? 
যাবো। অবশ্যই দেখতে যাবো। সৈকত ইচ্ছে করেই আজ বেশ স্বাভাবিক হয়ে কথাবার্তা বলছে। তারপর তোমার খবর কী বল, পারমিতাকে বলে সৈকত অন্যদিকে তাকায়। 
এখন খুব ভালো আছি।- পারমতিা বশে খুশী হয়ে বলে। 
এখন মানে?- এই বলে সৈকত প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে পারমিতার দিকে তাকায়। 
এই তোমরা আসার পর থেকেই। 
আমরা আসার পর থেকেই, কারণ? 
তোমাকে দেখে আগের সেই সৈকতকে আমি খুঁজে পাচ্ছি।- এই বলে পারমিতা রুচিরার দিকে তাকায় এবং বলে- রুচিদি, রুচিদিই, রুচিদির কোন তুলনা হয় না। 
রুচিরা হাসিমুখে অন্যদিকে তাকায়। 
সৈকত বলে- দেখতে ঠিকই আগের মত লাগছে কিন্তু আমি আগের চেয়ে অনেক বদলে গিয়েছি। অবশ্য শুধু বাইরেই নয় ভেতরেও। 
পারমিতা অবাক হয়। সৈকতের দিকে একপলক তাকায়। সৈকত দৃষ্টি সরিয়ে রাখে। পারমিতা ভাবে সৈকত কী বলতে চাচ্ছে। কিন্তু কিছুই বুঝে ওঠতে পারছে না। কারণ সৈকতকে কেমন যেন একটু অদ্ভুত ঠেকছে। এত স্বাভাবিক হয়ে সৈকত কথা বলছে অথচ মনে হচ্ছে কোথায় যেন ছন্দের একটু হেরফের হচ্ছে। 
নীরবতা ভেঙে রুচিরা বলে- পারমিতা তোমরা কবে নাগাদ যাচ্ছ। 
সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই। 
এত তাড়াতাড়ি। 
হ্যাঁ কোন উপায় নেই রুচদি। 
সৈকত তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ এ ধরনের কথাবার্তায় কোন মানে বুঝে না সৈকত । তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রুচিরার দিকে তাকায়। রুচিরা বুঝতে পেরে বলে- পারমিতার হাজব্যান্ডের প্রমোশন হয়েছে এবং সাথে ট্রান্সফার । ঢাকার বাইরে চলে যেতে হবে। সৈকত মনের অজান্তেই পারমিতার দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই সৈকত দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। 
পারমিতা কথা বলে- সৈকত রুচিদিকে নিয়ে একদিন বাসায় আস না? আবার কবে দেখা হয়, না হয় তার কোন ঠিক নেই। 
সৈকত নিদির্ষ্ট করে কোন কিছু বলে না। শুধু বলে- হ্যাঁ, ঠিক আছে একদিন যাব। 
কবে যাবে বল?- পারমিতা বেশ উদগ্রীব হয়ে তাকায় সৈকতের দিকে। 
সৈকত কোন কথা বলে না। 
পারমিতা তাকিয়ে থাকে উত্তরের প্রত্যাশায়। 
রুচিরা বলে- তুমি চিন্তা করো না। আমি নিয়ে যাব। 
পারমিতা খুশী হয়ে রুচিরাকে জড়িয়ে ধরে। এবং এবার দুঃখী গলায় বলে- সৈকত যোগাযোগ রেখো। 
আর যদি পার মনের মতন একজনকে বেছে নিও। 
কথাটা শুনেই রুচিরা লজ্জিত হয়ে দৃষ্টি ফেরায় অন্যদিকে। আর সৈকত রুচিরার দিকে তাকিয়ে বলে- অলরেডি একজনকে বেছে নিয়েছি। 
পারমিতা অবাক হয়। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে। একটা ঘোর তন্ময়তায় ডুবে যায় পারমিতা। পরক্ষণেই সম্বিৎ ফিরে পায় এবং বলে- ভালো, তাহলে তো ভালই হল। কিন্তু আর কোন কথা বলে না পারমিতা। 
সৈকত আবারও বলে- কিছু বললে না যে! 
সৈকত আমি চাই তুমি সুখে থাকো। যদি কাউকে বেছে নিয়ে থাকো তাহলে আমি খুবই খুশী হবো। 
সত্যি বলছো?- এই বলে সৈকত পারমতিার চোখে চোখ রাখে। 
হ্যাঁ সৈকত। আমার যে কী ভালো লাগছে। তুমি খুব সুখী হবে। তোমার মত স্বপ্নপুরুষ ক’জনার ভাগ্যে জুটে বলো? 
সৈকত চুপসে যায়। ভেবেছিল কিছু বলে পারমিতাকে কিছুটা হলেও শায়েস্তা করবে। মনের ভেতর সাজানো বাগান ভেঙে তছনছ করে দিবে। কিন্তু পারমিতার ভালোবাসা মিশ্রিত কথাগুলো সৈকতকে আহত করে তোলে। চুপচাপ বসে থাকে সৈকত। 
রুচিরাকে উদ্দেশ্য করে পারমিতা বলে- রুচিদি আমি না থাকলেও তুমি ওকে দেখে শোনে রেখো। 
রুচিরা নির্বাক । কিন্তু সৈকত ইচ্ছে করেই এ সুযোগটা নেয় এবং বলে- এই কথা তোমাকে আর বলে দিতে হবে না। নিজের জনকে প্রত্যেকেই আগলে রাখে। 
পারমিতা বিষ্ময়ে অবাক । কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ফ্যালফ্যাল চোখে রুচিরার দিকে তাকায় পারমিতা। রুচিরা লজ্জায় আরক্তিম অবগুণ্ঠিতা যেন। চোখ জোড়া মাটিতে লেপটে আছে। পারমিতা একবার সৈকতের দিকে আরেকবার রুচিরার দিকে তাকায়। সৈকত মিটমিট হাসছে। পারমিতা রুচিরার একটা হাত কোলে টেনে নেয়। পারমিতা স্পষ্ট টের পাচ্ছে রুচিরার হাতটা অসম্ভব রকমের কাঁপছে। পারমিতা জানে যে সৈকত আর ওর নিজের হওয়ার নয়। এখন যে কারও হতে পারে সৈকত। কিন্তু তবুও পারমিতা কেন যেন এত সহজে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। চুপচাপ সবাই। অনেকক্ষণ কেটে যায় নীরবতায়। পারমিতা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। তারপর রুচিরার চিবুকে হাত রেখে বলে- রুচিদি কী ব্যাপার ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো? 
রুচিরা আরও লজ্জিত হয়ে যায়। একপলক তাকিয়েই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। 
রুচিদি লজ্জিত হওয়ার কছিু নেই। খুব ভালো হয়েছে। সৈকতকে তুমি নিজের মতো করে পাবে। 
না মানে ইয়ে।- রুচিরার মুখে কথা ফুটছিল না। 
পারমিতা রুচিরার কথা কেড়ে নিয়ে বলে- রুচিদি, সৈকত খুব ভালো ছেলে। ও আমার স্বপ্ন-পুরুষ ছিল, আছে এবং থাকবে। শুধু তুমি ওকে নিজের মত করে আগলে রেখো। তুমি সুখী থাকলেই আমি সুখে থাকবো। 
পারমিতার কথাগুলো শোনার পর সৈকতের ইচ্ছে হচ্ছে পারমিতাকে জড়িয়ে ধরে হাজারটা চুমোয় ভরিয়ে দেয়। কিন্তু বলে- পারমিতা তুমি কি সত্যিই খুশী হয়েছো? 
হ্যাঁ সৈকত। আমি খুব খুশী । তুমি রুচিদিকে কোনদিন কষ্ট দিও না। 
রুচিরা পারমিতাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলে- তোমাকে কোন কষ্ট দিইনিতো পারমিতা? 
রুচিরাকে আদর করতে করতে পারমিতা বলে রুচিদি, তোমার এবং সৈকতের ভালোবাসাতেই আমি বেঁচে থাকবো।
 
---------------------সমাপ্ত---------------------

লেখক সম্পর্কে

পার্থসারথি পার্থসারথি লেখক