Posts

ভ্রমণ

ভ্রমণ ৫

June 16, 2024

মাসুদ হোসেন

Original Author মাসুদ হোসেন

112
View

বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি হলো বান্দরবান। বান্দরবানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্রগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙামাটি ও পুর্বে মায়ানমার। ভৌগলিক কারণেই বান্দরবানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পাহাড়, নদী ও ঝর্ণার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা।তাইতো একঝাঁক ভ্রমনপিপাসু মানুষদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সৌন্দর্যের প্রকৃতির অলংকার বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। ????

যথারীতি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। এই ট্যুর এর স্পন্সর হিসেবে ছিলেন "BTG" নামের একটি জনপ্রিয় ট্রাভেল এজেন্সি। আমরা পর্যটক হিসেবে ছিলাম মোট ৩৯ জন।

১১ই মে ২০২৩ ইং রোজ বৃহস্পতিবার রাত ১১:০০ টায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে আমাদের বাস ছেড়ে যায়। আমাদের বাস নারায়নগঞ্জ দিয়ে ঢুকে মেঘনা ব্রীজ পেরিয়ে কুমিল্লায় যাত্রা বিরতি দেয়।

আমাদের বাস যখন বান্দরবান পৌঁছায় তখন সময় সকাল ৬:৩০ টা। সারারাত বাস ভ্রমণ শেষে সকল পর্যটক রা হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করার জন্য বসছে। আমাদের সকালের নাস্তা হিসেবে ডিম খিচুড়ী দেয়া হয়েছিলো।

নাস্তার পর্ব শেষে সবাই নীলগিরি এর উদ্দেশ্যে যাই, সারাদিনের জন্য চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করা হয় আমাদের জন্য। পাহাড়ি আঁকাবাকা পথ পেরিয়ে আমরা উঠতে থাকি পাহাড়ে, দুই পাশের পাহাড়ি জুম চাষ এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য বিমোহিত করে প্রতিটি হৃদয়। পথের মধ্যে আমাদের চান্দের গাড়ি চান্দের দেশে চলে গেছে ???? (নষ্ট হয়ে গেছে)। ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে মিস্ত্রি এসে পরে ঠিক করে আবার যাত্রা শুরু করি।

নীলগিরি:
নীলগিরি কে বলা হয় বাংলাদেশের দার্জিলিং। দিগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি যে কাউকেই এর রূপ বিমোহিত করে রাখবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের নাম নীলগিরি। নীলগিরিতে পৌঁছে এন্ট্রি টিকেট কেটে আমরা স্পটে প্রবেশ করি।নীলগিরি থেকে চারপাশে চোখ মেলে তাকালে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। নীলগিরি তে সবাই ফটোসেশান শেষ করে রওয়ানা দেই চিম্বুক এর উদ্দেশ্যে। মাঝখানে ডাবল হ্যান্ড ভিউ ও টাইটানিক ভিউ পড়ে সেখানে ফটোসেশান করে আবার রওয়ানা দেই।

চিম্বুক পাহাড়:
বান্দরবান শহর থেকে ২৩ কি.মি. দূরে অবস্থিত চিম্বুক পাহাড়। এই পাহাড়ের চূড়াতেই রয়েছে চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ ফুট উঁচু চিম্বুক পাহাড়ে আসা যাওয়ার আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই পাশের চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সর্পিল সাংগু নদীর সৌন্দর্য মনকে তৃপ্ত করে। পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতায় দাঁড়িয়ে নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক রূপের সুধা পান করতে করতে মেঘের ভেলা চেপে হারিয়ে যাওয়া যায় অপার্থিব জগতের গভীরে। নীলগিরি তে গরম এর কারনে আমরা ক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত হয়ে যখন চিম্বুক পাহাড়ে উঠি তখন স্নিগ্ধ বাতাস দেহ মনকে ঠান্ডা করে দেয়। এখান থেকে আমরা দুপুর ২ টা নাগাদ আবার ফিরে যাই বান্দরবান শহরে দুপুরের খাবার খেতে। দুপুরের খাবারের আইটেম ছিলো ভাত,মুরগী, সবজি, ডাল, সালাদ ইত্যাদি।

নীলাচল:
দুপুরের খাবার শেষ করে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আমরা চান্দের গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ি নীলাচল আর মেঘলা এর উদ্দেশ্যে। নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান থেকে ৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুট উচ্চতায় টাইগার পাড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত। নীলাচলে রয়েছে আকাশ, পাহাড় আর মেঘের অপুর্ব মিতালী আর তুলনাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহর দেখা যায় আবার মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে দূরের কক্সবাজার দেখা যায়। এখান থেকে কক্সবাজার এর দুরুত্ব ১২০ কি.মি.। নীলাচল ঘুরে আমরা যাই মেঘলা এর উদ্দেশ্যে।

মেঘলা:
মেঘলা তে ২ টি ঝুলন্ত ব্রীজ আছে। কায়াকিং করার জন্য বোট আছে।চিড়িয়াখানা শিশুদের বিনোদনের অনেক ব্যাবস্থাই আছে এখানে। মেঘলা ঘুরে আমরা আবার ফিরে যাই বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ আমরা বের হয়ে পড়ি বার্মিজ মার্কেটের উদ্দেশ্যে কেনাকাটার জন্য। এখানে পাইকারি রেটে ভালো পন্য পাওয়া যায় বিধায় অনেকেই অটোরিকশাযোগে এখানে চলে আসেন কেনাকাটার জন্য। যে যার মত কেনাকাটা করে রাত ৯:৩০ টায় আমরা ঢাকার উদ্দেশ্য বাসে উঠে পড়ি এবং সকাল ৬ টা নাগাদ ঢাকায় এসে পৌছাই।

লেখকের কিছু কথাঃ আলহামদুলিল্লাহ গল্পটি আমার নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া।
মেঘের দ্রুত গতির ভেলায় গা ভিজিয়ে, একমুঠো স্বপ্ন ছোঁয়ার মতো আনন্দে শিহরিত হোক আমার মতো শত-সহস্র পর্যটক মন, এটাই আমার প্রত্যাশা । জানি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়ায় পড়ে একটু অবসরে যে কেউ বারবার ছুটে যেতে চাইবে অপলক সৌন্দর্যের প্রকৃতির অলংকার বান্দরবানে। আর অকৃপণ বান্দরবান ও পর্যটকদের জন্য মেঘ, পাহাড় ও স্বপ্নিল আকাশ নিয়ে দু-হাত বাড়িয়ে সর্বদা অপেক্ষায় আছে মায়া ছড়িয়ে দিতে সর্বদা সকল প্রাণে ।

লেখক: শরিফুল ইসলাম বিজয়।
(কৃতজ্ঞতা: শান্ত, সবুজ, জনি, রাকিবুল, রুহুল, নাজমুল, আবির, মামুন ভাই আপনারা থাকার কারনে ট্যুরটা অনেক মজা লেগেছে)

Comments

    Please login to post comment. Login