স্কুলে শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট দেখে স্কুলে সর্টি করে স্কুলে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করি। স্কুল করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকলেও আমরা শিক্ষকগণ নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছি। স্কুলের শিক্ষক কক্ষে নাজমুল ইসলাম স্যার আমাকে বলেন, “আপনি তো সারা বাংলাদেশই ঘুরেছেন, চলেন এবার সেন্ট মার্টিন থেকে ঘুরে আসি। বৎসরে দু একবার না ঘুরলে ভাল লাগে না”। আমি বললাম, “স্যার কত টাকা খরচ যেতে পারে? আমি তো আগে কখনো সেন্ট মার্টিনে যাইনি। খরচ সামর্থের মধ্যে হলে যাব”। নাজমুল ইসলাম স্যার বলেন, আগে হ্যাঁ বলেন, বাকী ব্যবস্থা হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ”। আমি বললাম, “আর কেউ বা অন্য স্যারের গেলে আমিও যাব”।
নজমুল ইসলাম স্যার, আমাদের বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলি আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য তোফায়েল শিক্ষক এবং নতুন শিক্ষক আবুল কালাম এবং মাসুদ ইকবালকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে রাজী করাল। মোট কথা পাঁচজনে মিলে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার পরিকল্পনা হলো। সেন্ট মার্টিন সমুদ্র দীপ কাজেই গরম আবহাওয়া তাই এই শীত মৌসুমেই ভ্রমণ ভাল হবে।
নাজমুল ইসলাম স্যার, ঢাকায় উনার পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে আমাদের পাচজনের আসা-যাওয়ার প্যাকেজের টিকেট বুকিং এর টাকা জমা দিয়েছে। ঢাকা টুরিজম অফিস থেকে ম্যাসেস দিয়ে জানিয়ে দিল ট্যুর প্লান।
ট্যুর প্লানঃ ২৫শে জানুয়ারীঃ ঢাকার আরামবাগ/কমলাপুর থেকে রাতের বাসে টেকনাফ যাত্রা।
২৬শে জানুয়ারীঃ সকালে টেকনাফ পৌছে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে শীপে চেপে বসব। সামুদ্রিক পাখিদের ওড়াউড়ি আর সাগরের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌছে যাবো সেন্টমার্টিনে। বিকেলে দল বেধে পশ্চিম ও দক্ষিণ বীচে ঘুরতে বের হবো। দেখে নিবো লেখক হুমায়ুন আহমেদের নিজের হাতে গড়া বাড়িটি। রাতে হবে আড্ডাবাজি এবং গানের আসর।
২৭শে জানুয়ারীঃ সকালের নির্মল পরিবেশে প্রবালের আস্তানা ছেড়াদ্বীপে ঘুরতে যাবো। বিকেলে উত্তর বীচে বিচরন করব। অতপর যার যার কেনাকাটা সেরে নিবো। রাতে হবে গানের আসর ও বার্বিকিউ পার্টি।
২৮শে জানুয়ারীঃ সকালের দিকে পূর্ব বীচে ফুটবল খেলেবো, অতপর দল বেধে সমুদ্রে ডুবাবো। দুপুরের আগ পর্যন্ত সেখানেই বিচরন করব। হোটেলে ফিরে রেডি হয়ে হোটেল চেক আউট করে টেকনাফের উদ্দেশ্যে শীপে চড়বো। টেকনাফ থেকে রাতের বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা।
২৯শে জানুয়ারীঃ সকালে আমরা ঢাকায়
২৬ সকালে আমরা টেকনাফে পৌছালাম। তারপর লঞ্চে যোগে সেন্ট মার্টিনে আসলাম। এই সময় নাফ নদীর পাখী আমাদেরকে লঞ্চের সাথে সাথে উড়ে উড়ে দেখাল পাখির সৌন্দর্য। সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি এসে লঞ্চ থেকে দেখা যায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছে।
লঞ্চ থেকে নেমেই আমরা আমাদের আগে বুকিং করা রিসোর্টে উঠলাম। সাথে আমাদের গাইড রেজুয়ানুল হক।
রিসোরটে বসে সেন্ট মার্টিন সম্পর্কে জানার চেস্টা করলাম। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। চারদিকে শুধুপানি আর পানি। আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। টেকনাফ থেকে ট্রলারে লঞ্চে কিংবাজাহাজে যেতে লাগে দুই থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা। এর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয়হাজার। নারিকেল, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ধান এই দ্বীপের প্রধান কৃষিজাত পণ্য।আর অধিবাসীদের প্রায় সবারই পেশা মৎস্য শিকার। তবে ইদানীং পর্যটন শিল্পেরবিকাশের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল কিংবা গ্রোসারি শপেরমাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদেরজন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
দুপুরে খাবার খেলাম স্থানীয় মাছ দিয়ে। খুবই সুস্বাদু খাবার। খাবারের পর বেরিয়ে পড়লাম দ্বীপে। আল্লার অপার মহিমার সৃষ্টি এই দ্বীপটি সত্যিই সুন্দর। বিকেলে সূর্যাস্ত দেখলাম।
পরের দিন ছেঁড়া দ্বীপে যাব। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই। সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে 'ছেঁড়াদিয়া' বা 'সিরাদিয়া' বলা হয়ে থাকে। ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা, আর মূল দ্বীপ-ভূখণ্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ।
পরেদিন সকালে ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে স্থানীয় ইঞ্জিন চালিত স্পেশাল টলারে উঠলাম। সাথে লাইভ বোটও পড়তে হয়েছে। কারণ কোস্টগার্ড নিয়মের ব্যতিক্রম করতে দেয়নি।