Next Chapter Previous Chapter

আমি স্বাধীনচেতা নারী হলেও উগ্র নারীবাদী না।

June 18, 2024

নাঈমা

তানজিম ভাই, 

আসসালামুআলাইকুম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপের ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে আপনাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের একজন বলে জেনেছি। সত্যি বলতে সেদিন আপনার পারফরমেন্স মুগ্ধ করার মতো ছিলো। কী চমৎকারভাবেই না বাংলাদেশের জয়টাকে সহজ করে দিলেন! খেলার মাঠের এই দুর্দান্ত আপনাকে কিছুতেই আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসের সাথে মেলাতে পারছি না। বিগত বছর করা আপনার এই ফেসবুক পোস্ট ছিলো হতাশাজনক। তবে আমি জানি মানুষ বদলায়, সেই সাথে তার ভাবনারাও বদলায়। হতে পারে আপনিও বদলে গেছেন, আবার নাও বদলাতে পারেন। যদি এখনও আপনি আপনার ফেসবুক পোস্টের ভাবনায় থেকে থাকেন, তবে হয়তো আমার বলা বাক্যগুলো ব্যর্থ হচ্ছে না।


তানজিম ভাই, আপনি যদি কোন সাধারণ ছেলে হয়ে এমন ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেন, তা নিয়ে আমাদের নারীদের মাথাব্যথা থাকতো না। কিন্তু আপনি তো তা নন! আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের একজন, যাদের একেককজন মানুষের আইডল হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। ক্রিকেট প্রেমী বাঙালি আপনাদের বলা প্রতিটি কথা, আপনাদের করা প্রতিটি কাজের সম্পর্কে জানতে উন্মুখ হয়ে থাকে। আপনি কি জানেন ভাই, আপনার এ পোস্ট দেখে কতোজন পুরুষ নারীর উপর অন্যায় কতৃত্ব স্থাপনের সাহস পেয়েছে? 


জানেন আপনার এ পোস্ট দেখে কতোজন নারী হতাশ হয়েছেন? আমাদের সমাজব্যবস্থা নারীকে দূর্বল করে রেখেছে। সেই দূর্বলতাকে কাটিয়ে যখন নারীরা সংগ্রাম করে নিজের মর্যাদাটা রক্ষার চেষ্টা করছে, তখন আপনি আবার উসকে দিলেন পুরুষ সমাজকে। আমাদের সংগ্রামটাকে কঠিন করে দিলেন আরও। জানেন না তো ভাই, গ্রামের মানুষ ধর্ম কথায় কতোটা প্রভাবিত হয়। আমি জন্ম থেকে গ্রামেই বসবাস করছি, তাই গ্রাম সম্পর্কে, গ্রামের মানুষ সম্পর্কে আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে! 


বিশ্বাস করুন তানজিম ভাই, বর্তমান যুগে মেয়েদের জীবন অনেক কঠিন! আপনি জানেন রোজ কতো স্বামী দ্বারা নারী নির্যাতিত হয়? জানেন আজ কোন নারীর স্বামী মারা গেলে কাল তাকে, তার সন্তানকে দু'মুঠো ভাত মুখে তুলে দেওয়ার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না? আপনি হয়তো বলবেন নারী ধার্মিক হলে আল্লাহই তাকে দেখবেন। আমরা সব মুসলিমরাই জানি আল্লাহ আমাদের দেখেন, কিন্তু তাও অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাই কেন বলুন তো? কারণ সুস্থ করে দেওয়া আল্লাহর হাতে হলেও, তার জন্য একটা উছিলা প্রয়োজন। ঠিক একই ব্যাপার চাকরির ক্ষেত্রেও। একটা চাকরি নারীর নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন খুব। তবে আমার মতে নারীকে তার চাকরি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত। এমন কোন পেশা বাছাই করা উচিত না যাতে তার সন্তান, স্বামী নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। যা পারিবারিক অশান্তিরও কারণ হয়। আপনি যা বিশ্বাস করেন, আমি তার বিপরীতটা বিশ্বাস করি। আমার মতে প্রতিটি নারীর চাকরি করা উচিত, তবে যারা পরিবার ও ক্যারিয়ারকে একসাথে সুন্দরভাবে সামলানোর যোগ্যতা রাখে না, তারা দু'টো বোঝা কাঁধে নিয়ে জীবনকে ফালিফালি না করলেও পারে। 


সে যাক, আপনার ভাবনা ধর্মীয় দিক থেকে কতোটা ঠিক, কতোটা ঠিক না তা আমি আজ আর বিচার করতে বসবো না। কিন্তু কি জানেন? ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই এই ধর্মের অনুসারী প্রতিটি মানুষও তেমনই হওয়া উচিত, যাদের দেখে মন প্রশান্তিতে ছেঁয়ে যাবে। আপনার ভাবনা একান্তই আপনার, কিন্তু তার এমন রূঢ় প্রকাশভঙ্গী ভালো লাগেনি। আমি বাংলাদেশি হয়েও পাক ক্রিকেটার বাবর, রেজওয়ানে মুগ্ধ হয়। এছাড়া মুসলিম রাষ্ট্রের না হয়েও ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিমের মঈন আলী, সাউথ আফ্রিকার হাসিম আমলা ইসলামকে যেভাবে হৃদয়ে ধারণ করেন তাও আমাকে কম অবাক করে না। ওদের দেখে আমি বারবার আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী করিয়েছেন বলে। অথচ আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনাকে দেখে কি কোন মুসলিমের এমন ভাবনা মাথায় আসবে? নিজেকে ততোটা ধার্মিক করে তুলতে পেরেছেন কি আপনি? অনুরোধ করছি, এতো উগ্রভাবে নারীর করনীয় প্রকাশ না করে ধর্মকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলুন। যাতে করে মানুষ মুগ্ধ হয়, ভিন্নধর্মের মানুষেরাও যাতে ইসলাম ধর্মের প্রশংসা করে।


সে যাক, কথাগুলোর জন্য আপনি আমকে নারীবাদী ভেবে বসবেন না প্লিজ। কারণ আমি স্বাধীনচেতা নারী হলেও উগ্র নারীবাদী না। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি প্রতিটি মুসলিম নারী পর্দার ভেতর থেকে শালীনতা বজায় রেখে তার স্বাধীনতা উপভোগ করা উচিত। তাই বলে এই না, যারা এটা করছে না আমি তাদের সাথে চলাফেরা করা কিংবা তাদের নিয়ে মন্দ কথা বলা লোকদের একজন। আমি বুঝতে পারি এদের এই চলাটা ভালো নয়, তাদের সাথে আমার যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তাহলে আমি ভুলটা ধরিয়ে দেই। করুক না করুক সেটা একান্ত তাদের ব্যাপার। কারণ শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহ তাআলা অন্যের আমলের জন্য আমাকে দায়ী করবেন না।