কলকাতার রাত ছিল যেনো একটি অদ্ভুত মায়াবী স্বপ্ন। চাঁদের আলো মৃদু করে ঝরে পড়ছিল হাওড়া ব্রিজের ওপর, যেখানে নদীর ওপর দিয়ে ছোট ছোট নৌকা ভেসে যাচ্ছিল। এই রাতের মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ঙ্কর সত্য, এক রহস্য যা বহু বছর ধরে লুকিয়ে ছিল।
অঞ্জন সেন, কলকাতা পুলিশের এক নামকরা গোয়েন্দা, দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রিজের ধারে। তার চোখে ছিল শঙ্কা এবং মনে ছিল হাজারো প্রশ্ন। আজকের রাতে সে এক নতুন কেসের সন্ধান করতে এসেছে, একটি কেস যা তার জীবনের সবচেয়ে জটিল এবং বিপজ্জনক হতে চলেছে।
“সার, এইবার কেসটা সলভ করা খুব মুশকিল হবে,” বলল তার সহকারী, বিকাশ, যিনি তার সাথে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিকাশের মুখে ছিল অস্থিরতার ছাপ, যা স্পষ্টতই তার মনের উদ্বেগ প্রকাশ করছিল।
অঞ্জন ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন, “আমরা চেষ্টা করব। এই কেসটা সহজ হবে না, কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। জানো, বিকাশ, আমি আমার জীবনে অনেক কেস সলভ করেছি, কিন্তু এই কেসটা একদম আলাদা। যেনো কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাদের পরীক্ষা নিতে চায়।”
কেসটা শুরু হয়েছিল তিন দিন আগে, যখন শহরের এক ধনী ব্যবসায়ী, রঞ্জিত বসু, হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। তার পরিবারের কেউই কিছু বুঝতে পারেনি, কিভাবে এত বড়ো একজন মানুষ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তার বাড়ির দারোয়ান জানিয়েছিল, শেষবার রঞ্জিত বাবু রাত ন’টার দিকে বাড়ি ফিরেছিলেন, তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই।
“সার, আমরা যদি রঞ্জিত বাবুর শেষ ফোন কল ট্রেস করতে পারি, তাহলে হয়তো কিছু ক্লু পেয়ে যেতে পারি,” বিকাশ প্রস্তাব দিল।
অঞ্জন সম্মতি জানিয়ে বলল, “ঠিক বলেছো। আমরা সেখান থেকেই শুরু করব। কিন্তু মনে রেখো, বিকাশ, এই কেসটা এমন কিছু যেটা আমাদের জানা সব নিয়মের বাইরে। আমাদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ ভালোভাবে চিন্তা করে নিতে হবে।”
রঞ্জিত বসুর শেষ ফোন কলের ট্রেস পাওয়া গেল শহরের এক নির্জন এলাকায়, যেখানে পুরনো এবং পরিত্যক্ত একটি কারখানা ছিল। অঞ্জন এবং বিকাশ তৎক্ষণাৎ সেখানে গিয়ে পৌঁছাল। কারখানার মধ্যে ঢুকে তারা দেখতে পেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। দেয়ালে রঞ্জিত বাবুর ছবি, এবং তার চারপাশে লাল রঙের অদ্ভুত চিহ্ন। যেনো কেউ কোন পুরনো ধর্মীয় রীতির অনুসরণ করছিল।
“বিকাশ, এটা মোটেও সাদামাটা কেস না,” অঞ্জন বললেন, তার কণ্ঠে এক রহস্যময় সুর। “আমাদের এখানে কিছু সময় কাটাতে হবে। দেখো, এই চিহ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ চায় আমরা এটাই দেখি।”
“কিন্তু কে, সার? আর কেন?” বিকাশের প্রশ্নের জবাব যেনো বাতাসে মিশে গেল।
পরের দিন সকালেই তাদের ডিপার্টমেন্টে আরও একটি খবর এলো। আরেকজন ধনী ব্যবসায়ী, সুরেশ মিত্র, নিখোঁজ। এই নিখোঁজ হওয়ার মধ্যে কিছু একটার যোগসূত্র ছিল, এবং সেই যোগসূত্র খুঁজে পাওয়াটাই অঞ্জনের প্রধান কাজ ছিল।