পোস্টস

চিন্তা

প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীর ভয়

১৯ জুন ২০২৪

Tania Haque

মূল লেখক তানিয়া হক

প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীর ভয়  


 

নারীরা প্রতিনিয়ত অহরহ প্রযুক্তি  ব্যবহার করছে।  এমন অনেক নারী আছেন যারা  এ বিষয়ে অনেক দক্ষ। আজ আমি তাদের কথা বলবো যারা দক্ষ হতে পারতো  কিন্তু কেন যেন এক অজানা ভয় তাদের প্রতিনিয়ত পিছিয়ে দিচ্ছে। 

ছোট্ট একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করতে চাই। কিছুদিন আগে আমার খুব কাছের একজন মানুষের একটা কাজের জন্য আমাকে অনুরোধ করে। তিনি একজন নারী। তিনি বাংলাদেশের একটা খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স  শেষ করেছেন। তার একটা কাজের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে হবে আমাকে। কিন্তু উনি নিজে কাজটা করতে চাচ্ছেন না কারণ উনি ভাবছেন হয়তোবা নিজে করতে গেলে ভুল হতে পারে অথবা ঠিক মত কাজটা সম্পন্ন করতে পারবেন না।

 

অথচ এই মানুষটিই অনেক কঠিন কাজ  প্রতিনিয়ত তার সংসারে করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন জানিনা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বা এধরনের কাজে তারা কোথায় যেন ভয় পায়। ভাবে যদি ভুল হয়ে? যদি না পারি ? হয়তো পারবোনা, তার চাইতে অন্য কেউ করে দিক। আমি ১০০% নিশ্চিত তারা নিজেরা চেষ্টা করলে পারবেন এবং খুব ভালোভাবেই পারবেন। কিন্তু কেন এত ভয় তাদের মনে? আপনাদের কি মনে হয়? আমাদের আশেপাশের নারীদের এ ধরনের ভয়কে জয় করার জন্য আমরা কিভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি?

 

আমার মনে হয়  খুব ছোট্ট একটা কাজ  আমরা আমাদের দিক থেকে খুব সহজেই করতে পারি। কাজটা হচ্ছে একবার তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো কাজের নিয়মটা শিখিয়ে দিতে পারি। কারণ এরকম অনেক কাজই হয়তো তাদের প্রতিনিয়ত করার দরকার হয়ে থাকে। যেই কাজগুলো হয়তোবা শুধুমাত্র ভয়ের কারণে তারা করছে না। অথচ যে কাজের দক্ষতা তাদের আছে। কিন্তু মনের ভয় তাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে। 

 

আমরা নারীরা আমাদের নিজেদের কর্ম ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত না । আমাদেরকে আবিষ্কার করা শিখতে হবে কতটুকু আমি পারি এবং কতটুকু পারি না। আমরা যতটুকু পারি না, সেটুকু পারাতে পরিণত করার মত যথেষ্ট পরিমাণে রিসোর্স এখন অনলাইনে আছে। সেটা খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়াটাও অনেক সহজ। ইউটিউব, গুগল সার্চ, চ্যাট জিপি‌টির মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্যই খুঁজে পেতে পারি। যেই তথ্যগুলো কাজটা সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার জন্য আমাদেরকে সাহায্য বা সহযোগিতা করবে।

 

আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একটুখানি মানসিকতাই পরিবর্তন আনা। নিজের ভেতরের শক্তিটাকে জাগ্রত করা। এমন অনেক কাজ আছে যেখানে ভুল করলে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। কিন্তু আবার এমন অনেক কাজও আছে যেখানে ভুল করলে খুব একটা ক্ষতি নাই। ধরুন আমরা একটুখানি সাহস নিয়ে এগিয়ে যাই এই ভেবে যে, ভুল হলে ভুল হবে তো কি হয়েছে? তাতে আপনার খুব একটা ক্ষতি হয়ে যাবে না। বরং এই মানসিকতাই আপনাকে অনেক কিছু শিখতে, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। আপনি আরো কয়েকটা ধাপ  এগিয়ে যাবেন।

 

আমরা বাস্তবে এটা ভুলেই যাই যে প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভুল সংশোধন বা ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য একটা সিস্টেম অলরেডি কাজ করছে। ধরেন আমি অনলাইনে কোন একটা ফর্ম পূরণ করছি, সেখানে দশটা তথ্য আমাকে দিতে হবে। আমি হয়তোবা নয়টা তথ্য দিলাম আর একটা তথ্য দিতে ভুলে গেলাম। আমি যখন সাবমিট করতে যাব তখন কিন্তু এটা সাবমিট হবে না এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তীর চিহ্নটা চলে যাবে ঠিক যেই বক্সটা আমি পূরণ করিনি ওই বক্সের উপরে। সেখান থেকেও কিন্তু আমি বুঝতে পারছি যে, ঠিক আছে তাহলে আমি এই তথ্যটা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম এখন এই তথ্যটা দিলেই সাবমিট করা যাবে। 

 

এবার আসি পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ জায়গাতে একটা স্ট্রং পাসওয়ার্ড দেয়ার জন্য সাজেস্ট করে। কিভাবে একটা স্ট্রং পাসওয়ার্ড লেখা যায় সে ধরনের সাজেশনও কিন্তু আসে। নিয়মটা অনুসরণ করলেই আমরা একটা স্টং পাসওয়ার্ড লিখতে পারি।

 

লেখলেখিতে আমি খুব একটা দক্ষ নই। জানিনা আজকের লেখাটা কেমন হলো? পরিশেষে আমার এই মনে হচ্ছে যে আমরা নারীরা হয়তোবা হারাতে অনেক ভয় পায়। ভুল করতে অনেক ভয় পায়। কিন্তু এটা ভুলে যাই যে আমরা যখন কোন কিছু করতে বসি তখন তো আসলে ভুল না করে কিভাবে কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায় তার জন্যই বসি। আর এই সাহস নিয়ে কাজটা করতে বসা থেকেই আমরা আরো অনেক অনেক নতুন কিছু শিখি। যেটা আমাদের অর্জনের পাল্লাটাকে ভারী করে। আমাদের জ্ঞানকে করে সমৃদ্ধ।