পোস্টস

গল্প

পাশাপাশি, তবুও অচেনা 

২০ জুন ২০২৪

সাজিদ রহমান

মূল লেখক সাজিদ রহমান

আমরা দু’জন পাশাপাশি বসা। বলতে গেলে একদম গা ঘেষে। অন্য শব্দ এসে বিরক্ত না করলে আমার নিশ্বাসের শব্দ সে শুনতে পাবে। আমিও পাবো তারটা। সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে। আমিও ঠিকঠাক মত দেখতে পাচ্ছি তাকে। অথচ তখন পর্যন্ত তার সাথে কোন কথা হয়নি।

 

এমন সময় তার কাছে একটা ফোন কল আসে। সে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে। কে ফোন দিয়েছে বুঝতে পারি না। ফোনের ওপাশের কথার হালকা করে আওয়াজ পাচ্ছি। বাঙ্কার থেকে সরু বন্দুকের নল বের করে শত্রুর অপেক্ষায় থাকা যোদ্ধার মত। আমার মনোযোগের সকল ইন্দ্রিয়কে তার দিকে তাক করে রাখি। এই পর্যায়ে মনোযোগের ধার বেড়ে যায়। বেশ পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি। একটা মেয়ের সুরেলা কন্ঠের রিনিঝিনি শব্দ।

 

যে মেয়ের কণ্ঠ এমন সুরেলা সে দেখতে বেশ হওয়ার কথা। শুধু বেশ বললেও যথেষ্ট কম বলা হয়। মেয়েটি অনেক সুন্দরী হবে নিশ্চয়। কিন্তু এমনও হতে পারে, মেয়েটা দেখতে বিশ্রী রকমের কদাকার। না, সে রকম ভাবলে নিজের মনের উপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। খুব সুন্দরী ভেবে নিতেই মন সায় দিচ্ছে। 

 

সুরেলা কণ্ঠের মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, 'সাজিদ কি আপনার সাথে আছে?

 -'না, সে আমার সাথে নেই'। এপাশ থেকে দ্রুত উত্তর দিলো। 

 - 'সাজিদ এলে জানাইয়েন। তাকে আমার খুব দরকার'। ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠের মেয়েটিকে বলতে শুনি।

 - আচ্ছা, জানাবো। বলে ফোন রাখে।

 

টেলিপ্যাথি সম্পর্কের কথা শুনেছিলাম। অনেক দূর থেকেও একজন মানুষ অন্য একজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মেয়েটির কথা একটু ভাবতেই সে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করছে। ফোন কাটার সাথে সাথে সতর্কতার সাথে ছেলেটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাই। কেন সে এমন করলো, বোঝার চেষ্টা করি। তার মধ্যে কোন ভাবলেশ নাই। একদম নির্বিকার। এমন একটা ভাব, যেন কোন দিন ভাজা মাছ তো দুরের কথা, মাছের নামই শোনেনি। 

ভাবছি, কষে একটা প্রশ্ন করি। কিন্তু ইচ্ছেটা তখনই মরে গেল। না থাক, ওপথে নাইবা গেলাম। শুধু মনে মনে বললাম, গর্দভ, সাজিদ তোর পাশে বসে আছে!!!  সুরেলা কণ্ঠি এক নারী, সে নিশ্চয় দেখতেও সুন্দর হবে, তার কাছে ডাহা মিথ্যা বললি। তোর হিংসে হচ্ছে! তুই চাইস না, একটা সুন্দরীর সাথে আমার পরিচয় থাকুক। একটু অন্যরকম সম্পর্ক হোক। তুই পুরুষ জাতির কলংক। 

 

২।

পাবলিক বাসে যাচ্ছিলাম। সামনের দিকে কোন সিট খালি নেই। বাধ্য হয়ে একদম শেষের সারিতে বসতে হয়। বাসের শেষের সারিতে বসার একটা অন্যরকম মজা আছে। মাঝে মাঝে সেইরকম ঝাকুনি লাগে। তখন বাসে চড়ে পাহাড়ি রাস্তায় ঘোড়ায় চড়ার স্বাদ পাওয়া যায়। আপনি যদি সামান্য কল্পনা প্রবণ হোন তাহলেই হবে। একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন, ঘোড়া ছুটে চলছে টগডগ...টগডগ... সূর তুলে। সেই ফিল আসতে বাধ্য।

 

৩।

বাসে ওঠার পরেই পরবর্তী স্টপেজে বাস থামে। আমার পাশে এক লোক এসে বসে। তাঁর সাইজ মাশাআল্লাহ। আর আমিও কম যাইনা। ফলাফল, গা ঘেষে পাশাপাশি ঠাসাঠাসি করে বসতে হয়। কিছুক্ষণ পর পাশে বসা ভদ্রলোকের ফোনে একটা কল আসে।

 

সেই ফোনে একটা সুরেলা কণ্ঠের মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পাই। ফোনে মেয়েটি সাজিদ নামে একজনের খোঁজ নিচ্ছিল।  সেটার কথাই বলছিলাম এতক্ষণ।