Posts

চিন্তা

নবারুণ ও কোকাকোলা

June 23, 2024

ওয়ালিদ প্রত্যয়

Original Author ওয়ালিদ প্রত্যয়

আমি কাজোরী’কে বললাম, ‘বোকাচোদা’ শব্দটা তোমার কেমন লাগে?

কাজোরী অবাক হয়ে বললো, কি বলেন এইসব? এটা কি ভালো লাগার মতো শব্দ?

- আমারও আগে ভালো লাগতো না। গতকাল রাতে দুই লাইনের একটা কবিতা পড়লাম। আমার পড়া সেরা দুই লাইন।

- বলেন তো শুনি!

- ‘বোকাবাবু পুচু পুচু কোকাকোলা খায়

বোকাচোদা বাপ তার পয়সা জোগায়।’

- ছিঃ এইটা কবিতা? কে লিখছেন?

- নবারুণ ভট্টাচার্য। আমার মনে হয়েছে- এই দুই লাইনের মতো সাংঘাতিক সত্য কথা বাংলায় খুব কম লেখা হয়েছে।

- আপনি কি জানেন- আপনার রুচি দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। আপনি আপনার কথাবার্তাতেও প্রচুর গালি ব্যবহার করেন।

- আচ্ছা।

- লাইন দুইটার ব্যাখ্যা দিন। কেনো আপনার কাছে সেরা মনে হয়েছে?

- ধরো, আমি কোকাকোলা খাচ্ছি, নিজের টাকায় খাচ্ছি না। সেই টাকাটা আসলো কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আমার বাবা দিয়েছেন। বাবা সেই টাকাটা পেলেন কোথায়? উপার্জন করেছেন। নিশ্চয়ই কষ্ট করেই উপার্জন করেছেন। এই দুই লাইনে আমি তার কষ্ট এবং টাকা উপার্জনের যে জার্নি সেটা দেখতে পাচ্ছি। একদিন আমিও সামান্য কিছু রোজগার করবো এবং আমার পুত্র কোকাকোলা খেয়ে সেটা নষ্ট করবে।

- খুবই ফালতু এবং অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা । তাও যদি আপনার ব্যাখ্যা মেনে নেই- এটা কবিতায় প্রকাশ করার জন্য কি গালি ব্যবহার করা জরুরি?

- তুমি কবিতা বোঝো না কাজোরী।

- হু, আপনি খুব বোঝেন? নিজে তো জীবনেও দুই কলম লিখতে পারেন না!

- কবিতা বুঝি বলেই লিখতে পারি না। আচ্ছা আরো দুইটা লাইন শোনাই তোমাকে। শুনে বলবে কেমন লাগলো।

- আচ্ছা শুনি।

- মাছের গায়ে আইশ জমে, না আইশের গায়ে মাছ? ছাইড়া যাওয়ার পরেও জ্বলে বুক যে বারো মাস।

- ভালোই তো! একটা হাহাকার আছে। কার লেখা এটা?

- বলবো না কার লেখা। তবে এটা কবিতার কোনো জাত হয় নি।

- তাই নাকি!

- ‘বোকাবাবু পুচু পুচু কোকাকোলা খায়

বোকাচোদা বাপ তার পয়সা জোগায়।’

- প্লিজ এই লাইনগুলো আর বলবেন না। বিশ্রী শোনাচ্ছে।

- নবারুণ ছিলেন প্রথাবিরোধী। এই নষ্ট সমাজ সরকারব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুদ্ধ। তিনি লিখে গেছেন- এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না। আমি একটা ইতরের দেশে থাকি। এইসব লাইন তিনি বাংলায় বসে লিখেছেন, কিন্তু পৃথিবীর শতশত দেশের জন্যই কি বাক্যগুলো সত্য না?

- বুঝিয়ে বলুন।

- সরকার কে গঠন করে? জনগণ। জনগণই সরকারের জন্ম দেয়। সে হিশেবে সরকারের পিতা কে? জনগণ। একেকজন সাংসদ কত বেতন পায় জানো? একজন মন্ত্রী? এই বেতন কে দেয়? জনগণ। ধরো, ছোটোবাবু পুচু পুচু হচ্ছে যেকোনো একটা দেশের সরকার, প্রশাসন। তারা মোটা অংকের বেতন নিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে যান ব্যাংকক প্যারিস। তাদের হাতে আপেলের লোগো আঁকা সেলফোন। এইযে- ব্যাংকক প্যারিস আপেল ফোন- এইসব হচ্ছে কোকাকোলা। বাবুরা কোকাকোলা খাচ্ছে, আর বাপ জনগণ- বোকাচোদার মতো টাকার যোগান দিয়েই যাচ্ছে। মাত্র দুই লাইনে এই চিত্র ফুটিয়ে তোলা- সমস্ত দেশের কথা বর্ণনা করা। পুরো ঘটনাটাই উপমার মাধ্যমে দুই লাইনে বলা হয়েছে। জানো তো, জীবনানন্দ বলেছেন- উপমাই কবিতা।

কাজোরী কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আশ্চর্য, এখন আমার আর ঐ শব্দটা খারাপ লাগছে না।

- শোনো কাজোরী, রুদ্র গোস্বামী এবং জয় গোস্বামীর পার্থক্য বুঝতে হবে। কবিতা লেখক এবং কবি- এই দুইটা এক জিনিস নয়। বুঝেছো?

- আচ্ছা, আরেকটা কবিতা শোনান তো, উপমার কবিতা।

- বলছি, কিন্তু কার লেখা, ব্যাখ্যা কি এইসব বলবো না।

- বেশ।

আমি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললাম,

‘অক্সিজেনের অভাব পড়লো, মরলো হাজার কুকুরছানা // তবুও এমন পাষাণ আমি – আমার চোখে জল এলো না।’

Comments

    Please login to post comment. Login