Posts

চিন্তা

স্যুটস ও গ্রে মানুষ

April 21, 2024

কৃপাসিন্ধু পাল জয়

Original Author কৃপাসিন্ধু পাল জয়

Translated by নাই

 Suits বা স্যুটস নামের টিভি সিরিজে দেখা যায় যে মাইকেল মাইক রস নামের যে ক্যারেকটারটা থাকে সে খুব ট্যালেন্টেড। সে যা পড়ে সেইটা তার সবসময় মনে থাকে এবং সে জিনিসগুলো সত্যিই শিখে। 

তার ইচ্ছা ছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল-তে ডিপ্লোমা করবে। সে চান্সও পাইছিল ঐখানে। তবে কিছু দুর্ঘটনা ঘটার কারণে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত হার্ভার্ডে গিয়ে পড়া আর তার হয়না। 

নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে মিলে একটা হোটেলে ড্রাগ বেচতে গিয়ে গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সে আরেক জায়গায় ঢুকে যায়। ঐখানে ল ফার্ম পিয়ারসন হার্ডম্যান এর বিখ্যাত উকিল হার্ভি স্পেকটার নিজের অ্যাসোসিয়েট বা সহযোগী বাছাই করতে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল অনেক হার্ভার্ড পাস, বার এট ল ছেলেদের। (ল ফার্ম পিয়ারসন হার্ডম্যান এর একটা রুল আছে যে তারা হার্ভার্ড থেকে পাস করা ছাড়া কাউরে চাকরি দেয় না।)

সাক্ষাৎকার এর ঐখানে ঢুকে মাইক ড্রাগসহ ধরা পড়ে যায় হার্ভির হাতে। কিন্তু হার্ভিরে সে নিজের বুদ্ধি আর জ্ঞান দিয়ে ইমপ্রেস করে ফেলতে সক্ষম হয়ে যায়। হার্ভি যেন মাইক এর মধ্যে নিজেকেই দেখতে পাইতেছিল। 
অতপর কখনো হার্ভার্ডে না যাওয়া, বার পাস না করা মাইকরে পিয়ারসন হার্ডম্যান এর অ্যাসোসিয়েট করে ফেলা হয়। তৎকালীন ম্যানেজিং পার্টনার তথা ল ফার্মের মূল বস ও নেইম পার্টনার জেসিকা পিয়ারসনের কাছ থেকে মাইকের সত্য কাহিনি লুকাইয়া রাখে হার্ভি। 

কাহিনি আস্তে আস্তে ঘটতে থাকে এরপরে। তখন দেখা যায় যে মাইক কাজ করতে থাকে। হার্ভিও তারে অনেক কিছু শেখাতে থাকে। কিন্তু মাইক এর হার্ভার্ডে না যাওয়া ও বারে পাস না করার ঘটনা আস্তে আস্তে বেশ কয়েকজন জেনে যায়। 

মাইক এক ক্লায়েন্টের মেয়েরে দিয়ে হার্ভার্ডের আর্কাইভে নিজের নাম ঢুকাইয়া দিতে সক্ষম হয় হ্যাক করানোর মাধ্যমে। 

এক পর্যায়ে মাইকের যে গার্লফ্রেন্ড থাকে র‍্যাচেল জেন সেও জানতে পারে আসল ঘটনা। ( র‍্যাচেল ক্যারেকটারে অভিনয় করছিলেন প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। যিনি এখন একজন ডাচেস।)

নিজের সত্যরে অন্যদের কাছ থেকে লুকাইয়া রাখার জন্য মাইক ও একই সাথে তার বস হার্ভি স্পেকটার মিলে অনেকবার অসৎ কাজ করতে থাকে। 

অর্থাৎ দেখা যায় যে, আপনি যখন একটা মিথ্যা ঘটনার বা কথার জন্ম দেবেন তখন নিজের ঐ ভুলরে, মিথ্যারে বাঁচাইয়া রাখার জন্য ও অন্যদের কাছে ধরা না পরার জন্য আপনাকে আরও অনেকগুলো মিথ্যা ঘটনা বা কথার জন্ম দিতে হয়। 

স্যুটসে আমরা দেখি যে মাইক আসলে খারাপ কোনো ক্যারেকটার না। হার্ভি স্পেকটার যখন তারে বলে যে কাজ থেকে ইমোশনরে দূরে সরাইয়া রাখতে সে ঐ কাজ করতে পারে না। সে অন্যদের জন্য কষ্ট পায়। ইমোশন তার কাজে প্রভাব ফেলে। কিন্তু এরপরেও সে একজন উকিল হিসাবে কাজ করতে ক্যারিয়ার বানাতে থাকে। এইজন্য তারে অনেকগুলো মিথ্যার জন্ম দিতে হয়। মাইককে নিজের ঘটনা লুকাইয়া রাখার জন্য হার্ভার্ডের আর্কাইভে নিজের নাম ঢুকাইয়া দিতে হয় এবং বার এর তালিকায়ও নিজের নাম ঢুকাইয়া দিতে হয়। এরপরেও সে ভয়ে ভয়ে থাকে যে কখন সে ধরা পড়ে যাবে এই কারণে। অর্থাৎ মিথ্যা আমাদের মনে ভয়ের জন্ম দেয়। 

বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে স্যুটসে আমরা দেখতে পাই যে মাইক আসলে একজন ভাল মানুষ কিন্তু এরপরেও তাকে অনেক অসৎ কাজ করতে হয়। অর্থাৎ এটা আমাদের সামনে উঠে আসে যে কেউ আসলে সম্পূর্ণ রকমে ভাল হয় না। আবার কেউ খারাপও হয় না। মানুষ হয় মূলত গ্রে। সে সাদা ও কালোর মিক্স। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেবের মহাভারতে আমরা যেমন দেখি প্রতিটা চরিত্রই ভাল খারাপের মিক্স সেইটা আমরা স্যুটস সিরিজেও দেখতে পাই। এইটা একটা চিরন্তন সত্য হিসেবে আমাদের সামনে উঠে আসে। 

Comments

    Please login to post comment. Login