নাম বলবো না। গল্পটা জানিয়ে দিই।
কোন একদিন। ঢাকায় যাই। আকাশ থেকে দেশের মাটি জল জঙ্গল দেখতে দেখতে। বাতাসে ভর দিয়ে, মেঘ কেটে কেটে। কিসে করে যাচ্ছিলাম, আর ভেঙ্গে বলতে হবে না, আশাকরি।
আমার পাশে এক ভদ্রলোক বসা। অনুমান করি, বয়স আমার চেয়ে ন্যূনতম কুড়ি বছর বেশি হবে। এখন আবার আমার বয়স কত, সেটা নিয়ে সুলুকসন্ধানে নাইমেন্না। আমার বয়স যত, ঠিক ততই। আদা কিনতে এসে জাহাজের দাম শোনা সময়ের অপচয়। আদায় ঝাল আছে, জাহাজ যে জলে ভাসে তার ঝালও কম নয়।
গল্পটা বলি, ওটাই শোনেন।
তো পাশের লোক বেশ মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন। হাতে একটা পেন্সিল। পড়ছেন, আর মার্কিং করে যাচ্ছেন। বেশ কৌতুহলী কারবার। এই বয়সে আর কোন পরীক্ষায় বসার কথা নয়। তবু এতটা সিরিয়াস। মুগ্ধতা ভূরভূর করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
উনার দিকে দৃষ্টিপাত করি। বেশ করে খেয়াল করতে থাকি। তখনই মনে হলো উনাকে কোথাও দেখেছি। কিন্তু কোনভাবে মনে করতে পারছিনা।
আমার এক স্যার ছিলেন, খুব ঘনঘন নাম ভুলে যেতেন। তখন তিনি 'এই ইসে' বলে সেটাকে কাভার দিতেন। আমারও ওমনটা হয়। খুব পরিচিত, সামনে চলে এসেছে। কিন্তু নাম মনে করতে পারছিনা। নিজেও তখন ভাববাচ্যে চালিয়ে নেই। 'এই ইসে, সেই শিসে' অবশ্য আমার আসে না। নিজের ঢাকের খবর কিছুটা হলেও রাখি। তাই বিয়ের পরপরই বউয়ের কাছে শুনে শুনে ওদের গুষ্ঠির (১৪ গুষ্ঠির নয়) সবার নাম লিখে রেখেছিলাম। ২/১ বার সেটা কাজেও লেগেছিলো।
সে যাকগে। বই পড়ুয়া লোক পেলে আলাপ করার চেষ্টা করি। বর্তমান সমাজে বই পড়ুয়ারা বিরলতম প্রজাতির পেতে যাচ্ছেন অদূর ভবিষ্যতে।
কিন্তু ওনার সাথে আলাপ করার সাহস পেলাম না। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন। পেন্সিল দিয়ে মার্কিং করছেন। এমন কূম্ভকর্ণীয় মনোযোগ নষ্ট করে লংকার পতনের কারন হতে চাইনা।
এমনিতে বছর কয়েক আগে লংকার এক দফা পতন দেখেছি। দেউলিয়া হওয়ার যোগাড়। নতুন করে সেখানে কোন অশান্তি লংকার শত্রুও চায় না। আমিও না। আস্তে করে চেপে যাই।
২।
ঢাকায় সফল অবতরন করলাম। প্রিভিলেজ্ড কারে টার্মিনালের দিকে যাই। ওই কারে তিনিও আছেন। টার্মিনাল চলে আসলো প্রায়।
এবার তিনি ফিরলেন। হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। সত্যি তিনি একজন নামকরা লোক। ভিসি ছিলেন। টকশো করেন। বই লিখেছেন অনেক। এমনকি যে বইটি পড়ছিলেন সেখানে তার লেখা বইয়ের অনেক রেফারেন্স আছে। তিনি মূলত সেগুলো মার্কিং করে যাচ্ছিলেন।
৩।
ভানুর জোকস শুনেছিলাম। সংক্ষেপে বলি।
বউসহ ট্রেনে করে বেড়াতে যাচ্ছিলো। বউ সাবধান করে দিয়েছিলো। বেশি কথা বলো না। যদিও বলে ফেলো কাশি দিলে থামবা।
একলোককে পেয়ে ভানু গল্প শুরু করে। বুঝলেন দাদা, সুন্দরবনে একবার বাঘ দেখেছিলাম। বাঘের লেজই ছিলো বিশ হাত লম্বা। বউ কাশতে কাশতে সেটাকে ৫ হাতে নামাতে পেরেছিলো। বউ এরপরও কাশি দিলে ভানু বলেছিলো, যতই কাশি দাও, এর নিচে নামতে পারবোনা।
৪।
নিজের কাছে লজ্জা লাগলো। পরিমনি, জায়েদ খান, এমনকি হিরো আলমকে চিনি। কিন্তু স্যারকে চিনতে পারলাম না। দেশে কুলাঙ্গার ডিক্লেয়ারেশন দেয় এমন কোন অথরিটি নেই। তাই বেচে গেলাম। তবে আরও একটা জিনিস খেয়াল করলাম। স্যারও যেন কেমন একটু! নিজের পরিচয় না দিয়ে থাকতে পারলেন না।
কী যে এক বিড়ম্বনায় পড়লাম।